EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

দেশী ডিপ স্টেট

"আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে?" -১

“স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ লুকিয়ে থাকে অন্যের অধিকার হরণের প্রবল উৎসাহের মধ্যে”।
— জাস্টিস লুইস ডি. ব্র্যান্ডাইস (ওলমস্টেড বনাম যুক্তরাষ্ট্র, ১৯২৮, ২৭৭ ইউ.এস. ৪৩৮, ৪৭৯)

“২০১৮ সালের ২৬মে, কক্সবাজার 

(ফোন রিং এর শব্দ)

-হ্যালো
-আব্বু তুমি কোথায়?
- আমি এই যে, ঐ যে ইউএনও (টিএনও) অফিসে যাচ্ছি তো, চলে আসবো আম্মু। 
- কতক্ষণ লাগবে?
- এইতো, বেশিক্ষণ লাগবে না। আমি চলে আসবো, ইনশাল্লাহ...ঠিকাছে? ঘুমাও... (নিঃশব্দতা) 
(ফোন রিং এর শব্দ)
- হ্যালো আব্বু, আব্বু? 
- হ্যালো আম্মু, আমি নীলা যাচ্ছি, নীলা। 
- ক্যানো? 
- যাচ্ছি, জরুরী কাজে যাচ্ছি (অসহায়, ভয়ার্ত কন্ঠ), যাচ্ছি আম্মু, গাড়িতে আছি তো। 
- আব্বু তুমি কান্না করতেছো যে? 
- (তয় ব্যাক্তি) হ্যালো হ্যালো... 
(ফোন কেটে যায়) 

(ফোন রিং এর শব্দ)

আল্লাহ আমার মোবাইলটা যেন ধরে... আল্লাহ আমাকে একবার কথা বলতে দাও খোদা... ইয়া আল্লাহ... 
ফোন রিসভড হয়, বাতাসের শব্দ। এ পাশ থেকে হ্যালো হ্যালো কে বলতে থাকেন একজন। ওপাশ থেকে অনেক ধরনের শব্দ। 
হঠাৎ দুই-তিন ব্যাক্তির কথা শোনা যায়। এপাশ থেকে একজন মহিলা অনবরত চিৎকার করছেন। 
আবারো কিছু অপষ্ট কথা, তুমি জড়িত? 'জ্বি'... অপষ্ট কথা...'নাহ' অপষ্ট কথা। 

বন্দুক লোডের শব্দ, সাথে সাথে ফায়ার। একজন ব্যাক্তি কুকিয়ে উঠেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আর্তনাদ। আবার গুলি। 
ফোনের এপাশ থেকে স্ত্রী, সন্তানের কান্না। 

এরপর হুইসেল এর শব্দ, অকাথ্য ভাষায় গালি, 'শটগান দে', ধর ওরে ধর...। সেই বন্দুকযুদ্ধের নাটকের শেষ অংশ। 
একপাশে স্ত্রী, সন্তানের তখনও অসহায় ডাক। আর নাটকের বাকি অংশ তখনো চলছে, 'সীসা ভর, *গালি*, লোড করে দে আমাকে' ৭-৮ টা গুলির শব্দ থেমে থেমে, পুলিশের সাইরেন, ধর ধর চিৎকার। 

ফোনের রেকর্ডে নাটকের স্ক্রিপট পুরোটা রেকর্ড হয়ে যায়। আমরা শুনতে পাই আরো একটা 'বন্দুকযুদ্ধ' এর গল্প। 
বলছিলাম টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হক হত্যার কথা। ঠান্ডা মাথায় কিভাবে 'বন্দুকযুদ্ধ' সাজানো হয় তার একটা উদাহরন ছিলো এই ফোন রেকর্ডিং। একজনকে ডেকে নিয়ে যেয়ে কিভাবে হত্যা করা হয় তার প্রমান হিসেবে সামনে আসে একরামের মৃত্যুর ঘটনা। 

রেকর্ডিং এর শেষ অংশে হাতের বাঁধন খুলে দেয়া, পকেটে গুলি দিয়ে দেয়াসহ, পিস্তল কোথায় রাখা হবে, কতগুলো গুলি ছড়িয়ে রাখা হবে সহ বাকি নাটক। শেষ স্ত্রীকে বলতে শোনা যায় "নাহ আম্মু তোমার আব্বু ফিরে আসবে"। 
কিন্তু একরাম ততক্ষণে চলে গেছেন অনেক দূরে। 

"আন্তর্তজাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে"
ভুক্তভোগী গণজমায়েত 
১০-ই ডিসেম্বর,২০২৪ 
স্থানঃ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান 
আয়োজনেঃ  মায়ের ডাক 
১৭ বছরের সব মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আওয়াজ তুলতে চলে আসুন।”

উপরের এটাই ছিল গত ১০-ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আন্তর্তজাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক নামক একটি সংগঠনের "ভুক্তভোগী গণজমায়েত" অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের। মায়ের ডাক হল এমন সব পরিবারের একটি প্ল্যাটফর্ম যারা বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে সরকারি সংস্থা কর্তৃক বলপূর্বক গুমের শিকার হয়েছে। ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাকের সঙ্গে বৈঠক করতে তেজগাঁওয়ের শাহীনবাগে বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে যান যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।  

উপরের এই বর্ণনাটি টেকনাফের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে। ২০১৮ সালের ৪ মে দেশজুড়ে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। ওই বছরের ২৬ মে রাতে টেকনাফে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন কাউন্সিলার একরাম। একরামুলকে কে মেরেছে কেন মেরেছে সেটা প্রথম থেকেই পরিষ্কার। সেটা নির্ণয় করে অপরাধীদের শাস্তি হতে হবে এবং সেই দাবী যৌক্তিক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলার একরামের মৃত্যু কি নিছক দুর্ঘটনা? নিছক ভুল? নিছক অবহেলা? নাকি এটা একটি চিত্র তুলে আনছে মার্কিন ডিপ স্টেট ও তার দেশীয় দালাল ও খেলোয়াড়দের কর্মকান্ডের? ক্ষমতায় থাকা সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও যাদের কাছে দাবা খেলার গুটি মাত্র কি?

টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে র‌্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একরাম নিহত হওয়ার পর বাহিনীটির দাবি ছিল, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তবে এই হত্যার ঘটনার পর থেকেই তার স্ত্রী আয়েশা বেগম ও স্বজনরা দাবি করে আসছেন, নির্দোষ একরামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মানবাধিকার কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিয়াজুল হকসহ র‌্যাব ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন একরামের পরিবারকে। কিন্তু সে আশ্বাস পূরণ হয়নি আজও।

 

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।