বিদেশী শক্তির প্ররোচনায় তার সেনাদলের বিশ্বসঘাতকতা এবং তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্য সন্ত্রাসী মবের তার বাসস্থান আক্রমণের কারণে দেশত্যাগ করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় প্রাচীনকালে এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটত।
একজন প্রকৃত রাষ্ট্রশাসক কিসের ভিত্তিতে দেশ শাসন করে? কেন তাকে মানুষ বিশ্বাস করে এবং তার শাসনের সময় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জন নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়? সেটা হল একজন রাষ্ট্রনায়কের সত্যবাদিতা, সাহস এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে তার প্রকৃত ইমেজ বা প্রতিমূর্তী।
সেই একই ইমেজ বা প্রতিমূর্তী যদি একজন মিথ্যাবাদী, লম্পট বা চোরকে দেওয়া হয়, তাহলে কি সে সেই রাষ্ট্র ঠিকমত চালাতে পারবে? এই প্রশ্ন নিয়েই ফ্যাসিবাদী জাপানের পটভূমীতে জাপানের খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক নির্মাণ করেছিলেন একটি সিনেমা যার নাম "কাগেমুশা"।
"কাগেমুশা" হলো কিংবদন্তি জাপানি পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া পরিচালিত একটি ঐতিহাসিক সামুরাই নাট্য চলচ্চিত্র, যা ১৬শ শতকের জাপানের সেনগোকু যুগের পটভূমিতে নির্মিত। সিনেমাটি মূলত সম্রাট শিংগেন তাকেদা ও তার ছায়া-চরিত্র বা দ্বৈত-ব্যক্তিত্বের কাহিনী নিয়ে আবর্তিত হয়।
১৫৭২ সালে জাপানে সেনগোকু বা যুদ্ধবিগ্রহের যুগ চলছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনজন প্রভাবশালী শাসকের মধ্যে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল যারা ছিল শিংগেন তাকেদা, ওদা নোবুনাগা এবং তোকুগাওয়া ইয়েয়াসু। তাকেদা বংশের প্রধান শিংগেন তাকেদা ছিলেন একজন দক্ষ কৌশলী এবং নির্ভীক যোদ্ধা। তার লক্ষ্য ছিল জাপানকে তোইৎসু বা একীকরণ এবং কিয়োতো দখল করে সম্রাটকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনা।
শিংগেনের সেনাবাহিনী একদিন একটি চোরকে ধরে, যে দেখতে একেবারে শিংগেনের মতো। রাজপরিবারের প্রধান উপদেষ্টা ও সামরিক কমান্ডাররা চোরকে নিয়ে আসে এবং একটি চমৎকার পরিকল্পনা করেন যদি শিংগেন কখনো আহত বা নিহত হন, তবে এই লোকটিকে "কাগেমুশা" বা ছায়া-রাজা হিসেবে ব্যবহার করা হবে, যাতে শত্রুরা রাজা মারা গেছেন বলে সন্দেহ না করে। এদে তার সৈন্যবাহিনী মনোবল হারাবে না এবং শত্রুরাও নতুন উদ্যম খুঁজে পাবে না। প্রথমে চোরটি রাজি হয়নি, তবে শাস্তি এড়াতে সে রাজি হয়। শিংগেন তাকে শেখান কিভাবে একজন রাজা চলাফেরা করে, কিভাবে কথা বলে, এবং কিভাবে রাজকীয় আচরণ করতে হয়।
শত্রুর বিরুদ্ধে এক যুদ্ধের সময় শিংগেন আহত হন এবং পরবর্তিতে মারা যান। কিন্তু তার উপদেষ্টারা এই সংবাদটি লুকিয়ে রাখেন, কারণ তারা জানতেন যে যদি শত্রুরা জানতে পারে শিংগেন মৃত, তবে তাদের পুরো সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে তারা চোরকে রাজা হিসেবে স্থাপন করেন, এবং সে ধীরে ধীরে শিংগেনের ভূমিকা পালন করতে থাকে। যদিও শুরুতে সে ভীত ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সে সত্যিকারের রাজা হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ছদ্মবেশে থাকার পরও, কাগেমুশা একদিন ধরা পড়ে যায়। সেনা সদস্যরা বুঝতে পারে যে তিনি আসল শিংগেন নন। সেই সাথে শত্রুরাও জানতে পারে যে শিংগেন আসলে মৃত, এবং এরপর তাকেদা বংশের ওপর এক ভয়াবহ আক্রমণ চালানো হয়।
চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় কাগেমুশা তাকেদা সেনাদের রক্ষা করতে চায়, কিন্তু যেহেতু সে প্রকৃত যোদ্ধা নয়, সে যুদ্ধে প্রাণ হারায়। তার মৃত্যু দিয়ে সিনেমা শেষ হয়, যা বোঝায় যে ছায়া কখনো আসল রাজার জায়গা নিতে পারে না।
ক্ষমতা ও প্রতারণার এই দ্বন্দ্বে কাগেমুশা সিনেমাটির কাহিনী বোঝায় যে শক্তি ও ক্ষমতার জন্য কখনো কখনো ছদ্মবেশ নেওয়া দরকার, কিন্তু সত্য শেষ পর্যন্ত সত্যিকারের রূপ প্রকাশিত হয়ে যায়। কাগেমুশা চরিত্রটি একটি ভেকধারীর মানসিক সংকট দেখায় যে কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে একজন রাজার ভূমিকায় মানিয়ে নিতে বাধ্য হলেও, তার সঙ্কট বাড়তেই থাকে। সিনেমাটি জাপানের সামরিক ইতিহাস এবং বুশিদো মানে সমুরাইদের নৈতিকতা বা সৈনিকদের নৈতিকভাবে শুদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়