EN
আরও পড়ুন
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -২
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -১
ধর্ম ও দর্শন
শহুরে শিক্ষিত দালালদের শক্তিশালী করার কৌশল
ধর্ম ও দর্শন
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

ধর্মীয় বিপ্লব প্রকৃত রাজনীতিকে উৎখাতের জন্য

ইসলামী সন্ত্রাসবাদ বিপ্লবের অণুঘটক

বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের একটি প্রজেক্টের কল। সেটাতে আমাদের প্রতিষ্ঠান সিলেক্টেড হল সন্ত্রাসবাদ বিরোধী একটি কাজের জন্য। কাজটির জন্য আমরা আমাদের ধারণাপত্র বা কনসেপ্ট নোট রচনা করে পাঠালাম। সেটি গৃহিত হলে তার ভিত্তিতে একটি সভার আয়োজন করা হল। সেই সভাতে গিয়ে আমাদের কনসেপ্টটি আমরা উপস্থাপন করলাম। সেটিতে তরুণদের জন্য একটি চমৎকার উদ্ভাবনমূলক হ্যকাথনের প্রকল্প পরিকল্পনা ছিল। 

আমেরিকায় মৃত্যু
প্রকল্প পরিকল্পনা যতই চমৎকার হোক বা সেটি যে গৃহীত হলেও কাজ যে একদম সেভাবেই হবে তেমন কথা নেই। পরিশেষে সকল সামাজিক উদ্যোগ একটি অংশীদারী মানসিকতা নিয়ে করতে হয় তাই আমরা প্রস্তুত থাকি ভিন্নমত ও পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করতে ও ভিন্নমতকে সুযোগ দিয়ে প্রকল্প পরিকল্পনা পরিবর্তনে। কিন্তু জাতিসংঘের ঐ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের উক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমাদের যে অবস্থান, সেটাকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করে অনেকেটা যেন আদেশ দিচ্ছেন এমনভাবে আমাদের জোর করার চেষ্টা করলেন যে আমরা যে যৌক্তিক পথে যেতে চাই সেটা নাকি সঠিক নয়, ধর্মের পাল্টা ব্যাখ্যা (কাউন্টার ন্যারেটিভ) করে আমাদের এই প্রকল্প করতে হবে। 

তথাকথিত উন্নত দেশের নাগরিক এই ব্যক্তি, যার দেশ সারা দুনিয়াতে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর জন্য অপর একটি ক্ষমতাশালী দেশের মতই দায়ী যারা মিথ্যা বলে ইরাক, আফগানিস্তানে যুদ্ধ বাধিয়েছে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যার ফলেই দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদ। তার আচরণে মনে হল সে মানসিকভাবে সুস্থ নয়, মনে হল সে নিজেই একজন চিন্তাগত সন্ত্রাসবাদী। সাধারণত আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যা করে না, আমরা তাই করলাম, আমরা অস্বীকার করলাম জাতিসংঘের ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে এই কাজ করতে। কারণ তার প্রস্তাবিত কাজের ধারাটি একান্তই ভ্রান্ত। যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক কোন পক্ষ ধর্মের পাল্টা ব্যাখ্যা (কাউন্টার ন্যারেটিভ) দিতে পারে না। এই কাজে অংশগ্রহণের প্রাথমিক শর্তও সেটা ছিল না। 

মানুষের মস্তিস্কের একটি চিন্তাগত ভ্রান্তি (cognitive error) হল দক্ষতার দিক থেকে একটি বিষয়ে যে ভাল তাকে অপর বিষয়গুলোতেও ভাল বলে মনে করে নেওয়া। এই চিন্তাগত ভ্রান্তির কারণে আমাদের মনে হয় একটি মেয়ে পরীর মত সুন্দর হলে তার আচার আচরণও আদর্শ হবে। কোন ছেলে পরীক্ষায় ভাল করলেই মনে হয় যেন সে জীবনের বাকী সব বিষয়ে মেধাবী ও আদর্শ হবে। আসলে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন হয় না। এই চিন্তাগত ভ্রান্তির কারণেই আমাদের মনে হয় পশ্চিমা বিশ্ব যেহেতু বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসা ইত্যাদি অনেক বিষয়ে অগ্রগামী সুতরাং বাকী সব বিষয়েও তারা অগ্রগামী হবে। এই চিন্তাগত ভ্রান্তির কারণে আমরা অনেক সময় তাদের নির্বুদ্ধিতা ও নেত্রীত্ব মেনে নেই যেটা একান্তই ভ্রান্ত।

কোভিড পরবর্তী বর্তমান বিশ্ব আবার সেই পশ্চিমা নির্বুদ্ধিতার সামনে দাঁড়িয়ে। ১৯৯৩ সালের ৬ ডিসেম্বর লন্ডনের দি ইন্ডেপেন্ডেন্টে ছাপা একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন নাম করা সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক। তার সেই সচিত্র প্রতিবেদনটি ছিল ওসামা বিন লাদেনকে নিয়ে ও তার কার্যক্রমের প্রশংসায় রচিত। যেটা ছিল ওসামা বিন লাদেনের সোভিয়েত বিরোধী মুজাহেদিনদের সংগঠিত করা এবং পরবর্তীতে তাদের অর্থ সাহায্যের উদ্দেশ্যে সুদানে হাইওয়ের কন্ট্রাকটারি করা নিয়ে। সেই সময় ওসামার যে কাজের জন্য তাকে মানবিকতার মুকুট পরানো হয়েছিল সেই কাজকেই পরবর্তিতে এখন বলা হয় টেরোরিস্ট ফান্ডিং।

পশ্চিমাদের আদর্শ সাহসী মানবিকতার শিরোপাধারী ওসামা বিন লাদেন এর মাত্র আট বছরের মধ্যেই হয়ে ওঠে আমেরিকা ও পশ্চিমের ঘৃণিত শত্রু যার জন্য তারা একাধিক দেশ ও সমাজ ধ্বংস করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু ওসামা বিন লাদেন তাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ সেই সময় তারা ভীত ছিল সমাজতন্ত্রের প্রসারের ভয়ে। মুসলিমরা যেহেতু এথিজমের দর্শনের কারণে সমাজতন্ত্রের বিরোধী তাই তারা বন্ধু করে নিয়েছিল যাতে তাদের হয়ে তারা সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। সেই ওসামা বিন লাদেন যখন শত্রু হয়ে যায় তখন আবার পুরো মুসলিম সমাজ হয়ে ওঠে শত্রু। 

২০১৬ সালের দিকে আমি সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের সাথে যুক্ত হই সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। আমারই কনসেপ্ট থেকে সেই প্রকল্পটি সাজানো হয় যেখানে সমস্যাটি সমাধানের তত্ত্ব ছিল আমাদের দেশের সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ভূরাজনৈতিক বিরাজনীতি (geopolitical antipolitics) কেন্দ্রীক যেখানে ইসলামকে ব্যবহার করা হচ্ছে ধর্মীয় বিপ্লব করে প্রকৃত রাজনীতিকে উৎখাতের জন্য। 

সন্ত্রাসবাদকে এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই বিপ্লবের অণুঘটক হিসাবে যেখানে যারা সন্ত্রাসবাদী তারা ইসলামিক আদর্শ নয়, আত্ম মুল্যায়নের অভাব, অবাস্তব চিন্তা, বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে বিভেদ করতে না পারা, সামাজিক জীবনে ব্যর্থতা ও বিচ্ছিন্নতা এবং এসব কারণে জমে থাকা ক্ষোভ মেটাতে না পারা ইত্যাদি মানসিক সমস্যার কারণে সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত। ওই প্রকল্পে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিশুদের মানসিক সঙ্কট ও মানসিক চাপ বোঝার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল অল্প বয়সে শিশুদের এইসব সঙ্কট বুঝতে পারলে ও ব্যবস্থা নিলে তাদের সমাজবিরোধী ধ্বংসাত্মক কাজের পথে যাওয়া রোধ করা যাবে।

আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রকল্পটি পাবার পর দেশী বিদেশী অনেক সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদদের সাথে আমাকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। কারণ তখন পর্যন্ত পশ্চিমা থিংকট্যাংকদের ধারণা ছিল সন্ত্রাসবাদ ও মনেবিজ্ঞানের মধ্যে কোন সংযোগ নেই। আমি তাদের বলেছি সকল সন্ত্রাসবাদ এক নয়। যুদ্ধরত ও কনফ্লিক্ট জোনের যে সন্ত্রাসবাদ সেটা পুরোটাই রাজনৈতিক। কিন্তু স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ সমাজে সন্ত্রাসবাদের বিশেষ করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আমেরিকানদের ভাষায় যাকে ‘লোন উলফ টেরোরিজম’ বলা হয় সেটার কারণ প্রধাণত মানসিক সমস্যা। ২০১৯ সালে আমেরিকার এফবিআই অর্ধশতাধিক লোন উলফ টেরোরিস্টদের নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় প্রায় আশি ভাগ লোন উলফ টেরোরিজমের কারণ মানসিক সমস্যা।    

২০১৭ সালে প্রকল্পটির শেষের দিকে উক্ত প্রকল্পটির প্রধান পার্টনার আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের সিইও ঢাকায় আসেন। আমাদের প্রকল্পটির কনসেপ্ট ও সমস্যা সমাধানের তত্ত্ব শুনে ভদ্রলোক বললেন আমার ছেলেরওতো একই সমস্যা। চাঁদে যাওয়া, মঙ্গলে যাওয়া এইসব কল্পনায় সে ডুবে আছে। তখন আমি তাকে বলেছিলাম আমেরিকার গান ভায়োলেন্সের কারণও এটি। শিশুকাল থেকে কল্পনার জগতে বাস করা। কৈশোর উত্তীর্ণ হলে সেই কল্পনার সাথে বাস্তবের সংঘাত সহ্য করতে না পেরে নানা ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেওয়া সেটা আত্মহত্যাই হোক বা অন্যদের হত্যা।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।