মুক্তি আর স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ শহীদ যে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, সম্মান হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মা বোন, আজ সেটার চুয়ান্ন বছর হয়ে গেছে। এটা মোটামুটি আমাদের জীবনকাল। ব্যক্তি মানুষের পঞ্চাশ বছরেই তার সফলতা ব্যর্থতার হিসাব নিকাশ হয়ে যায় যে সে জীবনে যেটা অর্জন করতে চেয়েছিল সেটা করেছে কিনা। একটি জাতির জন্য চুয়ান্ন বছর হয়ত সেটা নয়, তবে এটা মানতে হবে যে চুয়ান্ন বছরে জাতির গতিপথ ইতিবাচক না কি নেতিবাচক পথে, সেটাই নির্ণয় করে জাতি হিসাবে তার সফলতা ব্যর্থতা।
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে আমি স্বাধীনতা দেখেছি, তার পরপরই মানুষের সেই স্বাধীন দেশের প্রতি ক্ষোভ বিতৃষ্ণা দেখেছি, স্বাধীনতার নায়ককে সপরিবারে হত্যা করে সিংহভাগ মানুষের উল্লাস দেখেছি। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা তাদের এজেন্টদের ক্ষমতায় বসিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা দেখেছি। সেটিতেও বিতৃষ্ণায় আবার স্বাধীনতায় নেতৃত্বের সেই দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে তাদের উপর খুন, বোমা, আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি দেখেছি। দেখেছি সেই দলেরই জনগনের উপর পুলিশি নিয়ন্ত্রণ ও আইন ন্যায় বিচার পায়ে পিষে আইনের বাইরের গোপন শক্তি দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা। আবার দেখছি মার্কিন রঙিন বিপ্লবের সহায়তায় কিছু উন্মাদের পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের নিয়ে সংবিধান ও গণতন্ত্রকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা যেটি করা হয়েছে সামরিক শক্তির খোলামেলা সহযোগীতায়।
তার মানে ঘুরে ফিরে আবার সেই জিন্নাহর পাকিস্তান ভিন্ন নামে, যেখানে রাজনৈতিক নেতারা হবে সংসদের অলঙ্কার মাত্র, জনগন হল নিম্ন শ্রেণী, চাকর বেয়ারা আর দেশ শাসন হবে গোপন ধর্মীয়-সামরিক-এলিট বৈঠকখানা থেকে সেটা যে কোথায় অবস্থিত তার হদিস কেউ জানে না সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক যারা তাদের কেউই।
এক সময় ভাবতাম এটা একটা চক্রান্ত কিন্তু এখন যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ গবেষণা বলছে, না এটা শুধু চক্রান্ত নয়, মেজরিটি অবচেতনে যেন এটাই চায়। তারা স্বাধীন হতে চায় না, তারা প্রচন্ড ক্ষমতাশালী এক সুলতানের তাবেদার প্রজা হতে চায়, সেই সুলতানের শাসক হয়ে অন্যদের হুকুমের দাস, চাকর শ্রেণী বানাতে চায়। স্বাধীন হতে গেলেতো সৃজনশীলতা দেখাতে হবে, সফলতা ব্যর্থতার দায়িত্ব নিতে হবে - কি দরকার সেই দায় নেবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্ররা এখন সরকারী কেরানি হতে চায়, সততার সাথে মনের কথা বলার জন্য তাদের ধন্যবাদ।
একটি লেখা তৈরির পরিকল্পনায় পড়ছিলাম শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ আবার। এক’শ পাঁচ বছর আগের এই এপিক কাহিনী এখনও জনপ্রিয়, আমার মনে বিরাট প্রশ্ন – সেটা কেন? দেবদাসতো একটা স্টোরি অব অ্যাবিউজ, একটি নারী নির্যাতকের কাহিনী। নিয়মিত বান্ধবীর গায়ে হাত তোলা তরুণ বয়সে বখে যাওয়া দেবদাস তার জমিদার পিতার হুকুমের দাসই থাকতে চায়, প্রেম তার কাছে একটা সাময়িক ও বিভ্রান্তিকর আনন্দ হলেও প্রেমিকার দায়িত্বের বোঝার ভীতিতে সেটা তার মনে তৈরি করে তার চেয়েও বেশি উদ্বেগ ও বিতৃষ্ণা। সেই নির্যাতনকারী দাসের পদতলে সারা জীবন তার সেবা করতে চায় প্রেমিকা পার্বতী। শত মানুষকে বিনোদন দেওয়া চন্দ্রমুখীর মনে ধরে বখে যাওয়া মিসজিনিক নার্সিসিস্টিক মাঝবয়সী সেই দেবদাসকেই যে তাকে ঘৃণা করে, অথচ সেই চন্দ্রমুখীই আবার দেবদাসের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়। হতবাক লাগে এ কোন দাস সংস্কৃতি? নারী পুরুষ সবাই নিপিড়ণকারীর দাস হতে এত উন্মুখ কেন?
এক’শ পাঁচ বছর আগে এটা লিখেছিলেন শরৎচন্দ্র, যেটি তখনকার সমাজের একটি প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিল। যা ছিল এক ভ্রষ্ট জমিদারপুত্রের চরিত্র এবং সেটিতে বাঙালী নারী - ‘সতী’ ও ‘অসতী’ উভয়েরই অবসেসিভ ডিভোশন বা আত্মনিবেদন যেটা নিয়ে পরিবর্তীতে লেখা যাবে বিস্তারিত। কিন্তু এখন যেটা বলতে চাই, সেটা হল শরৎচন্দ্র যা বোঝাতে চেয়েছেন মানুষ বুঝেছে তার উল্টো, তারা নারী নির্যাতক দেবদাসকেই প্রেমিক বানিয়ে তার দু:খে কেঁদে কেটে অস্থির আজও।
নির্যাতনকে প্রেম ভাবা ও নির্যাতককে প্রেমিক বানিয়ে পুজো করার যে মানসিকতা সেটা আমাদের দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও একই। যে নির্যাতন আর অবমুল্যায়নের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, নিজেরাই এখন সেই নির্যাতকের পদে অধিষ্ঠিত এবং জনগণই যেন সেটাই চায়। এটা সেই দাস সংস্কৃতি ও দাস মনোবৃত্তি যা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে স্বাধীনতা হবে নামেই স্বাধীনতা আর ধুকে মরবে প্রকৃত স্বাধীন আত্মা।
মনোবিদ্যা ও মনোচিকিৎসার জ্ঞানে মাৎচোকিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার* বা আত্মপীড়নের ব্যক্তিত্বের ডিসঅর্ডার একটি চারিত্রিক অক্ষমতার সমস্যা। এটিতে এত বেশি ব্যক্তি আক্রান্ত যে এটি ডিসঅর্ডার ঘোষিত হলে ঝড় বয়ে যাবে, তাই এটি মানসিক রোগের ম্যান্যুয়ালে এখনও অপেক্ষমান আছে, তারা এটিকে সেখানে যুক্ত কারার সাহস পাচ্ছে না। মাৎচোকিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার এর লক্ষণগুলো হল:
ক) এর প্রধান লক্ষণ হল ক্ষতিকর আত্ম পরাজয়মূলক আচরণের একটি বিস্তৃত প্যাটার্ন বা চিত্র বর্তমান থাকা। পরিণত জীবন শুরুর প্রথম দিক থেকে শুরু করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন আঙ্গিকে এটি বিস্তার লাভ করে। এই ডিসঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই কোন আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা এড়াতে বা সেটার অবমূল্যায়নে উৎসাহিত হয় বা অন্যকে অবমূল্যায়নে উৎসাহিত করতে পারে। তারা এমন পরিস্থিতি বা সম্পর্কের প্রতি আকৃষ্ট হয় যা তাদের দুঃখভোগ বৃদ্ধি করবে। তাদের জীবনে যারা তাদের দুঃখবোধের পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হবার জন্য সহায়তা করে, নানাভাবে তাদের তারা সেটা থেকে বিরত করার চেষ্টা করে।
নিচের নয়টি নির্দেশকের অন্তত পাঁচটি নির্দেশক দ্বারা এই ডিসঅর্ডার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়:
১। বিভিন্ন উন্নত বিকল্প পথগুলো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান থাকলেও হতাশা, ব্যর্থতা বা দুর্ব্যবহারের দিকে পরিচালিত করে এমন মানুষ ও পরিস্থিতিকে তারা তাদের জীবনে গ্রহণ করে।
২। অন্যদের তাদের জীবনকে আনন্দময় করতে বা নেতিবাচকতা থেকে পরিত্রাণে সহায়তা করার চেষ্টাকে তারা অকার্যকর বা ব্যর্থ বলে উপস্থাপিত বা প্রমাণ করে।
৩। ইতিবাচক ব্যক্তিগত আনন্দের ঘটনাগুলি (যেমন, নতুন কোন অর্জন, প্রাপ্তি) ঘটার পর, হতাশা, অপরাধবোধ বা এমন আচরণের দ্বারা তারা প্রতিক্রিয়া জানায়, যা দুঃখবোধ তৈরী করে (যেন কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে)।
৪। তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যা অন্যদের তাদের প্রতি রাগ বা প্রত্যাখ্যানমূলক প্রতিক্রিয়াগুলি দেখাতে প্ররোচিত করে। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা দুঃখ পায়, আহত হয়, পরাজিত বা অপমাণিত বোধ করে (যেমন জনসম্মুখে স্বামী/স্ত্রী একে অপরকে নিয়ে বিদ্রুপ করে, যা তাদের রাগ উসকে দেয়, তারপর সেটি ঘটলে তারা বিধ্বস্ত বোধ করে)।
৫। ছোট বা বড় মাত্রায় আনন্দিত হবার সুযোগগুলি তারা প্রত্যাখ্যান করে, অথবা সেগুলো উপভোগের কথা অস্বীকার করে (আনন্দ উপভোগ করার জন্য পর্যাপ্ত সামাজিক দক্ষতা ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও)।
৬। সফলভাবে কোন কাজ সমাপ্ত করার দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যসাধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করতে ব্যর্থ হয় (যেমন সহপাঠী শিক্ষার্থীদের পেপার লিখতে সহায়তা করে, তবে তাদের নিজেদের জন্য সেগুলো লেখায় অক্ষম হয়)।
৭। ধারাবাহিকভাবে তাদের সাথে ভাল আচরণ করে যারা এমন লোকদের প্রতি কারা অনাগ্রহী হয় ও তাদের প্রত্যাখ্যান করে।
৮। অত্যধিক আত্মত্যাগ করে থাকে যেটা সেই ত্যাগের উদ্দেশ্য যারা তারা অনুমোদন করে না বা পছন্দ করে না।
৯। এই ব্যক্তিরা প্রায়শঃই বিভিন্ন আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা এড়াতে চায় বা হ্রাস করতে চায়। তারা আনন্দের সুযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করে, বা সেগুলি উপভোগ করার ইচ্ছা স্বীকার করতে অনিচ্ছুক হয়।
খ) ‘ক’ এ বর্ণিত আচরণগুলি শারীরিক, যৌন, বা মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনায় বা প্রত্যাশায় ঘটে না।
গ) ‘ক’ এ বর্ণিত আচরণগুলি ব্যক্তিটি হতাশাগ্রস্ত হবার ফল নয়।
উপরের এই সিম্পটমগুলোর সাথে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা এনে দেওয়া মানুষগুলোর প্রতি আচরণ, আমাদের ভারত বিদ্বেষ, পাকিস্তান প্রেম, আমেরিকা প্রেম, সামরিক বাহিনী ও সামরিক শাসনের প্রতি প্রেম এগুলো মিলিয়ে দেখুন, অনেক কিছু পরিষ্কার হবে।
আত্মপীড়নের ব্যক্তিত্বের ডিসঅর্ডারের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
• মুক্তির পরিবর্তে কষ্ট বেছে নেওয়া: একজন ব্যক্তি সাহায্য বা ইতিবাচক মনোযোগ প্রত্যাখ্যান করতে পারে, এমন পরিস্থিতি পছন্দ করে যেখানে ত্যাগ বা কষ্ট জড়িত।
• স্ব-নাশকতা: তারা সাফল্যের কাছাকাছি এসে নিজেদের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে, যেমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিলম্ব করা বা সহায়ক সম্পর্ক নষ্ট করা।
• শোষণমূলক সম্পর্কের প্রতি আকর্ষণ: তারা এমন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে যারা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে বা সুবিধা নেয়, ভিকটিম হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পায়।
• অতিরিক্ত আত্মত্যাগ: তারা নিজের ক্ষতির জন্য অন্যের চাহিদাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয় এবং আনন্দ বা সাফল্য অনুভব করলে অপরাধবোধ অনুভব করতে পারে।
• আবেগ নিয়ন্ত্রণ: তারা নিজের অনুভূতিকে কম গুরুত্ব দিতে পারে বা ন্যায়সঙ্গত হলেও রাগ প্রকাশ করা এড়িয়ে যেতে পারে।
পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার একটি ক্লিনিক্যাল বিষয় যেটি মানসিক রোগী ও মনোচিকিৎসাবিদের মধ্যেই থাকার কথা। পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার একটি চরম অবস্থা যখন সেটি রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করে ও সেটা তার জন্য বা তার আশে পাশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের ট্রেইটগুলো আংশিক বা মাইল্ড স্কেলে ব্যাপক জনগনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে ক্রনিক সমস্যা হিসাবে। যেমন নার্সিসিসটিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার একটি ক্লিনিক্যাল সমস্যা। কিন্তু তারই অংশবিশেষ নিয়ে নার্সিসিজম সেটা এপিডেমিক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে সাধারণের মাঝে। তেমনই মাৎচোকিইস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা আত্মপীড়নের ব্যক্তিত্বের ডিসঅর্ডারের মাইল্ড মহামারিতে আমরা আক্রান্ত বলেই আমরা স্বাধীন চিন্তা ও উপভোগে সেল্ফ ইনহিবিটেড ও নিজেদের অর্জনে আত্মঘাতী এবং দাস মনবৃত্তির। এর থেকে পরিত্রাণ না পেলে প্রকৃত স্বাধীনতা সুদুর পরাহত।
* মাৎচোকিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বা আত্মপীড়নের ব্যক্তিত্বের ডিসঅর্ডার, বর্তমান ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স (DSM-5) এ একটি স্বতন্ত্র রোগ নির্ণয় হিসেবে স্বীকৃত নয়। তবে, এটি পূর্ববর্তী সংস্করণে (যেমন DSM-III-R) আরও গবেষণার জন্য প্রস্তাবিত হয়েছিল। এটি এমন একটি ধরণের আচরণকে বর্ণনা করে যেখানে ব্যক্তি সমসাটি নিয়মিতভাবে ব্যক্তির সুস্থতা, সাফল্য বা সুখকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই প্রবণতা থাকা ব্যক্তিরা আনন্দের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করতে পারে, কষ্টের সন্ধান করতে পারে, অথবা এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ফেলতে পারে যেখানে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হবে বা তারা ব্যর্থ হবে—প্রায়শই নিজের ভূমিকা সম্পর্কে অজ্ঞাত থেকে। স্বতন্ত্র রোগ নির্ণয় হিসেবে স্বীকৃত না হলেও নন ক্লিনিক্যাল ফর্মে এটি বিশেষ সংস্কৃতি বা গোষ্ঠী আচরণে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে।