EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
ইতিহাস ও নৃতত্ব

যৌতুক, সতীদাহের কুৎসা

মাটির সংস্কৃতির অতীতকে সশস্ত্রীকরণ

মোটামুটি দীর্ঘ একটা ইউরোপ ভ্রমণের পর আর মাত্র দু’দিন পরই আমার ফিরতি ফ্লাইট। আমার ইউরোপীয় বন্ধু (দেশটির নাম বলছি না কারণ তাদের অনেকেই ফেসবুকে আছে), যার ফ্ল্যাটে আমি আছি কয়েকদিন, সে আমাকে তার বাসার এক সেট চাবি দিয়ে রেখেছে। ওই দিন বাসা থেকে বের হবার প্রধান দরজায় সে একটি স্টিকি নোটে লিখে রেখে গেছে সন্ধ্যায় তার এক বান্ধবী আমাদের ডিনারের আমন্ত্রন দিয়েছে, আমি যেন বিকেলের মধ্যেই ফিরি, কারণ মেয়েটার বাসায় যেতে সময় লাগবে সন্ধ্যার যানজটে।

ঘন্টাখানেক ড্রাইভের পর যে বাসাটায় পৌঁছালাম সেটাকে মোটামুটি একটা পোড়ো বাড়ী বলা যেতে পারে। বিশাল বিশাল কক্ষ কিন্তু মনে হয় যে কোন সময় ইট প্লাস্টার খুলে পড়বে। এ বাড়িতে আমার বন্ধুর বান্ধবী থাকে আর থাকে তার সাথে আরও দুটি মেয়ে। একটি মেয়ে চল্লিশের মাঝামাঝি আর আমার বন্ধুর বান্ধবী ও বাকি জন ত্রিশ এর কাছাকাছি। তিন জনই উন্নয়নকর্মী যার মধ্যে আমার বন্ধুর বান্ধবীটি বহু দিন ভারতে ছিল, সে আমাকে হিন্দীতে স্বাগতম জানাল যদিও সে হিন্দী বলতে পারে না। তিন জনের সবাই ইংরেজি বোঝে তবে বয়স্কজন তেমন ভাল বলতে পারে না। সে ছিল প্রধানত শ্রোতা।

টিপিক্যাল ইউরোপীয় ডিনার যেখানে পনির, ওয়াইন আর হাবিজাবি দিয়েই দীর্ঘ সময় গল্প আড্ডা চলে যতক্ষন ভাল রকম ক্ষুধা না লাগে। বয়স্কজন উঠে এক সসপ্যান পাস্তা সিদ্ধ হতে দিয়ে এল আর আমাকে বলল কোন কিছু খাবার বিষয়ে আমি কোন বিধিনিষেধ মানি কিনা। আমি বললাম কিছু পোঁকাওয়ালা পনির (Casu marzu) আর দুর্গন্ধ কলিজা পেস্ট (Chicken Liver Pâté) ছাড়া আর কোন কিছুতে আপত্তি নাই। সিংহভাগ ইউরোপীয় তরুণ তরূণীদের মধ্যে এই জিনিষটি সবচেয়ে ভাল, পোশাক খাবার দাবার নিয়ে আড়ম্বরী কম। গল্প আর হাসি ঠাট্টা করাটাই যেন মুল। যদিও সে সব গল্পকথায় কোন ভার থাকত না। আড্ডার সময় টিভি পত্রিকার সদ্য গড়া মূল্যবোধ থেকে তৈরি হাওয়ায় ভেসে বেড়ান হালনাগাদ সব মেকি ভালমানুষি মুখোশগুলো যার যেমন খুশি পরে নিত। তারপর মনোজগতে যেমন খুশি সাজো’র হুর-পরী সেজে সবাই কাউকে না কাউকে অপরাধী দানব বানিয়ে উপহাস আর শাপ-শাপান্ত করত। 

সেই সন্ধ্যার গল্পগুলো শুরু হয় তেমনই খুব ভালমানুষিকতায়। আমি কি করি, ওরা কে কি করে। আমরা কে কত ভাল কিছু করছি, এইসব প্রশংসা স্তুতিতে। যেহেতু মেয়ে তিনটাই উন্নয়নকর্মী আর আমরা ছেলে দু’জনই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবসায় জড়িত, আমরা একটু দমেই যাই। কিন্তু যত বেশী ওয়াইনে চুমুক পড়ে, রাতের অন্ধকার যত বাড়ে, স্তুতি প্রশংসা থেকে আলোচনাগুলো তত বেশী ক্ষোভ আর কুৎসায় পরিণত হতে থাকে। ক্ষোভ আর কুৎসা যত বাড়তে থাকে, তার লক্ষ্য যেন স্থান ও কাল – উভয় মাত্রাতেই আরও বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। ভারতে কাজ করা মেয়েটিই প্রধান বক্তা হয়ে যায়। ভারতে কাজ করতে গিয়ে ভারতীয় মেয়েদের সে কত রকম শৃঙ্খল নিষেধাজ্ঞা দেখেছে সেগুলো আমরা শুনি। শুনি বিয়ের আগে প্রতিটি নারীকে কেমন ভাবে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয়। শুনি বিয়ের পর যৌতুক নিয়ে কিভাবে প্রতিটি মেয়েকে নির্যাতন করা হয়। সেগুলো শেষ হলে তারপর শুনি অতীতে ভারতীয় পুরুষেরা কিভাবে একে একে মেয়েদের সতীদাহ প্রথায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারত সেসব।

আড্ডা শেষ হলে আমরা দুই অপরাধী পুরুষ জগতের জীবিত মৃত সব পুরুষের অপকর্মের দায় নিয়ে ফেরার পথ ধরি। ফেরার সময় শুধু আমার বন্ধুটি বলে “উই আর মেন মাই ফ্রেন্ড, মেন হ্যাড ব্যাড হিস্টোরি, উই হ্যাভ টু টেক ইট”। আমার মনে সন্দেহ ছিল এই তিন জনের একজন অন্তত তার শয্যা সঙ্গী ছিল কোন এক সময়, একথায় সন্দেহটা আরও দৃঢ় হয়। কিন্তু আমার মন ওর বক্তব্য মানতে চায় না। আমার মনে হয় শহুরে শিক্ষিত হবার আগে, মানুষে মানুষে, পরিবারে, গোত্রে, গ্রামে ভালবাসা – সহমর্মীতা আরও প্রকট ছিল, কারণ তখন মানুষের কাছে কাছের মানুষই ছিল বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আর পুরস্কার। প্রশংসা-স্তুতির জন্য তখন রাস্তায়, সাগর সৈকতে, শপিং মলে, ফেসবুকে পাবলিক ডিসপ্লের সুযোগ ছিল না। আমি ছবি তুলতে আজকের বাংলায় যতগুলো গ্রামে গিয়েছি, দেখেছি গ্রামটা যত প্রাচীন, মানুষগুলো তত ভাল, তত মায়া আর বিশ্বাস তাদের মনে। 

পুরনো গ্রামগুলোতে, বিশেষ করে হিন্দু গ্রামগুলোতে একাকী যুবতি স্ত্রীরা ক্যামেরা হাতে অচেনা পুরুষ দেখে কোন সন্দেহ সংকোচ করেনি। এগিয়ে এসেছে, বলেছে দাদার বাড়ী কোথায়? এই ভর দুপুরে রোদে কত কষ্ট করছেন, আসেন ছায়াতে একটু বসেন বলে ঘরের ভাঙা চেয়ার বা মোড়াটা আঁচল দিয়ে মুছে বসিয়েছে। তারপর পাশের বাড়ির কোন কিশোরকে ডেকেছে একটা ডাব পেড়ে দিতে। একটু পরিচয় হলে বৌ-ঝিরা কয়েকজন থাকলে ঠাট্টা করতেও ছাড়েনি। দাদা বিয়ে করেছেন কিনা। ছেলেমেয়ে আছে কি না। কেউ ঠাট্টা করে বলেছে এত ঘুরে বেড়ালে বাচ্চা করার সময় কোথায়, বলে সবাই হেঁসে উঠেছে। এইসব সরলতা আর বিশ্বাস এমনিতে হয় না। বহু দিনের জেন্ডার ট্রাস্ট সমাজে থাকতে হয়। তা না হলে মন চাইলেও মুখ ফোটে না। অতীত মন্দ অভিজ্ঞতার ট্রমা, সন্দেহ আর অবিশ্বাসে বাস করে যারা তারা শুধু নিজের শরীর ঢাকে আর অচেনা পুরুষ দেখলে মনে করে ধর্ষক। 

আমার মনে হয়েছিল আমাদের প্রাচীন সমাজ সম্পর্কে এইসব ঢালাও অভিযোগ অন্যায়। আমাদের মৃত পিতা প্রপিতামহ ও তাদের পুর্বসূরীদের তাদের অনুপস্থিতিতে অপবাদ দিয়ে কালিমালিপ্ত করা অপরাধ আর ধৃষ্টতা। কেন আমরা ভাবি আমরা ভাল, তারা খারাপ ছিল? 

ফিরে এসে খোঁজার চেষ্টা করি। আসলেই কি এত খারাপ ছিল ভারতবর্ষ? পেয়ে যাই অনেক তথ্য। যেমন যৌতুক। যৌতুক কখনই নারী নির্যাতনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় নি। ভারতবর্ষে সমতলে যেহেতু কৃষি নির্ভর সমাজ ছিল এবং ছিল যৌথ পরিবার। অর্থাৎ দাদা বা পিতামহের অধিনে বাবা চাচারা সব একসাথে জমি চাষ করত এবং একসাথে ফসল তোলা হত, এক বাড়িতে এক হাঁড়িতে রান্না হতো। সেখান থেকে কোন মেয়ের যদি বিয়ে হয়ে যেত তখন সে তার স্বামীর সাথে স্বামীর যৌথ পরিবারে বাস করতে চলে যেত। যেহেতু যৌথ কৃষিকাজ তাই মেয়ের বাবার পরিবারের জমিতে মেয়েটার যে অংশ সেটা মেয়েটাকে জমি হিসাবে দেওয়া যেত না। মেয়েটা যাতে পিতার জমির ভাগ থেকে বঞ্চিত না হয় সেই জন্য তার স্থাবর সম্পত্তির অংশ (জমি, বাড়ি) অস্থাবরে রূপান্তরিত করে (গহনা, টাকা) বিয়ের সময় বোনকে ভাইয়েরা দিয়ে দিত। এটাই যৌতুক। নারীর প্রতি এই সুবিচারের প্রথাকেই শিক্ষিত লোকজন নারী নির্যাতন হিসাবে এখনও ভুল করে। 

তেমনই সতীদাহ প্রথা। এটিও আর একটি ভ্রান্ত দায় চাপানো। প্রাচীন ভারতবর্ষে সতীদাহ বলে কিছু ছিল না। মৌলিক রামায়ন মহাভারতে সতীদাহের কোন বর্ণনা নাই। স্বামীর মৃত্যুর পর পাণ্ডুর দ্বিতীয়া স্ত্রী মাদ্রীর মত দু’একজনের ভিন্ন কারনে আত্মহনন ছাড়া রামায়ণ মহাভারতের সব মৃত পুরুষদের স্ত্রীরাই জীবিত ছিল। পরবর্তীতে ক্ষত্রীয়দের দ্বারা শুধুমাত্র কিছু গোত্রের রাজ পরিবারে সতীদাহের প্রচলন শুরু হয়। ক্ষত্রীয় অর্থ শাসক ও সামরিক বর্ণ। যারা রাজনৈতিক মেধায় অত্যন্ত জ্ঞানী, শাসনে সক্ষম কিন্তু আচারে ছিল নৃশংস। ক্ষত্রীয়দের সেই সব রাজ পরিবারে নারী নিজে প্রেমে পড়ে বিবাহের জন্য রাজা বা রাজপুত্রদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করত। নারীর এই মুক্ত প্রেম এলিট পরিবারগুলোতে প্রচলিত হতে থাকে। কিন্তু সমস্যা হয় কিছুদিন গেলে যখন সেই সম্পর্কে বিরোধ বাধত, তখন ঐ নারীগণ বিষ প্রয়োগ করে স্বামীকে হত্যা করে অন্য ক্ষমতাশালী পুরুষকে আবার প্রেম নিবেদন করতে থাকে। এটা ক্রমেই বাড়তে থাকায় এই বিপদ থেকে মুক্ত হবার জন্যই সেই সব রাজ্য ঘোষণা করে যে কোন নারী যদি কোন পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে তবে ঐ পুরুষের মৃত্যু হলে হয় সে ঐ পুরুষের সাথে সহমরণে যাবে অথবা সে তার জাতিচ্যুত হবে (নতুন কাউকে বিয়ে করতে পারবে না)। সে সময় অনেক রাজারই একাধিক স্ত্রী থাকত, দেখা যেত নিজের গৌরবের জন্যই কোন কোন নারী, তার প্রেম যে সত্য ছিল সেটা প্রমাণে আত্মহনন বেছে নিত। 

আশ্চর্য হচ্ছে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পুরো ভারতবর্ষে, সাম্প্রতিক অতীতের আগে, সতীদাহের সংখ্যা খুব কম, হাতে গোনা মাত্র। কিন্তু ইংরেজরা আসার পরে বিশেষ করে বাংলায়, এমনকি শহুরে সমাজে কোলকাতায় সেটা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এম ভি পি কানের বিশাল আট ভল্যিউম হিস্ট্রি অব ধর্মশাস্ত্রে যে পরিসংখ্যান আছে সেটিতে দেখা যায় ১৮১৫ ইং সালে বাংলায় (যা তখন বারাণসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল) সতীদাহ হয়েছিল ৩৭৮টি। ১৮১৮ তে সেটি বেড়ে হয় ৮৩৯টি। ১৮১৫ থেকে ১৮১৮ পর্যন্ত মোট হয়েছিল ২৩৬৬টি সতীদাহ যার মধ্যে কোলকাতাতেই সতীদাহ হয়েছিল ১৮৪৫টি। সর্বোচ্চ সময়ে যা ছিল ৪,৪৫,০০০ মানুষের জন্য একটি সতীদাহ। 

প্রাচীন, গ্রামীন ও অশিক্ষিত সমাজে নয়, যেখানে ধর্ম আবেগ প্রবল, বরং শিক্ষিত শহুরে আধুনিক সমাজ, বৃটিশ কোলকাতায় সতীদাহ হাজারগুন বেশী কেন ছিল? কানের মতে এর কারণ হিন্দু ‘দায়ভাগ’ আইনের কঠোরতা। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন দুটি ধারায় বিভক্ত: দায়ভাগ ও মিতাক্ষরা। বাংলায় দায়ভাগ আইন প্রচলিত ছিল। এই আইন অনুসারে স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী মৃত স্বামীর সমস্ত সম্পত্তির নিঃশর্ত অধিকার পায় এমনকি স্ত্রী নিঃসন্তান হলেও। ইংরেজ আমলে ইংরেজরা এই দায়ভাগ আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ শুরু করে। শহুরে শিক্ষিত, বিশেষ করে কোলকাতার ব্যবসায়ী সমাজ সম্পত্তি রক্ষার জন্য ধর্মের দোহাই দিয়ে, স্বামীর আত্মীয়রা সদ্য বিধবাদের স্বর্গের লোভ বা ভয় দেখিয়ে সতীদাহে যেতে প্ররোচিত করত। তাই এই হার শহরে এত বেড়ে গিয়েছিল। কথিত আছে ভারতে বৃটিশ গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ও তার লোকজন সতীদাহের খবর শুনলে সেখানে গিয়ে ঘুষও নিতেন (ছবি দেখুন)। দুর্নীতির কারণে হেস্টিংসকে সেই সময় ইমপিচ, মানে বিচারের মুখোমুখী করা হয়েছিল। 

ভারতের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস সতীদাহের খবর শুনে সেখানে গিয়ে ঘুষ নিচ্ছেন, Thomas Rowlandson (1756-1827)

পরিহাস হচ্ছে যে পশ্চিমাদের রক্ত আছে বলে ক্ষত্রীয়রা (আর্যরা) নিজেদের শ্রেষ্ঠতর ভাবত, তারাই তাদের নিজেদের নারীদের রাক্ষসী লোভকে সামলাতে সতীদাহের মত নৃশংস প্রথা চালু করে। কয়েক হাজার বছর পরে সেই পশ্চিমাদের দ্বারা প্রভাবিত শিক্ষিত ব্যাবসায়ী সমাজ সেই প্রথাকে সম্পত্তি বাঁচানোতে আবার ব্যবহার করা শুরু করে। আধুনিক যুগে ঐ পশ্চিমারাই আবার ফিরে আমাদের সেই দোষে দোষী করে। আর আমরাও সেটির মাত্রা বিচার না করে আমাদের পিতা প্রপিতামহদের দোষ দেই অশিক্ষিত বর্বর বলে আত্মশ্লাঘা বা আত্মপ্রসাদ অনুভব করি। 

এটি শুধু বিদেশীরা নয়, তাদের চেয়েও বেশী করে দেশী শিক্ষিতরা। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পেশাগত শিক্ষায় যারা উচ্চশিক্ষিত তারা বেশী করে থাকে, কারণ তারা সেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় ভুগে থাকে যা তাদের ক্ষীণ আত্মমূল্যের ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তোলে। এর সাথে স্বল্প মেধার নারীবাদী, মানবাধিকার কর্মী, বিদেশের সাথে যাদের আর্থিক যোগ ভাল। তারা বোঝে না যে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থেকে ‘তোমার অতীত হলো হীন, নৃশংস, জংলী’ দাস প্রথার এই মনেজাগতিক কৌশল প্রয়োগ করা হয় যেটা ডি সোশালাইজেশনের একটা অস্ত্র। মানুষকে দুর্বল করতে হলে আগে তাকে তার শিকড় থেকে বিযুক্ত করতে হয় যাতে তারা নতুন শিকড় খোঁজে। সেটা হল পশ্চিমের লেখক, প্রফেসর, বিলিয়নিয়ার শিল্পপতি, যাদের ভক্ত হয়ে সে আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদীদের স্থানীয় স্বার্থ রক্ষাকারীতে পরিণত হয়। 

মনেবিদ্যার দৃষ্টিতে যদি বলি, সতীদাহের মত নৃশংস প্রথা সে সমাজেই থাকতে পারে যে সমাজে এমপ্যাথি শুন্য প্রায়। এমপ্যাথিশুন্য কোন গ্রামীণ সমাজ চলতে পারে না। শহুরে শিক্ষিত ও উচ্চ ক্ষমতার উচ্চ অর্থ প্রবাহের অর্থনীতির সামরিক ব্যবসায়ী সমাজই একমাত্র এমপ্যাথিহীন টিকে থাকতে পারে। বহির্শক্তির প্রভাব আর পুঁথিগত শিক্ষা সমাজে সব সময় বিচ্ছিন্ন মানসিক বিকারগ্রস্থদের শক্তিশালী করে। তারাই পরিণত হয় ঘরের শত্রু বিভীষণে যারা হাজার হাজার বছরে মাটির সংস্কৃতিতে সৃষ্ট প্রেম প্রীতি বন্ধনকে ধ্বংস করে তুচ্ছ কারণে নৃশংসতা আনয়ন করে। তারাই ছড়ায় গুজব আর প্রোপাগান্ডা আমাদের মৃত পূর্বপুরুষদের দায়ী করে যারা আমাদের জন্যই তাদের জীবন উৎসর্গ করে গেছে।

যৌতুক অথবা সতীদাহ, সমাজে এই সকল প্রথা সামাজিক ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলা আনয়নেই উদ্ভাবিত হয়েছিল। একথা অনস্বীকার্য যে এগুলোর ব্যাপক অপ্রয়োগ হয়েছে। এবং এগুলোকে ব্যবহার করে দুর্বল ও অসহায়দের জীবন নিয়ে ছিনমিনি খেলা হয়েছে। তবে সেটা বেড়েছে তখনই যখন থেকে সমাজে নৈতিকতা ও এমপ্যাথি বিলুপ্ত হয়ে পশ্চিমা শিক্ষা ও ভোগবাদের প্রসার বেড়েছে তখন থেকে। মাটির সংস্কৃতির সেই অতীতকেই এখন সশস্ত্রীকরণ করে নয়া গ্লোবালিস্টরা আমাদেরই উপর প্রয়োগ করে আমাদের জীবন নিয়ে ছিনমিনি খেলার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সমারিক উদ্দেশ্যে।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।