বিশৃঙ্খল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবস্থা

বিমানবাহিনীর বিমানের বিদ্যালয়ে আঘাত ও অ্যানোনিমাসের পূর্বাভাস

গতকাল মাইলস্টোন স্কুলের উপর বিমানবাহিনীর একটি বিমান আছড়ে পড়ার পর সেখানে আগুনে পুড়ে যে শত শত শিশুর মৃত্যু বা মৃতপ্রায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার একদিন আগে অ্যানোনিমাস নামে একটি কথিত হ্যাকার পেজ থেকে একটি সাবধানবানী প্রচার করা হয়েছিল। এ ধরণের পেজের কোন বার্তাকে গুরুত্ব দেবার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিতে এরকম দৈব বার্তা কখনও কখনও মিলও যেতে পারে। এর সাথে আমরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে ঐ বার্তার পেজটির স্বচ্ছতা ও বার্তাটি ঘটনা ঘটার পরে প্রকাশ করে সময় পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা, বা বার্তাটি ভিন্ন বার্তা হিসাবে আগে প্রকাশ করে পরে তার কনটেন্ট পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা - সেগুলো পরীক্ষা করে যা পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে বার্তাটিতে এমন কিছু করা হয়নি। যার অর্থ সত্যি সত্যিই অ্যানোনিমাস নামে কথিত হ্যাকার পেজটি থেকে বার্তাটি আগের দিনই প্রকাশ করা হয়েছিল। 

আগেই বলেছি এ ধরণের পেজের কোন বার্তাকে গুরুত্ব দেবার কোন কারণ নেই তবে এই বিমান দুর্ঘটনার কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এমন কিছু সত্য সামনে আসছে যে উক্ত বার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে সেটাতে আরো গভীর দৃষ্টি দেবার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একজন তদন্তকারী বা একজন বিশ্লেষকের কাছে কোন সূত্র অবহেলার নয়। সব কিছুকেই তিনি গুরুত্ব দেন আবার কোন কিছুই নিশ্চিতভাবে নেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তার হাতে মনে থাকা ধাঁধাটি সম্পূর্ণ মেলাতে পারেন।  

বর্তমানে বাংলাদেশে যে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবস্থা, নানা নতুন বিদেশী শক্তি ও গোপন শক্তি বা গোয়েন্দা প্রভাব। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন, রাষ্ট্রের মানচিত্র, সংবিধান, পরিচয় পরিবর্তনের নানা মুখি বল ক্রিয়াশীল, তখন এ ধরণের বার্তা গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে আমরা দেখেছি নিজেদের হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথ দাবি করে প্রায় এক মাস আগে একটি ভিডিওটি পাঠানো হয়। সেই ভিডিওতে বাংলাদেশের জাতীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান নিয়ে তারা বেশ কিছু হুমকি দেয়। তারা বলে বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা তাদের হাতে এবং তাদের কাছে প্রচুর ইলেকট্রনিক যোগাযোগ তথ্য রয়েছে। উল্লেখ্য যে গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে বিমান, বিমানবন্দর ও এভিয়েশন সংক্রান্ত বহু পদে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন। হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাস গ্লোবাল সাউথের দাবি করা তথ্য চ্যানেল যে বিমানবাহিনীতেও নেই সেকথা বলা যায় না।

এইসব সাদা টুপির হ্যাকাররা কখনই পরিপূর্ণ তথ্য বা সরাসরি বা ট্রেসেবল তথ্য দেয় না তাদের পরিচয় ফাঁস বা আইনগত ঝামেলা এড়াবার জন্য। যেমন তারা হয়ত জানে যে স্কুলে বিমান আছড়ে পড়বে, কিন্তু তারা হয়ত বলবে স্কুলের দালান ভেঙ্গে পড়বে। তাদের এই বার্তার লক্ষ্য অনেক সময় জন সেবা নয় বা প্রাণ বাঁচানো নয়। এই বার্তা তাদের প্রতিপক্ষকে দেওয়া যে আমরা জানি তোমরা কি করতে যাচ্ছ। 

যাই হোক বিমান দুর্ঘটনার আগের দিন অ্যানোনিমাসের দেওয়া বার্তাটি একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক। ইংরেজিতে বার্তাটা ছিল "A school building will collapse leaving lots of kids l!veless. We see a terrible disaster fast coming, This will be as a result of poor maintenance on the building. We shall do everything in our power to avert this terrible catastrophe we’ve seen coming. This is the Architect!" যার বাংলা করলে দাঁড়ায়:

"একটি স্কুল ভবন ধসে পড়বে, যার ফলে অনেক শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা একটি ভয়াবহ বিপর্যয় দ্রুত আসতে দেখছি। এটি দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের ফলে ভবনের উপর ঘটবে। আমরা এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়টি রোধ করতে আমাদের সাধ্যমতো সবকিছু করব যা আমরা আসতে দেখেছি। এটি হচ্ছে দ্য আর্কিটেক্ট!" 

আগেই বলেছি এসব বার্তা অনেক সময় অপরিপূর্ণ হয় ও সংকেত মিশ্রিত হয়, এর শব্দগুলো পরীক্ষা করা যাক: 

এই বার্তায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ছিল, যেগুলো হলো:

“স্কুল ভবন”
“অনেক শিশু”
“প্রাণ হারানো”
“ধসে পড়া”
“ভয়ঙ্কর বিপর্যয়”
“দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ নির্ভর”
“দ্য আর্কিটেক্ট” 

পোস্টটি ছিল একটি রূপকধর্মী “দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের নির্ভর” কিছু “ধসে পড়া”র ফলে “ভয়ঙ্কর বিপর্যয়” এর হুঁশিয়ারি যার ফলে “অনেক শিশু”র “প্রাণ হারানো”র মত ঘটনা ঘটবে। “দ্য আর্কিটেক্ট” এই স্বাক্ষর গুরুত্বপূর্ণ যেটা এখানে একটি রহস্যময় শব্দ, যা হয়তো কোনো অভ্যন্তরীণ সূত্র বা আরো বড় পরিকল্পনাকারীকে নির্দেশ করে। এটি হয়তো ইঙ্গিত দেয় যে কেউ ভবিষ্যৎ ঘটনা সম্পর্কে জানত এবং গোপন বার্তা দিয়েছে।

এখানে দেখা যাচ্ছে যে মাত্র ৪৮ শব্দের এই বার্তার সব গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো মিলে যাচ্ছে পরের দিনের ঘটনার সাথে।

এখন আমরা দুর্ঘটনার দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এক হচ্ছে একটি জেট বিমানে একটি আগুনে বোমার মত আচরণ। চীনে তৈরি আধুনিক ডিজাইন ও বর্তমান যুগের সাথে তাল মেলানো আধুনিক এভিয়নিক্স সমৃদ্ধ এফ-৭ বিজিআই এই বিমানটির জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা ছিল চার হাজার লিটারের মত। এটি প্রশিক্ষণ সময়ের উপর নির্ভর করে হয়ত পূর্ণ টাঙ্কি জ্বালানি নেয়নি এবং আমরা যদি ধরি সেটি অর্ধেক জ্বালানি বা জোট ফুয়েল নিয়েছিল। ধরা যাক কিছু সময় উড্ডয়নে তারও অর্ধেক জ্বালানি পুড়িয়ে ফেললেও তার টাঙ্কিতে হাজার লিটার জ্বালানি থাকের কথা। একটি জেট বিমান যখন ভূমিতে কোন কিছুতে আঘাত করে তখন সবচেয়ে বড় বিপদ হল আগুনে বোমার মত আচরণ।

বিমানটি কোন বস্তু বা দালানে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে এর টাঙ্কিতে থাকা জ্বালানি বিমানের গতির সমান গতিতে সামনে ছিটকে পড়ে। বিমানটি আঘাত করার সাথে সাথে ভূমির সাথে সংঘর্ষে উৎপন্ন তাপ অথবা ইঞ্জিনে জ্বলন্ত উচ্চ তাপমাত্রা, যা ১৫০০ থেকে ২০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে সেটা ঐ জ্বালানিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর অর্থ হচ্ছে ওই বিমানটি উক্ত বিদ্যালয়ে সামনের দরোজাগুলো এবং জানালাগুলো দিয়ে হাজার লিটার উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বলন্ত জেট ফুয়েল উক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের গায়ে ছুঁড়ে দিয়েছে। ঠিক এই ঘটনাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ঘটেছিল। উচ্চ গতির জ্বলন্ত জেট ফুয়েল পুরো দালানে উচ্চ তাপমাত্রার আগুনে হাজার হাজার মানুষ হত্যা এমনকি ১১০ তলা বিশাল দালান দুটোর ইস্পাতের অবকাঠামো গলিয়ে ফেলে দালান দুটোই ধ্বংস করে ফেলে।      

মাইলস্টোন স্কুলের দালান ও বিমানের আঘাত কেন্দ্র
আমরা যদি বিমানটি আছড়ে পড়া বিদ্যালয়টির দালানটির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সোজা সামনে থেকে আঘাত করার জন্য এমন উপযুক্ত স্কুল ঢাকা শহরে আর নেই। লম্বা একটি দোতলা দালান। সামনে খোলা মাঠ এবং বিমানটি আঘাত করেছে একেবারে দ্লানটির কেন্দ্রে। এবং শূন্য ডিগ্রি কোনে। সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে স্কুলটা ছিল অনেকটা জেলখানার মত। সর্বত্র এমনকি বারান্দাতেও গ্রিল দিয়ে ঘেরা। বিমানটা জ্বালানী সহ সামনের দিক থেকে আছড়ে পড়লে সামনের দিক থেকে আগুন ধরা জ্বালানি অন্তত একশ কিলোমিটার বেগে ছিটকে পড়ে বিদ্যালয়টির ভেতরে শিশুদের গায়ে। তারা সাথে সাথে পুড়ে যায় মারাত্মকভাবে। স্কুলের নানা দিকে গ্রিলের কারনে ও পেছনে কোন বের হবার পথ না থাকার কারনে ট্র্যাপড হয়ে গিয়েছিলো শিশুরা। 

ফ্লাইট পাথ ও হিট
আমরা যদি এখন ফ্লাইট পাথটা দেখি, যতটুকু জানা যাচ্ছে এই বিমানটি আর একটি বিমানের সাথে একত্রে উড্ডয়নের পর রামপুরা ও অন্যান্য এলাকা ঘুরে অবতরণের কথা ছিল। সেই ফ্লাইট পাথে এই বিদ্যালয়টির এই শূন্য ডিগ্রি কোনে পড়া এবং দালানটির একেবারে কেন্দ্রে আঘাত করা খুবই আশ্চর্যের (ছবি দেখুন)। এখানে উল্লেখ্য যে দালানটির সম্মুখতল একেবারেই বিমানবন্দরের রানওয়ের সাথে উলম্ব কোনে নয়, বরং ৪৫ ডিগ্রি কোনে। পুরো বিষয়টিই খুব অদ্ভুত। এটা যেন হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাসের কথা মিলে যাবার চেয়েও আরো আশ্চর্যের।    

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে দুর্ঘটনা হোক, স্যাবোট্যাজ হোক বা চক্রান্ত – উক্ত হ্যাকার গ্রুপ অ্যানোনিমাস এমন কিছুর আভাস পেয়েছিল কিনা ডিজিটাল গোয়েন্দাগিরির মাধ্যমে? 

এই লেখার মাধ্যমে আমি কোন কিছুর দিকেই মতামত দিচ্ছি না। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের চালক বেঁচে নেই। মৃত একজন মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। সেই দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তায়। অপর দিকে এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে হয়ত শত শিশু। তাদের মৃত্যুর কারণ নিয়েও আমরা কোন অন্যায় তত্ত্ব খাড়া করতে পারি না। তবে অবশ্যই আমাদের সব কিছু বিবেচনা করতে হবে। এই বিমান দুর্ঘটনায় বিমানচালক সহ যে শিশুরা নিহত হয়েছে ও আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়ছে, তাদের জন্য সত্য উদঘাটন না করাও অপরাধ। এই দুর্ঘটনার পেছনে যদি কোন চক্রান্ত থাকে সেটা উদঘাটন না করাও তাদের হত্যায় সহযোগীতার মত একই রকম অপরাধ যেটা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সবসময় করে এসেছে। অপরদিকে অ্যানোনিমাসের দেওয়া বার্তাটি ভুয়া হলেও বাকি প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজা জরুরী।