শত শিশুর মৃত্যু ও শতাধিক মৃত্যুর পথে

মাইলস্টোন কলেজের স্কুল বিল্ডিং এখন দুর্ঘটনাস্থল নয় - এখন সেটা ফ্যাসিবাদীদের ক্রাইম সিন

মাইলস্টোন কলেজের স্কুল বিল্ডিং এর উপর বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭বিজি বিমান আঘাত করে শত শিশুকে হত ও শতাধিক আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সাথে লাড়াই করলেও সরকার থেকে এই ঘটনাকে ক্ষুদ্র করে দেখানোর প্রয়াস বিস্ময়কর। এর মধ্য সেনাবাহিনীর অপব্যবহার, লাশ গায়েব, রাতের আঁধারে সেখানে যাওয়া রাষ্ট্রীয় দুরাচারের ও আইন ভঙ্গের বিষয় স্পষ্ট করেছে। এই সব ঘটনা সরকারের সংবেদনহীনতা, সরকারের উচ্চপদস্থদের সাইকোপ্যাথিক চরিত্র এবং রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রমাণ।

এর সাথে আর একদল মফিজ উক্ত বিমানের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেদের অজ্ঞতা ও সেই অজ্ঞতা নিয়ে সরকারের তাবেদারীর হীন মানসিকতা নিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করছে। এটাকে বলে ডাইভারর্শন। উক্ত মফিজদের পরিচালিত করছে সেই সাইকোপ্যাথিক চরিত্ররাই।

কোন দেশের বিমান বাহিনীই অত্যাধুনিক বিমান দিয়ে বৈমানিকেদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয় না। কারণ অত্যাধুনিক বিমানগুলো ফ্লাই বাই অয়্যার যার অনেক কিছুই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত। শিক্ষনবিশ বৈমানিককে বেসিক নিয়ন্ত্রণ শিখতে হয়ে বেসিক বিমান দিয়ে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর আছে আছে ফ্রান্সে তৈরি অত্যাধুনিক দুঁসো রাফাল বিমান, কিন্তু তাদের বৈমানিকেদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হয় ভারতের তৈরি ১৯৬৮ সালের ডিজাইন এইচএএল কিরণ (HJT-16), ভারতের তৈরি এইচএএল তেজস (HAL Tejas) বা বিএই হক মার্ক ১৩২ (BAE Hawk Mk 132) এই সব বিমান দিয়ে।

আধুনিক বিমান কিনে আনলেই হয় না, তার জন্য উপযুক্ত ইকোসিস্টেম সক্ষমতা থাকতে হয়। আর্থিক, প্রযুক্তিগত, এবং মেধার সমন্বিত ইকোসিস্টেম সক্ষমতা না থাকলে বিমান কিনে সাজিয়ে রাখতে হয়। এর মধ্যেই অত্যাধুনিক মিগ-২৯ নিয়ে সেই অবস্থা। যন্ত্রাংশ কেনার টাকা নাই।    

এফ-৭ বিজি যেটা জে-৭ সামরিক জেট বিমানের একটি রূপান্তর, চীনের তৈরি একটি একক-ইঞ্জিন, হালকা ফাইটার জেট। এটি সোভিয়েত মিগ-২১ এর কাঠামো নকশার উপর ভিত্তি করে তৈরি। এফ-৭ বিজি হলো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য ২০১৩ সালে কাস্টমাইজড একটি উন্নত সংস্করণ, যা আধুনিক অ্যাভিওনিক্স এবং অস্ত্র ব্যবস্থার সাথে সজ্জিত। এই বিমানটি প্রাথমিকভাবে ইন্টারসেপ্টর এবং ক্লোজ এয়ার সাপোর্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি এফ-৭ সিরিজের বিমান রয়েছে, যার মধ্যে এফ-৭বিজি এবং এফ-৭বিজি ওয়ান সংস্করণ অন্তর্ভুক্ত। তবে সঠিক সংখ্যা গোপনীয়তার কারণে প্রকাশ্যে সবসময় স্পষ্ট নয়। জে-৭/এফ-৭ সিরিজের বিমান বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, এবং কিছু আফ্রিকান দেশ (যেমন, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে) ব্যবহার করে। চীন নিজেও অতীতে এই বিমান ব্যবহার করত, তবে তারা ধীরে ধীরে এটি প্রতিস্থাপন করছে।

সামরিক বিমানের কমিশনিং একটি জটিল ও কঠোর প্রক্রিয়া, যা নিম্নলিখিত ধাপে সম্পন্ন হয়। বিমান বাহিনী তাদের অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করে, যেমন- ফাইটার জেট, ট্রান্সপোর্ট, বা রিকনেসান্স। এর পর বিমান নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার পর টেন্ডারের মাধ্যমে বা জিটুজি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এফ-৭বিজি-এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীনের সাথে চুক্তি করে।

বিমান গ্রহণের পর, পাইলট ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিটি বিমান কারখানায় এবং স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা করা হয়। এর পর বিমানের অপারেশনাল ইন্টিগ্রেশন বা বিমানটি স্কোয়াড্রনে সংযুক্ত করা হয় এবং অপারেশনাল মিশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এর পর বিমানগুলোর অফিসিয়াল কমিশনিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিমানটি বিমান বাহিনীর বহরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়।

সামরিক বিমানের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত কঠোর এবং নিয়মিত প্রক্রিয়া। এটি অনেকগুলো স্তরে বিভক্ত থাকে।

যেমন দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিটি ফ্লাইটের আগে ও পরে বিমানের প্রাথমিক পরীক্ষা (প্রি-ফ্লাইট এবং পোস্ট-ফ্লাইট চেক) করা হয়। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি ১০০ ফ্লাইট ঘণ্টায় বা নির্দিষ্ট সময় পর পর গভীর পরিদর্শন। এটি ইঞ্জিন, অ্যাভিওনিক্স, এবং অস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রোগ্রেসিভ ইন্সপেকশন বা বেশি ব্যবহৃত বিমানের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পরিদর্শন, যেমন প্রতি ২৫ ঘণ্টায় একটি অংশ পরীক্ষা। 

এছাড়া ওভারহল নির্দিষ্ট থাকে যা কয়েক বছর পর ইঞ্জিন এবং প্রধান সিস্টেম সম্পূর্ণ মেরামত বা প্রতিস্থাপন করা হয়।

বিমান চালনায় রেকর্ডকিপিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম লগবুকে রেকর্ড করা হয়, যা পরবর্তী পরিদর্শন বা তদন্তের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সামরিক বেসামরিক সব বিমানেই প্রি-ফ্লাইট পরিদর্শন করা হয় যা সামরিক বা সুপারসনিক জেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। এফ-৭বিজি-এর জন্য সাধারণ চেকলিস্টে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে যেমন বাহ্যিক পরিদর্শন, বিমানের ফিউজলেজ, উইং, টেইল এবং ল্যান্ডিং গিয়ারে কোনো ক্ষতি বা ফাটল আছে কিনা। রিভেট, বোল্ট, এবং সেফটি ওয়্যার পরীক্ষা। ইঞ্জিন চেক, তেলের মাত্রা, জ্বালানি লিক, এবং এয়ার ইনটেক পরিষ্কার কিনা, ইঞ্জিনের অন্যান্য রুটিন পরীক্ষা। কন্ট্রোল সিস্টেম, ফ্ল্যাপ, রাডার, এবং অন্যান্য কন্ট্রোল পৃষ্ঠের মুক্ত চলাচল। কন্ট্রোল লক অপসারণ। অ্যাভিওনিক্স ও ইলেকট্রনিক্স, রাডার, জিপিএস, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা পরীক্ষা। ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা। অস্ত্র ও জ্বালানি, অস্ত্র সিস্টেমের সঠিক সংযোগ এবং কার্যকারিতা। জ্বালানি ট্যাঙ্কের পরিমাণ ও গুণমান পরীক্ষা।
সামরিক বিমানের উড্ডয়ন কঠোর শৃঙ্খলার মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় জড়িত দল এবং ধাপগুলো হলো:

পাইলট ব্রিফিং, পাইলটরা ফ্লাইটের আগে আবহাওয়া, রুট, এবং মিশনের বিস্তারিত তথ্য পান।

টেকনিক্যাল টিম, রক্ষণাবেক্ষণ দল প্রি-ফ্লাইট চেক সম্পন্ন করে এবং বিমানের এয়ারওয়ার্থিনেস নিশ্চিত করে।

ফ্লাইট অপারেশন টিম, ফ্লাইট প্ল্যান পর্যালোচনা করে এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর সাথে সমন্বয় করে।

কমান্ডিং অফিসার, মিশনের উদ্দেশ্য এবং নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

এটিসি ক্লিয়ারেন্স, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তি।

সামরিক বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং উড্ডয়ন একটি অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রক্রিয়া, যার মধ্যে থাকে নিরাপত্তা প্রথম, যা প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে ফ্লাইট বা মিশন বাতিল করা হয়। থাকে নিয়মিত পরিদর্শন। নিয়মিত এবং প্রোগ্রেসিভ পরিদর্শন নিশ্চিত করে যে বিমান সবসময় অপারেশনাল থাকে। প্রতিটি কার্যক্রমের তথ্য রেকর্ড করা হয়, যা ভবিষ্যৎ তদন্ত বা অডিটের জন্য ব্যবহৃত হয়। সবসময় পাইলট, টেকনিশিয়ান, এটিসি, এবং কমান্ডিং অফিসারদের মধ্যে নিখুঁত সমন্বয় বজায় রাখা হয়।

এই কঠোর শৃঙ্খলা এবং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যে এফ-৭বিজি-এর মতো সামরিক বিমান নিরাপদে এবং দক্ষতার সাথে মিশন (প্রতিদিনের উড্ডয়ন) সম্পন্ন করতে পারে।

বিমানের সক্ষমতা ও এইসব নিরপত্তা ও শৃঙ্খলা থাকার কারণেই প্রতিদিন বিমান বাহিনীর নানা মিশন চলছে এই ঘনবসতির ঢাকা শহরেই। বিমান মন্দ হলে সেগুলোকে আমরা টপাটপ আকাশ থেকে বিদ্যালয়ে আঘাত করতে দেখতাম। সুতরাং বিমান মন্দ, কে কিনেছে, কেন দেশে তৈরি, বিদেশী চক্রান্ত, জ্যামিং, রিমোট কন্ট্রোলে ভারতের হাত আছে এগুলো যারা বলছে তারা সাইকোপ্যাথ। শত শিশুর লাশের উপর দাঁড়িয় শয়তানের প্ররোচনায় বলছে।  

আমরা জানতে চাই নির্দিষ্ট এই ফ্লাইটটির বিস্তারিত যেখানে কতৃপক্ষ ও সরকার মিথ্যা বলছে, লাশ গুম করছে এবং বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চাইছে। এসব কারণে এবং ফ্লাইটটির গতিপথ বিচার করে এখন প্রচুর প্রশ্ন মানুষের মনে। এটি দুর্ঘটনা আর নেই, এখন এটি অপরাধ দৃশ্য বা ক্রাইম সিন।