EN
আরও পড়ুন
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -২
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -১
ধর্ম ও দর্শন
শহুরে শিক্ষিত দালালদের শক্তিশালী করার কৌশল
ধর্ম ও দর্শন
JadeWits Technologies Limited

লিঙ্গ বিভেদ

নারী পুরুষ সমঅধিকার বনাম একীভবন

নারী পুরুষ সমঅধিকারের আন্দোলন চলছে এবং সেটা এখন মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত বলা যায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে। কিন্তু নারী পুরুষের সমঅধিকার আর নারী পুরুষের একীভবন বা ইউনিফিকেশন এক নয়। দেহে নারী কিন্তু মনে নারী নয় এমন একটি গোষ্ঠী সমঅধিকারের নামে আসলে নারী পুরুষ একীভবন বা ইউনিফিকেশন চাইছে। এই একীভবন বা ইউনিফিকেশন মানে হচ্ছে নারী পুরুষের সামাজিক প্রভেদের বিলোপ সাধন। যেমন পুরুষ যে পোশাক পরবে নারীও তাই পরবে, পুরুষ যা করবে নারীও তাই করবে, পুরুষ যা চাইবে নারীও তাই চাইবে। অপর দিকে নারীর কাছে যা আশা করা হয় সেটা পুরুষের কাছ থেকেও আশা করা হবে ইত্যাদি। আসলে তারা নারী পুরুষ লিঙ্গ বিভেদটা উঠিয়ে দিতে চাইছে। একথা সত্য যে লিঙ্গ বিভেদটা যতটা দ্বিমেরু হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত সেটা আসলে ততটা দ্বিমেরু বিশিষ্ট নয়। সেখানে আছে একটি বর্ণালী বা কন্টিনিউয়াম। অনেক মানুষ মানসিক ভাবে এই বর্ণালী বা কন্টিনিউয়ামের নানা স্থানে বাস করে কিন্তু তাদের সংখ্যা নগণ্য। 

লিঙ্গ বিভেদটা উঠিয়ে দিতে চাইলেই কি উঠবে? পুরুষের পোশাকে বোতাম থাকে ডান দিকে আর মেয়েদের পোশাকে বাম দিকে। যেহেতু বেশীরভাগ মানুষ ডানহাতি, ডান হাতে বোতাম ধরে লাগানো সুবিধাজনক তাই পুরুষের পোশাকের বোতাম ডানদিকে। কিন্তু নারীর পোশাকের বোতাম তাহলে বাম দিকে কেন? এর কারণ বোতামের উদ্ভব হয়েছে অলঙ্কার হিসাবে এবং সেই সময় ধনী এলিটদের পোশাকেই শুধু বোতাম থাকত। ধনী এলিট নারীরা নিজেদের পোশাক নিজেরা পরতেন না, তাদের ব্যক্তিগত ভৃত্য বা সহকারীরা সেগুলো পরিয়ে দিত। তারা বোতাম তাদের ডান হাত ব্যবহার করে লাগাত। সেই কারণে মেয়েদের পোশাকের বোতাম ডানদিকে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। প্রথা হিসাবে সেটা চালু হয়ে গেলে পোশাক শিল্পে নারী পুরুষের পোশাকের ভিন্নতা রাখার নিদর্শন হিসাবে সেটা এখনও চলছে। 

তরুণ, সুন্দর দেহের ও অপরূপ সুন্দর মুখাবয়বের এবং চমৎকার পোশাক পরা একটি নারী-পুরুষ জুটি যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, তখন যে কোন পুরুষ এক ঝলক হয়ত সেই জুটির পুরুষটির দিকে তাকাবে কিন্তু বাকি প্রায় নিরানব্বই ভাগ সময় সে নারীটির দিকে তাকিয়ে থাকবে। হয়ত ঘাড় ঘুরিয়ে তার দৃষ্টি নারীটিকে অনুসরণও করবে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া কোন নারী কি বেশীরভাগ সময় পুরুষটির দিকে তাকিয়ে থাকবে? একেবারেই না। নারীটিও এক ঝলক সেই জুটির পুরুষটির দিকে তাকাবে কিন্তু বাকি প্রায় নিরানব্বই ভাগ সময় সে নারীটির দিকে তাকিয়ে থাকবে। পুরুষটি যেখানে প্রায় নিরানব্বই ভাগ সময় সেই নারীর সৌন্দর্য উপভোগ করবে, এবং তার সঙ্গ পাবার কোন সুযোগ আছে কিনা সেই চিন্তায় মন দেবে। কিন্তু নারীটি কি করবে? সে উক্ত জুটির নারীটির পোশাক, গহনা, তার সঙ্গী পুরুষ এবং তার অবস্থানে মোহিত হবে এবং নারীটিকে ঈর্ষা করবে। সে নিজেকে কল্পনা করবে ঐ নারীর অবস্থানে এবং সে মনে করবে তারও উক্ত নারীর অবস্থানে থাকার সব যোগ্যতা আছে কিন্তু তার সাথের মানুষেরা এবং পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে যথেষ্ট সহায়তা করছে না, সুযোগ দিচ্ছে না বা তাকে আটকিয়ে রেখেছে। এরপর সে স্বপ্নে ডুবে যাবে নিজেকে ঐ জুটির নারীর স্থানে কল্পনা করে। এই ঘটনা পুরুষটির জন্য আনন্দ উপভোগের কিন্তু নারীটির জন্য বেদনার, আশা ভঙ্গের, ঈর্ষা উদ্রেককারী। 

প্রেম ভালবাসা বা বিয়ের ক্ষেত্রেও অনেকটা এমনই ব্যাপার ঘটে। কোন সম্পর্কই আদর্শ নয়। প্রতিটি নারী বা পুরুষ যখন একাকী জীবন থেকে যৌথ জীবনে আসে তাদের অনেক স্বাধীনতা ত্যাগ করতে হয় এবং অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। কিন্তু একটি মন্দ সম্পর্ক থেকেও সেটা থেকে পাবার দিকটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। বেশীরভাগ পুরুষেরাই সম্পর্ক যেমনই হোক সেটা থেকে বাস্তব বা অনুভবনীয় কিছু পায়। সেটা নারীর ভালবাসা হতে পারে, নারীর সান্নিধ্য হতে পারে, যৌন আনন্দ হতে পারে, যৌথ জীবনের বিশ্বাস ও নিরাপত্তা হতে পারে। বেশীরভাগ পুরুষ এই ইতিবাচক দিকগুলো খোলা মনে উপভোগ করে কোন খুঁতখুঁতানি বা রিজার্ভেশন ছাড়া। অপর দিকে বেশীরভাগ নারী সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো খোলা মনে উপভোগ করে না নানা রকম খুঁতখুঁতানি বা রিজার্ভেশনের জন্য বা ধর্মীয়, সামাজিক ও ব্যক্তিগত নানা পূর্বধারণা বা প্রেজ্যুডিসের জন্য। অনেকেই ভাবে তার যা পাবার কথা ছিল তার তুলনায় যা পেয়েছে সেটা অবিচার। নিজেকে সে যে রাজকন্যা ভেবে এসেছে সেটার মূল্য না দিয়ে তাকে ঠকিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গী এবং সমাজ। তাই অনেক কিছুই সে করে অনিচ্ছা সহকারে হাফ হার্টেডলি। 

কোন কারণে সম্পর্কটি যদি ভেঙে যায়, বেশীরভাগ পুরুষের মনে মিশ্র অনুভূতি থাকে যে সে যেমন একটি মন্দ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসেছে, সেটা শান্তি। কিন্তু অপরদিকে তার মনে অনেক চমৎকার কিছু হারানোর স্মৃতিও জাগ্রত থাকে যা ছিল বাস্তব বা অনুভবনীয় । এই ক্ষেত্রে নারীদের যে প্যাটার্ন সেটা খুবই বিপজ্জনক। তার মনেও সেই অনুভূতি থাকে যে সে একটি মন্দ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসেছে, সেটা তার জন্য শান্তি। কিন্তু সম্পর্কটির মধ্যে অনেক চমৎকার কিছু বাস্তব বা অনুভবনীয় যে ছিল সেটা সে আর মনেই করতে চায় না। সে মনে করে সেগুলো মনে করলে সে দুর্বল হয়ে যাবে এবং আবার সে সেই মন্দ সম্পর্ক বা যে সম্পর্কটি তার উপযুক্ত নয়, সেটিতে সে জড়িয়ে পড়বে। সম্পর্কের চমৎকার স্মৃতি মনে না রাখার বিষয়টি একটি ট্রমা হিসাবে কাজ করে। এর ফলে উক্ত সম্পর্কের বাস্তবতার বোধটি সে হারিয়ে ফেলে। তখন সে অতীত সম্পর্কটিকে কোন কিছুই না পাওয়া, সম্পূর্ণ নিরানন্দ ও মন্দ একটি সম্পর্ক হিসাবে স্মৃতিতে লিপিবদ্ধ বা রেজিস্টার করে। এবং সেটি সম্পর্কে সব কিছু সে সম্পূর্ণ ভুলে যেতে চায়। 

একটি মানুষের সাথে সম্পর্ককে আপনি ভাল মন্দ মিলিয়ে মনে রাখবেন নাকি ভাল দিকের আকর্ষণ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে শুধু মন্দ দিককে অতিরঞ্জিত করে সেটিকে নেতিবাচক ট্রমা সৃষ্টি করে মনে রাখবেন এর উপর নির্ভর করবে আপনার পরবর্তী সম্পর্কটি কেমন হবে। ট্রমাগ্রস্থ ব্যক্তি কখনও পরবর্তী ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে পারবে না, নিজেকে উজাড় করে দিতে পারবে না এমনকি অপরের ভালবাসার উপহারকেও মনের গভীরে চরম আনন্দ হিসাবে জমা করতে পারবে না। আরো বিপজ্জনক হচ্ছে যত বেশি সম্পর্ক হয়, প্রতিটি সম্পর্ক থেকে এই ট্রমাগ্রস্থরা আরো ট্রমা সংগ্রহ করে যার ফলে তাদের পক্ষে পরবর্তী সম্পর্ক টেকানো আরো কঠিন হয়ে যায়।
নারী পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে দুই লিঙ্গের যে সাংস্কৃতিক বিভেদ তাকে কি আমরা মিশ্রিত বা একীভবন করে ফেলতে পারি? বেড়ে ওঠা কিশোর কিশোরীরা যদি তাদের জীবনের কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোতে তাদের বাবা মা কে পর্যবেক্ষণ করে আগের প্রজন্মের নারী ও পুরুষের স্বতন্ত্র আচরণগুলো থেকে শুধু সুবিধাবাদী ও সহজ আচরণগুলোকে নিয়ে একটি মিশ্র আচরণ তৈরি করে সেটাকে অনুসরণ করে তাহলে কি প্রেম, ভালবাসা, বা যৌথ জীবন বা সন্তান লালন পালনের মত কঠিন বিষয়গুলোকে তারা সাফল্যের সাথে সমাধা করে যেতে পারবে? 

 
 
 
JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।