একমাত্র সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তান ছাড়া

“তুমি মিথ্যা বলে এগিয়ে যেতে পার, কিন্তু ফিরে আসতে পারবে না”

“তুমি মিথ্যা বলে এগিয়ে যেতে পার, কিন্তু ফিরে আসতে পারবে না” - রাশিয়ান প্রবাদ  

মাত্র ছয় সপ্তাহে, অস্বাভাবিক দ্রুত সময়ে হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেল সাধের 'দ্বিতীয় স্বাধীনতার'। নোবেল-পুতুল রাজা উজিরের পেছনে মূল ক্ষমতা যাদের, সেই সেনারা এখন প্রকাশ্যে। সাধারণত কোন কঠিন একনায়ক বা ফ্যাসিবাদী সরকারে পতনের পর এক দুই বছর বসন্ত সময় বিরাজ করে এবং সরকরার ও সাধারণ জনগণের মনে হানিমুনের আনন্দ থাকে। ৭১ এর স্বাধীনতার পর সর্বত্র চরম সঙ্কট ও পাহাড় সমান ব্যর্থতার পরও মুজিব সরকারের জনপ্রিয়তা তাকে হত্যা করা পর্যন্ত শীর্ষে ছিল। এমনকি ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের পরও মুজিব সরকারের জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। শেখ মুজিবের সেনা সদস্য খুনিরা বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে এই বলে সাক্ষাৎকার দিয়েছে যে শেখ মুজিবের যে জনপ্রিয়তা ছিল তাতে তাকে হত্যা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না সরকার পরিবর্তনের। কারণ তারা নাকি তাঁর জনপ্রিয়তা কমার কোন লক্ষণই সামনে দেখছিলেন না। কাউকে হত্যার জন্য এত নির্বোধ এবং সাইকোপ্যাথিক স্বীকারোক্তি মনে হয় দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই। এর পরে বাংলাদেশে যত বার সামরিক ক্যু হয়েছে, তারাও প্রথম বছরগুলো হানিমুন সময়ই কাটিয়েছে।

এবার তাহলে এত দ্রুত হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেল কেন? এর অনেক গুলোই কারণ আছে তবে সবচেয়ে বড় কারণ হল বাইরের থেকে সরকার পরিবর্তন যারা করিয়েছে তাদের আস্থায় ফাটল ধরেছে। এটা স্পষ্ট যে মার্কিন কর্তৃপক্ষ ধীরে চল নীতি নিয়েছে। অন্য যে রাষ্ট্র বা সংস্থাগুলো সহায়তার কথা বলেছে সেগুলোও প্রকল্প ভিত্তিক প্রতিশ্রুতি মাত্র। প্রথম থেকেই মনে হয়েছে বাংলাদেশের রেজিম চেঞ্জ মার্কিন আরব-স্প্রিং মডেলের হলেও সেটাতে মার্কিন দৃশ্যমান রাষ্ট্র যেমন সিনেট, স্টেট ডিপার্টমেন্টের খুব একটা আগ্রহ ছিল না। যেহেতু বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল সরকার ছিল, মুখে মন্দ বললেও গত দুই বছরে নানা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলও ইতিবাচক হচ্ছিল। গণমাধ্যম অনেকটাই মুক্ত ছিল এবং কিছু সরকারী কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড অনেকটাই কমে এসেছিল। এই পরিস্থিতিতে তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থবিরতায় ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ঘটনাটা ঘটিয়েছেন। যার ফলে ঘটনা প্রবাহ দেখে মনে হচ্ছে এই বিপ্লব যতটা না আমেরিকান সিআইএ নির্দেশিত, তার চেয়ে অনেক বেশি পাকিস্তানের আইএসআই পরিকল্পিত।

এর সাথে এই অঞ্চলে আমেরিকার নোবেল শান্তি পুরস্কার ডিপ্লোম্যাসির ফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। মিয়ানমারের সু চি শুধু ব্যর্থই নন, তাকে নিয়ে পশ্চিমা পরিকল্পনা মিয়ানমারকে তাদের জন্য আরো কঠিন করে তুলেছে। এসবের ফলে বাংলাদেশের রেজিম চেঞ্জে মার্কিন সার্ফেস স্টেট ও ডিপ স্টেটের সায় যতটাই থাক না কেন, নতুন সরকারের প্রতি তাদের প্রকৃত সমর্থন কতটা থাকবে সেটার জন্য এই সরকারকে আরো অনেক পরীক্ষায় পাশ করতে হবে।

গত ৫ আগষ্টের সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে যে হারে মৃত্যু, আগুন, ধ্বংসযজ্ঞ ও তার পরে যে হারে মিথ্যা মামলা এবং প্রশাসনকে বা রাষ্ট্রকে তছনচ করা হয়েছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাজার ভাঙ্গা এগুলো ঘটছে, সেটা যে কোন উন্নয়ন সহযোগীকে নতুন সরকারের দিকে এগিয়ে আসতে দ্বিধাগ্রস্থ করবে। এর বড় কারণ হল ভারত ও চীন। ভারত ও চীন নিশ্চয়ই চাইবে না বাংলাদেশে এমন কিছু হোক যেটা এই অঞ্চলে তাদের শান্তি বিনষ্ট করবে। এবং সেই নিশ্চয়তা তারা সেই সব দেশের কাছে চাইবে যারা বাংলাদেশের নতুন সরকারের নিকট বন্ধু হয়ে যাবে।

বিগত ছয় সপ্তাহের যে অরাজকতা, সেটি সামাল দিতেই হয়ত সামরিক বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে। তবে এতে প্রকাশ হয়ে পড়বে সরকারের ভেতরের চরিত্র যেটা নতুন সরকারের জন্য হবে আর একটি বড় ব্যর্থতার ঝুঁকি। কিন্তু এই ঝুঁকি কেন নিতে হচ্ছে? দ্রুত হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেলে আর একটি বিপদ দেখা দেয়। সেটি হল আগের সরকার জনপ্রিয় থাকলে তাদের সমর্থকরা মাঠে নেমে পড়ে। তাদের ঠেকানোর জন্যই কি এই নতুন পদক্ষেপ? তাহলে কিন্তু এই সরকারও সেই ফ্যাসিবাদী দমন নিপীড়নের পথেই যাত্রা করল যার প্রতিবাদে তারা এসেছে।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের সময় জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল বাংলাদেশে আসে। তার পর তারা দুদক ও সরকারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। তখন আমেরিকার দালাল পত্রিকাগুলোর একটা একটি বিশাল শিরোনাম দিয়ে একটা সম্পাদকীয় ছাপে। সেটা ছিল অনেকটা এমন, “হাঃ হাঃ হাঃ আমরা জাতিসংঘকে বোকা বানিয়েছি”। আসলে জাতিসংঘকে বোকা বানানো হয়নি। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ও সারা দুনিয়াকে বোকা এই সংবাদপত্রগুলো তার আগেই বানিয়েছিল। এবারও সারা দুনিয়াকে বোকা বানিয়েই একটি স্থিতিশীল সরকারকে সরানো হয়েছে।

এখন সংবাদপত্রগুলো নীরব থেকে বা আগের সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করে সেই ধোকাবাজি টিকিয়ে রাখতে চাইছে। তারা ভাবছে দুনিয়ার অন্য দেশের কুটনীতিকরা বোধ হয় তাদের পত্রিকা পড়েই কুটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। তারা এটাও বুঝছে না যে সবাই ভাবছে বিগত সরকারের পুরোটাই দুর্নীতি ও তারা সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে থাকলে দেশের অর্থনীতির এত উন্নয়ন কিভাবে হয়েছে? সামাজিক শৃঙ্খলা, স্থিতীশিলাতা কিভাবে ছিল এবং অপরাধের হার এত কম ছিল কিভাবে? দেশকে আবার সেই পর্যায়ে না নিতে পারলে কেউ কিন্তু সাথে থাকবে না একমাত্র সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তান ছাড়া।