EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

নারী মুক্তি - আলোর দিকে? নাকি কালোর দিকে?

লম্বা সুন্দরবন ভ্রমণ। আমার সাথে এক ফরাসী ফটোগ্রাফার ও তার একজন তরুণী সহকারী। আধুনিক লিবারেল ফরাসীদের একটি ভাল দিক হলো তারা মিশুক ও অনেক কথা বলে। যদিও কথাগুলো অনেক সময়ই সোজা নয়, বাঁকা মানে সারকাস্টিক তবুও তারা খোলামেলা। আমার বন্ধু ফটোগ্রাফারটি ওয়াইল্ডলাইফের ছবি তুলতে তেমন উৎসাহী ছিল না। তার উৎসাহ মানুষে। সুন্দরবনের মানুষের পেশাগত কাজকর্মে। প্রতিদিন ভোর সকালে আমি তাই ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও আমার বন্ধুটির কাজ শুরু হত আরো পরে। 

সকালে কফি খেয়েই তারা দুজনে শুরু করত নানা গল্প। আমি ফরাসী না বুঝলেও তারা কি নিয়ে আলাপ করছে সেটা বুঝতাম। তারা যথেষ্ট ভদ্র মানুষ তাই আমি কফি আর নাস্তার জন্য লাউঞ্জে এলেই তারা ভাষা পরিবর্তন করে ইংরেজি করে ফেলত যাতে আমি অংশগ্রহণ করতে পারি। একদিন তারা কথা বলছিল আমাদের পর্দানসিন নারীদের পোশাক নিয়ে। কিভাবে মেয়েরা আপাদমস্তক ঢেকে রাখে। বোরকা হিজাবে এই গরম দেশেও কত কষ্ট করে মেয়েদের চলতে হয় এইসব। তারা দুজনেই একমত হল এই পোশাক পুরুষের চাপিয়ে দেওয়া জবরদস্তি যাতে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে।

আমি তখন মেয়েটাকে প্রশ্ন করলাম যে পোশাকটা সে পরে আছে সেটা যথেষ্ট সুন্দর এবং তার নারীদেহের বৈশিষ্ট, বিশেষ করে পুরুষের আকর্ষণ যেদিকে, সেগুলো খুব সুন্দর ফুটে উঠেছে, সেটার আইডিয়াটা কার? অনেক কথায় ঘুরে ফিরে এটাই বোঝা গেল যে এটা নিশ্চই প্যারিসের কোন ফ্যাশন ডিজাইনারের মাথা থেকে এসেছে যাদের বেশিরভাগই পুরুষ। কষ্টে হলেও আমি তাকে বোঝাতে সক্ষম হলাম যে অর্থনীতিতে যারা ডমিনেন্ট তারা সংস্কৃতিতেও প্রভাব বিস্তার করে এবং তাদের প্রেসক্রিপশন তাদের অনুসারীদের কাছে আকর্ষনীয়। তুমি যে পোশাক তোমার ভাল লাগে বলেই পড়ছ, তোমার ভাল লাগার কারন ডমিনেন্ট অর্থনীতির পুরুষের কাছে তুমি আকর্ষনীয় হতে চাও, তাই তাদের ডিজাইনই তোমার ভাল লাগে। ঠিক তেমনই যার স্বামী সৌদি আরবে বা বাবা মালয়েশিয়ায় চাকুরি করে টাকা পাঠায়, তাদের মনিবদের মেয়ে বা বৌদের ফ্যাশনই তাদের পরিবারের নারীদের ভাল লাগবে। সুতরাং কোন নারীই আসলে স্বাধীন নয়। অর্থনীতিতে ডমিনেন্ট যারা তাদের ইচ্ছাপুরক মাত্র।
 
মাইক্রোসফটের বিল গেটসের স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস সম্প্রতি আক্ষেপ করে বলেছেন তিনি যখন কম্পিউটার প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন আমেরিকায় তখন ৩৬% নারী শিক্ষার্থী ছিলেন তার সাথে যারা কম্পিউটার প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। এখন সেটা ১৮% এরও কম। তার মানে মোটেই ভাল করছে না মেয়েরা আইসিটিতে ইদানিং। শুধু তাই নয়। মেলিন্ডা আরও বলেছেন তার সাথে পড়া বহু মেয়ে কাজ ছেড়ে দিয়েছে কারন মেয়েদের জন্য প্রযুক্তিগত চাকুরিতে উপরে উঠা খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। চাকুরি বাদ দিলে সিলিকন ভ্যালীতে উদ্যোক্তাদের জন্য বিষয়টা আরও খারাপ। নারী উদ্যোক্তা খুবই কম এবং তাদের প্রতি ইনভেস্টরদের ভরসা আরও কম।
       
ছোট বেলা থেকেই নারী মুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আমরা বেগম রোকেয়ার কথা শুনে আসছি। বেগম রোকেয়ার কোন কথা, কোন লেখা কখনও ভাল লাগে নাই। এর কারন হল নারীর কোন ইচ্ছা, আবেগ, কল্পনা তার মধ্যে দেখিনি। শুধুই পড়াশোনা শিখে চাকরিবাকরি করলেই যেন নারীর মুক্তি হবে। এই পড়াশোনা, চাকুরি যে পুরুষ রচিত, সেটা তিনি কখনও হিসাবেই আনেননি। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে বেগম রোকেয়া একটা রোল রিভার্সালের চিন্তাই শুধু করেছিলেন। নারীর প্রকৃত প্রকৃতি তাই সেখানে অনুপস্থিত। 

আমরা কোন কোন পুরুষ ছেলে শিশু হিসাবে সমাজে বড় হলেও যেহেতু ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন মত নিয়ে বড় হয়েছি তাই ছোটবেলা থেকেই সমাজের বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধ করেই আমাদের বড় হতে হয়েছে। যেটা অনেকটা ব্যক্তিগত বিপ্লবের মত। যেখানে অন্য মানুষের শক্তি সাহস এবং দাশর্নিক সহায়তা সমসময়ই প্রাণদায়ী শক্তি ছিল। আমরা ছেলে হিসাবে যারা স্রোতের বিপরীতে ভিন্ন চিন্তায় বড় হয়েছি তারা এই সমাজের ঘুনে ধরা প্রথাগুলোকে বুঝতাম। এবং এগুলো যে অর্থলোলুপ, কাম ও ভোগ লিপ্সু হৃদয়হীন পুরুষকে ক্ষমতায়ীত করার জন্যই রচিত সেটাও বুঝতাম। এতে যে জ্ঞান, আনন্দ, সুন্দর ও মমতা সদা অপমানিত হয় এটা বুঝতাম। চাইতাম যদি নারীও এই সমাজ দ্বারা নিষ্পেষিত হয়, ভুক্তভোগী হয় তবে এই সমাজকে ভেঙে ফেলতে নারীদের তো অপর বিপ্লবীদের সহায়তা করার কথা। অথচ আমরা সবসময় দেখেছি নারীরাই এইসব ব্যক্তিগত বিপ্লবের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। আমাদের মায়েরা, বোনেরা, স্ত্রীরাই প্রচলিত প্রথার সবচেয়ে বড় সমর্থক। তার মানে এই প্রথা তাদের নিষ্পেষিত করছে এটা ভাবা মস্ত বড় ভুল ধারনা। তারা আসলে চায় নোংরা নিষ্পেষক প্রথাটা টিকে থাকুক শুধু রোল রিভার্সাল হোক। অর্থাৎ ধর্ষকামী পুরুষের পদটি নারী দখল করুক।

কিন্তু সেটা কি সম্ভব? নতুন একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে, সেটা হল ইনইকুয়ালিটি অব ওয়েলনেস। নানা গবেষনায় দেখা গেছে এতদিন যা ভাবা হত যে অর্থনৈতিক বা ক্ষমতার সমতা আসলেই সমাজে সমতা আসবে সেটা ঠিক নয়। যেমন দুই ভাই বোন দুজনেই যদি মেধাবী হয়, দুজনেই যদি সকল সামাজিক ও পেশাগত সুযোগ সুবিধা সমানভাবে পায়, দুজনেই যদি পেশাগত ক্ষেত্রে একইভাবে উন্নতি করে ও সমান অর্থ উপার্জন করে তবুও দুজনের জীবন একই হয় না। উচ্চ বেতন, উচ্চ পেশাগত চাপ ও দায়ীত্ব উভয়ের জীবনে একই প্রভাব ফেলে না। পুরুষটি কর্মক্ষেত্রের সেই চাপ মানিয়ে নিয়ে জীবনকে যথেষ্ট উপভোগ করতে পারে অথচ নারীটি পারে না। কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপ তার পারিবারিক জীবন তছনছ করে দেয়, তার মনের প্রশান্তী একেবারে নষ্ট করে দেয়। 

সুতরাং নারী যদি দম বন্ধ করে একটি বিশেষ শ্রেণীর পুরুষ, যারা দাপুটে অর্থলোলুপ, কাম লিপ্সু ও ভোগবাদী হৃদয়হীন, সেই এলিট মালিকশ্রেণীর ফর্মুলায় ইদুর দৌড়ে জয়ী হয়ে ভাবে তারা মুক্তি অর্জন করবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। তারা যদি সত্যিই ভাবে যে তারা পরাধীন ও নিপিড়িত, তবে তাদের নতুন করে ভাবতে হবে। ভাবতে হবে কিভাবে এই ভূয়া সমাজ, ভুয়া অর্থনীতি ও ভূয়া উন্নয়নের ইদুর দৌড়ের অর্থ ক্ষমতার সমাজকে ভেঙে ফেলার আন্দোলন করতে হয়। কিভাবে অর্থ প্রতিপত্তির নোংরা প্রতিযোগীতাকে অবজ্ঞা করতে হয়। কিভাবে ভূয়া শিক্ষাকে না বলে প্রকৃত শিক্ষা আর জ্ঞানের চর্চায় মন দিতে হয়। প্রকৃত বন্দি বা নিপিড়িত যারা তারা কখনও মেকি ও লোক দেখানো উন্নয়নের পেছনে ছোটে না যদি না তারা মানসিকভাবে সীমাবদ্ধ বা অপরিণত হয়। অন্ধকারে বন্দিরা আলোর দিকে ছোটে, কালোর দিকে নয় যদি তারা অন্ধ না হয়।  

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।