EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

আমেরিকার স্বার্থ - ১: ইরান-পাকিস্তান-ভারত (IPI) গ্যাস পাইপলাইন

আস্তে আস্তে ইরাক -৩


এই বিষয়টি নিয়ে পরে লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাঠকদের মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে বহু মানুষ ধরতে পারছেন না বাংলাদেশের মত একটি দেশ নিয়ে আমেরিকা কেন এত আগ্রহী হবে। এটাও অনেকে বুঝছেন না যে আমেরিকা আগ্রহী হলেও উগ্র ডানপন্থী বা মুসলিম মৌলবাদীদের তারা কেন সাথে নেবে যেখানে তারা মৌলবাদ বিরোধী এবং ইসলামোফোবিয়ায় ভুগছে?

কয়েকদিন আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম যে রাজনীতি হচ্ছে একটি বহুমাত্রার জগৎ। এক মাত্রার কার্য কারণ দিয়ে সেটাকে বোঝা যাবে না। রাজনীতি হচ্ছে কৌশলের খেলা। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন পাড়ার একটি মেয়েকে দেখে আপনার ভাল লেগে গেল। আপনি তার ফোন নম্বর চান। আপনি কেতাদুরস্ত হয়ে তার কাছে গিয়ে তার ফোন নম্বর চাইলে কি সে দেবে? কিন্তু যদি আপনি একটি কৌশল বা স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেন যেমন আপনি আপনার কিছু দুষ্ট বন্ধুকে মিষ্টি খায়িয়ে তাদের বললেন কলেজ থেকে ফেরার পথে মেয়েটাকে একটু টিজ করতে হবে। দুই তিন দিন তারা এমন করার পর একদিন মোটরবাইক নিয়ে আপনি সেখানে হাজির হলেন। দুষ্ট বন্ধুদেরকে ভদ্র কিন্তু গম্ভীর স্বরে ঝাড়ি দিয়ে তাড়িয়ে দিলেন। এর পর দেখবেন মেয়েটিই আপনাকে আগ্রহী হয়ে তার ফোন নম্বর দিচ্ছে। এটাকে বলে রিঅ্যাকটিভ স্ট্র্যাটেজি। যেটা হল জোর করে ঘটনা আপনার পক্ষে নেওয়া নয়, এমন পরিকল্পনা করা যে ঘটনার প্রতিক্রিয়া আপনার পক্ষে যায়।

মনে আছে শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন যে ২০০১ সালের নির্বাচনে আমেরিকানরা তাঁর বিপক্ষে ছিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুবিধা নিয়ে নানা কৌশলে তাঁর দলকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা নিয়ে অনেকে হাসি ঠাট্টা করে এবং উড়িয়ে দেয়। তিনি বলেছেন যে তাঁকে আমেরিকা বাধ্য করতে চাইছিল ভারতকে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রয় করার জন্য। মনে আছে তখন নানা গবেষণা ও বিদেশী মিডিয়ার বরাতে আমাদের পত্রিকাগুলো এবং আন্তর্জাতিক মাধ্যমে রিপোর্ট ছাপা হত যে বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে? বাংলাদেশ সরকারকে বিভ্রান্ত করার জন্য ঐ মার্কিন পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল বাংলাদেশে বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের মিথ্যা দাবি তৈরি করা। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা এবং জ্বালানি বিশ্লেষকদের মাধ্যমে প্রচারিত হয় যে, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে।

কেন আমেরিকা চাইছিল মিথ্যা গবেষণা ও বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে ভারতকে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রয় করার জন্য? কেন তারা এটাও চাইছিল যে ভারত বাংলাদেশের সাথে একটি পাইপলাইন তৈরি প্রকল্প শুরু করুক? এটা বুঝতে হলে আপনাকে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির দিকে নজর দিতে হবে এবং ইরানের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের দিকে লক্ষ্য করতে হবে। ওই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে এবং ওই অঞ্চলে ইরানের প্রভাবকে কমাতে চেষ্টা করেছে। ওই সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান চাইছিল তার গ্যাস রপ্তানীর নতুন পথ তৈরি করার। ঐ সময় ইরান, পাকিস্তান ও ভারত মিলে ইরান-পাকিস্তান-ভারত (IPI) গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প নামে একটি বিশাল আকারের আন্তঃদেশীয় গ্যাস পরিচালন প্রকল্প হাতে নেয়। যেটির উদ্দেশ্য ছিল ইরান থেকে পাকিস্তান ও ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা।

আমেরিকা চাইছিল না যে ভারত কোনভাবেই এই প্রকল্পে যুক্ত হোক। এতে তাদের ইরানকে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই বিফলে যাবে। ভারত একটি বিশাল বাজার। এর সাথে ভারত হয়ে চীনও এর সুফল পেতে পারে যাদের জ্বালানি চাহিদা বাড়ছেই। ওই সময় এই প্রকল্প লোভনীয় হলেও বিশাল বাজেট ও পাকিস্তানের উপর দিয়ে আসা পাইপলাইনে জ্বালানি নির্ভরতা ভারতকে দ্বিধা দ্বন্দ্বে রেখেছিল। এই সুযোগেই মিথ্যা গবেষণা এবং খবর ছড়িয়ে বাংলাদেশকে বলির পাঁঠা করার পরিকল্পনা করে আমেরিকা। তারা এই কৌশলে এগোয় যে ভারত যদি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, তাহলে তারা আইপিআই প্রকল্পে যোগদান করা থেকে সরে আসবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের প্রভাব বজায় থাকে এবং ইরানের প্রভাব কমানো যায়।

ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটি ছিল একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদকে পাকিস্তান এবং ভারতের বাজারে পৌঁছে দেওয়া। এই প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের জন্য একটি স্থায়ী এবং সাশ্রয়ী শক্তি সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। আইপিআই প্রকল্পটি ইরানের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সাফল্য হতে পারত, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল যে ভারত আইপিআই প্রকল্প থেকে দূরে থাকুক, যাতে ইরানের প্রভাব এবং আয় কমানো যায়।

শেখ হসিনা এবং তার সরকার আমেরিকার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং এতে মার্কিন সরকার ক্ষুব্ধ হয়। এর পর তারা তাদের বাংলাদেশী এজেন্ট এবং সিআইএ আইএসআই এর মত ভূরাজনৈতিক ইন্সট্রুমেন্টগুলো কাজে লাগায় ২০০১ নির্বাচনে যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে। এর পর বিএনপি যে ক্ষমতায় আসে তাদের আমরা দেখি এক ভিন্ন বিএনপি যার সাথে ১৯৯১ এর বিএনপির কেন মিল নেই। ২০০১ এর বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দলের চরিত্র গ্রহণ করে। র্যাব তৈরি হয়, একুশে অগাস্টের মত ঘটনা ঘটে এবং কোনভাবেই ২০০৫ এর পর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।

কিন্তু ২০০১ সালে আমেরিকাতে ৯/১১ এর ঘটনা এবং আমেরিকা-আফগান যুদ্ধ শুরু হলে নিরাপত্তার প্রশ্নে ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পটি আর বাস্তবায়িত হয় না। ভারত প্রকল্পটি থেকে বের হয়ে আসে এবং পরবর্তিতে এটি ইরান-পাকিস্তান পাইপলাইন প্রকল্পে রূপ নেয়। সম্প্রতি আমেরিকা পাকিস্তানকে হুশিয়ারি দিয়েছে যে এটা নিয়ে এগোলে তারা পাকিস্তানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করবে। সময়ের সাথে সাথে প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাসের কোন মজুদ ছিল না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে থেকে গেছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ নিয়ে মিথ্যা দাবি তৈরি করে তারা ভারতকে আইপিআই প্রকল্প থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল। যদিও এই পরিকল্পনা সফল হয়নি, তবে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের জন্য কতটা জটিল এবং প্রতারণামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা হতে পারে, তার একটি উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কিন্তু এর ফলে বিএনপি জামাত হেফাজতের মাধ্যমে আমাদের রাজনীতিতে যে সিআইএ উদ্ভাবিত সন্ত্রাস ঢুকে পড়ে যার ফলই কিন্তু এই ৫ই অগাস্টের ঘটনা। আপনি অন্ধ থাকতে পারেন কিন্তু প্রলয়তো বন্ধ থাকবে না।

 

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।