EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
অনুসন্ধান
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা

আর এক ব্যর্থ গ্রেনেড হামলা ও ‘জুলাই সংকট'

১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার রাজার ভাতিজা আর্চডুক ফ্র্যাৎজ ফার্দিনান্দ এবং তার স্ত্রী সোফিকে সারেজেভোতে গুলি করে হত্যা করেছিল ইয়াং বসনিয়ান নামে এক সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা। যার ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয় ও প্রাণ হারায় প্রায় দুই কোটি মানুষ এবং আহত হয় আরও দুই কোটি। পাঁচ জন তরুণের একটি দল সারজেভোতে যায় অস্ট্রীয় রাজপরিবারের রাজকীয় মোটর শোভাযাত্রায় তাদের হত্যা মিশনে। দলের সদস্য মুহম্মদ মেহমেদবাজি প্রথম সুযোগ পায় গাড়িতে গ্রেনেডটি মারার।

কিন্তু চুড়ান্ত মুহূর্তে সে সাহস হারিয়ে ফেলে। আরও দুজন ব্যর্থ হবার পর তাদের ফেরার সময় রাজকীয় বাহনটি পেছনে যেতে গিয়ে গিয়ার লক হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তখন ব্যাক আপ দলের সদস্য ১৯ বছর বয়সের তরুণ বসনিয়ান সার্ব সন্ত্রাসী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপ তার ১৯১০ মডেলের ব্রাউনিং সেমি অটোমেটিক পিস্তলটি দিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে মানে একদম কাছ থেকে দুজনকেই হত্যা করে। এর পর প্রিন্সিপ এবং তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাদের গোপন জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই ঘটনার ফলে শুরু হয় এক আন্তর্জাতিক সঙ্কট যা ‘জুলাই সংকট’ নামে পরিচিত। এই ‘জুলাই সংকট’ এর ফলেই শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে চলা হিন্দু বিদ্বেষ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনে যারা অংশগ্রহণ করে তারা বেশিরভাগ অল্প বয়স্ক কিশোর তরুণেরা। যাদের এখন নিজেদের জাতীগত সংস্কৃতির বিপক্ষে উসকে দেয়া হয়েছে। একটা সমাজকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে কারা এবং কিভাবে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই এইসব তরুণদের এবং তাদের জাতিগত/ধর্মীয় সন্ত্রাসে সামনে ঠেলে দেওয়াকে সমর্থন দিচ্ছে যারা সেই বিশাল মুসলিম সমাজের।

ছোটখাট এমন বিষয়গুলোকে প্রশ্রয় দিয়েই ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া এইসব দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবকাঠামো এমনভাবে ধ্বংস হয়েছে যে এইসব দেশগুলো তাদের আভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে আদৌ আর বের হতে পাবে কি না সেটা বলা খুব কঠিন। এর অর্থ হলো এইসব দেশের মানুষদের বিরামহীন দুর্দশা ও অনিশ্চয়তা সামনের দিনগুলোতে যার কোন শেষ নেই।

এইরকম ছোট ছোট ঘটনা দিয়েই রচিত হয় এথনিক ক্লিনসিং বা জাতীগত বিলোপসাধণ। এগুলো এমন কিছু চেইন রিঅ্যাকশন শুরু করতে পারে যার ফলে বিভাজিত হয় জাতি। শুরু হয় ক্রিটিক্যাল ম্যাসের ভূরাজনৈতিক খেলা। যেমন হচ্ছে আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে। সেই খেলায় একটা ভুল চাল দিলে বিলোপ হয়ে যেতে পারে হাজার হাজার বছরের পুরোনো সমৃদ্ধ জাতীগোষ্ঠী, সমাজ, সংস্কৃতি। মানবজাতীর ইতিহাস সেটাই বলে।

প্যাট্রিক আমেরি লুবুম্বা। শেখ মুজিবের মতই একজন সাহসী নেতা যিনি কঙ্গোর রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং কঙ্গোর স্বাধীনতার নেতা ছিলেন যিনি স্বাধীন গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (তৎকালীন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের) প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৯৬০ সালের জুন থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তিনি কঙ্গোকে বেলজিয়ামের একটি উপনিবেশ থেকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আদর্শিক ভাবে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী এবং প্যান-আফ্রিকানবাদী তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে তাঁর হত্যাকাণ্ড অবধি কঙ্গোলিজ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (এমএনসি) দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৬০ সালে কঙ্গোর স্বাধীনতার অল্প সময়ের মধ্যেই বেলজিয়াম ও আমেরিকার সহায়তায় কঙ্গো সঙ্কটের সূচনা হয় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহের মাধ্যমে। লুমুম্বা আমেরিকা এবং জাতিসংঘের কাছে বেলজিয়াম সমর্থিত মোইস শোম্বের নেতৃত্বে কাটাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। উভয় দেশই কোন সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছিল তাই পরিশেষে লুবুম্বা তাকে সমর্থনের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে সহায়তার হাত পেতেছিলেন।

এর ফলে প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাসা-ভুবু এবং মিলিটারি চিফ অফ স্টাফ জোসেফ-ডাসিরি মোবুতু তার বিরোধী হয়ে যায় যারা আমেরিকা এবং বেলজিয়ামের সাথে হাত মেলায় তাকে সরিয়ে দিতে। দ্রুতই আমেরিকা-বেলজিয়মের চক্রান্তে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে মবুতু ক্ষমতা দখল করে ও লুবুম্বাকে গ্রেফতার করা হয়। আগেই করা পরিকল্পনায় লুবুম্বাকে দ্রুতই ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। একজন জনপ্রিয় নেতার বিদেশি সহায়তায় এই ক্ষমতাচ্যুতি ও হত্যার মাধ্যমে কঙ্গো সঙ্কটের সূচনা হয় যার ফলেই পরবর্তীতে কঙ্গোতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যার ফলে সেখানে দশ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে, বেলজিয়াম লুবুম্বা হত্যার তদারকি করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিল কিন্তু আমেরিকা কখনও ক্ষমা চায় নি যদিও তারাই ছিল এই কর্মপরিকল্পনার নেতৃত্বে ও বাস্তবায়নে।

প্রায় ১০ কোটি আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের হত্যা করে তাদের পুরো জাতী সমাজ সংস্কৃতি বিলিন করে দিয়েছে আমেরিকানরা। দখল করে নিয়েছে তাদের অর্ধেক মহাদেশ; তাদের জমি, ফসল, পশু এবং সব সম্পদ। কিভাবে ঘটে এত বড় অপরাধ ও হত্যাযজ্ঞ যেটা কেউ অনুভব করে না, যার কোন বিচার হয় না? সুচতুরভাবে এটা বাস্তবায়ন করা হয় দুই ধাপে। প্রথমে হয় ছোট ছোট ঘটনায় ঐ সমাজকে দোষী করে দীর্ঘ যুদ্ধ পরিচালনা। যাতে একসময় যুদ্ধের বা সহিংসতার আনুপাতিক বিচারের প্রসঙ্গটা জনমনে গুরুত্ব হারায়। এর সাথে শুরু হয় দীর্ঘ তথ্য ও মিডিয়া সন্ত্রাস। যার ফলে সেই পুরো জাতি সম্পর্কে দীর্ঘকাল শিক্ষা, তথ্য ও সাংস্কৃতিক মিথ্যা কুৎসা রটানো হয়।

অভিনেতা মার্লন ব্রান্ডো সত্তরের দশকের মাঝামাঝি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন “আমি একটা বই পড়েছি যেটার নাম “আমেরিকার ইন্ডিয়ানরা” এবং, বইটা পড়ার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি আমেরিকার ইন্ডিয়ানদের সম্পর্কে আসলে কিছুই জানতাম না। এবং আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের সম্পর্কে আমাদের যা শেখানো হয়েছে পুরটাই ভুল, বিচ্যুত। এবং আমাদের সাথে ইন্ডিয়ানদের সঠিক সম্পর্ক কি ছিল সেটা তুলে ধরতে আমাদের স্কুলের পাঠ্য বইগুলো নির্বোধভাবে এমনকি অপরাধগতভাবে ব্যর্থ। আমরা শুনি, আমরা সারা জীবন যা শুনে এসেছি, আমাদের বয়স যত বেশিই হোক না কেন যে আমরা এমন একটি দেশ যেটা সবার স্বাধীনতার জন্য সদা জাগ্রত, অথবা সত্য অথবা ন্যায় বিচারের জন্য, এটা আসলে যারা সাদা মানুষ নয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, খুব পরিষ্কার যে এটা তাদের জন্য নয়। এবং আমরা অবিরতভাবে ছিলাম চরম আক্রমণাত্মক, ধ্বংসাত্মক, দৈত্যেদের মত নির্যাতনকারী যারা আমেরিকার এক উপকুল থেকে আর এক উপকুল তাদের ধাওয়া করে হত্যা করেছি এবং ইন্ডিয়ানদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপন্ন করে দিয়েছি।

কিন্তু সেটা সামনে আসে না কারণ আমরা আমাদের এই ইমেজ পছন্দ করি না। আমরা সেভাবে আমাদের দেখতে চাই না। আমরা আমদের দেখতে চাই সম্ভবত জন ওয়েইন আমাদের যেভাবে দেখেছে। আমরা ইন্ডিয়ানদের প্রধানত দেখি হলিউড আমাদের যে চোখে ইন্ডিয়ানদের দেখা শিখিয়েছে। চলচিত্র আমাদের যেভাবে শিখিয়েছে, তারা আমাদের জ্ঞান দিয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা মনে করি যে যখন ইন্ডিয়ানরা এসেছে, তখন তারা তাদের চক্রের পরিধিটা বাড়িয়েছে, ইন্ডিয়ানরা চক্রের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের বিপজ্জনক গুলির মুখে নিক্ষিপ্ত করেছে এবং যার ফলে একজন আমেরিকানের বিনিময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জন ইন্ডিয়ানের। যদিও বিষয়টা কখনই এমন ছিল না। ইন্ডিয়ানরা মারাত্মক রকম ভুল ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের চলচিত্রে, আমাদের ইতিহাস বইগুলোতে, আমাদের আচরণে, আমাদের প্রতিবেদনগুলোতে। তাই আমদের অবশ্যই নিজেদের নতুন করে শিক্ষিত করতে হবে।

আমরা অনেক সময় বলি আমরা কোন চুক্তি করলে সেটা রক্ষা করি এবং আমরা আমাদের কথা রাখি। এবং আমরা এটাও বলি আমরা অন্যদের চাইতে অনেক ভাল কথা রক্ষা করতে। আমার মনে হয় এটা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করা যে ইন্ডিয়ানদের সাথে আমাদের প্রায় চার’শ চুক্তি আছে যেটা রচনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্ডিয়ানরা যেটা করেছে বিশ্বাস রেখে। এবং এর প্রত্যেকটি আমরা অমান্য করেছি, অথবা ভঙ্গ করেছি, অথবা পরিবর্তন করেছি।”

অল্প বয়স্ক এইসব তরুণদের সন্ত্রাস ও ভীতি তৈরীতে সামনে ঠেলে দিচ্ছে যে বিশাল নির্বোধ মুসলিম সমাজ, তারা কি জানে শুধুই সস্তা আবেগে হুজুগ তুলে মুসলিমদের জন্য কি ভয়ানক ভবিষ্যত তারা ডেকে আনতে পারে? ছোট ছোট কিছু লিভারেজিং ঘটনা তৈরী করতে পারে একটি মহা শক্তিশালী হিমবাহের যেটাকে থামানোর শক্তি কারো নেই। পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এই শিক্ষাই আমাদের দেয়।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।