দক্ষিন এশিয়ার ভূরাজনীতি

চীন মিয়ানমার ভারত ও জর্জ সরোসের ফাঁদ

১. মিয়ানমার নিয়ে জিওপলিটিক্স

কি হচ্ছে মিয়ানমারে? চীন মিয়ানমারের বহু পুরোনো বন্ধু। সামরিক জান্তা শাসিত মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদের বড় অংশ ভোগ করে চীন। মিয়ানমার চীন ও ভারতের মধ্যে একটি বাফার রাষ্ট্রও বটে। সেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আজ সরকারবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবীদের দখলে। তাহলে সেই সশন্ত্র বিপ্লবী আরাকান আর্মি (AA) নিশ্চই চীনের শত্রু হবে যেহেতু চীন মিয়ানমার সরকারের ভাল বন্ধু। কিন্তু রাজনীতি সরল বীজগনিত নয়। মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়া আরাকান আর্মি যে সশস্ত্র কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেই অস্ত্র তাদের কে দেয়? 

সকল বিশ্লেষণ বলছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি প্রধাণত চীন থেকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পায়। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান NORINCO এবং এর সামনে থাকা সংস্থা TCL-এর মাধ্যমে এই সহায়তা আসে। এই অস্ত্রসম্ভার সাধারণত দক্ষিণ চীনের হেইবেই বন্দর থেকে জাহাজে করে পাঠানো হয়। 

আপনার মনে হতে পারে এ আবার কেমন কথা? বন্ধুর শত্রুকে আমি অস্ত্র সরবরাহ করব কেন? কিন্তু এটাইতো প্রকৃতির নিয়ম। প্রতিটি প্রেমিকা বা বিবাহিতা নারীকে প্রশ্ন করুন। ভালবাসার মানুষটিকে তারা আবেগগতভাবে ভেঙেচুরে ঘায়েল করে তার পর গ্রহণ করে। শক্তির খেলা, সেটা লিঙ্গযুদ্ধই হোক বা রাজনীতি, সেখানে সরল বীজগনিত চলে না। 

ক্ষমতার রাজনীতি বা রিয়্যালপলিটিকে এই পদ্ধতিকে বলে দ্বৈত কৌশল (Dual Strategy)। চীন মিয়ানমারকে নিয়ে সেটাই খেলছে। তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতি এই জটিলতাতেই সীমাবদ্ধ নয়, সেখানকার সামরিক বাহিনী বহু পূর্ব থেকেই জণগণের সাথে ক্যাট অ্যান্ড মাউস খেলছে। অপরদিকে ভারতও খেলছে ভিন্ন দিক থেকে আর এক ধরি মাছ না ছুঁই পানি দ্বৈত কৌশল। আর আমেরিকান ডিপ স্টেট সেখানে এক নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রসব করে খেলছে "নিয়ন্ত্রিত অস্থিতিশীলতা নীতি" বা “Controlled Destabilization Doctrine”। সবার খেলা মিলে এখন মিয়েনমারের খেলা মানব বোধের অতীত। মিয়ানমারের কোন ভবিষ্যত নাই সশস্ত্র হানাহানি মারামারি ছাড়া।

মিয়ানমারের এখন সেই জিওপলিটিক্যাল পাত্র যেখানে "শয়তানের স্যুপ" রান্না চলছে। সেই স্যুপের কিছু ছলকে এসে বাংলাদেশে পড়েছিল রোহিঙ্গা সমস্যা নামে। সেটির সমাধান না করে আর এক আমেরিকান ডিপ স্টেট নোবেল শান্তি পুরষ্কার বাংলাদেশেকও শয়তানের স্যুপের পাত্র বানিয়ে ফেলেছে। এখনও সময় আছে প্রতিবাদ করুন, অসহযোগীতা করুন, সোচ্চার হোন, সেটা না হলে শীঘ্রই শয়তানের পাত্রে সিদ্ধ হবেন। মনে রাখবেন রাজনীতিতে যা ঘটে সেটা অত্যন্ত জটিল এবং খুব নাজুক। হাসিনা ভারতকে গালি দিয়ে পেছনদিকের চামড়া বাঁচবে না।

২. বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ফাঁদ

বহু আগে থেকেই আমি লিখছি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন ও শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের মূল কারণ চীন যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত ও চীনের জ্বালানী নিরাপত্তায় আঘাত হানা। এখন সেই সময় উপস্থিত। বাংলাদেশের বর্তমানের অবৈধ সরকার প্রধানের চীন সফর কখনই মিডিয়ায় যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো ছিল বলে আমি মনে করি না। এরকম দুর্গন্ধ একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অতি জরুরী বিষয় ছাড়া বৈঠক করতে চাইবে না। এই অবৈধ সরকার প্রধানের চীন সফর নিশ্চই ছিল চীনের হুমকি সরাসরী মূল ব্যক্তির কানে তুলে দেবার জন্য। চীন নিশ্চই জানে রাখাইন প্রদেশে কি হতে যাচ্ছে। তারা নিশ্চই জানে কিয়াকফিউ বন্দর ও সেখান থেকে কুনমিং পর্যন্ত আসা জ্বালানী পাইপলাইনের দখল যে কোন সময় আরাকান আর্মির কাছে চলে যেতে পারে। সেগুলো আরাকান আর্মির কাছে গেলেও চীন যাতে তার বিনিয়োগ ও জ্বালানী নিরাপত্তা না হারায় সেরকম গোপন সংযোগ চীন তৈরি করে রেখেছে আরাকান আর্মির সাথে। 

চীন নিশ্চই এটাও জানে যে এই সুযোগ আমেরিকা হাতছাড়া করবে না যেখানে রোহিঙ্গা নিয়ে খেলে আমেরিকার ডিপস্টেট একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন করেছে। চীন জানে আমেরিকার সরকার পরিবর্তন হলেও, নতুন সরকার ডিপ স্টেট বিরোধী হলেও, চীনকে কাবু করার এই এই সুযোগ ট্রাম্প সরকারও হেলায় হারাবে না। এখানে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করবে। এবং সেই হস্তক্ষেপ হবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে। তারা যে কোন ভাবে কিয়াকফিউ বন্দর এবং চীনের জ্বালানী বিষয়ক অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করবে। এবং সেটা করবে বাংলাদেশের অথর্ব, দুর্বল, অবৈধ, দুর্গন্ধযুক্ত সরকারে মাধ্যমে। চীন হয়ত সেই নিশ্চয়তা চেয়েছে যে বাংলাদেশ যেন কোনভাবেই মার্কিন ফাঁদে পা না দেয়।

বাংলাদেশের অথর্ব, দুর্বল, অবৈধ, দুর্গন্ধযুক্ত সরকার নিশ্চই ৫-১০ বছর ক্ষমতায় থাকার আশ্বাস পেলে সব কিছু বিকিয়ে দেবে। বাংলাদেশ মিয়নামার চীনের ক্ষতি করতে যদি আমেরিকাকে এই অঞ্চলে নিজের মাটি ব্যবহার করতে দেয়। সেটা হবে এই অঞ্চলকে আফগানিন্তান বানানের প্রথম ভৌত ধাপ। বাংলাদেশ চীনকে নিশ্চয় কথা দিয়ে এসেছে যে এমন কিছু তারা করবে না। এখন দেখা যাক মার্কিন প্রস্তাব তারা কিভাবে ফেরায়। যদি না ফেরাতে পারে, তাহলে অবস্থাটা হবে চিড়িয়াখানায় সেই বানরটির মত। যে চীনের দেয়া আস্ত কয়েৎবেল গিলে ফেলেছে, তার পরই দেখছে আমেরিকা তার জন্য আস্ত কাঁঠাল নিয়ে বসে আছে।

৩. ভারতের ধীর লিঙ্গারিং রোমান্টিক আচরণ

আমি সেই ৫ই অগাস্ট থেকেই দাবী করেছি যে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন আসলে ভারতের একটি কৌশলগত পরাজয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা কোন পরাশক্তি, এমনকি পাকিস্তানের মত দেশেরও বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন বা রাজনৈতিক মেরূকরণের প্রচেষ্টার চুড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের মত একটি ক্ষুদ্র দেশের রাষ্ট্র বা সরকারের সক্ষমতা নেই যুক্তরাষ্ট্র বা কোন পরাশক্তির সামনে বা পেছনে থেকে যে দীর্ঘমেয়াদী চক্রান্তকে মোকাবিলা করার। এই সব চক্রান্তের চুড়ান্ত লক্ষ্য যখন ভারত, তখন এইসব চক্রান্ত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার দায়িত্বও ভারতের। 

আগেই লিখেছি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন ও শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের মূল কারণ ভবিষ্যত চীন-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে এগিয়ে থাকতে চীনের জ্বালানী নিরাপত্তায় আঘাত হানা। যেটা করা হবে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে মিয়ানমারের কিয়াকফিউ বন্দরে ও নৌ ঘাটিতে আঘাত হানা - আরাকান আর্মিকে সহায়তা করে পরোক্ষভাবে। এটা ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য যেটা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক লক্ষ্য। 

এখানে আর একটি দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল এবং সেটি হচ্ছে ধর্মীয় দলগুলোকে উসকে দিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী খিলাফত কায়েম করে, তাদের সশস্ত্র করে, তার সাথে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের যুক্ত করে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোতে অনুপ্রবেশ করিয়ে সেই রাজ্যগুলোকে অস্থিতিশিল করা এবং সেগুলোকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ও জর্জ সরোস বাহিনীর দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক লক্ষ্য যেটা বাস্তবায়নে কাজ করছিল সিআইএ ও পাকিস্তানের আইএসআই। 

৫ই অগাস্ট তাই ভারত কৌশলগতভাবে হেরে গেছে। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে বিগত আওয়ামী সরকারের উপর গোস্মা করে বসে ছিল মোদি সরকার। ভারতের বাঘা বাঘা সব নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সমর বিশেষজ্ঞরা জানত না যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি মার্কিন পুতুল সরকার আসলে সেটা ভারতের জন্য কি হতে পারে? ৫ই অগস্টের আগে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে কি ঘটছে জানত না ভারতীয় ইনটেলিজেন্স?

যদি আমরা ধরেও নেই যে ৫ই অগস্টের ঘটনা ভারতের একটি অসচেতন দুর্ঘটনা। কিন্তু তার পর কি করছে ভারত? গত আট মাসে তাদের কৌশল কি? মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির যে অগ্রগতি সেটা ভয়ানক হয়েছে গত আট মাসে। ভারত জানত না যে আমেরিকা এই সুযোগটা হাতছাড়া করবে না? ট্রাম্প-মোদি বন্ধুত্ব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার চীনকে কায়দা করার সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য যথেষ্ট কি? ভারত কি জানত না যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার নিজেদের বাঁচাতে আমেরিকার যে কোন চাওয়ার সামনে পশ্চাৎদেশ পেতে বক্র হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে? 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা পরিবর্তন ও ট্রাম্প সরকারের নীতি পরিবর্তনের জন্য এবং তুলশী দিদির কল্যানে আপাতত দ্বিতীয় লক্ষ্যটি মুলতবি মনে হচ্ছে যে কারণে পাকিস্তান একটু পর্দার অন্তরালে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীও খিলাফতিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে না। যদিও প্রশাসনকে জামাতীকরণ, জেল থেকে সন্ত্রাসী মুক্ত করা, এবং মব ভায়োলেন্স বজায় রাখা - সমাজকে এরকম সন্ত্রাসীকরণ থেমে নেই। এটিকেই কি ভারত বিজয় ভেবে আপ্লুত? বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন ও শেখ হাসিনাকে বিতাড়নের মূল কারণ যেটা, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে মার্কিন রসদ (এবং অস্ত্র) যদি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে তৃতীয় দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে যাবার চ্যানেল তৈরি হয় সেটা ভারতের ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য কেমন হবে?

যৌনকর্মের যেমন নানা রকম ধরণ আছে, যুদ্ধের বা প্রক্সি যুদ্ধেরও আছে। কখনও সেটা হঠাৎ মনে হওয়া কুইকি, কখনও ঝটিকা আবেগের ওয়াইল্ড সেক্স আবার কখনও ধীর লিঙ্গারিং রোমান্টিক সেক্স। কখন আমরা কি করব সেটা কখনই আমাদের একার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। নিজের ইচ্ছা এবং পার্টনারের ইতিবাচক রেসপন্সের উপরই নির্ভর করে সেটার ধরণ কেমন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঝটিকা, পাকিস্তানের কুইকির প্রতিক্রিয়ায় ভারত যেন ধীর লিঙ্গারিং কৌশলে খেলছে। আবার এমনও হতে পারে ভারতের আসলে কোন কৌশলই নেই তাই সে ধীর ও নিষ্ক্রীয়। হয়ত বিগত আওয়ামী সরকারের মত তারাও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবিহীন একটি শিখন্ডি সরকার। এভাবে খেললে ৫ই অগাস্টের মত তাই ভারত কৌশলগতভাবে আবার হেরে যাবে বলেই মনে হয়।

৪. ভারতকে যুদ্ধে প্ররোচিত করার মহাপরিকল্পনা

৫ই আগস্ট এর বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন ও সেটার আগে পরে ভারতের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে আলাপ করতে গেলেই বহু মানুষ ভারতের সামরিক প্রস্তুতিকে সামনে টেনে আনে। তাদের বক্তব্য হল এই ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করল বলে! এই তো চিকেন নেক এলিফ্যান্ট নেক হয়ে যাচ্ছে আগামী সপ্তাহেই! অনেকে আবার এর মধ্যেই রংপুর-দিনাজপুর এবং চট্টগ্রামকে ভারতের ভেতরে ঢুকিয়ে মানচিত্র প্রস্তুত করে ফেলেছেন। 

ভারতের বিভিন্ন থিংক ট্যাংক এবং ভারতের মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম চ্যানেলগুলো যেন একটি যুদ্ধের জন্য মুখিয়ে আছে। তারা বুঝছে না যে ৫ই আগস্ট এর বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন এবং শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়ণের দীর্ঘমেয়াদি তৃতীয় উদ্দেশ্য হলো ভারতকে বাংলাদেশ আক্রমণে বাধ্য করা।

জর্জ সোরোস এবং মার্কিন ডিপ স্টেটের ইউক্রেন মডেলে রচিত হয়েছে সেই পরিকল্পনা। বাংলাদেশে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়া তৈরি করে এর মধ্যেই এর ভিত্তি রচিত হয়েছে। ভারত যদি বাংলাদেশে কোনো ধরনের আক্রমণ করে ঠিক তখনই পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করবে। সেটা বর্তমানের ট্রাম্প সরকার শুরু না করলেও পরবর্তি সরকার করবে। এসব পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী। যেটা হল বৃহৎ দেশগুলোর পার্শ্ববর্তী ছোট দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করে সেখানে জেলেনস্কির মত যুদ্ধবাজ পুতুল সরকার বসিয়ে বৃহৎ দেশগুলোকে যুদ্ধে উস্কানি দেওয়া। 

জর্জ সোরোস এবং মার্কিন ডিপ স্টেটের বড় মাপের বিশ্ব পরিকল্পনা হল একদিকে যেমন ছায়া যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করা যেমন রাশিয়া। অপরদিকে তাদের ব্যবসায়িক বা শিল্প উৎপাদনের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও ধ্বংস করা, যেমন চীন বা ভারত। সেই কারণে তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীন ও বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতকে ধ্বংস করা তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা স্পষ্ট।

অনেকে ভাবতে পারেন যে ভারত যখন দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত মিত্র, তখন তারা এটা কেন করবে? আসলে জর্জ সোরোস ও মার্কিন ডিপ স্টেটের একটি ভয়ংকর বিশ্ব পরিকল্পনা আছে। ঠিক যে পরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্যে সকল মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে যে জায়োনিস্ট মহাপরিকল্পনা নিয়ে তারা ইসরায়েলের কর্তৃত্ব স্থাপন করে ফেলেছে প্রায়, সেই একই নীলনকশা তারা সারা দুনিয়ার উপরে প্রয়োগ করতে চায়।

সেই লক্ষ্যেই তারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রঙিন বিপ্লব করে এবং ঠিক বাংলাদেশের মতই ইউক্রেনের নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে বিতাড়ন করে সন্ত্রাসী ও যুদ্ধবাজ রাশিয়া বিরোধীদের ক্ষমতায় বসায়। তারা ইউক্রেনে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষী ইউক্রেনীয়দের হত্যা, নির্যাতন ও বাড়িঘর ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি করতে থাকে ঠিক যেমন বর্তমানের বাংলাদেশে হিন্দু ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের উপর করা হচ্ছে যারা ভারত বিরোধী নয়। ইউক্রেনে বসবাসরত রুশ ভাষাভাষীদের উপর অবিরাম এই নির্যাতন রাশিয়াকে বাধ্য করে ঐ অঞ্চলগুলো দখলে নিতে এবং এটাই সুযোগ করে দেয় জর্জ সোরোস ও মার্কিন ডিপ স্টেটের নীলনকশা বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে।

ইউক্রেনে যা ঘটেছে, বাংলাদেশে যা ঘটছে এবং ভবিষ্যতে তাইওয়ানে যা ঘটবে, এগুলো সবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইস্যু তৈরি করে ক্রম প্রসারমান বিপর্যয়ের একটি চেইন অব ইভেন্ট তৈরি করা যেটাতে বৃহৎ রাষ্ট্রের শক্তিই ব্যবহৃত হয় তার নিজেকে ধ্বংস করতে। এটি অনেকটা ক্যান্সারের মত যেখানে শরীরের নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই নিজের কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে যায়।

এই পরিস্থিতিতে ভারতকে যুদ্ধের দিকে প্ররোচিত করাই যখন শত্রুর লক্ষ্য তখন ভারতের আগাম যুদ্ধের চিন্তা আত্মঘাতী। ভারতের প্রয়োজন শুরুতেই কৌশলগত ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সমস্যার মূলোৎপাটন যেখানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ এখনও যুদ্ধ চায় না। কিন্তু ভারত যদি কোনো যুদ্ধ শুরু করে, তখন এই হিসাব পাল্টে যাবে এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা এবং বাংলাদেশের অবৈধ সরকার সেটাই চাইছে।