EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

বাংলাদেশের ভবিষ্যত

প্রতিক্রিয়া নির্ভর অসীম যুদ্ধ চক্র (Reactive Infinite War)

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার আসলে কি সেই চরিত্র পরিষ্কার হলেও এর সমর্থক অনেকে সেটা দেখেও দেখতে চাইছেন না। কেন চাইছেন না সেটা ভিন্ন এক আলাপ, ভিন্ন তার বিশ্লেষণ। যারা অপেক্ষাকৃত বুদ্ধিমান তারা এর মধ্যেই বুঝে গেছেন যে সামনে নোবেল শান্তি রেখে পেছনে আসলে একটি সামরিক সরকার যারা মিলিট্যান্ট ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর এমনই সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যার পেছনে আছে পাক মার্কিন তথা বিদেশী শক্তির হাত। এট বুঝে তারা নিজেদের মারাত্মক ভুল ব ব্লান্ডারকে স্বীকার না করে দায় চাপাতে চাইছেন বিগত সরকারের দমন নিপীড়নকে যার নাম দেওয়া হয়েছে ফ্যাসিবাদ।

আপনি যদি দলীয় বা দলবিরোধী লেন্স পড়ে থাকেন এবং আওয়ামী বিএনপি সরল বাইনারি থেকে বের হতে না পারেন তাহলে এই গোলক ধাঁধা থেকে বের হতে পারবেন না। আমার এই লেখা পাঠের সময় ধরে নিন বিএনপি আসলে একটি নয় দুটো দল। জিয়া খালেদার চেহারা কারিশমা দেখে একদল সংসদে তাদের আসন পাকা করতে চায়, তারা সরকার গঠন করতে চায়, দেশ শাসন করতে চায়।

আর একদল তারেক বাবর গং যারা পাকিস্তানের আইএসআই ও আমেরিকার সিআইএর হয়ে তাদের মডেলে দেশকে রাজনীতি শূন্য করে ইসলামি একনায়কতন্ত্র গঠন করে পাক মার্কিন কলোনি তৈরি করতে চায়। এখন খালেদার বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মিলে একটি দল ভাবুন যারা ভোট চুরি করে হলেও সংসদীয় গণতন্ত্র চায়, ৭২এর সংবিধান ঠিক রেখে লুট পাট করে হলেও বাংলাদেশকে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়। এখন তারেক-বাবর এবং ইউনুস গংকে একসাথে করে আর একটি বিরাজনীতিক দল ভাবুন যারা দেশটাকে পাক মার্কিন কলোনি তৈরি করতে চায়। বাংলাদেশের রাজনীতির আসল বাইনারি বা দ্বৈততার দ্বন্দটা সেখানে।

মৌলবাদি কট্টোরপন্থী মুসলিমদের সাথে নিয়ে তারেক-বাবর গং পাকিস্তানের আইএসআই ও আমেরিকার সিআইএকে এমন একটি ধারণায় নিয়ে গেছে যে বাংলাদেশ আসলে ভারতের কলোনি। ভারতীয়রাই তাদের দালাল আওয়ামী লীগের মাধ্যমে এই দেশ শাসন করছে এবং সকল সুবিধা ভারত নিয়ে যাচ্ছে। এই দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে তাড়াতে হবে। আমেরিকার স্বার্থে আফগানিস্তানকে সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে বের করে আনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পাকি আইএসআই এবং সিআইএ এই প্রকল্পটি লুফে নিয়েছে।

এখন তাহলে একটি দেশ থেকে ভোট চুরি করে হলেও সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতায় আসা লুট পাট করলেও জনপ্রিয় রাজনীতিকে কিভাবে উৎখাত করবেন? লুটপাট করে হলেও যারা মানুষের জীবন মান এবং দেশের অবকাঠামোর প্রচুর উন্নতি করছে এবং যাদের অনেক জনপ্রিয়তাও আছে?

এটা যেভাবে করা হয় তার আমি নাম দিয়েছি প্রতিক্রিয়া নির্ভর অসীম যুদ্ধ চক্র (Reactive Infinite War)। এই পদ্ধতিতে ছোট ছোট সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে সরকারকে ক্রমেই প্রতিক্রিয়াশীল করা হয়। এতে সরকার পুলিশি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পুলিশকে সামরিকিকরণ করে। ক্রমেই নানা দমনমূলক আইন কানুন ধড়পাকড় বাড়ায় এবং দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়তে থাকে। সরকারের চরিত্র হয়ে যায় একনায়কের মত। এতে গণ অসন্তোষ বাড়তে থাকে। তরুণরা, যারা নিয়ম কানুন ও নিয়ন্ত্রণ পছন্দ করে না, তারা সরকার বিরোধী হয়ে যায়। এর সাথে ধর্ম যুক্ত করে গুজব বৃদ্ধি করলে সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়তে থাকে।

এই পরিস্থিতি তৈরি করে যদি একসময় একটি বড় ছাত্র আন্দোলন তৈরি করা যায় যাকে আরব স্প্রীং বলা হচ্ছে, তখন সরকারকে প্রভোক করে যদি কিছু তরুণকে হত্যা করানো যায়, তখন লাশ দেখিয়ে বহু বছরের মগজ ধোলাই করা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা যায় যে এই যে দেখ, এতদিন যা বলেছিলাম সব সত্য। এই সরকার ফ্যাসিবাদী। তখন সরকার পতন ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। “সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকারের দমনমূলক আচরণ বৃদ্ধি ও মানবাধিকার সীমিতকরণ” চিত্রটিতে দেখানো হয়েছে যে কিভাবে সন্ত্রাস প্রয়োগ করে ক্রমেই সব সরকারকেই নিপিড়ক ও দমনমূলক করা হয়েছে।

দুটি উদাহরণ যোগ করা হল কিভাবে আলজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘প্রতিক্রিয়া নির্ভর অসীম যুদ্ধ চক্র’ প্রয়োগ করে ঔপনিবেশিক শক্তিকে বিদায় করা হয়েছে।

সন্ত্রাসবাদ, যা মূলত ভয় এবং সহিংসতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটি উপায়, ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। আলজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা উভয় দেশেই সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন এবং বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানো হয়েছে।

আলজেরিয়া: ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সন্ত্রাসবাদ এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম

১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত, আলজেরিয়ার জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট (FLN) ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। এই যুদ্ধে FLN বিভিন্ন সন্ত্রাসী পন্থা গ্রহণ করে, যার মধ্যে শহরে বোমা বিস্ফোরণ, গেরিলা হামলা এবং ফরাসি ও তাদের সহযোগীদের ওপর আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করা এবং ফরাসি শাসকদের প্রতি স্থানীয় জনগণের অসন্তোষকে বাড়ানো।

প্রতিক্রিয়াশীল অসীম যুদ্ধ চক্র

FLN-এর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়ায় ফরাসি সরকার দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারা বিশেষ সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে, যার ফলে নাগরিক অধিকার সীমিত হয়। ১৯৫৭ সালের ব্যাটল অব আলজিয়ার্স এর সময়, ফরাসি বাহিনী ব্যাপকভাবে নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার এবং সন্দেহভাজনদের হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ দমনের চেষ্টা করে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সংকুচিত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন

ফরাসি শাসনের এই কঠোরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। FLN এই অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে তাদের জনসমর্থন বাড়ায়। ফরাসি সরকারের অপপ্রচেষ্টা এবং দমনমূলক কার্যক্রম সাধারণ মানুষকে ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে আরো ক্ষুব্ধ করে তোলে। এক পর্যায়ে, আন্তর্জাতিক মহলও ফরাসি সরকারের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে শুরু করে।

শাসন পরিবর্তন এবং স্বাধীনতা

ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে অবশেষে ১৯৬২ সালে ফরাসি সরকার আলজেরিয়ার স্বাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম সন্ত্রাসবাদের একটি উদাহরণ যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল অসীম যুদ্ধ চক্রের মাধ্যমে দমনমূলক শাসন আরও অজনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং অবশেষে একটি শাসন পরিবর্তন ঘটে।

দক্ষিণ আফ্রিকা: বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সন্ত্রাসবাদ এবং মুক্তি আন্দোলন

দক্ষিণ আফ্রিকায়, বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামে সন্ত্রাসবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ছিল। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) এবং এর সশস্ত্র শাখা উমখন্তো ওয়েসিজওয়ে (MK) ১৯৬১ সালে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। ANC এবং MK মূলত সামরিক এবং সরকারী স্থাপনার ওপর আক্রমণ করে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়, যার মধ্যে বোমা হামলা, অবকাঠামো ধ্বংস এবং কৌশলগত স্থাপনার ওপর আক্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

প্রতিক্রিয়াশীল অসীম যুদ্ধ চক্র

ANC-এর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়ায়, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার আরও দমনমূলক হয়ে ওঠে। সরকার কঠোর নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে, গণগ্রেপ্তার এবং নির্যাতন শুরু করে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করে। ১৯৬০ সালের শার্পভিল গণহত্যা এবং ১৯৭৬ সালের সোয়েটো বিদ্রোহ এর পর সরকার তার দমনমূলক কার্যক্রম আরও বাড়িয়ে দেয়।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সংকুচিত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের দমনমূলক কার্যক্রম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচণ্ড সমালোচনা এবং চাপের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষ বর্ণবাদী সরকারের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে, যা ANC এবং অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সমর্থন বাড়ায়।

শাসন পরিবর্তন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

অবশেষে, ১৯৯০-এর দশকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে নীতিগত পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। ১৯৯০ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির মাধ্যমে ANC-এর সঙ্গে আলোচনার পথ খুলে যায়। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটে।

আলজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে সন্ত্রাসবাদ এবং দমনমূলক শাসনের প্রতিক্রিয়াশীল অসীম যুদ্ধ চক্র কিভাবে কাজ করে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম সরকারকে আরও দমনমূলক করে তোলে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সংকুচিত করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ে এবং শাসন পরিবর্তনের পথ সুগম হয়। তবে, এই ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটাতে পারে।

বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করে, তারাই এই অপচেষ্টার সমর্থক ও লবিষ্ট। শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত ব্যক্তি এর কারিগর। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তি বিদেশী উপনিবেশিক শক্তি হলে এই প্রক্রিয়া কাজ করতে পারত কিন্তু সেটাতো সত্য নয়। সেটা না হলে শান্তির না নোবেলের তৈরি করা এটা গৃহযুদ্ধের পথ।

ছবি: ২০০১ থেকে বাংলাদেশে কিভাবে সন্ত্রাসী ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিভাবে সেটা সব সরকারগুলোর আচরণ পরিবর্তন করে সরকারগুলোকে আরও দমনমূলক করে তোলে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সংকুচিত করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরে সেটা কিছুটা কমে যায়।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।