EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

বাগদাদে ৭৫

আস্তে আস্তে ইরাক -১

দিনটা ১৫ই অগাস্ট নয়, ১৪ই জুলাই, সালটা ১৯৭৫ নয়, ১৯৫৮, স্থানটা ঢাকা, বাংলাদেশ নয়, ইরাকের বাগদাদ। সেই দিন আমাদের রক্তাক্ত ৭৫ এর মতই সামরিক কর্তারা হত্যা করে ইরাকের রাজা দ্বিতীয় ফয়সাল এবং তার পরিবারের সকল সদস্যদের। বেঁচে যান শুধু এক নারী, প্রিন্স আবদুল্লাহর স্ত্রী রাজকুমারী হিয়াম।

সেই দুর্ভাগ্যজনক ভোরে, বাগদাদ শহরটি টাইগ্রিস নদীর তীরে শান্তিতে শুয়ে ছিল অন্য দিনগুলোর মতই। শহরের বাসিন্দারা তাদের ঐতিহ্য অনুসারে জুলাইয়ের অসহ্য গরম থেকে বাঁচতে সাধারণত তাদের ছাদের উপরে ঘুমিয়ে থাকে। চারিদিকের নিস্তব্ধতা মাঝে মাঝে ভঙ্গ করছিল ঘুঘুর ডাক এবং খেজুর গাছের পাতায় বাতাসের ফিসফিস শব্দ। হঠাৎ কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই, গুলি গালার শব্দে আকাশ ফেটে পড়ল যেন, কামানের গর্জনে কেঁপে উঠল মাটি। শহরের বাসিন্দারা, ভীত হয়ে তাদের ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে, গোলাগুলি ও হট্টগোলের উত্সের সন্ধানে তাদের ছাদগুলোর দেয়াল থেকে ঘাড় নেড়ে এদুক ওদিক দেখার চেষ্টা করছিল। রাজধানীবাসীর কাছে অতি পরিচিত একটি জায়গা থেকে আকাশে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেল। সেটা হল আল-রিহাব প্যালেস, ইরাকি রাজপরিবারের বাসস্থান।

সেদিন বাগদাদে যে অশান্তি শুরু হয়েছিল লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যুর পর ও ইরাক ধ্বংস হয়ে যাবার পরও সেটা আজও থামেনি। সেটি শুরু হয়েছিল নির্বোধ ও বিকারগ্রস্থ সেনা কর্মকর্তাদের একটি দল দ্বারা সংঘটিত একটি অভ্যুত্থান দ্বারা। কর্নেল আবদুল সালাম আরিফের নেতৃত্বে ইরাকি সেনাবাহিনীর ২০ তম ব্রিগেডকে পূর্ব ইরাকের দিয়ালা গভর্নরেটের ঘাঁটি থেকে পশ্চিমে জর্ডানের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই যাত্রার জন্য সেনাদলের বাগদাদ অতিক্রম করা একটি পথ এবং এই পথটিই অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের সুবিধার জন্য বেছে নিয়েছিল। জর্ডানের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে, সেনাবাহিনী বাগদাদের রাজা দ্বিতীয় ফয়সলের আল-রিহাব প্যালেসে আক্রমণ শুরু করে এবং রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়।

কিন্তু ঘটনার নাটকীয়তা এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। ক্ষমতায় থাকা হাশেমি রাজতন্ত্রের রাজা দ্বিতীয় ফয়সাল ছিলেন পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষিত একজন ভদ্র ও জনপ্রিয় রাজা। প্রচুর খনিজ সম্পদ বিশেষ করে প্রেট্রোলিয়াম সম্পদ আহরন করে ইরাককে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলছিলেন রাজা ফয়সাল। সেই সময় ব্রিগেডিয়ার আব্দুল করিম কাসেম এবং কর্নেল আবদুল সালাম আরিফ "ফ্রি অফিসারর্স" নামে পরিচিত তরুন সামরিক কর্মকর্তাদের একটি গোপন দল গঠন করেন, যারা ইরাকের রাজতন্ত্রের পতন ঘটানোর পরিকল্পনা করেন। তারা ১৯৫২ সালে মিশরে অনুষ্ঠিত অভ্যুত্থানের মতো ইরাকেও একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময়ে ইরাকের তরুণ প্রজন্ম বিশেষভাবে অসন্তুষ্ট ছিল এবং হতাশ ছিল যে সরকার এখনও বয়স্ক লোকদের হাতে।

১৪ জুলাই ভোরে, কর্নেল আরিফের নেতৃত্বে সামরিক দলটি বাগদাদে প্রবেশ করে। এই দলের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজপরিবার এবং শাসকগোষ্ঠীকে আটক করা এবং ক্ষমতা দখল করে রাজপরিবারকে বিদেশে নির্বাসিত করা। কিন্তু বাগদাদের উপকণ্ঠে একটি ক্যাম্পে অবস্থানরত এক পদাতিক প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন আবদুল সাত্তার আল-আবুসি রাজ প্রসাদে ধোঁয়া ও গোলাগুলির শব্দ শুনে বিদ্রোহের ঘটনা অনুমান করেছিল। আল-আবুসি অভ্যুত্থানের কুশীলবদের পরিকল্পনা হালকাভাবে জানতেন, তবুও তিনি শরীরে উত্তেজনার ঢেউ অনুভব করেছিলেন। রাজকীয় শাসনব্যবস্থার প্রতি তার ব্যক্তিগত অসন্তোষ, এবং বিশেষ করে বিগত শাসক, রাজা ফয়সলের চাচা আবদ আল-ইলাহর প্রতি তার ঘৃণা গোপন ছিল না। গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আল-আবুসির ভাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মারা গেছেন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে এতে শাসকদের হাত ছিল। অভ্যুত্থান বুঝতে পেরে ক্যাপ্টেন সাত্তার আল-আবুসি তার কামান সহ ছোট দলটি নিয়ে ঘটনাস্থলে অগ্রসর হন। প্রাসাদের দিকে কামানের চারটি গুলিও করে সেই দল।

কর্নেল আরিফের নেতৃত্বে সামরিক দলটির মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজপরিবার এবং শাসকগোষ্ঠীকে আটক করা এবং তাদের ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো। প্রাসাদের যে গার্ড রেজিমেন্ট ছিল তারা ছিল রাজার অধিনে স্বাধীন যারা সামরিক বাহিনীর অংশ নয়। তারা প্রতিরোধ করতে উদ্যত হলে তাদের থামিয়ে ধুলো এবং ধোঁয়ার মধ্যে প্রসাদের সামনে আবির্ভূত হলেন রাজা দ্বিতীয় ফয়সাল, তাঁর চাচা প্রিন্স আবদ আল-ইলাহ, রানী নাফিসা, এবং রাজকুমারী আবদিয়া, হিয়াম এবং বাদিয়া, সাথে একজন তুর্কি বাবুর্চি, একজন বৃদ্ধ দাসী এবং রাজকীয় গার্ডের একজন সদস্য। রানী নাফিসা একটি কোরআন তার বুকে ধরে রেখেছিলেন।

এই দৃশ্য প্রাসাদ ঘিরে থাকা কাসেমের অনুগত সৈন্যদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এত দ্রুত ইরাকের সিংহাসন ভেঙে পড়বে কেউ কল্পনাও করেনি। এটি অবিশ্বাসের একটি মুহূর্ত ছিল যখন তারা তাদের যুবক রাজাকে দেখছিল, যার কাছে তারা তার সামরিক একাডেমিতে স্নাতক হওয়ার পরে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পুরো পরিবার একসাথে এসেছিল রক্তপাত এড়িয়ে আত্মসমর্পণের জন্য যারা এর পর প্রাসাদের বাগানের দিকে আসতে উদ্যত হয়।

প্রাসাদের বাগানে তখন আর একটি বিশ্বাসঘাতকতা সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে। কোন সতর্কতা ছাড়াই, ক্যাপ্টেন আব্দুল সাত্তার আল-আবুসি পুরো রাজপরিবারের উপর তার মেশিনগান থেকে ব্রাশফায়ার করতে করতে এগিয়ে যায়। গুলি চালাতে চালাতে সে চিৎকার করে বলেছিল: "এই লোকেদের আপনাদেরকে প্রতারিত করতে দেবেন না"। রাজা দ্বিতীয় ফয়সাল গুলি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, নিজের রক্তে যেন তিনি স্নান করেছিলেন, তাঁর চারপাশ ছিল রাজকুমার, রাণী এবং রাজকন্যাদের নিহত দেহে ঘেরা। লোকে বলে যে রাজা যখন মারা যাচ্ছিলেন, তখন তার মুখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। মাত্র ২৩ বছর বয়সী তরুণ অবিবাহিত রাজা তখন বিবাহের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। সেই সকালটি তার বাগদত্তা, মিশরীয় রাজকুমারী ফাদেলার সাথে দেখা করার জন্য যাত্রার জন্য নির্ধারিত ছিল। রাজকুমারী ফাদেলার প্রতি ফয়সালের গভীর ভালবাসা সুপরিচিত ছিল এবং তিনি ও তার পরিবার তুরস্কের রাষ্ট্রপতি আদনান মেন্দেরেসের সাথে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে ফয়সলের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের অন্য পরিকল্পনা ছিল শুধু তার নয়, পুরো ইরাকের ভবিষ্যতের জন্য।

ব্রিগেডিয়ার কাসেমের অভ্যুত্থানের পর থেকে সমৃদ্ধি এবং আধুনিকতার পথে যাত্রা করা একটি শান্তিপূর্ণ এবং সম্মানজনক দেশ ছাত্রদের ব্যবহার করে বিপ্লব পরিস্থিতি তৈরি করে সামরিক একনায়কদের ক্যু এবং কাউন্টার ক্যু এর ক্রিড়াক্ষেত্রে পরিণত হয়। নতুন কাসেম সরকার ইরাককে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে এবং ঘোষণা করে যে ইসলাম হবে রাষ্ট্রধর্ম।

 

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।