EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

কেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা (পর্ব ১): সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের শিক্ষা

এবছরের শুরুর দিকে একটি মার্কিন সংস্থার সাথে আমি সুন্দরবন যাই। মার্কিন পাবলিক (সরকারি) সংস্থাকে মার্কিন সরকারী আইন কানুন মেনে চলতে হয়। মার্কিন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যারা বাংলাদেশে কাজ করছে তাদেরও তাদের জন্য তাদের সরকারী যে সকল নিয়ম কানুন আছে সেগুলো মেনে চলতে হয়। উক্ত মার্কিন সংস্থার সাথে খুলনায় আমাদের একটি মিটিং হবে লাঞ্চের পর। যেখানে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। মিটিংটা সন্ধ্যায় শেষ হবার কথা থাকলেও বিকাল বেলাতেই উক্ত মিটিং আমাদের শেষ করতে হল। কারনটি হল উক্ত মার্কিন সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী একজন ড্রাইভার কতক্ষণ নিরবচ্ছিন্ন ডিউটি করবে সেটা নির্দিষ্ট। তারা যেহেতু ঢাকা থেকে এসেছে তাই ড্রাইভারদের নিরবচ্ছিন্ন ডিউটি করার সময় পার হবার আগেই ড্রাইভারকে ছেড়ে দিতে হবে বিশ্রামের জন্য। ড্রাইভারের ডিউটি টাইম ওভার যাতে না হয় সেই কারনে মিটিং সংক্ষিপ্ত করে তাদের চলে যেতে হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশে সফরের পর “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব কমেছে” বলেছেন সরকারের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশোধিত হবে” বলেছেন আর এক মন্ত্রী। বলা হয়ছে “কিছু বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল– বোঝাবুঝি হয়েছিল। সে কারণে দেশটি বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দিয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব কমেছে।” আর এক পন্ডিত আবার বলেছেন “যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বদলেছে দিল্লিতে”।

যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কি সত্যিই বদলেছে? র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি তারা কি সত্যিই তুলে নেবে যেহেতু এগুলো নাকি ভুল বোঝাবুঝির ফলে হয়েছে? বদলানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কি ছিল সেটা আমরা কিভাবে জানি? যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বা বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর যারা ভেবেছিলেন মার্কিন সরকার নিশ্চই বর্তমান সরকারের উপর খুব ক্ষিপ্ত হয়েছে তাই তারা টুক করে সরকার ফেলে দিতে চায় এটা তো যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ দেখে তাদের সেটাকে নিজেদের আচরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করার মত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশে আসার পর তার হাসিমুখ ও মিষ্টি মিষ্টি কথার পর উনাদের মনে হয়েছে কই নাতো, মার্কিন সরকারতো খুব ভাল ব্যবহার করছে, মোটেই গাল মন্দ করছে না, মুখ গোমরা করছে না। তাহলে নিশ্চই ভুল বোঝাবুঝি থেকে তারা এমন দুষমণি করে ফেলেছে।

সারা জীবনই ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা পেশাগত কারনে আমেরিকান ও ইউরোপিয় সমাজের সাথে মেশা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারনে বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা ও তার কর্মকর্তাদের সাথে মেশার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে বিদেশীদের ব্যপক আগ্রহ উদ্দীপনা থাকলেও তাদের নানা অস্বস্তিও আছে যেগুলো বাইরে থেকে বোঝা যায় না বা সেগুলো তারা প্রকাশ করেন না যেহেতু তাদের কাজই এদেশে ইতিবাচক কিছু করা।

সম্প্রতি একজন ইউরোপীয় রাষ্ট্রুতের বাসায় আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। অত্যন্ত ভদ্র ও কোমল মনের মানুষটি যেন বাংলাদেশের মানুষের সরলতা ও এদেশের প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাংলাদেশে অবস্থানের সময়কাল শেষ হবার অনেক আগেই তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারনটি হল এদেশের মানুষের সরলতা ও এদেশের প্রকৃতির সজীবতার আড়ালে যে বিশৃঙ্খলতা, অরাজগতা, নিষ্ঠুরতা ও নির্লিপ্ততা বিদ্যমান সেটা তিনি যেন আর সহ্য করতে পারছেন না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সময় পুরণ হবার অনেক আগেই এদেশ ছেড়ে চলে যাবার।

শুধু তিনি একা নন। উক্ত মার্কিন সংস্থা সহ বিভিন্ন মার্কিন প্রকল্প, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, প্রকল্প এমনকি জাতিসংঘের পদ ও প্রকল্পগুলোতেও আমেরিকা বা ইউরোপে এখন দক্ষ ও সংবেদনশীল মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না বাংলাদেশে কাজ করার জন্য। হয় একদম তরুণ অথবা অনেক বয়ষ্ক ব্যক্তিরা যারা অনেকটাই উক্ত পদের অনুপযুক্ত, তারা আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে সেই পদ দখল করছে ভারতীয়রা।

এটা হচ্ছে কেন? গত এক যুগে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। বিদেশীরা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেটার স্বীকৃতিও দিয়েছে। এখন তো বিদেশীদের আরো বেশি আগ্রহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা উন্নয়নে এবং বিনিয়োগে। আশ্চর্য হচ্ছে টুরিজমেও উন্নত দেশের বিদেশীদের সংখ্য আশ্চর্যজনকভাবে কমেছে। সরাসরী বিদেশী বিনিয়োগে কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। কেন?

এসবের পেছনে আছে গত দশ বছরে বাংলাদেশে পাশ হওয়া নানা আইন এবং সেইসব আইন জনগণের উপর কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে সেটা নিয়ে সরকারের আচরণ। রাষ্ট্রের আইন ও আচরণ যদি একনায়কতান্ত্রিক হয়, তাহলে বিদেশীরা সেই দেশে থাকতে চাইবে না। বিষয়টি বোঝার জন্য সম্প্রতি সৌদি আরবের পররাষ্ট্র নীতি, আইন কানুন ও দেশের ভেতরের নিয়ম নীতির পরিবর্তন নিয়ে সৌদি সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল-মুদাইফারের সাথে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স (সিপি) মোহাম্মদ বিন সালমানের সাক্ষাৎকারটা অনুবাদ করে দিলাম (গুগল ট্রানস্লেটরের সহায়তায়)।

সৌদি সাংবাদিক মুদাইফার: “পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আপনার দর্শন কী ইয়োর হাইনেস”?

ক্রাউন প্রিন্স: “সৌদি আরবের স্বার্থ“।

মুদাইফার: “এটা আপনার দর্শন“?

ক্রাউন প্রিন্স: “নিঃসন্দেহে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার উপর ভিত্তি করে তৈরি“।

মুদাইফার: “প্রভাব (influence) সম্পর্কে জানতে চাই? নীতিতে প্রভাব বলতে কী বোঝায়“?

ক্রাউন প্রিন্স: “প্রভাব মানে একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্ষমতার প্রভাব। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের কথা বলেন। যখন সারা বিশ্বে আপনার প্রভাব থাকবে, সারা বিশ্বে সুনাম থাকবে এবং আপনি সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত হবেন, তখন বিশ্ব আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত হবে, যা ফলস্বরূপ, নতুন সুযোগ তৈরি করবে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য। আমরা যে বিনিয়োগ এর মধ্যে পেয়েছি, তার অনেকগুলি আমাদের জনসম্পর্কের প্রভাবের কারণে যা আমাদের গোঁড়া থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দুরদৃষ্টির কারনে হয়েছে। আমি উদাহরণ স্বরূপ উবারের বিনিয়োগের কথা বলছি। এটি যে তহবিল খুঁজছিল তা নয়; তারা আমাদের কাছে এসেছিল। সুতরাং, জাতিসংঘের সনদ (ইউএন চার্টার) এবং অন্যান্য দেশের আইনের সাথে সংঘর্ষ ছাড়াই সৌদি আরব রাজ্যের স্বার্থ হাসিল করার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে প্রভাব সৃষ্টি করা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় কিছু“।

মুদাইফার: “সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন (বাইডেন) হোয়াইট হাউসে আসার পর, এই দুই মিত্রের মধ্যে কি কোনো মতবিরোধ ছিল? হোয়াইট হাউস কি রিয়াদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে“?

ক্রাউন প্রিন্স: “দুটি দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ ঐকমত্য বলে কিছু নেই, এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলির সাথেও, নিকটতম দেশগুলির সাথেও। সাধারণত কিছু পার্থক্য থাকে, যা আপনি একই বাড়িতে খুঁজে পেতে পারেন, যেখানে ভাইয়েরা সবকিছুতে ১০০ শতাংশ একমত নয়। বিভিন্ন মার্কিন প্রশাসনের সাথে, অবশ্যই, পার্থক্যের মার্জিন বাড়তে বা কমতে পারে, তবে আমরা সৌদি-মার্কিন স্বার্থের ৯০ শতাংশেরও বেশি বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সাথে একমত, এবং আমরা এটিকে কোন না কোন উপায়ে বাড়ানোর আশা করি। যার মধ্যে শেষটি ছিল নতুন গ্রুপের প্রতি আমাদের আনুগত্য যেটার ক্লিন এনার্জি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মত গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। সৌদি আরব এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগদানকারী দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল এবং এতে মাত্র ১০ টিরও কম দেশ ছিল। সুতরাং, আমরা সবসময় আমাদের স্বার্থ বজায় রাখার দিকে লক্ষ্য রাখি এবং যে বিষয়গুলির জন্য তাদের সাথে আমাদের কিছু পার্থক্য রয়েছে, সেটা ১০ শতাংশেরও কম। আমরা সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করি এবং সেগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি বোঝাপড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করি। আমাদের স্বার্থ বজায় রেখে উভয় দেশ তাদের ঝুঁকি নিরপেক্ষ করে কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই সৌদি আরবের একটি কৌশলগত মিত্র। তারা ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের মিত্র, যা আমাদের রাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের উপর বেশ বড় প্রভাব ফেলেছে। সুতরাং, আপনি কল্পনা করতে পারেন যে ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল, যা খুবই সস্তা ছিল, যার দাম তিন থেকে ছয় মার্কিন ডলার সেটা যদি যুক্তরাজ্যের কেনার জন্য চুক্তি করা হত তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান অবস্থায় থাকত না“।

মুদাইফার: “১০ শতাংশের ইস্যু, মহামান্য, এটা কি শুধুই মতের পার্থক্য, নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি রাজতন্ত্রকে কোন চাপ দিচ্ছে“?

ক্রাউন প্রিন্স: “সৌদি আরব রাজ্য তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপের অনুমতি দেবে না। জাতিসংঘের সনদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশগুলোর পূর্ণ সার্বভৌমত্ব এবং সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। এবং বিশ্বকে যে সমস্যা দুটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল তা ছিল সংক্ষেপে, অন্যান্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ। এই সনদটি একটি বৃহৎ এবং দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কট মোকাবেলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা প্রথম ও দিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ঔপনিবেশিকতার প্রভাবে শুরু হয়েছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই জাতিসংঘের সনদটি (ইউএন চার্টার) তৈরি হয়েছে। এই সনদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলির মধ্যে একটি হল রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করা। সুতরাং, যদি কোন দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এর অর্থ হল সে সেই সনদটি লঙ্ঘন করছে যেটি বিশ্ব শান্তি বজায় রেখেছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রেখেছে। যেটি বিগত ৫০ থেকে ৬০ বছরে এর সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে যা আমরা বর্তমানে উপভোগ করছি। এটির জন্য এই সনদকে ধন্যবাদ, যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য একটি বিষয়কে অনুৎসাহিত করে কারণ এটি বিশ্বে বর্তমানে আমরা যা উপভোগ করছি তার মূল প্রেরণা। এটি এমন একটি ধারণা যা আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করি না। আমরা আমাদের স্বার্থকে শক্তিশালী করতে এবং কোনো পার্থক্য এড়াতে আমাদের লক্ষ্য ঠিক করি“।

মুদাইফার: “মহামান্য, আপনি কি মুহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের মত একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের মত অনুসরণ করেন? এটা কি সেই লেখাগুলোকে ব্যাখ্যা করবে“?

ক্রাউন প্রিন্স: “যখন আমরা একটি নির্দিষ্ট স্কুল বা পণ্ডিতকে অনুসরণ করার জন্য নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করি, তখন এর অর্থ আমরা মানুষকে দেবতা বানাচ্ছি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিজের এবং মানুষের মধ্যে কোন বাধা রাখেননি। তিনি কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বাস্তবায়ন করেছেন এবং ব্যাখ্যার স্থান চিরতরে উন্মুক্ত“।

ক্রাউন প্রিন্স: “আজ যদি শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আমাদের সাথে থাকতেন এবং তিনি আমাদেরকে তার গ্রন্থের প্রতি অন্ধভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেখতে পেতেন এবং তাকে পবিত্র পূজনীয় করে আমাদের মনকে ব্যাখ্যা ও আইনশাস্ত্রের সমালোচনার প্রতি রুদ্ধ দেখতেন তবে তিনিই প্রথম এই বিষয়ে আপত্তি জানাতেন। চিন্তার কোন নির্দিষ্ট স্কুল নেই এবং ত্রটিহীন ব্যক্তি বলে কেউ নেই। আমাদের কুরআনের পাঠ্যের ক্রমাগত ব্যাখ্যার সাথে যুক্ত হওয়া উচিত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য, এবং সমস্ত ফতোয়াগুলি যে সময়, স্থান এবং মানসিকতার ভিত্তিতে জারি করা হয়েছিল তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়িত হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, ১০০ বছর আগে, যদি একজন আলেম একটি নির্দিষ্ট ফতোয়া জারি করতেন পৃথিবী গোলাকার না জেনে এবং মহাদেশ বা প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে না জেনে, সেই ফতোয়াটি তখনকার উপলব্ধ যোগান এবং তথ্য এবং কুরআন এবং সুন্নাহ তাদের বোঝার উপর ভিত্তি করে তৈরি হত, কিন্তু এই জিনিসগুলি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমানে যেগুলো ভিন্ন“।

ক্রাউন প্রিন্স: “তাই, শেষ পর্যন্ত আমাদের রেফারেন্স হল কুরআন এবং নবীর সুন্নাহ, যেমনটি আমি বলেছি“।

মুদাইফার: “পরিষ্কার। ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস আইনের ব্যাপারে...ইউর হাইনেস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে সেই বিচারিক কোড আমাদের জন্য উপযুক্ত নয়। কেন আপনি সেই বিচারিক বিধি প্রত্যাখ্যান করলেন এবং ব্যক্তিগত স্থিতি আইন সহ চারটি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন“?

ক্রাউন প্রিন্স: “কেউ গিয়ে একটি চাকা নতুন করে উদ্ভাবন করতে পারে না। বিশ্ব মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে এমন স্পষ্ট আইন অনুসরণ করে। সৌদি আরবে পাস করা সমস্ত আইন যেন নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে প্রতিফলিত করে তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব: এক, তারা যেন কুরআন ও সুন্নাহ লঙ্ঘন না করে; কুরআন আমাদের সংবিধান, যে তারা যেন আমাদের স্বার্থের বিরোধী না হয়ে যায়, তারা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে এবং তারা দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুতরাং, আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে আইনগুলো পাস করা হয়। আপনি যদি পর্যটকদের এখানে আনতে চান... আপনি যদি তিন মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০ মিলিয়ন পর্যটকদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্য বজায় রাখেন, এবং আপনি মনে করেন যে আপনি সারা বিশ্বের সাধারণ আইন এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের বাইরে অন্য কিছু অনুসরণ করছেন, তাহলে সেই পর্যটকরা আপনার দেশে আসবে না। আপনি যদি বৈদেশিক বিনিয়োগ দ্বিগুণ করতে চান, যেমন আমরা করেছি, পাঁচ মিলিয়ন থেকে ১৭ মিলিয়ন, এবং আপনি বিনিয়োগকারীদের আপনার দেশে বিনিয়োগ করতে বলেন যেটি একটি অজানা সিস্টেমে চলছে যেটি তাদের আইনজীবীরা সেখানে কীভাবে নেভিগেট করতে হয় তা জানেন না বা জানেন না কীভাবে সেই সব নিয়মকানুন প্রয়োগ করতে হয় বা সেগুলো কার্যকরী করা হয়, তাহলে সেই বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্ষতি সীমিত করার চেষ্টা করবে বা হয়তো একেবারেই কোন বিনিয়োগ করবে না। আপনি যখন সৌদি আরব রাজ্যে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট প্রতিভা এবং মানব সম্পদকে আকৃষ্ট করতে চান এবং আপনি বলবেন যে আপনার কাছে একটি নতুন উদ্ভাবিত আইন আছে প্রণয়নের জন্য, তখন কেউ আপনার কাছে আসবে না। সুতরাং, আপনার সংবিধান, কুরআন এবং আপনার স্বার্থ ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে এবং নাগরিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনগুলি আপনাকে গ্রহণ করতে হবে“।

বাংলাদেশে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নয়, সম্প্রতি পাশ করা ট্রাফিক আইন হয়েছে যেখানে সড়কে গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হত্যা হয়েছে কিনা সেটা নির্ধারনের ভার পুলিশের হাতে। এখন উক্ত মার্কিন সংস্থার একজন ড্রাইভার যদি দুর্ঘটনা ঘটায় তাহলে স্থানীয় থানার পুলিশের হাতে তার জীবন নির্ভরশীল। এখন উক্ত মার্কিন সংস্থা কি করবে? এই কারনেই সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বলেছেন “আপনি যখন সৌদি আরব রাজ্যে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট প্রতিভা এবং মানব সম্পদকে আকৃষ্ট করতে চান এবং আপনি বলবেন যে আপনার কাছে একটি নতুন উদ্ভাবিত আইন আছে প্রণয়নের জন্য, তখন কেউ আপনার কাছে আসবে না। সুতরাং, আপনার সংবিধান, কুরআন এবং আপনার স্বার্থ ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে এবং নাগরিকের নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনগুলি আপনাকে গ্রহণ করতে হবে”। অপরদিকে আমরা আইন উদ্ভাবন করে চলেছি। যার ফল হল সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। আমেরিকা নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চেষ্ট করছে সেটা যেন আমরা না হই।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।