EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
অনুসন্ধান

মুখস্ত নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ও

অগভীর চিন্তার প্রজন্ম

“মানুষের কী হয়েছে আমি জানি না: তারা বোঝার মাধ্যমে শেখে না, তারা অন্য কোনো উপায়ে শেখে — মুখস্ত (rote) বা অন্য কিছুর মাধ্যমে। তাদের জ্ঞান খুবই ঠুনকো!”

এই কথাটি নোবেল বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের। শিক্ষা সম্পর্কে রিচার্ড ফাইনম্যানের কথা বার বার বলার কারণ হচ্ছে তিনি শুধু নোবেল বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন না, তাকে বলা হয়ে থাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষকদের মধ্যে একজন এবং তিনি আধুনিকতম। শুধু তাই নয় শিক্ষার মৌলিকত্ব ও শিক্ষার মূল লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি সবসময় বলে গেছেন। তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানের সোনালী সময়ে তিনি জীবনযাপন করেছেন। তিনি ছিলেন আমেরিকার শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির) ছাত্র, পিএইচডি করেছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকতা করেছেন কর্নেল ইউনির্ভাসিটি ও ক্যালটেকে (ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি)। তিনি বলে গেছেন তার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন তার পিতা যার কোন উচ্চশিক্ষা ছিল না।

তিনি দেখে গেছেন আমেরিকায় প্রকৃত শিক্ষার পতন। তিনি সেটা বলে গেছেন, তার প্রতিবাদ করে গেছেন এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে গেছেন। রিচার্ড ফাইনম্যানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা গুরুত্বপুর্ণ কিনা? "ফাইনম্যান জবাবে বলেছেন বিষয়টা আমি জানি না। আমি জানি না এটা কেন দেওয়া হয়। যদি সুইডিশ একাডেমি এটা এক্স ওয়াই বা জেড কে দিতে চায় তো দিতে পারে কিন্তু এতে আমার কিছু যায় আসে না। নোবেল প্রাইজ, এটা একটা পেইন ইন দা ....। আমি সম্মান পছন্দ করি না।"

তিনি বলে গেছেন...

"আমি আমার কোন কাজের জন্য সমাদৃত হয়েছি, অন্য বিজ্ঞানীরা আমার কাজ গ্রহণ করেছেন, আমি আর কোন কিছু এর জন্য চাই না, আমি মনে করি না এর থেকে আর কোন কিছু চাইবার কোন অর্থ আছে, এটাতে সুইডিশ একাডেমির পুরস্কার দেবারও কিছু আছে। পুরস্কার – আমি তো পুরস্কার ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছি।"

আরও বলেছেন...

"পুরস্কারের কথা বলতে গেলে, পুরস্কার হলো নতুন জিনিষটি খুঁজে পাবার আনন্দ। অন্যরা সেটি নিয়ে কাজ করছে, তার থেকে নতুন যে পর্যবেক্ষণ – সেগুলোই বাস্তব জিনিষ, সম্মান হলো আমার জন্য অবাস্তব কিছু। সম্মানে আমি বিশ্বাস করি না, এটা আমাকে বিরক্ত করে। সম্মানে আমি বিশ্বাস করি না কারন সম্মান নিয়ম কানুন, সৈন্যদের ব্যাজ, ইউনিফর্মের মত, আমার বাবা এভাবেই আমাকে বড় করেছিলেন। এগুলো আমি সহ্য করতে পারি না।"

তিনি বলে গেছেন..

"আমি প্রথম সম্মান প্রাপ্ত হই যখন আমি স্কুলে একটি গ্রুপের সদস্য হই যার নাম অ্যারোস্টার। যারা ভাল রেজাল্ট করত তারা এই গ্রুপের সদস্য হতে পারত। এই গ্রুপের সদস্য হয়ে আমি দেখলাম এই গ্রুপের একমাত্র কাজ হলো মিটিংএ বসে আর কে কে আমাদের এই চমৎকার গ্রুপের সম্মানিত সদস্য হতে পারে সেটা নির্নয় করা।"

তিনি শেষ করেছেন.....

"এই ধরনের জিনিষ আমার একেবারে অপছন্দ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এইরকম বিষয় আমাকে বিরক্ত করে। যখন আমি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের মেম্বার হলাম, সেটাও আমাকে বিরক্ত করেছিল তাই আমি সেটা থেকে পদত্যাগ করেছি। এখানেও তাই, সবাই মিলে শুধু মিটিং করে খুঁজত যে আর কে কে আমাদের এই মহান সংগঠনের সদস্য হতে পারে। সেখানে পদার্থবিদেরা একজোট হয় যে একজন রসায়নবিদকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। কেন? কোন রসায়নবিদ উপযুক্ত হলে সমস্যা কি? পুরো জিনিষটাই পচে গেছে। কারন এইসব কার্যক্রমের উদ্দেশ্যই হলো সন্মান কে পাবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা।"

ফাইনম্যান বুঝেছিলেন যে উচ্চশিক্ষাকে একটা কাল্ট বানিয়ে ফেলা হয়েছে সেই খোদ আমেরিকাতেও। শিক্ষকেরা সেই কাল্টের পীর, ফকির, পুরোহিত - রাজা, উজির, বনে এক প্রতাপের রাজত্ব খুলে বসেছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষা লক্ষ্যচ্রুত হলে আসলে কি হয়?

যখন আমাদের সাগরের উপকূলে একটি নতুন চর জাগে, প্রতিবার জোয়ারের পানিতে সেটা ডুবে যায়। তার ফলে সেখানে নতুন পলি জমে। এই পলি খুব উর্বর। পানিতে ভেসে আসে নানা বীজ কিন্তু মাটি যথেষ্ট পুরু নয় তাই প্রথম সেটিতে জন্মে ঘাস। এই ঘাস খুব অল্প সময়ে ছেয়ে ফেলে পুরো চরটি।
প্রতি দিনের দুটো জোয়ার ও প্রতি মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় দুটো করে উঁচু জোয়ার পলিকে করতে থাকে পুরু। এর ফলে অন্য গাছের বীজ সেখানে অঙ্কুরিত হয়। যারা ঘাস থেকে অনেক দক্ষ, স্থায়ী এবং যাদের গভীর শিকড় জমা পলিকেও ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।

সেই সব গাছে ফুল ফোটে, ফল হয় এবং একসময় সেখানে আসে নানা প্রাণী। আমরা দেখি একটি অরণ্য তৈরী হয়েছে যার মূলে আছে মাটির গভীরে প্রেথিত শিকড়। এই শিকড় কিন্তু রাতারাতি গজায় না। প্রতিটি গাছকে বছরের পর বছর কাজ করতে হয় এই শিকড় গভীর থেকে গভীরে নিতে।

আমাদের মগজে শিক্ষার বিষয়টি ঠিক এই রকম। যে কোন মানুষ একটি লেকচার শুনলে বা কয়েকটি বই পড়ালে বা একটি কোর্স সম্পন্ন করলে তার সদ্য জেগে ওঠা মস্তিষ্কের চরে এক স্তর ঘাষ জন্মে মাত্র। এখানে ভাল ছাত্র আর খারাপ ছাত্রের তফাৎ হচ্ছে ঘাসগুলো কত স্বাস্থ্যকর এবং তার অবিচ্ছিন্নতা। কোন ছাত্র যত ভাল নম্বরই পাক সেটা নিশ্চিত করে না যে সেই মগজ একদিন ফুলে ফলে জ্ঞানঅরণ্যে শোভিত হবে।

নতুন জাগা চরে যথেষ্ট পলি জমলে যেমন নতুন নতুন বীজ ভেসে এসে অঙ্কুর গজে, শিক্ষার্থীর নতুন মগজেও তেমন যথেষ্ট পলি থাকতে হয় যেটা হল উৎসাহ এবং জিজ্ঞাসা যার ফলে সেখানে নতুন চিন্তার অঙ্কুর গজে। এই নতুন চিন্তার অঙ্কুরই সেখানে তৈরী করতে পারে গভীরতর চিন্তার শিকড়। গভীর শিকড় সমৃদ্ধ অনেক গাছই একটি ফুলে ফলে অরণ্যে শোভিত চিন্তার অরণ্য তৈরী করতে পারে যেখানে হতে পারে নতুন চিন্তার বিকাশ। বিষয়টি উদাহরণ হলেও মোটেই বাস্তবতা থেকে দুরে নয়। নিউরোসাইন্টিস্টরা দেখেছেন কোন কিছু জানা মানে সেটা মস্তিস্কের দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি অংশে তথ্য হিসাবে জমা রাখা।

আর কোন কিছু বোঝা মানে মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশের মধ্য নতুন নতুন নিউরাল সংযোগ এবং নিউরাল পাথওয়েজ তৈরী হওয়া। এই পাথওয়েজগুলো শিকড়ের মত যেটি আমরা চিন্তা করলেই শুধু তৈরী হয়, মুখস্থ করলে নয়। চিন্তা যত বেশী হয় এই পাথওয়েজগুলো তত গভীর হয়। এবং তার শাখা প্রশাখা ছড়াতে থাকে। সেটা যখন অন্য চিন্তার সাথে মিলে যায় তখন দুই বা ততধিক চিন্তা একই পাথওয়েজ শেয়ার করে। পদ্ধতিগত জ্ঞান চর্চায় এই পাথওয়েজ ও নিউরাল নেটওয়ার্ক যত সমৃদ্ধ হবে, সেই ব্যক্তি তত বেশী জ্ঞানী হবে এবং সে ধরতে পারবে পুরোনো চিন্তার সীমাবদ্ধতা এবং আনতে পারবে নতুন চিন্তা যেটা দেবে জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের পথ।

কিন্তু  যদি চিন্তা নির্ভর না হয়ে পেশা নির্ভর হয়ে যায় তখন সেটা হয়ে যায় সেই চরের মত যেখানে সর্বত্র ছড়ানো ছিটানো ঘাস কিন্তু একটি মাত্র তালগাছ যেটি তার পেশাগত দৈনন্দিন চিন্তার ফল।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।