EN
আরও পড়ুন
মানসিক সমৃদ্ধি ও সম্পর্ক
দাপুটে পুরুষের আবেগ নিয়ে খেলা করার সমাজে
রাজনীতি
ভারত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে
রাজনীতি
একমাত্র সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তান ছাড়া
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

১৯৭৫ থেকে ২০২৪ - যত আত্মঘাতী কর্মকান্ড:

হ্যান্ড গ্রেনেডিং ইয়োর ওউন নেশন

"রাগ করবেন না। আপনারা আবার আমার উপর রাগ করেন। আমি বুদ্ধিজীবিদের কিছু বলি না। তাঁদের সম্মান করি। শুধু এটুকুই বলি যে, বুদ্ধিটা জনগণের খেদমতে ব্যয় করুন। এর বেশী কিছু বলি না। বাবা - বলে কি মারা যাব? আবার বই লিখে ফেলবে আমার বিরুদ্ধে।" কথাটা বঙ্গবন্ধু নিজে বলে গেছেন বুদ্ধিজীবিদের লক্ষ্য করে।
 
বাংলাদেশের একটি অবাক করা বিষয় হলো, শিক্ষায় প্রতিযোগিতায় যারা সফল, তাদের অধিকাংশই মনের গভীরে নীচ, হীন মানসিকতার; পরশ্রীকাতর, ক্ষুদ্র দৃষ্টিসম্পন্ন অথচ নিজেকে ভাবে সে বিশুদ্ধ এবং চরম আদর্শের ধারক। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর একক নিস্বার্থ আত্মদান, সাহস, চিন্তাশীলতা, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়ে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে নেবার যে অসীম প্রচেষ্টা, নেতা হিসাবে সেটার নজীর দুনিয়াতে বিরল। অথচ সেই বঙ্গবন্ধুকে সবসময় হেয় করে গেছে পাকিস্তান আমলের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী এদেশের অধিকাংশ শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ। 

যে কোন জাতির এগিয়ে যাবার প্রথম ধাপ হলো রাজনৈতিক পরিচয় স্থাপন ও ভুমির স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু ও তার রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব যতই অসাধারণ হোক না কেন বাংলাদেশের আলাদা পরিচয় ও স্বাধীনতা ছিল অনেকটা অসম্ভব প্রাপ্তি। এই অসম্ভব কাজ দুটো অনেকটাই সম্ভব হয়েছে, ৭১’এ যে আমরা এ দুটোই পেয়েছি তার কারণ পাকিস্তানের তখনকার সামরিক অসামরিক নেতৃত্বের চরম নির্বুদ্ধিতা, তখনকার বিশেষ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং ইন্দিরার মত কঠিন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন প্রধানমন্ত্রীর ভারতের ক্ষমতায় থাকা। 

এই ত্রিধা-সম্মিলন ব্যতিত আমাদের স্বাধীনতাপ্রাপ্তী অসম্ভব ছিল। মুজিব তার রাজনৈতিক জ্ঞান, সততা, সোজা কথা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে এই তিন পক্ষকেই নিজের সমর্থনে এনেছেন অথচ এদেশের শিক্ষিতদের কাছে স্বাধীনতার পরক্ষনেই সেই মুজিবই হয়ে গেলেন স্বাধীনতার পর সবচেয়ে লাভবান যারা, সেই শিক্ষিত এলিটদের মহাশত্রু। এই ঘটনার সামাজিক, রাজনৈতিক অনেক কারণ আছে। আছে নোংরা সামরিক রাজনীতির লোভ ও হিংসা। আছে পশ্চিমা প্রভু ও মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় ভূরাজনীতির কাছে দেশকে বিক্রি করে দেবার দালালচক্রের নিরন্তর চক্রান্ত। আছে হঠাৎ সুযোগ পাওয়া সুবিধাভোগী শ্রেণীর সীমাহীন লোভ ও স্বেচ্ছাচার। 

কিন্তু আমার মনে হয়েছে এ সবের বাইরেও কিছু একটা আছে যেটা মনোবিদ্যাগত। সেটা হলো এদেশে বিশেষ করে পেশাগত শিক্ষায় বা STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) উচ্চশিক্ষিতদের মনস্তত্ব। ফাঁকটা হল জ্ঞানের কোন একটি বিশেষ দিকের মেধাবীদের সমগ্রকে দেখার অক্ষমতা। নিজ পান্ডিত্যের বিষয়টুকু ছাড়া বাকি দুনিয়ার সার্বিক বাস্তবতা দেখতে তারা অক্ষম। সেই অক্ষমতা তারা পুরণ করে কল্পিত আদর্শের প্রক্ষেপন দিয়ে। তাদের কল্পিত আদর্শে মুজিবের চেয়ে ভুট্টো জ্ঞানী, কারন তার পোশাক আশাক আর ইংরেজী অনেক চোস্ত। হাবভাব নায়কোচিত। 

হুমায়ুন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সম্ভবত ফার্মেসিতে, একদিন তিনি দেখলেন রসায়নের এক অধ্যাপককে। সাজ পোশাক আর স্মার্টনেসে এতই মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে তিনি সাথে সাথে ফার্মেসি ছেড়ে রসায়নে ভর্তি হয়ে গেলেন। তারপর তিনি কোয়ান্টাম রসায়নের অধ্যাপকও হলেন কিন্তু পীরের পানি পড়ায় বিশ্বাস ঠিকই রয়ে গেল। আমাদের কোর মনস্তত্ব আমাদের চালায়। হিংসা যদি আমাদের চালায়, তাহলে ঋষির ধ্যানও অন্য ঋষিকে ছোট করার জন্য প্রচেষ্টা হয়, ঈশ্বরের সান্নিধ্য পাবার জন্য নয়।

স্বাধীনতা পরবর্তীতে যারা মুজিব ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রথম ও জোরালো বুদ্ধিবৃত্তিক ও সশস্ত্র লড়াই শুরু করল তাদের নেতারা অনেকেই ছিল বুয়েটের গ্রাজুয়েট। সিরাজ শিকদার সহ বামপন্থী অনেকেই ছিল ইন্জিনিয়ার। তাদের সমর্থনে যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মুজিব বিরোধিতায় নামল তারাও ছিল উচ্চশিক্ষিত।

বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন: 

“আমি মানুষকে বললাম, আমার ভাইদের বললাম, মুক্তি বাহিনীর ছেলেদের বললাম, তোমাদের অস্ত্র জমা দাও। তারা অস্ত্র জমা দিল। কিন্তু এক দল লোক-আমার জানা আছে, যাদের পাকিস্তান অস্ত্র দিয়ে গিয়েছিল তারা অস্ত্র জমা দেয় নাই। তারা এসব অস্ত্র দিয়ে নিরপরাধ লোককে হত্যা করতে আরম্ভ করলো। এমনকি, পাঁচ জন পার্লামেন্ট সদস্যকেও তারা হত্যা করলো। তবুও আমি শাসনতন্ত্র দিয়ে নির্বাচন দিলাম। কিন্তু যদি বাংলার জনগণ নির্বাচনে আমাকেই ভোট দেয়, তাহলে সেটা আমার দোষ নয়। ৩১৫ টি সিট এর মধ্যে ৩০৭ টি সিট বাংলার মানুষ আমাকে দিল। কিন্তু এক দল লোক বলে, কেন জনগণ আমাকে ক্ষমতা দিল? কোনো দিন কোনো দেশ সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে কাউকে এভাবে অধিকার দেয় না। কিন্তু অধিকার ভোগ করতে হলে তার জন্য যে রেসপনসিবিলিটি আছে, সেটা তারা ভুলে গেল। আমি বললাম, তোমরা অপোজিশন সৃষ্টি কর। তারা তা সৃষ্টি করলো। 

বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলো। কিন্তু সেই সঙ্গে অন্ধকারে মানুষ হত্যা করতে আরম্ভ করলো। দরকার হলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের মোকাবিলা করতে চায়। অস্ত্রের হুমকি দেওয়া হল। মানুষ হত্যা থেকে আরম্ভ করে রেল লাইন ধ্বংস করে, ফার্টিলাইজার ফেক্টরি ধ্বংস করে, জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে তারা এমন অবস্থার সৃষ্টি করলো যাতে বিদেশী এজেন্ট যারা দেশের মধ্যে আছে, তারা সুযোগ পেয়ে গেল। আমাদের কর্তব্য মানুষকে বাঁচানো। চারিদিকে হাহাকার। 
স্বাধীনতা পাওয়ার সংগে সংগে সমস্ত দুনিয়ার সমস্ত জিনিষের দাম আস্তে আস্তে বেড়ে গেল। সমস্ত দুনিয়া থেকে আমাদের কিনতে হয়। খাবার কিনতে হয়, কাপড় কিনতে হয়, ঔষধ কিনতে হয়, তৈল কিনতে হয়। আমরা তো দুইশ’ বছর ইংরেজদের কলোনি ছিলাম, পঁচিশ বছর পাকিস্তানের কলোনি ছিলাম। আমাদের তো সব কিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু তার পরেও বাংলার মানুষ কষ্ট স্বীকার করে কাজ করতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু তারা তাদের এগোতে, কাজ করতে দেয় না।

আর একদল বিদেশে সুযোগ পেল। তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে বাংলার মাটিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলো। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করবার চেষ্টা করলো। আজ এদিনে কেন বলছি একথা? অনেক বলেছি, এত বলার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার চোখের সামনে মানুষের মুখ ভাসে। আমার দেশের মানুষের রক্ত ভাসে। আমার চোখের সামনে ভাসে আমারই মানুষের আত্মা। আমার চোখের সামনে সে সমস্ত শহীদ ভাইয়েরা ভাসে, যারা ফুলের মত ঝরে গেল, শহীদ হল। রোজ কিয়ামতে তারা যখন বলবে, আমার রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম, তোমরা স্বাধীনতা নস্যাৎ করছো, তোমরা রক্ষা করতে পার নাই, তখন তাদের আমি কী জবাব দেব?”

আজকেও আমরা দেখছি সেই একই প্যাটার্ন। দেশের বেশীরভাগ লোক যখন শান্তি চায়, খাওয়া পরার নিশ্চয়তা চায়, ছেলে মেয়েদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত চায়। যখন তারা সেটি পাবার একটি আশা দেখছে। হতাশ হবার শঙ্কা নিয়েও ভাবছে যে হয়ত তারাও একটা সুশৃঙ্খল ভবিষ্যত হয়ত পেতে পারে যেভাবে গত দশ বছর চলেছে সেভাবে চললে। তাই তারা বেশির ভাগই এক হয়ে সেই আশায় ম্যান্ডেট দিয়েছে। কিন্তু ৭৫ এর মতই কিছু শিক্ষিত লোকের সেটা সহ্য হচ্ছে না। কারণ ভাল থাকার সম্ভাবনা দেখা দিলেই তাদের অবচেতন মন ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেটা নষ্ট করতে। 

কিন্তু তাহলে দুনিয়ার অন্য দেশের মেধাবীরা ভিন্ন কেন? তারা তো একই বিষয় চর্চা করে একই মস্তিস্ক দিয়ে। আমার মনে হয় তফাতটা হলো প্রথম জীবনের অতি-প্রতিযোগিতা। অন্য দেশে সেটা নেই। অন্য দেশে একটি সাধারন ছাত্র ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার বা পিএইচডি করার যোগ্যতা অর্জন করে। অথচ আমাদের দেশে সেটি করতে লাগে হাজার জনকে পেছনে ফেলার ক্ষমতা। এভাবেই আমরা একদিকে সফলতম কিন্ত অপরদিকে অক্ষমদের বাছাই করি। কিন্তু এটাই কি এই ইন্টেলেকচুয়ালদের আত্মঘাতি হবার কারন? দেশ, জাতীর যে সুযোগে ও পরিচয়ে তারা বুদ্ধিজীবি, মীর্জাফরের মত সেই দেশ ও জাতির প্রাণশক্তির হন্তারক তারা কেন?

পড়ছিলাম সফল কোম্পানী কেন ফেল করে, কেন দেউলিয়া হয়। একটি কথা আছে যেটিকে বলা হয় হ্যান্ড গ্রেনেডিং ইয়োর ওউন কোম্পানী। উদ্যোক্তাদের ব্যবসা যখন সফল হয়। হাতে যখন অনেক টাকা আসতে শুরু করে তখনই বেশ কিছু উদ্দোক্তা অদ্ভুত আত্মঘাতি সব সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে। এইসব সিদ্ধান্তের ফলে অচিরেই কোম্পানীটি আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। গবেষকরা দেখেছেন আসলে এইসব উদ্যোক্তারা অনেকেই নিজেদের সম্পর্কে অবচেতনে নেতিবাচক হীনতায় ভোগেন। যখন তারা সফল হন ও অনেক অর্থ উপার্জন করেন, তখন তাদের অবচেতন মন সেটা নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে ও ভাবে তারা অনাকাংখিত কিছু করছে। তখনই তারা এমন কিছু করতে থাকে যাতে তাদের উদ্যোগ বিফলে যায়। নিজের অবচেতনের সাথে নিজের এই সংগ্রাম খুব বিপজ্জনক। 

২০২৪ সালে এসে আমরা দেখলাম এই আত্মঘাতী হ্যান্ড গ্রেনেডিং ইয়োর ওউন নেশনের চুড়ান্ত রূপ।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।