EN
আরও পড়ুন
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -২
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -১
ধর্ম ও দর্শন
শহুরে শিক্ষিত দালালদের শক্তিশালী করার কৌশল
ধর্ম ও দর্শন
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

পদ্মা সেতুর সমন্বয়ক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সেই বিহারি ষড়যন্ত্রকারী কে?

রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে পদ্মা সেতু: এর ভুরাজনীতি, বিরাজনীতি ও অপরাজনীতি

২০১২ সালের অক্টোবর মাসের শুরুতে এক নৈশভোজের দাওয়াত পেলাম বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ দপ্তরে। বন্ধু, সহকর্মী অনেকেই বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ দপ্তরে কাজ করেন। এছাড়া নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বিশ্ব ব্যাংকের নানা কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এইসব অনুষ্ঠানে তাদের অনেকের সাথে দেখা হয়। অবশ্যই বিশ্ব ব্যাংক মানের খাওয়াদাওয়ার সাথে নানা আলাপে সন্ধ্যাগুলো চমৎকার কাটে। 

এর মাত্র তিন মাস আগে ২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিকের কার্যকালের শেষ দিনে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে। এর আগে থেকেই ভূরাজনীতি নিয়ে আমার আগ্রহের কারণে আদার ব্যাপারি হয়েও এইসব রকেটের খবর নিয়ে আমি আগ্রহী ছিলাম। ভুরাজনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ন দেশগুলোতে মার্কিন ভুরাজনীতির খেলোয়ারদের বিশ্বব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়। যার উদ্দেশ্য গণমানুষের রাজনীতি হটিয়ে এন্টিপলিটিক্সকে প্রতিষ্ঠিত করা যার কুশীলবেরা দেশী হয়েও আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থের জন্য কাজ করবে।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাদের প্রকল্পগুলোতে নামকরা আন্তর্জাতিক ও দেশী বিশেষজ্ঞদের (যাদের অনেকেরই স্থানীয় রাজনৈতিক ও ভুরাজনৈতিক জ্ঞান নেই) তাদের শর্ট টার্ম কন্ট্রাক্টচুয়াল পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হয়। এই আন্তর্জাতিক ও দেশী বিশেষজ্ঞদের প্রকল্পের কারিগরী দায়িত্ব পালন ছাড়াও এদের ভুরাজনীতির খেলোয়ার হিসাবে ব্যবহার করে প্রকৃত রাজনৈতিক জ্ঞান সমৃদ্ধ দেশি বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরী থিংকট্যাংকগুলোকে দমন করা বা হত্যা করা অনেক সময় হয়ে থাকে ধনী রাষ্ট্রগুলোর অতিরিক্ত উদ্দেশ্য। এর জন্য কৌশলগতভাবে তারা তৈরি করে থাকে ইকনমিক হিটম্যান। কেন ডক্টর ইউনুস গং পদ্মা সেতুর এত বিরোধী বলে অভিযুক্ত সেটা এই ইকনমিক হিটম্যান সিস্টেমকে বুঝতে পারলে পরিষ্কার হবে।

একথা সত্য যে শর্ট টার্ম কন্ট্রাক্টচুয়াল পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ হায়ার করে উন্নয়ন সহযোগিদের সাহায্য বা ঋণের মাধ্যমে দেশের অনেক প্রয়োজনীয় ও গরীব মানুষের জীবনরক্ষাকারী নানা উদ্যোগ সফল হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, দুর্যোগ মোকাবেলা, কৃষি উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, জন্মনিয়ন্ত্রণ এমন অনেক জাতীয় সমস্যার সমাধান হয়েছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউএসএআইডি, বৃটিশ বা ইইউ সহায়তা বা ঋণের এর সহায়তায়।

কিন্তু এই সহায়তার প্লাটফর্মগুলোকে ভুরাজনীতির খেলোয়ারেরা ব্যবহার করে ইকনমিক হিটম্যান তৈরি করে প্রকৃত দেশি বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক জ্ঞান সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ও কারিগরী থিংকট্যাংকগুলোকে দমন করা বা ভেঙে ফেলার জন্য যারা দেশকে পরনির্ভরতা থেকে স্বাবলম্বী করতে পারত। এর সাথে সাথে তারা চেষ্টা করে - যে সরকার বা রেজিম তাদের পছন্দ নয়, বা তাদের হুকুমের দাস নয় তাদের ক্ষমতা থেকে ফেলে দেবার বা তাদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার।

প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলাদেশে এসব করে বিশাল ক্ষমতাশালী আমেরিকার কি লাভ? আসলে প্রশ্নটা যুক্তিসঙ্গত। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিপর্যয়ের দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি মানবিক আবেদন ছাড়া আর কোন কিছুতে একজন সাধারণ আমেরিকান ‘ডু নট গিভ এ শিট এবাউট বাংলাদেশ’। অর্থাৎ তাদের গোনার মধ্যেই আমাদের মত দেশ তো নেই বটেই, এমনকি সমৃদ্ধ ইরান, ঐতিহাসিক সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, এইসব দেশ ধ্বংস হয়ে গেলে, এই সব দেশের মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হলেও তাদের কিছুই যায় আসে না।

কিন্তু তাদের রাজনীতিবিদদের ‘শিটিং’ বন্ধ হয়ে যায় আঞ্চলিক ভুখন্ডের নিয়ন্ত্রণ হারালে। তারা দুনিয়ার বিভিন্ন ভুখন্ডের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেই অঞ্চলের সম্পদের জন্য সুবিধা ও অতি মুনাফার ব্যবসা করার সুযোগ চায়। যেমন চীন, রাশিয়া ও ভারতের মত বড় শক্তির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই। এই রকম দেশগুলোর সীমানায় অবস্থিত ছোট দেশগুলোতে তাবেদার সরকার বসিয়ে ছোট দেশগুলোর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা চীন, রাশিয়া ও ভারতের মত দেশের জন্য উসকানি বা মাথাব্যাথা তৈরী করতে চায়। সেই মাথাব্যাথার হার কমিয়ে বাড়িয়ে তারা চীন, রাশিয়া ও ভারতের মত বড় শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। হতদরিদ্র জনগণের জীবন রক্ষা ও মানুষের মানবিক অধিকারের বিষয়গুলো ছাড়া বাংলাদেশের মত দেশগুলো সম্পর্কে তাদের আগ্রহ এই দেশগুলোকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ ও দখল বাড়ানো।    

এখন কথা হল এই আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ ও দখলের রাজনীতিতে পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্পে ঋণ বন্ধ করে আমেরিকার কি লাভ? বাংলাদেশের একটি সেতুর রাজনৈতিক গুরুত্ব কি এতই বেশী। কেন ড: ইউনুস, হিলারি ক্লিনটন ও বাংলাদেশের একটি মহল এই সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বন্ধে কাজ করেছে বলে এত অভিযোগ? 

এই বিষয়টি বুঝতে হলে বুঝতে হবে বাংলাদেশে রাজনীতির দ্বিমেরু পরিকাঠামোকে। ভারত যখন ভাগ হয় তার বহু পূর্ব থেকেই অবিভক্ত ভারতে পশ্চিমা উপনিবেশবাদ ও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার ছিল। এর সাথে অবিভক্ত ভারতে সমাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি আগ্রহ প্রবল ছিল। ভারত ভাগের আগেই মুসলিমদের মধ্যে কঠোর সমাজতন্ত্র বিরোধীতা ছিল স্পষ্ট। এই সব কারণ ধর্মভিত্তিক ভারত ভাগে অবদান রাখে। ভারত বৃটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে জোট নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও ধনতন্ত্রের মিশ্রণের এক জাতীনিরপেক্ষ ধর্মনিরপেক্ষ সংসদীয় গণতান্ত্রিক নীতি গ্রহণ করে নতুন মুক্ত জনগনের দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ হলেও পাকিস্তান সে পথে যায় না।

শুরু থেকেই পাকিস্তান সমাজতন্ত্রের বিরোধী হয়ে ইসলাম ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর নীতি বেছে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর নয়া সাম্রাজ্যবাদ প্রসারে মনোযোগী সমাজতন্ত্রের প্রসারের ভয়ে ভীত আমেরিকা পাকিস্তানকে লুফে নেয় ভারতকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতের সেই ‘মাথাব্যাথা’ রাষ্ট্র হিসাবে। ভারতের সাথে বিবাদ ও ভারতের সাথে যুদ্ধই যেন পাকিস্তানের একমাত্র জাতীয় লক্ষ্য হয়ে যায় যেটি এখনও বিদ্যমান। এই অবস্থানের কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমেরিকার সাহায্য ও প্রকল্প ঋণ পেতে পাকিস্তানের কোন সমস্যা হয়নি। 

ধনী দেশগুলো থেকে নিয়মিত সাহায্য ও প্রকল্প ঋণ পেলে সরকার যেমনই হোক তার দেশ চালাতে কোন সমস্যা হয় না। অর্থ খরচ করতে পারলে নানা প্রক্রিয়ায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে সিংহভাগ ভোট ঘরে আনা যায়। এর সাথে পুলিশি তৎপরতা, সামরিক গোয়েন্দাদের নিয়োগ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙ্গে দেওয়া, কোন আন্দোলনকে স্যাবটেজ করা, রাজনৈতিক নেতাদের হেয় করা, মানহানি করা, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা এগুলোর মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা বা বিলীন করা সম্ভব যা পাকিস্তানের দ্বারা প্রমাণিত।

কিন্তু পাকিস্তানের জনগণকে প্রতারিত করে এলিট মিলিটারির সেই হানিমুন সময়ে বাধ সাধে বাংলাদেশের গণ আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতের জন্য ‘মাথাব্যাথা’ রাষ্ট্র হয়ে আর থাকে না। এতে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘মাথাব্যাথা’ উৎপন্নের ক্ষমতা হয়ে যায় অর্ধেক। পাকিস্তান তার ক্লায়েন্ট আমেরিকার কাছে ডিফল্টার হয়ে যায়। 

এতে যে শুধু পাকিস্তানের ক্ষতি হয় সেটা নয়। আমাদের তখনকার সামরিক ও আমলা সম্প্রদায়, ধর্মীয় সমাজ ও ধর্মব্যবসা যারা করে তারাও ক্ষতিগ্রস্থ যে শুধু হয় তাই নয়, তারা হতাশায় ভুগতে থাকে যে হত দরিদ্র এই দেশ চলবে কিভাবে যদি তারা পুরানো ও লাভজনক ভারতে বিরোধী ‘মাথাব্যাথা’ ব্যবসা ছেড়ে দেয়। এই হতাশা থেকেই ১৯৭৫ এর সপরিবারে শেখ মুজিব হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ আবার ফিরে যায় পুরানো ও লাভজনক ‘মাথাব্যাথা’ ব্যবসায়। পাকিস্তান তাদের ক্লায়েন্ট আমেরিকার কাছে প্রমাণ করতে পারে যে তারা দেশের অর্ধেক হারালেও তাদের ক্লায়েন্টের কোন ক্ষতি হবে না কারণ তাদের বাঙালী অনুচরেরাই আবার বাংলাদেশের শাসনভার নিয়েছে যারা ভারতের ‘মাথাব্যাথা’ ব্যবসা আবার শুরু করবে। 

১৯৯৮-৯৯ সালে প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই আওয়ামী লীগ শুরু করলেও ২০০৭-০৮ এর এক এগারো সামরিক সরকারের সময়ই পদ্মা সেতু প্রকল্পের তোড় জোড় নতুন উৎসাহে শুরু হয়। যদি ২০০৭-০৮ এর এক এগারো সামরিক সরকার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বা দীর্ঘ সময় থাকতে পারত, যদি ড: ইউনুস সেই সরকারের প্রধান হতেন, তাহলে বিশ্ব ব্যাংক একটি পদ্মা সেতু কেন, দশটি পদ্মা সেতুতে ঋণ দিত এবং ঋণ দিলেও, যত দুর্নীতিই হোক না কেন, দুর্নীতির দায়ে সেগুলো একটাও বন্ধ হত না। এর কারণ হল সেই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এরকম কয়েকটা প্রকল্প ঋণ দিলেই তারা নবাবী চালে দেশ শাসন করতে পারত, জনগণ তাদের না চাইলেও। কেন সেটা পারত সেই হিসাবটার একটা কল্পিত ছক দেওয়া গেল।  

৩০,১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার যে পদ্মা সেতু, সেটা যদি ঋণ হিসাবে পাওয়া যায় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই টাকার প্রায় অর্ধেক টাকা সরকারের ঘরে ফেরত আসে। ত্রিশ হাজার কোটির অন্তত চার ভাগের এক ভাগ আয়কর ও ভ্যাট হিসাবে সরকারের তহবিলে ফেরত আসবে। এই সেতুর জন্য প্রায় এক চতুর্থাংশ নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করেছে স্থানীয় উৎপাদকেরা। নদী শাসনে বসুন্ধরা গ্রুপ সিমেন্টই দিয়েছে চার লক্ষ টন। এর অর্থ স্থানীয় উৎপাদকেরা এই সেতু থেকে পেয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার কাজ। 

এই কাজের জন্য শ্রমিক কর্মচারীরা যে বেতন পেয়েছে, তার জন্য আয়কর পেয়েছে সরকার। সেই বেতন দিয়ে তারা যে দ্রব্য সামগ্রী কিনেছে, যত খরচ করেছে, তার ১৫% ভ্যাট সরকারের ঘরে ফেরত গেছে। এই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বেতন ও যাবতীয় সব খরচ হিসাব করলে দেখা যাবে ৩০,১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার অন্তত ৪০% সরকারের তহবিলে ফেরত এসেছে। এই সেতুর যে টোল ওঠাবে সরকার, সেটারও নানা কর হিসাবে প্রায় ২৫% সরকারের কোষাগারে জমা হবে। সেতু কতৃপক্ষকে ৩০,১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা দেওয়া ও ফেরত নেওয়া উভয় সময়েই কর কেটে নেবে সরকার। 

যার ফলে সেতুর ব্যায় ও টোল হিসাবে উঠে আসা ৬০,৩৮৬ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকার ৪০% যেটা প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা নানা প্রক্রিয়ায় বিভিন্নভাবে কর হিসাবে সরকারের ঘরে ফেরত আসবে। এ ধরণের একটা প্রকল্পে ঋণ দেওয়া মানে কিন্তু সরকারকে ২৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া (হিসাবগুলো এজাম্পশন, জানি STEM রা ক্যালকুলেটর নিয়ে ঝগড়া বাধাতে চাইবেন, সেটা না করে বিগ পিকচারটার দিকে মনোযোগী হতে বলব)।  

২০০৭-০৮ এর সামরিক নিয়ন্ত্রিত সরকার, তাদের দুর্নীতি বিরোধী হম্বিতম্বি এবং ড: ইউনুস গং ও আওয়ামী বিরোধী গ্রুপগুলোর মিডিয়া হাউজগুলোর হিস্টিরিয়ায় এটা মনে হয়েছিল এক এগারো সরকার দীর্ঘদিন থাকবে। কিন্তু সব হিসাব ভুল প্রমাণ করে যখন আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করে তখন অনেক পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে ঋণ দিতে চেয়েছে আংশিক। এর সাথে ছিল অন্য দাতা দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ব ব্যাংক শুরুতেই তাদের সাথে একটি চুক্তি করে যে তারা এই ঋণ থেকে বের হয়ে গেলে অন্যরাও থাকতে পারবে না। এর অর্থ তারা জানত এমন কিছু হতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ দপ্তরে অক্টোবর মাসের সেই নৈশভোজে বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মা সেতু প্যানেলের কয়েকজনের সাথে পরিচয় হল। তাজ্জব বনে গেলাম এটা দেখে যে সেই দলের দলনেতা (সমন্বয়ক) একজন পাকিস্তানী ব্যক্তি। সম্প্রতি সারা বিশ্বের রাজনৈতিক মহল বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জাপান কেন রাশিয়ার উপর এত কঠোর? পত্রিকায় লিখছে “ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা যে ভাষায় রাশিয়াকে আক্রমণ করেছেন, তা নজিরবিহীন। কোনো ধরনের কূটনৈতিক পরিভাষার তোয়াক্কা না করে সরাসরি তিনি বলেছেন, ‘রুশ অভিযান চূড়ান্তভাবে অযৌক্তিক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’ এরপর তিনি তাঁর জি-৭ সহযোগীদের (জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে বুকে বুক মিলিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ধারণাতীত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছেন”। বলা হচ্ছে “বাবার কর্মসূত্রে কিশিদার স্কুলজীবন কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বলা হয়ে থাকে, তরুণ বয়সে একটা ‘পশ্চিমা মন’ গড়ে ওঠে কিশিদার”। 

কিশিদার চেয়ে আরেক কাঠি সরেস হল জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি। জাপান যে রাশিয়ার উপর এত কঠোর এবং আমেরিকার সমর্থনে সে আমেরিকার চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে সেটার মূলে আছে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির প্রভাব। হায়াশি আমেরিকার হার্ভাডে রাজনীতি পড়েছেন। তিনি আমেরিকায় চাকুরি করেছেন মার্কিন হাউজ রিপ্রেজেনটেটিভ স্টিফেন নিল ও সিনেটর উইলিয়াম ভি রোথের অফিসে কর্মচারী হিসাবে। ইয়োশিমাসা হায়াশি হলেন জাপানী ব্যবসায়ী আকিরা তাওয়ারাদার নাতি। যিনি ছিলেন জাপানের উবে ইন্ডাসট্রিজের উদ্যোক্তা। উবে ইন্ডাসট্রিজ জাপানে আমেরিকার ও মিত্র বাহিনীর যুদ্ধবন্দীদের কাজ করাত কয়লা খনিতে দাস শ্রমিক হিসাবে। 

পরিবার, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি মানুষের মানসিক গঠন তৈরি করে ও সেটা তার আচরণে প্রভাব ফেলে সে যতই বিচ্ছিন্ন ও পেশাদার হোক না কেন। বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মা সেতু প্যানেলের দলনেতা একজন পাকিস্তানী ব্যক্তি কাকতালিয় ভাবে হয়নি বলেই মনে হয়। এ পদে একজন পাক-মার্কিন সংস্কৃতির ব্যক্তিকে কৌশলগতভাবেই হয়ত নিয়োগ করা হয়েছিল ভুরাজনীতির খেলোয়ারদের প্রভাবে। এ বিষয়ে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগকারী সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন লিখেছেন “এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুর সমন্বয়ক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনৈক বিহারি এই ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল বলে আমার মনে হয়েছে”।      

পদ্মা সেতু প্রকল্পের মত প্রকল্প কিন্তু শুধুই একটি অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প নয়, এটি একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক ভুরাজনীতির অস্ত্র হতে পারে, তেমনই এটি একটি গণবিচ্ছিন্ন সরকারের জোর করে টিকে থাকার হাতিয়ারও হতে পারে। পদ্মা সেতুর রাজনীতি ও অর্থনীতি বোঝা তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।