আপনি যখন কোন সুন্দরী নারীর প্রেমে পড়েন তখন সে আপনাকে পাত্তাই দেয় না। তার ফোন নম্বরটা পেতে আপনাকে জুতোর তলা ক্ষয় করে কয়েক মাস ঘুরতে হয়। তার পর সে যখন আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন আপনি সেটা লুফে নেন এবং নিজেকে মহা ভাগ্যবান মনে করেন এবং দ্রুত বিয়ে করে ফেলেন। অথচ মেয়েটা প্রথমেই বিয়ের প্রস্তাব দিলে আপনি অনেক চিন্তা ভাবনা করতেন, অনেক বিচার বিবেচনা করতেন এবং পরিশেষে হয়ত না করে দিতেন।
উচ্চতর গণিতের গেম তত্ত্বের আলোকে এটা হল একটি দরকষাকষির কৌশল যেখানে প্রাথমিকভাবে খুব উচ্চ দাবি বা ঝুঁকি (High Stake) দিয়ে প্রতিপক্ষকে একপ্রকার মানসিক ও কৌশলগত চাপে ফেলা হয়। পরে সেই দাবি হ্রাস করে একরকম “win-win” পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, যেখানে প্রতিপক্ষ মনে করে সে কিছু একটা আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে সে নিজের মূল উদ্দেশ্যটাই অর্জন করে কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে সে মূল্যবান কিছু দান করে দিচ্ছে বা কোন চরম সুযোগ দিচ্ছে। এই কৌশলটি গেম তত্ত্বের "অ্যাঙ্করিং" এবং “কনসেশন” ও "কম্প্রোমাইজ" কৌশলের সাথে সম্পর্কিত, যেখানে প্রাথমিক উচ্চ দাবি প্রতিপক্ষের প্রত্যাশা নির্ধারণ করে এবং পরবর্তী ছাড় প্রতিপক্ষকে মনে করে যে তারা একটি ভালো চুক্তি পেয়েছে। ব্যবসায় একে "এক্সট্রিম ওপেনিং অফার" নামেও ডাকা হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দরকষাকষির পদ্ধতি গেম তত্ত্বের কৌশলের সাথে মিলে যায়। তিনি উচ্চ দাবি উত্থাপন করে প্রতিপক্ষকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে দাবি কমিয়ে প্রতিপক্ষকে সন্তুষ্ট করেন, যা শেষ পর্যন্ত তার জন্য জয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পদ্ধতিটিই তিনি তাঁর পারস্পরিক শুল্ক (reciprocal tariff) দরকষাকষিতে প্রয়োগ করছেন যেখানে বাংলাদেশের নির্বোধরা ঠকে গিয়েও খুশি হয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্পের এই কৌশল গেম থিওরির বিভিন্ন ধারণার সাথে মিলে যায়। যেমন বিশ্বাসযোগ্য হুমকি (Credible Threat) – তিনি শুরুতেই এমন এক অবস্থা তৈরি করেন যেন বিপক্ষ দল মনে করে, যদি তারা ট্রাম্পের শর্ত মানে না, তবে বড় ধরণের ক্ষতি হবে। এর পর একটি ন্যাশ ভারসাম্য (Nash Equilibrium) গঠন করা হয়। তিনি এমন একটি সমঝোতা ছক (payoff matrix) তৈরি করেন যেখানে তার প্রাথমিক দাবির তুলনায় মধ্যবর্তী সমাধানটিই অপরপক্ষের জন্য বেশি লাভজনক মনে হয় যদিও সেটা পরিশেষে ট্রাম্পের জন্যই লাভজনক। আচরণগত ভাবে সাধারণ মানুষ ১০০ টাকা লাভ করার চাইতে ১০০ টাকার ক্ষতি এড়াতে বেশি তৎপর থাকে। মানুষ ক্ষতি এড়াতে যেভাবে আচরণ করে, ট্রাম্প সেই মনস্তাত্ত্বিক স্বভাবকে ব্যবহার করেন যেটাকে বলে ক্ষতি এড়ানোর মানসিকতা থেকে প্রতারণা (Loss Aversion Exploitation)।
গেম তত্ত্বে, দরকষাকষি একটি পজিটিভ-সাম বা "নন-জিরো-সাম গেম" হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে উভয় পক্ষই কিছুটা লাভ করতে পারে, তবে এক পক্ষ অন্যের তুলনায় বেশি সুবিধা পেতে পারে। ট্রাম্পের কৌশল প্রায়শই "ম্যাডম্যান থিওরি" বা "খ্যাপাটে তত্ত্ব" এর সাথে যুক্ত, যেখানে তিনি প্রতিপক্ষকে ভয় দেখিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে তাদের ছাড় দিতে বাধ্য করেন। এই কৌশলের মূল উপাদানগুলোর মধ্যে প্রথম হল উচ্চ দাবি উত্থাপন (High Anchor)। যেমন ট্রাম্প প্রথমে একটি অত্যন্ত উচ্চ বা কঠোর দাবি উত্থাপন করেন, যা প্রতিপক্ষকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে নিয়ে যায়। এর পরের ধাপ হল চাপ সৃষ্টি (Creating Pressure)। এটা এই উচ্চ দাবির পে প্রতিপক্ষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা আলোচনায় দুর্বল অবস্থানে চলে যায়। এর পরের ধাপ হল কৌশলগত ছাড় (Strategic Concession)। পরবর্তীতে ট্রাম্প তার দাবি কিছুটা কমিয়ে আনেন, যা প্রতিপক্ষকে মনে করে যে তারা একটি ভালো চুক্তি পেয়েছে, যদিও ফলাফলটি ট্রাম্পের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।পরিশেষে যেটা হয় সেটা হল জয়ের ভাবমূর্তি (Perception of Victory)। ট্রাম্প এই কৌশলের মাধ্যমে নিজেকে বিজয়ী হিসেবে উপস্থাপন করেন, অপরদিকে অপর পক্ষও নিজেকে বিজয়ী হিসেবে উপস্থাপন করে তবে ট্রাম্পের বিজয়টা এখানে আরো লাভের আর অপর পক্ষের বিজয়টা হয় একটা হুমকি থেকে উদ্বেগজনিত ভুয়া ক্ষতি এড়ানোর মানসিকতা থেকে।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, এবং এর অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলো রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG) সেক্টর, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮০% এর বেশি এবং জিডিপির প্রায় ১০% অবদান রাখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার, যেখানে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ $৮.৪ বিলিয়ন মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে শার্ট, ট্রাউজার, পোলো শার্ট, আন্ডারগার্মেন্টস এবং সোয়েটারের মতো পাঁচটি প্রধান পণ্য ৮০% অবদান রেখেছে।
ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানির উপর ৩৭% পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা বিদ্যমান গড় শুল্ক (প্রায় ১৫%) এর সাথে যোগ হয়ে মোট শুল্ক ৫২% পর্যন্ত পৌঁছাতে পারত। এই উচ্চ শুল্ক বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দেয়, কারণ এটি মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে পারত। এই ঘোষণার ফলে মার্কিন ক্রেতারা কিছু ক্ষেত্রে অর্ডার স্থগিত করেন এবং দাম কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করেন, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
এই উচ্চ শুল্কের হুমকি বাংলাদেশকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, যেখানে ৪০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার এবং ৪০ লাখ শ্রমিক জড়িত, মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার হারানোর ঝুঁকিতে ছিল। ট্রাম্পের এই কৌশল বাংলাদেশের আলোচকদের উপর মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে, কারণ উচ্চ শুল্কের ফলে রপ্তানি হ্রাস পেলে অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারত। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চ শুল্কের আশঙ্কায় মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার স্থগিত করেছিল, যা শিল্পের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে।
আলোচনার পর, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক হার ৩৭% থেকে ২০% এ নামিয়ে আনে, যা বিদ্যমান গড় শুল্ক ১৬.৫% এর সাথে যোগ হয়ে মোট ৩৬.৫% শুল্ক হয়। এই হ্রাস বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি নিয়ে আসে, কারণ এটি তাদের মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করে। তুলনামূলকভাবে, ভারত ২৫% এবং চীন ৩০% শুল্কের সম্মুখীন হয়, যা বাংলাদেশকে তাদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে রাখে। এই ছাড়ের ফলে বাংলাদেশের আলোচকরা, যেমন খলিলুর রহমান, এটিকে একটি "কূটনৈতিক বিজয়" হিসেবে উপস্থাপন করেন, এবং শিল্প নেতারা যেমন বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান এটিকে বাজারের প্রতিযোগিতার জন্য একটি ইতিবাচক ফলাফল হিসেবে দেখেন। যদিও ৪০% মূল্য সংযোজন না থাকার কারণে বাংলাদেশেকে কতটুকু অতিরিক্ত কর দিতে হবে সেটা এখনও অজানা।
উপরন্তু, বাংলাদেশ মার্কিন কৃষিপণ্য ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং মার্কিন তুলা ব্যবহার করে শুল্ক হ্রাসের সুযোগ গ্রহণ করবে বলে মনে করে। বিজিএমইএ জানিয়েছে যে, যদি ২০% মার্কিন তুলা ব্যবহার করা হয়, তবে অতিরিক্ত শুল্ক মওকুফ করা যেতে পারে, যা বাংলাদেশের ৭৫% তুলাভিত্তিক পোশাক রপ্তানির জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে।
কে ২০% অতিরিক্ত শুল্ক বহন করবে?
এই ২০% শুল্ক মূলত প্রাথমিকভাবে মার্কিন আমদানিকারকরা (যেমন ওয়ালমার্ট, টার্গেট, বা ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন গ্যাপ এবং ভিএফ কর্প) প্রদান করবে, কারণ শুল্ক আমদানির সময় মার্কিন সীমানায় আরোপিত হয়। তবে, এই খরচ বণ্টন নিম্নলিখিতভাবে ঘটেবে:
মার্কিন ভোক্তারা: আমদানিকারকরা এই অতিরিক্ত খরচের একটি বড় অংশ মার্কিন ভোক্তাদের কাছে হস্তান্তর করে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে। জে.পি. মরগানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শুল্কের ফলে মার্কিন গ্রাহকদের জন্য পোশাকের দাম ০.২-০.৩ শতাংশ পয়েন্ট বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি $২০ মূল্যের শার্টের দাম $২৪-২৫ হতে পারে।
বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা: কিছু ক্ষেত্রে, মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশী রপ্তানিকারকদের উপর দাম কমানোর চাপ প্রয়োগ করে। উদাহরণস্বরূপ, স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানিয়েছেন যে কিছু মার্কিন ক্রেতা শুল্কের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দাম কমানোর দাবি করেছে। এটি রপ্তানিকারকদের লাভের মার্জিন কমিয়ে দেয়।
মার্কিন আমদানিকারকরা: আমদানিকারকরা প্রাথমিকভাবে শুল্ক প্রদান করে, তবে তারা এই খরচ ভোক্তা এবং রপ্তানিকারকদের মধ্যে বণ্টন করে। যদি তারা পুরো খরচ বহন করে, তবে তাদের লাভের মার্জিন কমে যায়, যা তাদের ব্যবসায়িক মডেলের জন্য চ্যালেঞ্জিং।
কে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
২০% শুল্কের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিভিন্ন পক্ষের উপর ভিন্নভাবে পড়বে:
বাংলাদেশী পোশাক শিল্প:
ক্ষতি: শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। যদিও ২০% শুল্ক চীন (৩০%) বা ভারত (২৫%) এর তুলনায় কম, তবুও এটি জর্ডান (২০%) বা ডিআর-সিএএফটিএ দেশগুলোর (কম শুল্ক) তুলনায় বাংলাদেশকে কম আকর্ষণীয় করে। ফলে, ক্রেতারা জর্ডান, মিশর বা কেনিয়ার মতো বিকল্প উৎসে সরে যেতে পারে।
শ্রমিকদের উপর প্রভাব: বাংলাদেশের ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিক, যাদের ৬০% নারী, কারখানা বন্ধ বা অর্ডার হ্রাসের কারণে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, এবং বিলম্বিত বিবাহের মতো সামাজিক অগ্রগতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রভাব: পোশাক শিল্প বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০% এবং জিডিপির ১০% এর জন্য দায়ী। শুল্কের ফলে রপ্তানি হ্রাস পেলে মুদ্রা সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।
মার্কিন ভোক্তারা:
ক্ষতি: শুল্কের ফলে পোশাকের দাম বৃদ্ধি মার্কিন ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করে। ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের মতে, ২০২৫ সালে শুল্কের কারণে মার্কিন পরিবারগুলো গড়ে $১,৩০০ অতিরিক্ত ব্যয় করবে। এটি মূল্যস্ফীতি বাড়ায় এবং নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলোর উপর অধিক চাপ সৃষ্টি করে।
মার্কিন আমদানিকারকরা:
ক্ষতি: আমদানিকারকরা শুল্কের অংশবিশেষ বহন করলে তাদের লাভের মার্জিন কমে। যদি তারা বাংলাদেশের পরিবর্তে জর্ডান বা মিশরের মতো কম শুল্কের দেশে সরে যায়, তবে বাংলাদেশী রপ্তানিকারকরা বড় বাজার হারাবে।
বাংলাদেশী অর্থনীতি:
মার্কিন কৃষিপণ্য আমদানির প্রভাব: বাংলাদেশ মার্কিন তুলা এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য ক্রয় বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা তার আমদানি ব্যয় বাড়ায়। এটি দেশের ৪৫% কৃষি শ্রমশক্তির জন্য হুমকি, কারণ ভর্তুকিযুক্ত মার্কিন পণ্য স্থানীয় কৃষকদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মার্কিন সরকার:
লাভ: ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং মার্কিন কৃষি রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লাভ অর্জন করে। তবে, যদি শুল্কের ফলে মার্কিন মূল্যস্ফীতি বাড়ে বা বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হয়, তবে এটি মার্কিন অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?
প্রাথমিক ক্ষতিগ্রস্ত: বাংলাদেশী পোশাক শিল্প এবং এর শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তারা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান হারাতে পারে এবং কারখানা বন্ধ বা চাকরি হ্রাসের মুখোমুখি হতে পারে। নারী শ্রমিকদের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিশেষভাবে গুরুতর হবে।
মাঝারি ক্ষতি: মার্কিন ভোক্তারা উচ্চ মূল্যের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলো। আমদানিকারকরাও লাভের মার্জিন হ্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি: বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানি হ্রাস এবং মার্কিন কৃষিপণ্যের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে। একই সাথে, ট্রাম্প প্রশাসন মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন ২০% শুল্কের মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, মার্কিন শিল্পের সুরক্ষা, এবং রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করছে। এই শুল্ক প্রাথমিকভাবে মার্কিন আমদানিকারকরা প্রদান করে, যা ভোক্তা এবং বাংলাদেশী রপ্তানিকারকদের মধ্যে বণ্টিত হয়। তবে, দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশী পোশাক শিল্প এবং এর শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ তারা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে।
নানা সাক্ষাৎকারে দেখলাম বাংলাদেশের সরকারী কর্তারা এবং পোশাক শিল্পের মালিকেরা নতুন ধার্য করা ২০% করে বেশ খুশি। গেম থিয়োরি মতে যেটা হবারই কথা। কিন্তু আমার হিসাবে এই খুশি দ্রুতই কান্নায় পরিণত হবে যদি আমরা এই পারষ্পরিক শুল্ক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের চুড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে তাকাই। পরের পর্বে আলোচনা করব কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সারা দুনিয়ায় এই ঝুঁকিপূর্ণ পারষ্পরিক শুল্ক আরোপ করতে গেল এবং তার ফলে তারা পরিশেষে কি পরিণতি দেখতে চায় এবং সেই আলোকে আমাদের পোশাক শিল্প কি পরিস্থিতিতে পড়বে।