EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

কেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা (পর্ব ৩): সরকারী স্ট্যাটাস কো

হলিউড থেকে আসা আমেরিকার ক্যারিশম্যাটিক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান বর্তমান দুনিয়ার রাজনীতি অর্থনীতির যে কিম্ভুতকিমাকার অবস্থা তার জন্য অনেকটা দায়ী। স্ট্যাগফ্লেশন কমানোর দোহাই দিয়ে তিনি আসলে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করে, কর হার হ্রাস করে, সরকারের জনহিতকর কর্মকান্ড কাটছাঁট করে, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে আমেরিকাকে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাজারের উপর ছেড়ে দেবার বন্দোবস্ত করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে রিগ্যান খুবই কৌতুকপ্রিয় লোক ছিলেন। তবে কৌতুক করে অনেক সময় তিনি চরম সত্য কথাও বলতেন। তেমনই একটি কথা তিনি বলেছিল যে "স্ট্যাটাস কো (বর্তমানের স্বাভাবিকতা), জানেনতো, এটা 'আমরা যে জগাখিঁচুড়িতে আছি' তারই ল্যাটিন পরিভাষা। অর্থাৎ রিগ্যান জানতেন যে তারা জগাখিঁচুড়িতে আছেন এবং যে জগাখিঁচুড়ি সেই সময়ের স্বাভাবিকতা (স্ট্যাটাস কো) ছিল।

উইলিয়াম সমারসেট মম্‌ বলেছেন "যদিও কখনও কখনও অন্যের কাছে মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয়, তবে নিজের কাছে মিথ্যা বলা সর্বদা ঘৃণ্য”। রাজনীতি করলে এটা খুব প্রয়োজনীয় হয়ে যায় যে আপনি স্ট্যাটাস কো এবং বাস্তবতা এই দুটো আলাদা করতে পারছেন কি না। যদি না পারেন তাহলে আপনি নিজের কাছেই নিজে মিথ্যা বলছেন। প্রসঙ্গ হচ্ছে বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞার সরকারী স্ট্যাটাস কো কি? এই নিষেধাজ্ঞার স্ট্যাটাস কো কি সেটা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথাবার্তায় পরিষ্কার। এগুলো হল যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারকে পছন্দ করে না, যুক্তরাষ্ট্র রেজিম চেঞ্জ করতে চায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয় দেশগুলো এই সরকারের পেছনে লেগেছে এইসব। হিরো আলমকে পেটানো সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমন সম্প্রতি বলেছেন, “আপনারা জিজ্ঞেস করেন না কেন, প্রতিদিন বিভিন্ন দেশে লোক মারা যায়। তখন তারা কেন স্টেটমেন্ট দেয় না। আমেরিকায় বিভিন্ন সময় মানুষ মেরে ফেলা হলেও বিবৃতি দেওয়া হয় না। আর বাংলাদেশ হলেই বিবৃতি দেওয়া হয়, একটা মগের মুল্লুক পাইছে ওরা”। অর্থাৎ সরকারী স্ট্যাটাস কো হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সমালোচনায় মুখর কিন্তু তারা যখন এমন কিছু করে তখন তারা এমন কিছু বলে না। কিন্তু তাদের দেশে এমন কিছু হলে তো তাদের দেশে আমাদের দুতদের এমন কথা বলা উচিত, আমরা কেন সেটা বলি না? তাদের দেশের সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে আমাদের দেশের তাদের কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা উচিত। সেটা না করা হলে দায়টা কিন্তু আমাদেরই।

এখানে সেই প্রসঙ্গ এসে যায় যে তাদের দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত কিনা যেগুলো নিয়ে গত দুটি পর্বে বিশদ লেখা হয়েছে। কোন দেশে যদি মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত থাকে তাহলে সেখানে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাই সুবিচার নিশ্চিত করবে। যদিও কোন ব্যবস্থাই শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নয় তবুও আমেরিকা ও ইউরোপে মানুষের মৈলিক অধিকার সমুন্নত রেখেই সরকার দেশ শাসন করে। বিদেশে তারা অনেক অকাজ করে থাকে তবে সেটা করে তাদের সামরিক বাহিনী অথবা তাদের বৈদেশীক গোয়েন্দারা (যেমন সিআইএ) যারা তাদের সিভিল আইনের উর্দ্ধে। দ্বিতীয় বুশের সময় ওয়ার অন টেরর ঘোষণা করে এবং প্যাট্রিয়ট আইন জারি করে আসেরিকাকে পুলিশি রাষ্ট্র বানানোর একটা চেষ্টা হয়েছে বটে, কিন্তু বুশ সরকারের পতনের পর আমেরিকা সেটা থেকে অনেকটাই বের হয়ে এসেছে এবং প্যাট্রিয়ট আইন বিলোপ করে দিয়েছে।

বুশের সেই ডক্টরিন অনুসরণ করে এবং পাকিস্তানকে অনুুকরণ করে আমাদের উপমহাদেশের অনেক দেশে আমরা দেখছি সামরিক দোয়েন্দারা দেশের ভেতরে সিভিল আইনের উর্দ্ধে থেকে দেশের রাজনীতি, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রপরিচালনা নিয়ন্ত্রণ করছে। পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ক্ষমতায় থাকা সরকার এদের ব্যবহার করে নিজের ক্ষমতা চীরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে যেখানে আইন আদালত নীরব দর্শক। সেইসব দেশে সামরিক বাহিনীকে ব্যবসা বানিজ্য এবং নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে শান্ত রাখা হয়েছে। দেশের ভেতরে সিভিল আইনের উর্দ্ধে থেকে দেশের রাজনীতি, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রপরিচালনা নিয়ন্ত্রণই এই সব দেশে ভীতির রাজ্য কায়েম হওয়া এবং যার ফলে গণতন্ত্রের পরিবেশ চীরতরে ধ্বংস হবার পথে যাত্রার কারন।

এই সব দেশে যারা এগুলো করছে তারা জানে এর ফলে দেশের ভবিষ্যত নিশ্চিতভাবে ধ্বংস করা। এবং তারা এও জানে সরকার পরিবর্তন হলে তাদের রেহায় নেই। তাই এদের বেশীরভাগই তাদের চাকুরি, ব্যবসা শেষ করে আমেরিকার ভিসা নিয়ে সেদেশে বাস করার সব রাস্তা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করে রাখে। আমেরিকায়, কানাডায় বা উন্নত বিশ্বের কোন দেশে ছেলে মেয়েদের পড়তে পাঠিয়ে, তাদের সেই দেশের নাগরিক করে রিটায়ারমেন্ট বা সরকার পরিবর্তন হলে তারা সেই সব দেশে চল যেতে চায়।

অনেকে মনে করে আমেরিকা সবসময়ই এরকম, গণতন্ত্র ও মুক্ত দুনিয়ার রক্ষাকর্তা। বিষয়টা একদমই এরকম নয়। গত শতকের ৯০ এর দশকের আগে আমেরিকা এমন ছিল না। ৯০ এর দশকের আগে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা নির্ভর ছিল না, তারা সিআইএ নির্ভর ছিল। সেটা কাজ না করলে সামরিক আক্রমণ করে বসত। তখন তাদের লক্ষ্য ছিল অনেকটাই সমারিক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যেমন পাকিস্তানের সাথে ছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও আমেরিকার সরকার নীরব ছিল। যদিও পাকিস্তানকে আমেরিকা একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তবে সবগুলোই সামরিক সহযোগীতা বিষয়ক। রিগান প্রশাসন ফিলিপাইনে মার্কোস একনায়কত্ব, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার এবং চাদে হিসেন হ্যাব্রের একনায়কত্বের মতো ডানপন্থী দমনমূলক শাসনব্যবস্থাকে সাহায্য এবং বিদ্রোহ প্রতিরোধে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, পাশাপাশি অনেক দেশের সশস্ত্র গেরিলা আন্দোলনকেও তারা সহযোগীতা করেছে।

কিন্তু এক এগারোর পর দুনিয়া পরিবর্তিত হয়েছে। ৬০, ৭০, ৮০ এর দশকের হার্ডকোর রোজিম চেঞ্জ কৌশল এখন ততটা নেই। ৯০ এর দশকের পর থেকে বেড়েছে সামরিক অর্থনৈতিক ও ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা। ভুলে গেলে চলবেনা নিষেধাজ্ঞা কিন্তু একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা। একে খাটো করে দেখবার কোন অবকাশ নেই।

তার পরেও কেউ ভাবতে পারে এভাবেই আমরা চলব তাতে আমেরিকার কি? সত্যিই তো। বাংলাদেশে কি হল না হল তাতে আমেরিকার কি? তারা নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায় সামরিক ঘাটি করার জন্য যেটা আমাদের হ্বজ করা মার্কসবাদী বাম নেতাদের সুত্রে জানা। বাংলাদেশে কি হল না হল তাতে আমেরিকার কি আসে যায় নাকি তাতে আমাদের কি আসে যায় সেটা নিয় পরের পর্বে আলোচনা হবে, তবে এখন একটু খুঁজে দেখা যাক আমাদের এমন সরকারী স্ট্যাটাস কো এর প্রকৃত রহস্য কি।

আমেরিকার অ্যাপোলো ১১ মিশনে গিয়ে মানুষ চাঁদে পা রেখেছে ২০ জুলাই ১৯৬৯ যেটা ৫৪ বছর পার হল। এটি নিয়ে দেখলাম একজন একটি ফেসবুক পোস্ট করেছে বাংলায়। ৫৪ বছর আগের একটি বহুল আলোচিত এবং সম্পূর্ণ খোলামেলা বৈজ্ঞানিক অভিযানের এই পোস্টের কমেন্টে দেখলাম বেশিরভাগ মানুষ এটা সত্য নয় এই মন্তব্য করেছে। আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা গেছে খোদ আমেরিকাতও শতকরা ৫ ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে না যে মানুষ চাঁদে গেছে। তারা মনে করে নেভাদা মরুভূমীর কোন এক স্থানে এসব ছবি তুলে ও ভিডিও করে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে। শতকরা ছয় ভাগ মানুষ কোন মন্তব্য করতে নারাজ এই বিষয়ে। অর্থাৎ খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় এগারো শতাংশ মানুষ মনে করে না বা সন্দেহ করে এর সত্যতায়।

কেন এটা হয়? ১৯৭২ সালে পিটার হেইমস নামের এক বৃটিশ পরিচালক “ক্যাপ্রিকন ওয়ান” নামে একটি চলচিত্রের কাহিনী লেখেন যেখানে দেখানো হয় যে মানুষের প্রথম মঙ্গল অভিযানে মহাকাশচারীরা যখন তাদের রকেটে উঠে আসন গ্রহণ করে তার পর তাদের গোপনে নামিয়ে নিয়ে আনা হয়। খালি মহাকাশযানকে তখন মহাশুন্যে পাঠানো হয়। মহাকাশচারীদের বোঝানো হয় যে মহাকাশযানের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং মিশন বাতিল করা হয়েছে তবে এই খবর প্রকাশ করা যাবে না। তাহলে নাসা তার বাজেট হারাবে এবং প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের মরুভূমীতে একটি সমারিক ঘাটিতে একটি বানানো টেলিভিশন সেটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারা অভিনয় করতে থাকে সফল মিশনে মঙ্গলে গেলে যা যা করত এবং সেগুলো টিভিতে দেখানো হয়। পরবর্তীতে এক সাংবাদিক একটি সূত্র বের করে প্রমাণ করে যে নাসা এবং সরকার মিথ্যা সাজিয়ে মানুষকে ধোকা দেবার চেষ্টা করেছে।

মজার বিষয় হল ১৯৭২ সালে পিটার হেইমস যখন তার এই স্ক্রিপ্টটি হলিউডে প্রকাশ করেন, তখন তিনি বাধার মুখে পড়েন। এধরণের সত্যের চরম অপলাপ জাতীয় কাহিনী বিরোধীতার মুখে পড়ে। কিন্তু ১৯৭৮ সালে পিটার হেইমস সিনেমাটি তৈরী করতে সমর্থ হন ভাল সহযোগীতা পেয়ে। এর পর “ক্যাপ্রিকন ওয়ান” চলচিত্র পরিবেশক এবং দর্শকদের কাছে বিপুল সাড়া পায়। ধারণ করা হয় সত্তুরের দশকের অপরিশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি (৭৪-৮০), দুই ডিজিটের মূল্যস্ফীতি (৭৪, ৭৯-৮০) এবং স্ট্যাগফ্লেশন এবং নিক্সন সরকারের ওয়াটােগেট কেলেঙ্কারি মানুষদের সরকারের প্রতি আস্থাহীন করে তোলে। এই আস্থাহীনতার ফল চন্দ্রঅভিযানের সত্যতা যাচাইয়ের উপরেও পড়ে।

আশ্চর্য হচ্ছে যে মানুষ ক্রমেই বিজ্ঞানে শিক্ষিত হওয়া সত্বেও, গত ৫৪ বছরে পত্র-পত্রিকা, টিভি তথ্যচিত্র, চলচিত্র এবং বর্তমানের সামাজিক মাধ্যম এমনকি টুইটারের মাধ্যমে সরসরি অ্যাপোলো ইলেভেনের অনেক মিশন কর্মকর্তা ও মহাকাশচারীর সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থাকা সত্বেও মানুষে চন্দ্রে অবতরণের বিষয়ে অবিশ্বাসীদের সংখ্যা বাড়ছে।

এই বিষয়ে মার্কিন লেখক নরম্যান মেইলার, যিনি লাইফ ম্যাগাজিনের জন্য অ্যাপোলো ১১ মিশন কভার করেছিলেন, তিনি বলেছেন মানুষের চাঁদে হাঁটা দেখার পর, “ঘটনাটি এতটাই হৃদয় আলোড়নকারী ছিল, এতটাই অকল্পনীয় ছিল, যার সাথে কোন বাস্তব বস্তুনিষ্ঠ পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল না। ফলে এটি দেখে মনে হবে যেন এটি কোন টেলিভিশন স্টুডিওর শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ সাজানো নাটক”।

তাহলে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় এগারো শতাংশ মানুষ যে মনে করে না মানুষ চাঁদে গেছে, এই অবিশ্বাসের কারণ শিক্ষা নয়, এই অবিশ্বাসের কারন ঘটনাটি অবিশ্বাস্য জাদুময়তা এবং উক্ত এগারো শতাংশের মনে থাকা আস্থাহীনতা। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার সরকারী স্ট্যাটাস কোতে যারা বিশ্বাস করেন তারা কিন্তু আমাদের দেশের সেই এগারো শতাংশ। আমাদের বিরুদ্ধে আমেরিকার 'যুদ্ধ' ঘোষণা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য এবং চরম আস্থাহীনতায় ভুগছে।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।