গত বছরের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে দীর্ঘ বিশ বছর মার্কিন নরম রাজনীতি ও রঙিন বিপ্লবের বিনিয়োগের ফল ফলেছিল। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা ও দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেওয়া রাজনৈতিক দলটি ১৯৭০ এর নির্বাচনে অবিভক্ত পাকিস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে নির্বাচনে জিতে এসেছিল। তারপর তাদের ক্ষমতায় বসার অধিকার না দিয়ে সিআইএ এর পার্জিং অপারেশন অনুসরণ করে হিন্দু ও আওয়ামী লীগ নিধনের সামরিক অপারেশন শুরু করা হয় অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ। তার কয়েকদিন আগে, ১৯৭১ এর ২২শে ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী সেই অপরেশনের পরিকল্পনাটির রূপরেখা তৈরি করেন।
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, ভাইস অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান, সামরিক পদক্ষেপ নেয়াকে সঠিক পথ বলে মনে করেননি। তাকে গভর্নর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার স্থলাভিষিক্ত, পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি (সামরিক প্রধান) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাহাবজাদা ইয়াকুব খানও একই মনোভাব পোষণ করেন এবং তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং জিওসি করা হয়। ১৭ মার্চ, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দুল হামিদ খান টেলিফোনে জেনারেল রাজাকে অভিযানের পরিকল্পনা করার ক্ষমতা দেন। ১৮ মার্চ সকালে, জেনারেল রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ঢাকা সেনানিবাসে জিওসির অফিসে পরিকল্পনাটি বিস্তারিত লেখেন। পরিকল্পনাটি জেনারেল রাও ফরমান কর্তৃক "হালকা নীল অফিস প্যাডে একটি কাঠ পেন্সিল দিয়ে" লেখা হয়েছিল, যার মধ্যে "পাঁচ পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে থাকা ১৬টি অনুচ্ছেদ" ছিল।
পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীদের রূপরেখা অনুসারে, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এবং সেইসব কার্যক্রম যারা বাস্তবায়ন করবে তাদের নির্মূল করা। এর সাথে সামরিক আইন অমান্য করে আওয়ামী লীগ আন্দোলনকে সমর্থনকারী যেকোনো বেসামরিক ব্যক্তি এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা। সাফল্যের জন্য সামরিক ধূর্ততা, আশ্চর্যতা, প্রতারণা এবং গতি (cunning, surprise, deception and speed), এইসব সামরিক কৌশলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে জোর দেওয়া হয়েছিল। অবাধ ও মারাত্মক প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বেসামরিক এলাকা এবং হিন্দু এলাকায় তল্লাশি ও আক্রমণেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অপরেশনের নেতৃত্বের প্রতি মৌখিক নির্দেশ ছিল আওয়ামী লীগের কমী ও হিন্দুদের নিধন করা।
১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ থেকে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত, যে সময়ের ভেতরে অভিযান শেষ হওয়ার কথা ছিল তার পর, অর্থাৎ অপারেশন সার্চলাইটে পরবর্তী কোনও পরিকল্পনা পাকিস্তানের ছিল না। পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীরা ধরে নিয়েছিল যে যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কর্মীদের হত্যা করা হয়, বাঙালি সশস্ত্র ইউনিটগুলিকে নিরস্ত্র করা হয় এবং বেসামরিক লোকদের যথেষ্ট পরিমাণে আতঙ্কিত করা হয়, তাহলে এই অপারেশনের পরে পূর্ব পাকিস্তানে কোনও আওয়ামী লীগের সংগঠিত কর্মকান্ড বা পাকিস্তান বিরোধী প্রতিরোধ থাকবে না। দুই সপ্তাহের অপারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ও হিন্দুদের শেষ করে দেবার নেশায়, পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীরা মাথায় একটি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, বা ভারতের চূড়ান্তভাবে জড়িত হওয়ার বিষয়টি, বা সেই যুদ্ধে লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হওয়া বা পূর্ব পাকিস্তানকে হারানোর চিন্তা ঘুণাক্ষরেও আসেনি।
সদ্য নির্বাচনে পুরো পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে, মাত্র দুই সপ্তাহে শেষ করে দেবার চিন্তা ছিল পাকিস্তানি জেনারেলদের মনে। অপারেশন সার্চলাইটের ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধে তাদেরই নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়। এর মাত্র ৪ বছর পর ১৯৭৫ সালে সামরিক ক্যু করে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং তার পরিবারের প্রায় সকলকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জেলখানায় হত্যা করা সহ। এবং এর পর ২০ বছর হয় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ অথবা অবদমিত করে রাখা হয় সামরিক অথবা সরকারী দাপটে। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের নির্বাচনে মার্কিন মদতে ও অর্থে কারচুপি করে তাদের হারানো হয়। এর পর ২০০৭/৮ এর সামরিক সরকারের সময় অনুষ্ঠিত হওয়া দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠভাবে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পর ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার চেয়ে ক্ষমতার বাইরেই ছিল বেশিরভাগ সময়।
একটি রাজনৈতিক দলের কাজ শুধু ক্ষমতায় থাকা নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে তাদের কাজ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখা যেটা হল সংবিধান ও দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর তাদের সরকার গঠন করতে দেয়া হয়নি। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর একটি দেশী বিদেশী অক্ষ শক্তি আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না। তার জন্য ১৫ বছর সামরিক শাসন এবং আরো ৫ বছর একই মানসিকতার অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সামরিক কর্মকর্তাদের দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকার পরও নির্বাচন নিয়ে নানা টালবাহানা চলতে থাকে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং ভারতের সাথে যুদ্ধে হেরে যাবার পরও তারা কখনই মেনে নেয় নাই যে তারা পরাজিত হয়েছে একটি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করে। তারা ভারতের সাথে পরাজয় মানরেও তারা বাংলাদেশের সাথে মানে না। এর পর থেকে তারা নানা ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন কোন ভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের একটি বড় অংশ সব সময় এই অক্ষ শক্তিতে জড়িত। জড়িত অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ এবং জড়িত সিআইএ এবং পাকিস্তানের আইএসআই এর এজেন্ট ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় না রাখার এই পরিকল্পনা এই অঞ্চলে মার্কিন ভূরাজনীতির কমিউনিস্ট ভীতি থেকে শুরু হলেও সেটা ক্রমে পাকিস্তানের ভারত বিরোধী রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এটা যুক্ত হয় এই অঞ্চলের চীন বিরোধী মার্কিন কৌশলগত পরিকল্পনায় যার মাঠ পরিকল্পনা পাকিস্তানের আইএসআই এর করা। এই মহা পরিকল্পনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার বা বার্মা কৌশলের সাথে জড়িত যার উদ্দেশ্য আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পূর্ব দক্ষিন বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। যার লক্ষ্য মালাক্কা প্রণালী দিয়ে চীনের জ্বালানি সরবরাহের বিকল্প যে চীন মিয়ানমার সংযুক্তি, সেটা বিনষ্ট করা। এটার সাথে পাকিস্তানের পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার যে কৌশল, সেটা মিলে যায়। এই দুই উদ্দেশ্যের রঙ্গমঞ্চ বা থিয়েটার হল দক্ষিন-পূর্ব বাংলাদেশ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মার্কিন ডেমোক্র্যাট ও জর্জ সোরোসের সফ্ট পাওয়ার বা নরম ক্ষমতা প্রয়োগ করে, উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশ করিয়ে আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ ও সাংস্কৃতিক রাজনীতিকে নষ্ট করে বিশ্বায়নের বিরাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। যার ফল হচ্ছে কোন রকম দৃঢ় মূল্যবোধহীন একটি উদারপন্থী রাজনৈতিক ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করা, পরাশক্তিগুলোর বা ডিপ স্টেটের নিজ স্বার্থে যাদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহার করা খুব সহজ।
এই ত্রি-শক্তির পথের বাধা হল আওয়ামী লীগ। সেই কারণে ১৯৭১ সাল থেকেই পাক-মার্কিন মিশন হল দশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে হলেও আওয়ামী লীগকে সমূলে উৎখাত করা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতের অপারেশন সার্চলাইট ছিল একটি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্লিনজিং অপারেশন বা পার্জিং। সেটিতে ব্যর্থ হয়ে তারা ১৯৭৫ এর ঘটনা ঘটিয়েছে এবং দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময় মুক্তিযুদ্ধের সকল নিশানা নষ্ট করে, আওয়ামী লীগের সকল কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করে তারা সেই একই ক্লিনজিং অপারেশন বা পার্জিং এর চেষ্টা করেছে ধীর প্রক্রিয়ায়। এর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দলটি আবার মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ঐতিহ্যকে সামনে নিয়ে আসে। সরকারে থাকা অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এবং দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন সেই অক্ষ শক্তি সিদ্ধান্ত নেয় আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না।
২০০১ এর নির্বাচনের আগে ২০০০ সালের ২০ মার্চ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশে আসলে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভারতের কাছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রয়ের প্রস্তাব দেন। শেখ হাসিনা সেটাতে রাজি হন নাই। তার মনে সন্দেহ ছিল যে গ্যাস নাই জেনেও, মার্কিনিরা সেটা বিক্রি করতে বলছে কেন? নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে। সমস্যা ছিল। ইরান থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারতে আইপিআই পাইপলাইন তৈরিতে ভারতকে বাধা দেবার জন্য এই মিথ্যা প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে বা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার থেকে দূরে রাখার যে পরিকল্পনা ও কার্যক্রম, সেটা আরো সূসংগঠিত হয়। সুক্ষ্ম কারচুপির ফলে ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আবার টালবাহানা করতে থাকে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি এবং তার ফলশ্রুতিতে ২০০৭ সালে ১/১১ এর সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে তারা প্রথমেই চেষ্টা করে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠাতে। তারা চেষ্টা করে নোবেল বিজয়ী মার্কিন ডিপ স্টেট এজেন্টকে রাষ্ট্রপ্রধান করতে। তিনি নাকি ১০ বছরের নিশ্চয়তা চান, সেটার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয় সামরিক জেনারেলরা। ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে সামরিক সরকার একটি সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে বাধ্য হয়।
২০০৮ এর সামরিক সরকারের সময় অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতায় আসার দুই মাস না যেতেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার আসল উদ্দেশ্য ছিল বিডিআর এবং সামরিক বাহিনীকে একটি সশস্ত্র সংঘাতে যুক্ত করে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা। সেই সময় একটি সামরিক ক্যু করে সারা দেশে স্বাধীনতার পক্ষের সেনা কর্মকর্তারা, তাদের পরিবার, আওয়ামী লীগ এবং স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতিবিদ ও সমর্থকদের নির্বিচার হত্যা করে সেই শুদ্ধিকরণ করা যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রিসেট করে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানানো যায়। ভারতের সক্রিয় ভূমিকায় এবং শেখ হাসিনার ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সে যাত্রা রক্ষা পায় বাংলাদেশ। উদ্দেশ্য ছিল একই, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিলোপ করে বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান বানানো।
ভারত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিয়ে অনেকেই নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে। এই উত্তেজনা কেন শুরু হল, কারা শুরু করেছে, এর উদ্দেশ্য কি এইসব। আমি সবাইকে বলি বাংলাদেশে জুলাইয়ের কোটা আন্দোলন এবং ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের আসল কারণ শেখ হাসিনা নয় এবং আসল উদ্দেশ্য বাংলাদেশও নয়। ওই আন্দোলন ও সরকার পরিবর্তনের আসল উদ্দেশ্য মার্কিন ডিপ স্টেটের বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে মার্কিন সামরিক আধিপত্য বিস্তার করে চীনের জ্বালানি পরিবহনে বিঘ্ন ঘটানো। বাংলাদেশে কে কিভাবে শাসন করছে, একনায়ক আছে নাকি গণতন্ত্র আছে এতে বৃহৎ শক্তিগুলোর সামান্যই যায় আসে। এই মহাপরিকল্পনা ছিল একটি এম্বেডেড পরিকল্পনা। যার অর্থ এক সাথে দুটি উদ্দেশ্য। এর সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল পাকিস্তানের আইএসআই এর ভারতকে শায়েস্তা করার জন্য বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান বানানোর পরিকল্পনা যাতে ইসলামী সন্ত্রাসবাদ ও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে অস্থিতিশীল করে তোলা যায়।
সুতরাং ভারতকে লক্ষ্য করেই জুলাই কান্ডে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে শুধু নয়, রাজনীতিতে থাকলেও যে কর্মকান্ড করা কখনও সম্ভব নয়। ৫ আগস্টের পরিকল্পনা ছিল মব দ্বারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করে, তার মৃতদেহকে সারা শহরে গাড়ির পেছনে বেঁধে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে বেড়িয়ে চুড়ান্তভাবে অপমাণিত করে, তার ভক্তদের ক্ষুব্ধ করে একটি গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে জাকার্তা মেথডে আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকদের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করা। সেটা সম্পূর্ণ সফল না হওয়াতে এখন তারা লক্ষ্য শূন্য হয়ে গেছে এবং ভারতের সাথে ঝামেলা বাধিয়ে নিজেদের বাঁচাতে চাইছে। ভারতের সাথে সমস্যা বাংলাদেশের নয়, ব্যর্থ মার্কিন রঙিন বিপ্লবীদের দেশী বিদেশী কারিগরদের ও তাদের মনোনিত ব্যক্তিদের। এরা বাংলাদেশী নয়।
কিন্তু প্রশ্ন হল উপরের সকল কর্মকান্ড ব্যর্থ হলেও, এতদিন পরে আবার নতুন করে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার অবাস্তব উদ্যোগ কেন? এর কারণ আন্তর্জাতিক চাপ। একটি কথা খেয়াল করতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রঙিন বিপ্লবই হোক বা পাকিস্তানের আইএসআইএর বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই হোক, অন্য দেশগুলোর জন্য এগুলো সবই গোপন বা কোভার্ট গোয়েন্দা কর্মকান্ড। কোন দেশই স্বীকার করবে না যে তারা এইসব কর্মকান্ডে জড়িত। অনেক দেশের সরকারী বা পররাষ্ট্র বিভাগের কর্মকর্তারা জানেও না যে তাদের দেশের অন্য কোন এজেন্সী এইসব কর্মকান্ডে জড়িত। জড়িত দেশগুলোর গোয়েন্দা বিভাগ যাই করুক, সেই সব দেশগুলোর পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশের মানুষের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে চায় এবং চায় যে বাংলাদেশে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক।
এর মধ্যেই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগাদা দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে এই দুটি দেশের সাথেই শীর্ষ পর্যায়ে বাংলাদেশের কোন যোগাযোগ নেই। একমাত্র যোগাযোগ সেনাপ্রধানের মাধ্যমে। সেনাপ্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দ্রুত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে একটি প্রচেষ্টা নেয়া হয় একটি 'রিফাইন্ড' বা 'পরিশুদ্ধ' আওয়ামী লীগ তৈরি করে তাদের নির্বাচনে নিয়ে এসে প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করা। ঠিক যখন সেটি ব্যর্থ হয়েছে তখনই আমরা দেখলাম নতুন করে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার অবাস্তব উদ্যোগ। যেটা আমাদের সেই স্কয়ার ওয়ানে নিয়ে যায় যেটা হল ২২শে ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ এর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সেই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় - যা ছিল আওয়ামী লীগকে রাজনীতির বাইরে রাখার চেষ্টা। এবং বার বার তারা ভাবছে যে সামান্য প্রচেষ্টাতেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নির্মূল করে দেয়া যাবে। তারা এটা বুঝছে না যে আওয়ামী লীগ তাদের মত বিদেশী শক্তির এজেন্ট বা ‘ইসলামী জাতীয়তাবাদ’ বা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মত ভ্রান্ত জাতিগত পরিচয়ের রাজনৈতিক দল হত, শুধু তাহলেই তারা সফল হত। মাটির সংস্কৃতি বাঙালী জাতীয়তাবাদের যে রাজনৈতিক শক্তি, তাকে কোনভাবেই নির্মূল করা যায় না যদি না বেশীরভাগ মানুষ আত্মপরিচয়হীন হয়ে যায়। নিজ দেশের ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে, নিজের দেশের অর্ধেক হারিয়ে, সেই যুদ্ধে লজ্জাকর আত্মসমর্পণের পরও আবার বার বার তারা সেই চেষ্টা করেই যাচ্ছে।
একটি গল্প দিয়ে শেষ করি...
এক পাগলের পাগলামি ছিল গুলতি দিয়ে যে কোন কাঁচের জানালা ভাঙ্গার। তাকে ধরে মানসিক চিকিৎসালয়ে নিয়ে আসা হল। ছয় মাস চিকিৎসার পর ডাক্তারের ধারণা হল তার রোগমুক্তি হয়েছে, তাকে এবার ছেড়ে দেয়া যায়। কারণ দেখা গেল মানসিক হাসপাতালে সে খুবই স্বাভাবিক আচরণ করছে। মানসিক চিকিৎসালয় থেকে ছাড়বার আগে পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তারের চেম্বারে তাকে ডাকা হল।
ডাক্তার: আমাদের ধারণা আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। তাই আপনাকে মুক্ত করে দেয়া হবে। এবার আপনি বলুনতো এখান থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর আপনি কি করবেন?
পাগল: আমি সত্যি বলব?
ডাক্তার: জ্বী নির্ভয়ে বলুন
পাগল: এখান থেকে ছাড়া পেয়ে আমি একটি চাকরি খুঁজব
ডাক্তার: খুব ভাল
পাগল: তারপর সারা মাস মন দিয়ে কাজ করব
ডাক্তার: অসাধারণ, তারপর?
পাগল: তার পর মাসের শেষে বেতন পাব
ডাক্তার: ফ্যান্টাস্টিক, তারপর?
পাগল: তারপর সোজা সবচেয়ে দামী গুলতিটি কিনে শহরের সব জানালার কাঁচ ভাঙ্গব
ডাক্তার: হতাশ হয়ে সহকারীকে ডাকলেন, বললেন রোগীকে আরো এক বছরের জন্য পুনরায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
এক বছর পর লোকটি নিজেই বলল সে একেবারে ভাল হয় গেছে এবং সে এবার নতুন ভাবে জীবন নিয়ে চিন্তা করছে।
ডাক্তার: তাহলে বলুন ছেড়ে দেওয়ার পর এবার আপনি কি করবেন?
পাগল: এখান থেকে ছাড়া পেয়ে আমি একটি চাকরি খুঁজব
ডাক্তার: খুব ভাল
পাগল: তারপর সারা মাস মন দিয়ে কাজ করব
ডাক্তার: অসাধারণ, তারপর?
পাগল: তার পর মাসের শেষে বেতন পাব
ডাক্তার: ফ্যান্টাস্টিক, তারপর?
পাগল: প্রথমে ভালো একটা স্যুট ও স্ত্রীর জন্য একটি সুন্দর নীল শাড়ি কিনব, তারপর সেটা পরে আমি স্ত্রীকে নিয়ে দামী হোটেলে যাবো ডিনার খেতে
ডাক্তার: গুড, নর্মাল, তারপর?
পাগল: তারপর স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় ফিরব
ডাক্তার: গুড, তারপর?
পাগল: তারপর নতুন করে তার প্রেমে পড়ার কথা জানাব
ডাক্তার: ঠিক আছে, তারপর?
পাগল: তারপর তাকে বেডরুমে নিয়ে আসব। নীল আলো জ্বালিয়ে দেবো। স্বল্প ভলিউমে রোমান্টিক মিউজিক চালিয়ে দেব
ডাক্তার: নর্মাল সব কিছু, তারপর?
পাগল: তারপর ধীরে ধীরে তার শাড়ি খুলব, ব্লাউজ খুলব, ব্রা খুলব, পেটিকোটটা খুলে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনব পা থেকে।
ডাক্তার: নাথিং রং, তারপর?
পাগল: এবার স্ত্রীর পেন্টিটাও খুলে নেব
ডাক্তার: তারপর?
পাগল: তারপর স্ত্রীর পেন্টি থেকে ইলাস্টিকটা খুলে নিয়ে সেই ইলস্টিক দিয়ে নতুন একটা গুলতি বানাবো। আর সেই গুলতি দিয়ে শহরের যত কাঁচের জানালা আছে সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেব আমি।
ডাক্তার সহকারীকে চীৎকার করে বললেন: নিয়ে যাও পেশেন্টকে, বন্ধ করে রাখ ওকে।