কিছুদিন আগে একটি নামকরা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম নারী ও শিশু নির্যাতন সমাজে বেড়ে যাচ্ছে এই নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা সভায়। সভাটিতে বেশিরভাগ ছিলেন নারী যারা পেশাজীবি, অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কাজ করেন এবং সবাই সমাজিকভাবে সক্রিয়। বেশিরভাগ বক্তাই নারীর পরিস্তিতির জন্য রাজনীতি, দেশের আইন কানুন, ধর্ম, বিচারহীনতা, সমাজের পুরুষকেন্দ্রীকতা, নারীবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদী নানা বিষয়ের দোষ দিলেন। যিনি যে পথের ক্ষুব্ধ যাত্রী তিনি সেই পথের দোষ ধরলেন অনেকটা যত মত তত পথ এবং যত দোষ নন্দ ঘোষের মত। অথচ সমাধানের কথা যখন আসল তখন আর মতভিন্নতা দেখা গেল না। সবারই এক সুর, একে একে পুরুষদের ধরতে হবে আর জেল, ফাঁসী, ক্রসফায়ারে দিতে হবে। কঠোর আইন আর শাস্তি ছাড়া দেখলাম আর কারও কোন চিন্তা নাই। বিষয়টা যে একটি দুনিয়াব্যপী চীরন্তন সমস্যা, উন্নত বিশ্বেও যে পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়, নারী পুরুষ যে সামাজিকভাবে অবিচ্ছেদ্য একটি একক এবং এই সমস্যার ভুক্তভোগি আসলে উভয়েই - এসব নিয়ে কোন আলাপ শুনলাম না। সমাধানের প্রশ্নে শিক্ষা এবং অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওযা সমাজে যে এই সমস্যা কমছে না, বরং বাড়ছে, সেদিকে কারও কোন খেয়ালই নেই। অনেকেই খুৎবা বা ওয়াজে যে নারীবিদ্বেষ ছড়ানো হয় তার দোষ দিলেন। অবশ্যই সেগুলো জনস্মুখে নারীর প্রতি অবমাননা বা পাবলিক ভার্বাল অ্যাবিউজ এবং সেগুলো নারী ও বিশেষ করে কিশোর কিশোরীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যেগুলো বন্ধ হওয়া উচিৎ। কিন্তু নারী নির্যাতনের বিষয়টি আরও অনেক জটিল গভীরতর সমস্যা।
উক্ত সভায় আমি যখন উদিয়মান কিশোরদের সুস্থ মানসিক বিকাশের কথা বলতে গেলাম তখন অনেকেই রে রে করে উঠলেন। বিষয়টা যেন এমন যে ‘মানসিক’ শব্দটা উচ্চারণ করেই আমি অপরাধী পুরুষদের বাঁচিয়ে দিতে চাচ্ছি। আমার কথার পর অনুষ্ঠানটা যেন আলোচনা থেকে গরম গরম আবেগী কথার রাজনৈতিক সভায় রূপ নিল। মন খারাপ হয়ে গেল, হতাশ হয়ে গেলাম, মনে হল এই ভেবে যে আমি কেন আসলাম এইখানে যেখানে আমার যৌক্তিক ও বিশ্লেষনাত্মক চিন্তার বিন্দুমাত্র মুল্যই নেই?
ইউরোপ আমেরিকার পুলিশ খুব দক্ষ। নামকরা পশ্চিমা দেশগুলোর আইন আদালতও কঠোর। সেখানে কি নারী নির্যাতন কম? মোটেও না। আমি আমার জীবনে যত জন পশ্চিমা বান্ধবীদের সাথে ঘনিষ্টভাবে মিশেছি বা তাদের সাথে এমন সম্পর্ক হয়েছে যাতে মনের সব কথা নিশ্চিন্তে শেয়ার করা যায়, তাদের বেশিরভাগের কাছেই শুনেছি কিভাবে কিশোরী বয়সেই, স্কুলে থাকতে বা হাইস্কুলে থাকতেই ডমিনেন্ট বন্ধু, ছেলেবন্ধু বা আত্মীয় দ্বারা তারা তাদের অনিচ্ছাতেই প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই সেটা তাদের মনে নেতিবাচক ছাপ ফেলেছে এবং অনেকে সেটা সারাজীবন বয়ে বেড়াচ্ছে। অল্প বয়সে বিষয়গুলো এমনভাবে ঘটে যে পরিস্থিতির কারনে তারা এমন কিছু করে ফেলে যাতে ঘটনার দায়টা তাদের উপরেও বর্তায় তাই তারা এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না। নির্যাতনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে মেনে নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাথী মেয়েদের সাথে মেয়েদের তীব্র প্রতিযোগীতার (পিয়ার কম্পিটিশন) কারনেই তারা দাপুটে বা ডমিনেন্ট ছেলেগুলোর মনোযোগ পাবার চেষ্টা করে যারা সামাজিকভাবে মেয়েদের কাছে আকষর্নীয়। এরই সুযোগ ডমিনেন্ট ছেলেগুলো নেয় যারা আসলে নির্যাতক চরিত্রের। সুতরাং শুধু আইন, বিচার পুলিশ দিয়ে নারী নির্যাতন রোধ করার চিন্তাটা বেশিরভাগ সময়েই কাজ করে না।
কিশোর বয়সে বেশিরভাগ ছেলেরা যেমন নারীর দৈহিক সৌন্দর্য্যের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং একটি ক্ষুদ্র অংশ যারা মাস্তান প্রকৃতির রেবেল চরিত্রের ডমিনেটিং মানসিতকার, তারা এটাকে খেলা হিসাবে নেয়। কিশোরী মেয়েদের বেশিরভাগের মনেই কিন্তু ছেলেদের প্রতি আকর্ষন যেটুকু জন্মে, তার চেয়ে ঢের বেশি জন্মে নিজ সম্পর্কে হীনমন্যতা (যত সুন্দরীই সে হোক না কেন) ও বান্ধবী বা সহপাঠীদের প্রতি ঈর্ষা ও প্রতিযোগীতা। কোন মেয়ে সুন্দরী হলে বহু ছেলে তার জন্য প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয় কিন্তু সেটা শুধুই মেয়েটির সৌন্দর্য্যের জন্য। অপর দিকে মেয়েরা যখন কোন ছেলের জন্য প্রতিযোগীতা করে সেটা অনেকটাই অন্য মেয়েদের প্রতি ঈর্ষা ও তাদের সাথে প্রতিযোগীতায় জিতে যাবার জন্য। সেই পুরুষটির প্রতি সত্যিকারের আকর্ষন তাদের মনে তখনও তৈরীই হয় না। এর ফলে অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে প্রেম বলতে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষনের চাইতেও দাপুটে ছেলেটি বা ডমিনেন্ট মেলটির নিকট নিজেকে এক ধরনের উৎসর্গ করার বা পুরুষটিকে তুষ্ট করার প্রচেষ্টা চলে আধুনিক পশ্চিমা মুক্ত সংস্কৃতিতেও।
আমেরিকার অনেক মনোবিদ যারা নারীনির্যাতন নিয়ে কাজ করেছেন তারা দেখিয়েছেন যে কেন অনভিজ্ঞ ও অল্পবয়সী আমেরিকান নারীরা মন্দ চরিত্রের বা নিপিড়নকারীর চরিত্র দ্বারা আকৃষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, তাঁরা এও দেখিয়েছেন যে মেয়েরা যত বেশি পিতা মাতার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, তারা তত বেশি মন্দ বা দাপুটে, মাস্তান চরিত্রের ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বিষয়টা অনেকটা এরকম। সবসময় নিষেধ আর নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকতে থাকতে তাদের মনে নিয়ন্ত্রণভীতি তৈরী হয়। তখন কোন ভদ্র ও নিয়ম মেনে চলা ছেলে তার অবচেতনে সেই ভীতি এনে দেয় যে তার বাবা মা যে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে তাকে রাখে, সেটিই ছেলেটিও নিশ্চই সারা জীবনের জন্য তাকে তেমনই নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করবে। সেই কারনেই তারা প্রশ্রয় দেয় তাদেরই যাদের মধ্যে একধরনের নিয়ম না মানার ও সবকিছুকে অবজ্ঞা করার প্রচেষ্টা আছে।
এর সাথে আর একটি বিষয় কাজ করে যেটি সামাজিক নয়, প্রবৃতিগত ও জিনগত বা জেনেটিক। যেহেতু বংশবৃদ্ধি ও শিশুকে শরীরে ধারনের জন্য মায়ের যৌন সুস্বাস্থ্য অপরিহার্য্য, তাই পুরুষ নারীর দৈহিক সৌন্দর্য্যকে অবজ্ঞা করতে পারে না। নারীর বড় বুক, চওড়া নিতম্ব ও চিকন কোমর বিবর্তনের প্রাথমিক সময়ের সেই হান্টার গ্যাদারার আমলে যথাক্রমে এই নিশ্চয়তা দিত যে যদি তার সঙ্গী পুরুষটি শিকারে গিয়ে কিছুদিনের জন্য না ফেরে তাহলে তার বড় বুক সন্তানকে সেই কয়দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে, তার চওড়া নিতম্ব মানে তার পেলভিক বোন চওড়া যেটা বড় মাথার শিশু জন্মের সময় তার মৃত্যু ঘটাবে না ও তা যথেষ্ট চর্বি সংরক্ষন করবে যেটা খাদ্যসংকটে মায়ের বেশিদিন বেঁচে থাকা নাশ্চিত করবে। চিকন কোমর এই নিশ্চয়তা দেয় যে সে অন্য কোন পুরুষের সন্তান ধারণ করছে না। হিউম্যান পুরুষের জিনেই এগুলো লেখা তাই দৈহিক আকর্ষনকে অবজ্ঞা করা তার পক্ষে অসম্ভব যদি না সে মেয়েটির মধ্য নিতান্তই এমন কিছু দেখে যেটি সে মনে করে তার জন্য বিপজ্জনক।
কিন্তু মানব বিবর্তনের ওই পরিস্থিতিতে ছেলেদের মধ্যে মেয়েরা কিসের নিশ্চয়তা চাইত? মেয়েরা প্রথম যেটি চাইত সেটি হল পুরুষটি দলের নেতা কিনা। তখনও মেয়েরা জানত যে দল নেতাদের সন্তানেরা বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশী সুযোগ সুবিধা পায়। এরপর তারা দেখত ঐ পুরুষের কোন সঙ্গী বা স্ত্রী আছে কি না। সঙ্গী বা স্ত্রী থাকা পুরুষেরা তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে অপেক্ষাকৃত নিয়ন্ত্রিত আচরণ প্রকাশ করে। তাই নিয়ন্ত্রিত পুরুষদের প্রতি তারা জেনেটিক্যালিই আকর্ষিত নয়। এখনও পশ্চিমা সমাজগুলোতে যে ছেলেরা মায়ের প্রতি অনুগত ও মায়ের মত অনুযায়ী চলে তাদের মেয়েবন্ধু জোটে না। মেয়েরা আকর্ষিত নিয়ম ভাঙ্গা রেবেল চরিত্রের নেতাসুলভ মাস্তানদের প্রতি যারা আলফা মেলের দৈহিক ভাষা বা বডি ল্যাংগুয়েজ প্রকাশ করে। যদিও মেয়েরা সবসময় ভাবে যে তার নারীশক্তি (গার্ল পাওয়ার) দিয়ে যে কোন মাস্তানকে ঠিকই নিয়ন্ত্রণ করে নিতে পারবে কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তার পছন্দের এই রেবেল পুরুষটিই নিপিড়নকারী।
এই কথাগুলোর প্রমান পাওযা যাবে সারা পৃথিবীর প্রায় যে কোন সংস্কৃতির জনপ্রিয় চলচিত্রগুলোর নায়ক নায়িকাদের চরিত্র বিশ্লেষন করলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নায়িকারা হয় চেহারা ও দৈহিকভাবে সুন্দরী আর নায়ক বিপ্লবী, রেবেল, নিয়ম না মানা মাস্তান। চলচিত্রে দেখা যায় তাই জেমস বন্ডের পির্য়াস ব্রসনান, অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান রাস্তায় মারামারি, মাস্তানী, মেয়েদের উত্যক্ত করে চলেছে যারা কিনা মেয়েটা প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হবার পরই হঠাৎ ভদ্র হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময়ই এরকম হ্যাপি এন্ডিং হয় না। অভদ্রতা, অ্যবিউজ, অপরের অধিকার ভঙ্গ করা যাদের স্বভাব, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই গভীর প্রেমেও চলে যায় না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে মেয়েদের উপর বাবা, মা বা পরিবারের নিয়স্ত্রন যত বেশি, তারা তত বেশি দাপুটে, বাউন্ডেলেদের পছন্দ করতে পারে। মধ্য যুগ থেকে, অর্থাৎ সামন্ত্রতান্ত্রিক আমলে থেকে যখন সমাজে, পরিবারে মেয়েদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রনে রাখা হত তখন তারা এই সমস্যার একটি সমাধান বের করেছিল। সেটি হল তারা অল্প বয়সেই মেয়েদের সঙ্গী (স্বামী) যোগাড় করে দিত ও নিজের সঙ্গী পছন্দের জন্য মেয়ের মতামতের তেমন কোন কোন মুল্য দিত না। বাবা মা বা পরিবারের গুরুজন তার সঙ্গী নির্বাচন করে দিত। এতে নিয়ন্ত্রিত থেকেও মন্দ স্বভাবের পুরুষকে সঙ্গী হিসাবে নির্বাচন করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হত না। মজার বিষয় হচ্ছে ভারতবর্ষে আদি কালে, অর্থাৎ সেই শিকার, বন প্রকৃতি নির্ভরতার কালে নারীদের প্রতি সমাজ পরিবারের নিয়ন্ত্রন কঠোর ছিল না। তখন ঠিকই নারী পছন্দমত সঙ্গি নির্বাচন করত যাকে আমরা স্বয়ম্বরা বলে জানি। এখনও আমাদের এলাকাতে অনেক আদি (পাহাড়ি) সমাজে মেয়েরা তুলনামুলকভাবে স্বাধীন ও তারা নিজেরাই পাত্র পছন্দ করে থাকে।
আমেরিকার নারী নির্যাতন সংক্রান্ত একটি মুল্যবান গবেষনা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যসোসিয়েশন (JAMA)' সাময়ীকিতে যেখানে শুধুমাত্র পিয়ার রিভিউড গবেষনাপত্র প্রকাশিত হয়। সেই গবেষনায় দেখা গেছে আমেরিকায় ত্রিশ লক্ষ নারীর যা হল প্রতি ষোল জন নারীর একজন, জীবনে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয় ধর্ষনকারী দ্বারা। ইউরোপেও নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির দিকে। সুতরাং আমরা যদি ভাবি যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যপক আইন আদালত জেল পুলিশ প্রয়োগ করেই নারী নির্যাতন কমানো যাবে তবে আমরা কগনিটিভ বায়াসে ভুগছি সেটা হলো আমাদের ভাবনা আর বাস্তবতার মধ্যে কোন মিল নেই যার পরিনতিই হল বিষয়টি না বুঝে রাগ ও ক্ষোভ দিয়ে সমাধানের চেষ্টা যার ফল হবে আরো খারাপ। বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ ও ক্ষতিকর মনে করে সত্যিকারেই যারা ভাববে যে তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখবে না ও এই সমস্যায় তাদের নিজের বা নিজেদের যেটুকু দায় আছে সেটি স্বীকার করবে ও নিজেদেরও সংশোধনের চেষ্টা করবে দায় এর অংশ নিজেদের কাঁধে নিয়ে তারাই সফল হবে নারী পুরুষ উভয়ে।
১৯৯০ সালি মুক্তি পাওয়া হলিউডের প্রিটি উম্যান ছবিতে রিচার্ড লুইস (রিচার্ড গেরে) একজন মাল্টি মিলিয়নিয়ার, সফল ব্যবসায়ী। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে আগেই। ব্যবসায়িক কাজে ভিন্ন শহরে গিয়ে লুইস তার মেয়েবন্ধুকে ফোন করে তার এক ব্যবসায়িক ভ্রমণে সঙ্গী হবার জন্য। মেয়েবন্ধুটি সেটা প্রত্যাখ্যান করে, বলে সে ভাড়া করা রমণী নয় যে তার প্রয়োজন মত সে ঘুরে বেড়াবে। বিফল মনে লুইস রাস্তায় বেরিয়ে পরবর্তি গন্তব্যের এক হোটেল খুঁজতে এক নারীর কাছে রাস্তার নিশানা চায়। নারীটি ছিল একজন দেহব্যবসায়ী যার নাম ভিভিয়ান ওয়ার্ড (জুলিয়া রবার্টস)। ভিভিয়ান লুইসকে তার গাড়িতে চেপে রাস্তা দেখিয়ে দেয়, বিনিময়ে ফিরে যাবার বাস ভাড়া বাবদ ২০ ডলার চায়। টাকা দিয়ে লুইস হোটোলের দিকে চলে যায়, আর ভিভিয়ান ফিরে যায় বাসস্টপেজে। এরপর মেয়েবন্ধুর খোঁটার কথা মনে হয় লুইসের, সিদ্ধান্ত নেয় রমণী ভাড়াই করবে আজকে সে। বাসস্টপেজে ফিরে আসে সে। তিন হাজার ডলারে ছয় দিনের জন্য ভাড়া করে সে ভিভিয়ানকে। তারা একসাথে বসবাস শুরু করে। বড় হোটেলের ধনী সমাজের অনেক সামাজিকতা ভিভিয়ান জানে না, সবসময় আড়ষ্ট ও শঙ্কিত থাকে যে সবাই তাকে দেখছে ও সবাই ধরে ফেলবে যে সে আসলে বেকজন দেহজীবি। লুইস তাকে সাহায্য করে সহজ হতে। হোটেলের সহৃদয় কর্মচারীরাও তাই করে। মাত্র ক'দিন তার সাথে বাস করে লুইস বুঝতে পারে যে সে নিজেও ভিভিয়ানের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। দেহবিক্রেতা যেমন অন্যের আবেগকে উসকে দিয়ে নিজের আবেগকে আটকে রেখে দেহটাকে ব্যবহার করতে দেয় খদ্দেরের পকেট খালি করতে। ব্যবসায়ী হিসাবে সে নিজেও ঠিক সেই কাজটিই করে। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে, নিজের স্বপ্নকে কোন সুযোগ না দিয়ে অন্যেকে উদ্বুদ্ধ করে টাকা কামাই করা তার কাজ। ভিভিয়ানের সাথে এই কয় দিনে সে নিজেকে চিনতে পারে অনেক বেশি। বোঝে ভিভিয়ানের সাথে তার কোন পার্থক্য নেই, ভিভিয়ানের ব্যবসাটি সমাজ গ্রহণ করে না, তারটিকে বাহবা দেয়, এটুকুই তফাৎ। বোঝে যে নিজের একান্ত স্বপ্ন পুরণ করাই জীবনের লক্ষ্য, অন্যের স্বপ্ন পুরণের জন্য নিজেকে বিক্রি করে প্রচুর অর্থের মালিক হওয়া নয়। প্রতিযোগীতা আর বেচা কেনা করে নিজের মনের শুন্যতা পুরনে সফল হওয়া নয়।
সমাজে নারী নির্যাতন কমাতে হলে নারীকেও আবিষ্কার করতে হবে তার মনের ইচ্ছা, প্রকৃত ভাল লাগা এবং নারী পুরুষের আকর্ষনের যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া তাতে তার ভুমিকাটি কি। দাপুটে পুরুষের আবেগ নিয়ে খেলা করে নিজের হৃদয়ের শুন্যতাপুরণ যদি তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে, সেটি সমাজে যতই গৃহিত হোক না কেন, সেই খেলাতে হেরে যাবে যারা নির্যাতন দিয়েই প্রতিশোধ নেবে তারা একদিন।