সেই বান্ধবীর হঠাৎ ফোনঃ কি করবেন শুক্রবার?
আমি বললামঃ দেখি কি করা যায়, অনেকদিন পাখির ছবি তুলি না।
মেয়েটা বললঃ উফ আবার সেই বনে জঙ্গলে! আমিও যাব।
আমি বললামঃ এই গরমে তুমি এত হাঁটতে পারবা না আর তোমাকে দেখে পাখি সব পালাবে।
মেয়েটা বললঃ বলেছে আপনাকে, আমি যাব
বুঝলাম ছবি তোলা এই সপ্তাহে উচ্ছন্নে, বললামঃ তাহলে যা বলি সেটা মানতে হবে
মেয়েটা বললঃ ঠিক আছে
আমি বললামঃ শাড়ী বা রংচঙা জামা চলবে না, দুরে যাব, বাইকে দুই পাশে পা রেখে বসতে হবে
মেয়েটা বললঃ আর কিছু?
আমি বললামঃ কেডস আছে?
মেয়েটা বললঃ আপনি কন্ট্রোল ফ্রিক
আমি বললামঃ তাহলে নেব না
মেয়েটা বললঃ ওকে ভাইয়ারটা পরে আসব
আমি বললামঃ ঠিক আছে, ঠিক ছয়টায় রওয়ানা দেব, একটা গামছা নিও
মেয়েটা বললঃ গামছা কেন?
আমি বললামঃ ঘাম মুছতে হবে
মেয়েটা বললঃ যত্তোসব বলে রেখে দিল।
সময়ের ব্যপারে মেয়েটা সবসময় একদম ঠিক। দুর থেকে দেখলাম জিন্সের প্যান্ট ও একটা সবুজ চেকের ত্রি-কোয়াটার জামা আর কালো ওড়না। কাঁধে একটা পাটের ব্যাগ। কাছে আসতে জুতা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। হাই হিল স্যু!
আমি বললামঃ কেডস কি ব্যাগে?
মেয়েটা বললঃ কিসের কেডস? তারপর নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে সে আরও বেশী অবাক হয়ে গেল, বললঃ একদম ভুলে গেছি। সাথে সাথে বললঃ কোন ব্যাপার না। আপনাকে ভাবতে হবে না।
আমি বললামঃ ভাবছি না, দিব্যচোখে দেখছি, হিল ভেঙে পড়ে না গেলেই হলো
মেয়েটা বললঃ চলেন তো
সাড়ে আটটার দিকে পার্কে পৌছালাম। মোটরবাইক পার্ক করে হাটতে শুরু করলাম। গেটে সিভিল ড্রেস পরা একটা ছেলে ছিল খোঁচা খোঁচা দাড়ী। তার ব্যবহারে মনে হল আমি যেন তার কত দিনের চেনা। বলল মামা গাড়ি রাখেন তালা দেওয়া লাগবে না। এর পর কিছুক্ষন অযাচিত আমাদের ফলো করে ফিরে যাবার আগে বলল মামা ফ্রেস হইতে চাইলে ডাক দিবেন, রুম দিয়ে দিব, আমি এইখানেই আছি। এইসব প্রস্তাবে আগে মেজাজ খারাপ করতাম, চ্যালেঞ্জ করতাম যে সে কি ভাবে। এখন এদেরকেই দোটানায় রাখি যাতে ওরাই নিরাপত্তা দেয় রেষ্ট হাউজ ভাড়া ব্যবসার লোভে।
আমি বললামঃ লাগলে বলব।
এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় হাই হিলে পা ভাঙার ভয়ে আস্তে আস্তে হাটছি। একটা জিনিষ খেয়াল করলাম পাখি স্পট করাতে বান্ধবীটির অসাধারন দক্ষতা। আমি না দেখলেও সে দেখছে ঐযে একটা পাখি। যদিও নাম না জানার ফলে বলতে পারছে না কি পাখি।
আমি বললামঃ তুমি তো দারুন স্পট করতে পার, খুব ভাল বার্ড ওয়াচার হতে পারবা।
মেয়েটা বললঃ হ্যাঁ তারপর বনে জঙ্গলে ঘুরে আপনার মত কালো ভুত হই
আমি বললামঃ ভুতেরা পেত্নির চাইতে ভাল
হঠাৎ দাড়িয়ে পড়ল বললঃ আমি পেত্নি?
আমি বললামঃ হলে ভালই হত, কষ্ট করে না হেঁটে লাফিয়ে ঘাড়ে উঠে যেতে পারতা
মেয়েটা বললঃ সেটা তো এখনও উঠতে পারি
ঠিক তখনই ঘটল ঘটনাটা। হিলটা পড়ল ইটের ফাঁকে আর সাথে হড়কে গেল পা। কি হয়েছে বোঝার আগেই উফ মা'গো বলে কানফাটা চিৎকার। আমি সাথে সাথে ধরলাম। মনে ভয় এবার সত্যিই কাঁধে না নিতে হয়। কিন্তু না। চিৎকারটার মত তেমন গুরুতর কিছু ঘটেনি তবে ব্যাথা পেয়েছে। কাছেই একটু বসে তারপর মিশন সমাপ্তি ঘোষনা করব ভাবছি এমন সময় শুরু হল ঝিরঝির বৃষ্টি। ওখানে আর থাকতে চাইলাম না। চলে এলাম রাস্তার ওপারের একটি নতুন খোলা রেস্তোরায়।
সকালের নাস্তার সময় শেষ আবার লাঞ্চের সময়ও হয়নি। ভাবলাম বসে গল্প করা যাক যেটা আমাদের উভয়েরই প্রিয়। সাধারণ বন্ধুসুলভ কথার মাধ্যমে উভয়ের আবেগ বুদ্ধি আর চেতনা নিয়েই যেন আমরা খেলতে পারি এক রঙিন খেলা যাতে কেটে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা।
আমি বললামঃ ব্যাথা করছে?
বলে ফেললঃ একটু, কিন্তু মুহুর্তেই বললঃ না, মনে হয় মনে পড়ল যে জুতার খোঁটা দিতে পারি।
এমন সময় পিশু পিশু বলতে বলতে দৌড়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা দরোজা দিয়ে ঢুকে পড়ল আর তার পেছনে হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে তার অল্প বয়ষ্কা মা। কথা বন্ধ করে বাচ্চাটার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা আর আমি মা’টার দিকে। সুন্দরী কোন নারী যখন সত্যিকারের আনন্দে থাকে তখন যেন স্বর্গ নেমে আসে সেইখানে। হঠাৎ মেয়েটা দেখল যে আমি মা’টার দিকে তাকিয়ে, হাসি থামিয়ে সাথে সাথে উঠে পড়ল সে। উঠতে গিয়েই উফ বলে ব্যাথায় ঝুঁকে পড়ল, গুঁড়ি হয়ে পায়ের হিল জুতা ঠিক করল। এমন সময় ওড়নাটা পড়ে গেল আর নজরে পড়ল জামার ভেতরটা। আমি তাকিয়ে আছি দেখে ক্ষণিকের লাজুকতা দেখা গেল চোখে মুখে তারপর বলল বসেন আসছি। পুরো বিষয়টা ঘটে গেল এক মুহুর্তে। আমি ঠিক বুঝলাম না ঘটনাটা ইচ্ছাকৃত কিনা। মেয়েদের এই ঘটনাগুলোই ঢাকা থাকে শ্রোয়েডিঞ্জারের সেই বিড়ালের বাক্সে যেটা আপনি কখনোই নিরুপন করতে পারবেন না যে এটা ইচ্ছাকৃত ছিল না কি অনিচ্ছাকৃত। ফিরে এল যখন তখন দেখলাম মেকআপ, চুল ঠিক করা। বুঝলাম ওয়াশরুমে গিয়ে এক প্রস্থ রুপচর্চাও হয়েছে।
আমি বললামঃ কি, ব্যাথা লাগলো পায়ে?
মেয়েটা বললঃ হ্যাঁ তবে পায়ে না
আমি বললামঃ তবে কোথায়?
মেয়েটা বললঃ যেভাবে মহিলার দিকে তাকিয়ে ছিলেন
আমি বললামঃ হ্যাঁ, মেয়েটার কোমরটা দেখেছ, যেখানে শাড়ীটা শেষ হয়ে...
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললঃ থাক বর্ণনা দিতে হবে না, আপনারা ছেলেরা সব এক, মাথায় শুধু সেক্স আর সেক্স
আমি বললামঃ তুমিওতো বাচ্চাটার দিকে দাঁত বের করে হাবার মত তাকিয়ে ছিলা, ওটা কি?
মেয়েটা বললঃ ওটা সেক্স? আপনি অসহ্য
আমি বললামঃ আমারটা আর তোমারটা একই আবেগ, বংশবৃদ্ধির তাড়নায় দৃষ্টি ইন্দ্রিয়ের আবেগগত আনন্দ
মেয়েটা বললঃ শুরু হল তত্বকথা
আমি বললামঃ আচ্ছা দেখা যাক কার বেশি সময়, প্রচেষ্টা, অর্থ সেক্সের মানে রিপ্রডাকশনের লক্ষ্যে খরচ হয়।
মেয়েটা বললঃ মানে?
আমি বললামঃ এই ধর তোমার হবি কি? ভাললাগা কি, জীবনের লক্ষ্য কি, তুমি তোমার আয়ের সবচেয়ে বেশী কিসে খরচ কর?
মেয়েটা বললঃ সেক্স না
আমি বললামঃ কিন্তু পোশাক, কসমেটিক্স, পড়াশোনা, ডিগ্রি তাও ভাল বিয়ের জন্য
মেয়েটা বললঃ আর আপনি?
আমি বললামঃ আমি এখান থেকে বের হলেই ওই সুন্দরী মা’টা আমার মন থেকে চলে যাবে সে যত সুন্দরীই হোক। তারপর দিনের ৯৫% কাজ বা চিন্তায় যুক্ত হব যার সাথে সেক্স, বিয়ে, নারী এসবের কোন সম্পর্ক নাই।
মেয়েটা বললঃ আমরা কি অন্য কিছু?
আমি বললামঃ চিন্তা করে দেখ তোমাদের সব কিছুই কিন্তু পুরুষের চোখে পড়া, তাদের মন জয় করা, তাদের মধ্যে সেরা যে তার স্ত্রী হবার চেষ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ তার মানে লক্ষ্য সেক্সুয়াল রিপ্রডাকশন।
মেয়েটা বললঃ কখনই না
আমি বললামঃ তোমার ঘরে কি কি জিনিষ আছে, তুমি কিসে সবচেয়ে বেশী টাকা খরচ কর, কি নিয়ে ভাব এগুলো মিলিয়ে দেখ একটা ছেলের সাথে তাহলেই বুঝবে।
মেয়েটা বললঃ হ্যাঁ আপনি বললেন আর হয়ে গেল মেয়েদের জীবনের লক্ষ্য সেক্স।
আমি বললামঃ লক্ষ্য সেক্স না, লক্ষ্য অপরের সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকটিভ ইন্টারেস্ট
এমন সময় ওয়েটার এল বলল স্যার খাবার রেডি কি খাবেন? করেলা ভাজি, মুরগী, রুই মাছ, ডাল। আমি ওর দিকে তাকালাম।
মেয়েটা বললঃ মুরগী না, মাছ খাব।
আমি বললামঃ ভাত, মাছ করেলা ভাজি, ডাল
খাবার দিয়ে গেল। করেলা ভাজিটা খুব সুন্দর, পাতলা করে কাটা, হালকা ভাজা, স্মেল, টেস্ট সবই আছে কিন্তু কম তিতো।
আমি বললামঃ তুমি করেলা খাও?
মেয়েটা বললঃ না, তিতো!
আমি বললামঃ আমার খুব ভাল লাগে
মেয়েটা বললঃ ঠিক আপনি নিজে যেমন
আমি বললামঃ ধর গ্রামের এক কৃষক, সে করেলা খেতে পছন্দ করে না, তিতো লাগে
মেয়েটা বললঃ তো?
আমি বললামঃ তারপর সে দেখল করেলার দাম অনেক এবং চাষে লাভ বেশী। সে সিদ্ধান্ত নিলো করেলা চাষ করবে। সব সময় চিন্তা করে করেলা নিয়ে। কিভাবে চাষ হয়, কোথায় ভাল বীজ পাওয়া যায়, কোন সারটা ভাল। কোন সময়টা ভাল ইত্যাদী।
মেয়েটা বললঃ হুম।
আমি বললামঃ তারপর সে করেলা চাষ করে অনেক লাভ করে একটা নিরাপদ জীবন পেল, টাকা পয়সা হল, রাতে ঘুম মনে শান্তি এল।
মেয়েটা বললঃ তো কি?
আমি বললামঃ এখন ওই কৃষক কি করেলা পছন্দ করে না করে না?
মেয়েটা বললঃ উদ্ভট প্রশ্ন
আমি বললামঃ মেয়েরাও এখন সব করেলা চাষী, খায় না কিন্তু চাষ করে
মেয়েটা বললঃ মানে?.. আপনি না একটা চরম....