অ্যাপেল সিইওকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল আইফোন আপনারা চীনদেশে বানান কেন? সেখানে শ্রমিক সস্তা বলে? উত্তরে টিম কুক বলেছিল "কে বলল চীনে শ্রমিক সস্তা? আমরা আইফোন চীনে বানাই সেখানকার মানুষের দক্ষতার জন্য। সেটা হল উচ্চমানের উৎপাদনের জন্য সঠিক মানব সম্পদ"। কুক আরও বলেছে "সারা আমেরিকার সব টুলমেকারকে এক করলে এই অডিটোরিয়ামটি পুর্ন হবে মাত্র। অথচ চীনে কয়েকটি স্টেডিয়াম ভরে যাবে"। উচ্চমানের প্রোডাক্ট তৈরীতে উচ্চ দক্ষতার মানুষ প্রয়োজন সবার আগে। আর তাদের ঠিকভাবে কাজে লাগাতে লাগে সঠিক ম্যানেজমেন্ট স্কিল।
স্লিম ক্রেজের যুগে খাওয়া দাওয়া নিয়ে অদম্য উৎসাহের পোস্ট ইদানিং আর কেউ দেয় না কিন্তু অসম সাহসী বন্ধু মুনির হাসান দেয়। মুনির হাসানের কোন কোন পোস্টে কমেন্ট করলেও খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন পোস্ট দেখলেই আমি দ্রুত স্ক্রল করে অন্য কিছুতে চলে যাই। কারণ আমার মনে হয় তার এই প্রচন্ড ভোজনরিসক হবার পেছনে আমার একটা দায় আছে। বিষয়টা যাতে তার মনে না পড়ে সেই কারণেই এসব বিষয় নিয়ে কখনও তার সাথে আলাপে জড়াই না।
আমার স্কুল ছিল এখন যেটা সরকারী বিজ্ঞান কলেজ। স্কুলে থাকতে ফার্মগেট হয়ে টোম্পো বা বাসে বাসায় যাতায়াত করতাম। সরকারী বিজ্ঞান কলেজ থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্ট রোডে আসলেই কোনায় একটা পত্রিকার দোকান ছিল। সেখানে অণু নামে একটি পত্রিকা একদিন চোখে পড়ে। সেটাতে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন লেখা থাকত এবং সেগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। কলেজে উঠে একদিন সেই পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি লিখলাম যে এই পত্রিকাতে জড়িত হতে চাই। পত্রিকার সম্পাদক স্বপন দা চিঠির উত্তর দিলেন ও দেখা করতে বললেন। প্রথম কোন পত্রিকা অফিসে যাচ্ছি একটু রোমাঞ্চিত কিন্তু গিয়ে দেখি পত্রিকার কার্য্যালয়টা হল বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের স্বপন দার পড়ার একটা ছোট্ট টেবিল আর তার বিছানা। সেই রুমে আরও দুজন থাকত তারা নিজেদের পড়াশোনায় ব্যস্ত। আমার উৎসাহ ও সক্ষমতা দেখে স্বপন দা বললেন লিখতে। এক’দু সংখ্যা পর থেকেই লেজার রশ্মির উপর বেশ কঠিন একটা ধারাবাহিক লেখা অণুতে বের হতে শুরু করল। পরবর্তীতে অণু পত্রিকার নিয়মিত কাজে যুক্ত হয়ে গেলাম। ইলেকট্রনিক্সে আমার উৎসাহ দেখে এর কিছুদিন পরেই স্বপন দা পরিচয় করিয়ে দিলেন অনুসন্ধিৎসু চক্র নামে এক বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য আজহারুর হক সেলিম ভাইয়ের সাথে তাঁদের মালিবাগের বাসায়।
পরবর্তী কয়েক বছর এই দুটি সংগঠনে নানা কাজ করার পর আমি আর সেলিম ভাই মিলে সিসকন ইলেকট্রনিক্স নামে একটি স্টার্টআপ শুরু করি। হাইফাই অডিও যন্ত্রপ্রাতি নিয়ে কাজ করা সেই প্রতিষ্ঠান দ্রুতই ভাল করতে থাকে কিন্তু ধীরে ধীরে সেলিম ভাইয়ের আরও ভাইয়েরা সেখানে যুক্ত হলে আমি বের হয়ে আসি এবং নিজের স্টার্টআপ সাইবারনেটিক সিস্টেমস শুরু করি।
জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিযোগীতায় ১ম স্থান পাবার পর তরুণদের স্থান করে দেবার জন্য ক্লাবের সময় ও কাজ কমিয়ে দেই ও নিজের স্টার্টআপের কাজে ব্যস্ত হই। এর মধ্যে অনুসন্ধিৎসু এবং অণু নিয়ে কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন ওঠায় স্বপনদাও অণুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। উল্লেখ্য যে অণুতে আমরা কাজ করতাম সম্পূর্ণ ভলান্টিয়ারি।
এর মধ্যে ইলেকট্রনিক্স নামে বাংলায় একটি পত্রিকা প্রকাশ শুরু করি সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে। আর আমরা একটি সাপ্তাহিক বিজ্ঞান আলোচনা সভা শুরু করি বিজ্ঞান চেতনা কেন্দ্র নামে। এই দুটোর অফিস ছিল মালিবাগে আমার টেবিল ও বিছানা। সেখানে আমাদের বাসা থেকে বিস্কুট ও চা দেওয়া হত বলে দুষ্ট লোকে সেটাকে বিস্কুট চেতনা বলত কারণ সেখানে গিয়ে বিজ্ঞানের কিছু না বুঝলেও বিস্কুট চা পাওয়া যেত।
সেই সময় সংবাদ পত্রিকাটির বিজ্ঞানের বিষয়ে আগ্রহী ছিল অন্য পত্রিকা থেকে বেশী। ড: আবদুল্লাহ আল মুতি বিজ্ঞানের পাতা দেখতেন ও নিয়মিত লেখা চাইতেন। আমি যেহেতু দেশের সর্ববৃহৎ টেলিস্কোপটি তৈরী করেছিলাম অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান ক্লাবের সহযোগীতায়; যার উদ্দেশ্য ছিল হ্যালির ধুমকেতুর ছবি তোলা। সেই কারণে সংবাদে আমার কাছ থেকে চাওয়া হত প্রতি মাসের রাতের আকাশের স্টার চার্ট।
এই সময় আমরা জানতে পারি ১৯৯৫ সালের ২৪শে অক্টোবর সকালে একটি পূর্ণগ্রাস সূর্য্যগ্রহণ হবে এবং বাংলাদেশে যেটি দেখা যাবে শুধুমাত্র সুন্দরবন থেকে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে যেহেতু আমি রোমান্টিক নই, সিরিয়াসলি দেখে এসেছি সব সময় একাডেমিক বিজ্ঞানের সাথে সংযোগ রেখে। পূর্ণগ্রাস সূর্য্যগ্রহণ আমার কাছে তাই খুব একটা আগ্রহের কিছু ছিল না। সূর্য্যগ্রহণ তাদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ যারা সূর্য্য নিয়ে গবেষণা করেন বা সূর্য্য পর্যবেক্ষণ করার সঠিক যন্ত্রপাতি (সোলার অবজার্ভেটরি) যাদের আছে। যেটা একটি ভিন্ন বিজ্ঞান। ১৯৯৫ সালের পূর্ণগ্রাস সূর্য্যগ্রহণে আমার আগ্রহটাই তৈরী হল তাই সুন্দরবন নিয়ে।
হিসাব কষে নকশা কেটে দেখা গেল পূর্ণগ্রাস দেখতে হলে শুধু সুন্দরবন নয়, সাগরের কিনার পর্যন্ত যেতে হবে। তখন সুন্দরবনে কমার্শিয়াল ট্যুরিজম শুরু হয়নি তাই সেখানে যাওয়াটা সহজ নয়। আমি যেহেতু তখন অনুসন্ধিৎসু চক্র, বিজ্ঞান চেতনা কেন্দ্র, ইলেকট্রনিক্স পত্রিকা, সাইবারনেটিক সিস্টেমস এই চারটি সংগঠনের সাথে যুক্ত এবং এই চারটি সংগঠনেই যথেষ্ট দক্ষ ও প্রমাণিত কর্মীরা রয়েছে যাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আমি জানি এবং তারাও আমাকে বিশ্বাস করে। সেই কারণে আমাদের বাসার নিচের তলায় সাইবারনেটিকের অফিসে ড: এ আর খান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থের চেয়ারম্যান ও অনুসন্ধিৎসু চক্রের প্রেসিডেন্ট), বেনু ভাই (অনুসন্ধিৎসু চক্রের সাধারণ সম্পাদক) ও আরও কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা যাব। প্রথম প্রশ্ন হল খরচ কেমন হবে। আমরা কেউই তখন যথেষ্ট অর্থের মালিক নই এবং ঠিক কতজন যাবে সেটা তখনও অনিশ্চিত। এই সময় বেণুভাই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন একটি কাজ করলেন। তিনি বললেন তার এক বন্ধুর লঞ্চ আছে, তিনি কথা বলবেন। মাছরাঞা নামের সেই লঞ্চের সহৃদয় মালিক বেণু ভাইকে জানালেন শুধু তেলের টাকা দিলেই বিজ্ঞানের উৎসাহে ৬ দিনের জন্য লঞ্চটি তিনি দেবেন যেটি সদরঘাট থেকে হিরন পয়েন্ট যাবে ও সদরঘাটে ফিরবে।
আমরা হিসাব করলাম যদি ৮০ জন মানুষ আমরা পাই তাহলে ডাল ভাত খেয়ে আমরা ট্রিপটি করতে পারব। আমি যে চারটি সংগঠনে আছি সেটাতে সবাই মিলে জনা চল্লিশেক হয়ে গেল। সেই সময়ে সাইবারনেটিকে তরুণ প্রকৌশল ও বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা অনেকে আসত। সাইবারনেটিকে আমার ক্লায়েন্টদের মধ্যেও অনেকে ছিল উৎসাহী। এর সাথে অনেকের পরিবারের লোকজন যুক্ত হয়ে দু’এক দিনেই যাত্রী সংখ্যা এক’শ পার হয়ে গেল। এটা জানাজানি হতেই নানা সংগঠন থেকে আমার অফিসে ফোন আসা শুরু হল। বুয়েটের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদল, নানা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। অনেককে না করা সত্বেও দু’দিনের মধ্যে সংখ্যাটি সোয়া দুই’শ হয়ে গেল ও জাহাজের ত্রু-বাবুর্চী সহ যেটা প্রায় আড়াইশর ।
পরবর্তী চিন্তা হল এই আড়াই’শ লোকের ছয় দিনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাপনা হবে কিভাবে। এটাই প্রথম আমার চ্যালেঞ্জ ছিল ম্যানেজিং ম্যানেজারস।
দিন যত ঘনিয়ে আসছে কাজ তত বাড়ছে। আমি সব কাজ থেকে নিজেকে একটু দুরে সরিয়ে নিলাম। কোন কাজে নিজেকে নিযুক্ত করলাম না। শুধু চিন্তা করলাম দিন থেকে দিনে ঘন্টা থেকে ঘন্টায় কি কি হবে, কি কি করতে হবে। আরও ভাবলাম কোথায় কোথায় বিপর্যয় বাধতে পারে। কোথায় কোথায় কঠিনতর সমস্যা কি কি হতে পারে। সেগুলো থেকে বেরোবার পথ কি। এরপর ভাবলাম কাজ কি কি আছে ও কাকে কোন দায়ীত্ব দেওয়া যায়। প্রথমে লাগবে একটা টাকা সংগ্রহ ও হিসাব দল। এরপর একটি লজিস্টিকস দল। তার পর একটা ডিসিপ্লিন দল, একটা ডাইনিং ম্যানেজমেন্ট দল, একটা ক্লিনলিনেস ও স্যানিটারি ম্যানেজমেন্ট দল (যেহেতু লঞ্চে বাথরুম মাত্র ছয়টা যেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে) ইত্যাদী।
দলগুলো তৈরি করলাম বিভিন্ন সংগঠনে আমার অভিজ্ঞতা ও তাদের দক্ষতা থেকে। সাইবারনেটিকের এক ক্লায়েন্ট বরিশালের ইব্রাহিম ভাই, বাজার করতে আর খেতে খুব পছন্দ করেন, তাকে দেওয়া হল বাজারের দায়িত্ব (তখন মুনির হাসান এমন ছিল না)। সাইবারনেটিকে আমার এক কলিগ ছিল হিসাব নিকাশে, তালিকায় খুব গোছানো, তাকে দেওয়া হল কি কি ব্যবহার্য্য জিনিষপত্র লাগবে সেগুলো লিস্ট করে জাহাজ পর্যন্ত নেবার কাজ ও হিসাব রাখার কাজের লিডারশিপ। সাইবারনেটিকের আর এক কলিগ ছিল খুব খুঁতখুঁতে ও তার হেলখ সার্ভিসে প্রশিক্ষণ ছিল। তাকে করা হল হাইজিন ও স্যানিটেশন টিমের লিডার। মুনির হাসান ও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে দেওয়া হল সবচেযে বড় কাজ – খাবার সময় তদারকী ও ব্যবস্থাপনা।
আমি নিজে কোন দায়ীত্ব নিলাম না। আমি শুধু বসে বসে পর্যবেক্ষণ করলাম দৌড়াদৌড়ি করে ততটা নয়, অনেকটা আভাস থেকে, চ্যাটারিং থেকে, ইনটিউশন থেকে যে কোথাও ছন্দপতন হচ্ছে কিনা। কেউ কোথাও সমস্যায় পড়ছে কি না বা কেউ অভিযোগ করছে কি না। কোথাও কেন ছন্দপতন হলে আমি নিজে গিয়ে সেটা সমাধানে নিজে কাজ করেছি। যেহেতু এটি একটি বড় দল ও এখানে সবাই ভলান্টিয়ার তাই আমার মনে একটি ছক ছিল এই পুর্ণ প্রক্রিয়াটার পাওয়ার হায়ারার্কি নিয়ে। যেমন যদি কেউ আমার কথা না শোনে বা এমন কিছু করে যেটা সবকিছু এলোমেলো করে দেবে, তখন কি করব। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার পরিচিত যারা বা নিজ সংগঠনের যারা তারা এমন কিছু করবে না। কিন্তু এখানে বাইরের লোক ছিল এবং যাদের আমি ঠিকমত চিনি না। এসব ক্ষেত্রে ক্যায়স তখনই ঘটে যখন কোন সংকট তৈরী হয় বা কোন দুর্ঘটনা ঘটে।
এই সমস্যা সমাধানে আমে খুঁজে বের করেছিলাম আমি ছাড়া এখানে আমার জানা মতে কে কে ক্ষমতা রাখে। তাদের আমি পাওয়ার বেস হিসাবে ব্যবহার করেছিলাম। এক ভাই ছিলেন তখন বন্দুকের মালিক এবং লড়াকু। আর এ আর খান স্যার ছিলেন যার উপরে কেউ কথা বলত না। যখনই কোন সমস্যা আমি আঁচ করতাম, আমি এই দুই পওয়ার বেসকে ব্যবহার করেছি ঘটনা ঘটার আগেই অগ্রিম ব্যবস্থা নিয়ে। একটি দল অতি স্বাধীনতা চাইলে আমি বেণু ভাইকে দিয়ে তাদের নিরস্ত করি। আসার পথে যখন আমাদের লঞ্চটি চরে আটকে যায় তখন একজন লঞ্চের কর্মীদের উপর চড়াও হন এবং লঞ্চের স্টাফদের গুলি করার ভয় দেখান। আমি তখন খান স্যারকে বলে তাকে থামাই।
আশ্চর্যজনকভাবে সম্পুর্ণ ননপ্রফেশনাল ও একেবারেই অনভিজ্ঞদের দ্বারা প্রায় আড়াই’শ লোকের ছয় দিনের এই যাত্রা শেষ হয় সম্পুর্ণ সফলভাবে বিন্দুমাত্র কোন অভিযোগ ছাড়া। সমস্যা যে হয়নি তা নয়। বাজার ফুরিয়ে গেছে, লঞ্চ চরে আটকে গেছে, কিন্তু সময়মত ব্যবস্থা নেওয়াতে সেগুলোর কোন প্রভাব পড়েনি যাত্রীদের অভিজ্ঞতায়।
ভ্রমণটা একেবারে ঠিকমত হবার কারণ সঠিকভাবে ম্যানেজিং ম্যানেজারস। ম্যানেজিং ম্যানেজারস ম্যানেজিং টাস্ক বা ম্যানেজিং প্রজেক্ট থেকে অনেকটা ভিন্ন। প্রজেক্ট বা টাস্ক ম্যানেজের জন্য প্রয়োজন দৃশ্যমান লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করা। অপরদিকে ম্যানেজিং ম্যানেজারসের লক্ষ্য হলো বিমূর্ত। তার কাজ হলো ম্যানেজাররা যাতে তাদের কাজ এমনভাবে করে যাতে কাজটির যে দৃশ্যমান লক্ষ্য শুধু সেটা নয়, প্রতিষ্ঠানের বা কর্মযজ্ঞের যে দূরবর্তী লক্ষ্য, তার যে গোল, সেটি যেন অর্জিত হয়। উদাহরণ হিসাবে সমান ক্ষমতার দুটি ফুটবল টিমের কথা বলা যেতে পারে। একটি দল হয়ত এমনভাবে খেলছে যে প্রতি ম্যাচে তারা জেতার চেষ্টা করছে। আর একটি দল এমনভাবে খেলছে যে নিজেদের খেলার স্টাইল পরিবর্তন করে, প্রতিপক্ষদের ও মাঠের পরিস্থিতি বুঝে প্রতি ম্যাচেই তারা ক্রমেই আরও শক্তি অর্জন করছে। এখানে দ্বিতীয় দলের টুর্নামেন্টটি বিজয়ের সম্ভাবনা বেশী কারণ তারা শুধু নিকট লক্ষ্য নয়, দূরবর্তী লক্ষ্যকে অর্জন করতেও কাজ করছে। যারা ম্যানেজারদের ম্যানেজ করছে তাদের এই দূরবর্তী লক্ষ্যটির প্রতি নজর থাকতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন ভিশনারী, অ্যন্টিসিপেশন এবং সমস্যা শুরু হবার আগেই সেটা ধরতে পারা ও সেটাতে হস্তক্ষেপ করতে পারা সঠিক ক্ষমতাটি প্রয়োগ করে। এর জন্য প্রয়োজন একটি তৃতীয় চক্ষু। যেটা আসলে অবজেক্টিভ নয়, গোলটিকে সবসময় নজরে রাখে।
বাংলাদেশে সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ধরণের কারণেই হয়ত এদেশে ভাল ম্যানেজার বিরল। পোশাক শিল্প ও কিছু বড় ব্যবসা গড়ে উঠলেও তাদের বেশীরভাগ ম্যানেজ করতে ভারত, শ্রীলংকা থেকে ম্যানেজার আনতে হয়। আমার মনে হয় এর কারণ আমাদের পার্সোনালাইজেশন অব প্রফেশন। পেশাকে আমরা এখনও ব্যক্তিগত আবেগ থেকে আলাদা করতে পারিনি। সেই কারণে ম্যানেজিং ম্যানেজারসের যে দক্ষতা সেটিও গড়ে ওঠেনি। জনসংখ্যার দিক থেকে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ অনেক বড়, পৃথিবীতে অষ্টম। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এই অদক্ষতাটি আরও প্রকট। ম্যানেজমেন্টে জ্ঞান, প্রশিক্ষণ, সাংস্কৃতিক বাধা দুর করা ও ম্যানেজিং ম্যানেজারস বিষয়ে দক্ষতা অর্জন ছাড়া আমরা আমাদের অর্থনীতি ও জীবনযাপনের প্রকৃত উন্নয়ন করতে পারব না। শাস্তি আর জেল জরিমানা বাড়িয়ে সেটা হয় না।
আমার ধারণা ছয়দিন সোয়া দুই'শ মানুষের খাওয়া দাওয়া দেখে মুনির হাসানের খাবার প্রতি অতি আগ্রহটা শুরু হয়েছে। বিষয়টা তাকে না বলাই ভাল।