EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

ড্যানিয়েল কার্নের "ওয়াইল্ড গীজ"

ভূরাজনীতির ভাড়াটে সৈন্যদের পরিণতি

কর্নেল অ্যালেন ফকনার, প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল এবং একজন ভাড়াটে সৈনিক। কর্নেল অ্যালেন ফকনার, এক দুর্ধর্ষ ভাড়াটে সৈনিক যিনি বহু যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। আফ্রিকার গহীন জঙ্গল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রুক্ষ ধূলিময় মরুভূমি — সর্বত্র ফকনার যুদ্ধ করেছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন, শত্রুদের পরাস্ত করেছেন। লন্ডনে এক সন্ধ্যায়, তার পুরনো পরিচিত, ধনী ব্যবসায়ী ও ব্রিটিশ মার্চেন্ট ব্যাংকার স্যার এডওয়ার্ড ম্যাথারসন তাকে একান্তে দেখা করতে ডাকলেন। 

“তোমার জন্য একটা মিশন আছে, ফকনার,” ম্যাথারসন বললেন, তার দামি ক্রিস্টাল গ্লাসে স্কচ ঢালতে ঢালতে।

ফকনার ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলেন, “আমি যোদ্ধা, গুন্ডা নই। কাজটা কি?”

“আফ্রিকার একটি রাষ্ট্রে আমাদের পছন্দের এক নেতা রাষ্ট্রপতি জুলিয়াস লিম্বানিকে কারাবন্দী করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি লিম্বানি খুব ভাল মানুষ। গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার পক্ষে। যার মৃত্যুদণ্ড ফ্যসিবাদী জেনারেল এনডোফার দ্বারা কার্যকর করা হবে। রাষ্ট্রপতি লিম্বানিকে জেম্বালার একটি প্রত্যন্ত কারাগারে বন্দী করা হয়েছে, যেখানে "সিম্বাস" নামে জেনারেল এনডোফার সৈন্যদের একটি রেজিমেন্ট তাকে ২৪ ঘন্টা পাহারা দিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি লিম্বানির মুক্তি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ সরকার প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারছে না, তাই তোমাদের মতো দক্ষ লোকেদের দরকার। তুমি তোমার দল তৈরি করো, তাকে উদ্ধার করো, এই শুভ কাজে  আমি তোমাদের প্রচুর অর্থ দেব।”

ফকনার একটু ভেবে বলল, “যদি আমরা ব্যর্থ হই?”

ম্যাথারসন হাসল, “তাহলে তো মারা যাবে। তখন টাকা লাগবে না।”

ফকনার বুঝল, মিশন ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু চ্যালেঞ্জ তার রক্তে। সে রাজি হলো।

ফকনার তার বিশ্বস্ত কমরেডদের খবর দিল। তার মধ্যে ছিলেন লেফটেন্যান্ট শন ফিন, এক উন্মাদ আইরিশ, অস্ত্রের ট্রিগারে আঙুল থাকলে যে নিজেকে ঈশ্বরের মতো মনে করে। প্রাক্তন আইরিশ গার্ডসের লেফটেন্যান্ট লেডি কিলার শন ফিন একজন দক্ষ পাইলট এবং চোরাকারবারী যে মহিলাদের কাছে খুব প্রিয়। যুক্ত হল ক্যাপ্টেন রাফার জ্যান্ডার্স, যে একজন বুদ্ধিমান কৌশলবিদ, যে একক পিতা এবং যার ছোট ছেলের জন্য প্রায়ই মনটা কেমন করে। যুক্ত হল লেফটেন্যান্ট পিটার কোয়েটজি, যে একজন দক্ষিণ আফ্রিকান সৈনিক যার মনে কিছুটা বর্ণবাদের ছোঁয়া আছে। ফকনার এরপর আরেকজন পুরনো কমরেড স্যান্ডি ইয়ংকে সার্জেন্ট-মেজর হিসেবে নিয়োগ করেন। এই দলের সাথে আরও পঞ্চাশজন ভাড়াটে সৈনিক যোগ দিল, যারা সবাই যুদ্ধের ময়দানে নিজেদের প্রমাণ করেছে। 

ভাড়াটে সৈন্যরা এর পর সোয়াজিল্যান্ডে উড়ে যায়। যেখানে ইয়ং তাদের কফোর অনুশীলনের চাবুক মেরে প্রস্তুত করে তোলে। প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার পর, জ্যান্ডার্স ফকনারের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেয় যে যদি সে বেঁচে না থাকে তবে তার একমাত্র ছেলে এমিলকে দেখাশোনা করবে। কোন এক অপ্রত্যাশিত কারণে, ফকনারকে অভিযান শুরু করার জন্য মাত্র একদিনের নোটিশ দেওয়া হয়। পরিকল্পনা হল একটি দল কঠোর নিরাপত্তার কারাগার থেকে জীবিত লিম্বানিকে উদ্ধার করবে। অন্য একটি দল কাছের একটি ছোট বিমানবন্দর দখল করে পিকআপের জন্য অপেক্ষা করবে। তারা জানত, এই মিশনটি সহজ নয়। কিন্তু যোদ্ধাদের জীবন মানেই ঝুঁকির খেলা।

ফকনার তখনো জানত না, এই মিশনের পেছনে সত্যিকারের উদ্দেশ্য কী। আসল উদ্দেশ্য ছিল তামার খনি দখল করা। আফ্রিকার এই অংশে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ তামার খনি রয়েছে। ব্রিটেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তি এই খনি নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ম্যাথারসন লিম্বানির মুক্তির নামে আসলে জেম্বালার তামার খনিগুলো দখল করতে চাচ্ছিল। এই অঞ্চল থেকে পাওয়া তামা ইউরোপের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অপরিহার্য। ব্রিটিশ বাণিজ্যিক স্বার্থ এই তামার উপর নির্ভর করে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। জুলিয়াস লিম্বানি বেচে থাকলে ও ক্ষমতায় গেলে, তামার খনি জাতীয় স্বার্থে স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ম্যাথারসন জুলিয়াস লিম্বানিকে সরিয়ে নিজের পছন্দের নেতাকে বসাতে চায়, যাতে খনির সম্পদ সহজেই ব্রিটিশ মালিকানায় থাকে।

মাত্র এক দিনের নোটিশে ক্রিসমাসের দিন, অর্ধ শতাধিক সদস্যের ভাড়াটে সৈন্যদল জেম্বালায় পৌছে গভীর রাতে প্যারাসুটের মাধ্যমে তারা আফ্রিকার দুর্গমে অবতরণ করল। তাদের লক্ষ্য নিকটবর্তী একটি কারাগার, যেখানে জুলিমানিকে বন্দি রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা ছিল তিন ঘণ্টার মধ্যে লিম্বানিকে উদ্ধার করে পালিয়ে যাওয়া। তারা দ্রুত জেলে ঢুকে লিম্বানিকে বের করে আনল। অভিযানটি নিখুঁতভাবে পরিচালিত হলো। সাইলেন্সার লাগানো অস্ত্র দিয়ে তারা একে একে শত্রুদের হত্যা করল। কারাগারের ইস্পাতের দরজা বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিল।

জুলিয়াস লিম্বানির চোখে অবিশ্বাসের ছায়া, “তোমরা কারা?”

ফকনার বলল, “বন্ধু। আমরা তোমাকে মুক্ত করতে এসেছি।”

লিম্বানি, একজন শান্ত আর বুদ্ধিমান নেতা, ফকনারের দলের সাথে দ্রুত মিশে গেলেন। কিন্তু পালানোর পথে সমস্যা দেখা দিল। স্থানীয় সিম্বা সৈন্যরা তাদের পিছু নিল। তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে অনেক ভাড়াটে সৈনিক মারা গেল। তবু ফকনার আর তার কাছের বন্ধুরা লিম্বানিকে নিয়ে একটি এয়ার স্ট্রিপের দিকে এগিয়ে গেল, যেখানে তাদের উদ্ধার করতে একটি বিমান আসার কথা। 

একটি দল যখন কঠোর নিরাপত্তার কারাগার থেকে জীবিত, যদিও অসুস্থ, লিম্বানিকে উদ্ধার করে, অন্য দলটি তখন কাছের একটি ছোট 
এয়ার স্ট্রিপ দখল করে পিকআপ বিমানের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ঘন্টা গড়িয়ে গেল, উদ্ধারের বিমানটি এলো না। ফকনার বারবার রেডিওতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করল, কিন্তু প্রতিবারই - নো রেসপন্স।

লন্ডনে ফিরে, ম্যাথারসন শেষ মুহূর্তে পিকআপ ফ্লাইটটি বাতিল করেন, রাষ্ট্রপতি লিম্বানিকে হত্যার বিনিময়ে জেনারেল এনডোফার সাথে চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার তামার খনির সম্পদ সুরক্ষিত করে। শত্রু অঞ্চলে তার ভাড়াটে সৈন্যরা গভীর বিপদে আটকা পড়ে, পরিত্যক্ত ভাড়াটে সৈন্যরা সিম্বাদের দ্বারা ধাওয়া খেয়ে ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে তাদের ফেরার পথের জন্য লড়াই করে। কোয়েটজি সহ অনেকে নিহত হয়।

পলায়নরত ভাড়াটে সৈন্যরা সেখানে বসবাসকারী একজন আইরিশ মিশনারির কাছে জানতে পারে যে তাদের কাছে একটি পুরানো ডগলাস ডাকোটা পরিবহন বিমান আছে যা তারা পালানোর কাজে ব্যবহার করতে পারে। যখন ফিন ডগলাস ডাকোটার  ইঞ্জিনটি চালু করে তখন জ্যান্ডার্সের পায়ে গুলি লাগে এবং সে বিমানে উঠতে পারেন না। ফকনার তাকে সম্ভাব্য বন্দীদশা এবং নির্যাতন থেকে বাঁচাতে তাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। 

মূল পঞ্চাশের মধ্যে বেঁচে থাকা তেরোজন ভাড়াটে সৈন্য অবশেষে রোডেশিয়ার কারিবা বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয় , কিন্তু লিম্বানি পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়, যার ফলে পুরো অভিযান ব্যর্থ হয়।

কয়েক সপ্তাহ পর, ফকনার লন্ডনে ফিরে এলো। ম্যাথারসন তখন এক বিলাসবহুল ক্লাবে বসে তার বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করছিল। 
ফকনার তার সামনে গিয়ে বসল। ম্যাথারসন আতঙ্কিত হয়ে বলল, “তুমি… তুমি বেঁচে আছ?”

ফকনার ঠান্ডা গলায় বলল, “আমার বন্ধুরা মারা গেছে। তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছ।”

ম্যাথারসন হাসার চেষ্টা করল, “এটা ব্যবসা, বন্ধু! তুমি বুঝবে না—”

একটা সাইলেন্সড পিস্তল বের করে ফকনার একটিমাত্র গুলি চালাল। ম্যাথারসনের শরীর নিথর হয়ে গেল।

ফকনার জানত, প্রতিশোধের আগুন তাকে শান্তি দেবে না। যুদ্ধের জীবন তার রক্তে মিশে গেছে। সে আবার কোথাও চলে যাবে, নতুন এক যুদ্ধের জন্য। কারণ ভাড়াটে সৈন্যদের জন্য শান্তি মানেই মৃত্যু।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।