বোয়িং এর নাম কে না জানে। বোয়িং হল আমেরিকার এমন এক কোম্পানী যারা সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা নিজ দেশে আনে। ১৯১৬ সালে আমেরিকার সিয়াটেলে জনাব উইলিয়াম বোয়িং “প্যাসিফিক অ্যারোপ্রোডাক্টস কোং” প্রতিষ্ঠিত করেন যা পরে ১৯১৭ সালে “বোয়িং অ্যারেপ্লেন কোম্পানী” নামে পরিবর্তিত হয়। ইনকর্পোরেশনের আগে উইলিয়াম বোয়িং, যিনি ইয়েল থেকে পাশ করা একজন কাঠ বিক্রয়কর্মী ছিলেন, ইউএস নেভির এক বিমান প্রযুক্তিবিদ জনাব কনরাডের সাথে মিলে একটি বাই প্লেন তৈরী করেন। বিএন্ডডব্লু নামের সেই প্লেন দুটো বানিয়ে তারা ইউএস নেভির কাছে বিক্রির চেষ্টা করেন কিন্তু ইউএস নেভি সেগুলো কিনতে রাজি হয় না। পরে তারা সেগুলো নিউজিল্যান্ড মেইলের কাছে বিক্রি করেন যেগুলো দিয়ে নিউজিল্যান্ড প্রথম বিমান ডাক ব্যবস্থা চালু করে। এর মধ্যে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং ১৯১৭ তে আমেরিকা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। বোয়িং জানতেন এখন নেভি আর তাকে না করতে পারবে না। বোয়িং দুটো সিএস মডেলের প্লেন ফ্লোরিডায় ইউএস নেভির কাছে পাঠায়। ইউএস নেভি সাথে সাথে ৫০ টি বিমানের অর্ডার দেয়।
এর পর বোয়িংকে আর ফিরে তাকাতে হয় নি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, কঠিন মান নিয়ন্ত্রন ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা বোয়িংকে সেরা কোম্পানীতে পরিনত করে যারা একাধারে উন্নত প্যাসেঞ্জার প্লেন ও সামরিক বিমান প্রস্তুত ও সরবরাহ করতে থাকে।
জেমস স্মিথ ম্যাগডোনেল এবং ডোনাল্ড উইলস ডগলাস উভয়েই তার কিছু পরে দুটো বিমান কোম্পনী তেরী করে যারা কোনরকমে টিকে ছিল। ১৯৩৩ এর অর্থনৈতিক মন্দা তাদের দুর্বল করে দেয় ও একটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আবার তাদের কপাল খুলে যায়। শুধু ডগলাসই ১৯৪২ থকে ১৯৪৫ পর্যন্ত্য ৩০,০০০ টি বিমানের অর্ডার পায়। যুদ্ধ শেষ হলে আবার তারা দুর্দশায় পড়ে। ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হলে দুটো কেম্পানীই নতুন নতুন মিসাইল তৈরী করার প্রতিযোগীতায় নামে। ১৯৬৭তে এসে মাকডোনেল ও ডগলাস এর মার্জার হয় ও মাকডোনেল ডগলাস নামক কোম্পানির জন্ম হয়।
জানুয়ারী ১৯৮৮ সালে মাকডোনেল ডগলাস ও জেনারেল ডায়নামিক্স ৪.৮৩ বিলিয়ন ডলারের এ-১২ অ্যাভেঞ্জার-২ নামের একটি স্টিলথ বিমান তৈরীর ডিফেন্স কনট্রাক্ট পায়। এরপর মাকডোনেল ডগলাসের ম্যনাজমেন্টে পরিবর্তন আসে ও তারা তাদের ট্রাডিশনাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট পরিবর্তন করে টিকিউএমএস (টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) প্রবর্তন করে। এর ফলে ৫,০০০ দক্ষ কর্মী ও ম্যানেজার পদ হারায় ২,২০০ নতুন কর্মী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। এতে কোম্পানীর আদর্শ ও কর্মীদের মনেবল ও উদ্যম নষ্ট হয়ে যায় এবং টিকিউএমএস কে তারা টিটকারি মেরে বলতে থাকে “টাইম টু কুইট এন্ড মুভ টু সিয়াটেল” (সিয়াটেলে বোয়িং এর প্রধান কার্যালয়)।
১৩ই জানুয়ারী ১৯৯১ তে কারিগরী ব্যর্থতা, মানেজমেন্ট ফেইলিওর সংক্রান্ত দেরি ও খরচ বৃদ্ধির ফলে এ-১২ অ্যাভেঞ্জার-২ প্রকল্প বাতিল করে ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট। এর ফলে তাদের আর একটি বৃহৎ কন্ট্রাক্ট, জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার প্রকল্পও ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
১৯৯৭ এর অগাস্টে বোয়িং ১৩ বিলিয়ন ডলারের স্টক সোয়াপে মাকডোনেল ডগলাসকে অধিগ্রহণ করে নেয় বোয়িং। বোয়িং এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও ফিলিপ কন্ডিট বোয়িং এর নতুন ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান ও সিইও হন এবং মাকডোনেল ডগলাসের সিইও হ্যারি স্টোনসাইফার নতুন বোয়িং ম্যানেজমেন্টের প্রেসিডেন্ট ও সিওও হন।
সাক্ষাৎ শয়তানকে আপনি আপনার কোম্পানির সিওও বানালে কি হতে পারে? মাত্র একজন মানুষ কিভাবে একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ করে দিতে পারে তারই নমুনা যেন এই বোয়িং মাকডোনেল ডগলাসের মার্জার। পরবর্তিতে বোইংয়ে সংক্রমিত হয় মাকডোনেল ডগলাসের লোভ আর বিশাল টাকার জন্য সকল সিস্টেম ও তার কাস্টমার, প্যাসেঞ্জারদের অবজ্ঞার সংস্কৃতি। বোয়িং এর ৭৮৭ ড্রিমলাইনার পড়ে ব্যাপক মান নিয়ন্ত্রণ ভায়োলেশনে যার ফলে এটি ডেলিভারি হয় প্রায় তিন বছর দেরিতে যাতে কোম্পানিটি ক্ষতির মুখে পড়ে। এরপর বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সের প্রায় ৪০০ বিমান এখন গ্রাউন্ডেড দুটো উপর্যুপরি দুর্ঘটনার পর।
বোয়িং এর পতনের কাহিনীঃ
কোন একজন মানুষের মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির আশেপাশের মানুষের আচরণ বলে দিতে পারে মৃত্যুটি স্বাভাবিক ছিল? না কি খুন। স্বাভাবিক মানুষের সুস্থ আবেগের উপর মৃত্যু নামক ঘটনার প্রচন্ড প্রভাব থাকে। কিন্তু অন্য মানুষের যন্ত্রনা, ভোগান্তি ও মৃত্যু, আবেগগতভাবে অস্বাভাবিক যারা তাদের অনেকের উপর কোন প্রভাব ফেলে না। আবেগগতভাবে অস্বাভাবিক যারা তারা লোভ ও ক্ষমতার নেশায় যখন উন্মত্ত হয়ে ওঠে, তখন তারা অন্য মানুষের যন্ত্রনা, ভোগান্তি ও মৃত্যুর বিষয়ে যে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, সেটি অনেকসময়ই অবজ্ঞা করে থাকে। সেই কারনে তারা অনেক সময় মৃত্যুর কারন হয়ে থাকে।
ব্যবসায় প্রশাসন বা ব্যবস্থাপনা যারা পড়েছেন তারা জানেন কোন প্রতিষ্ঠান তার প্রধানের চরিত্র প্রতিফলিত করে। কর্পোরেটের ক্ষেত্রে যেটি হয়ে থাকে পরিচালনা পরিষদের চরিত্র। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২১১ গত বছর, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ দুপুরে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্ঘটনায় পাইলট ক্রুসহ মোট ৫১ জন নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর। মারাত্মক এই দুর্ঘটনার পরবর্তীতে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের আচরণ ছিল সাইকোপ্যাথিক। প্রধানত দগ্ধ হয়ে মৃত ৫১ জন যাত্রীর প্রতি কোনরুপ সহমর্মীতা না দেখিয়ে, নিজেদের মাথা নত করে নিজেদের ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা না করে তারা প্রথমে শুরু করে নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দরের দোষারোপ। এর পর তারা প্রচুর অর্থ ব্যায় করে নিজেদের বিজ্ঞাপনে। এবং নানা রকম ইভেন্ট ও নতুন বিমান আনার ঘোষনায় নিজেদের সফলতা প্রকাশে মত্ত হয় যাতে মিডিয়াকে খুশি রাখা যায় এবং নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে সাংবাদিক, মিডিয়া এবং প্রচুর ফ্যান তৈরী করে নিজেদের দল ভারী করা যায়। বলা বাহুল্য যে এইসব কর্মকান্ডে কতৃপক্ষকে খুশি রাখারও সব রকম আয়োজনও নিশ্চই ছিল।
যে জনগনকে সেবা প্রদানের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান, যে জনগনের অর্থে সেটি চলে, সেই জনগনের মৃত্যুর মত মারাত্মক বিষয়কেও হেলা করে, অর্থ ও ক্ষমতার নানা চাতুরীপুর্ণ উদ্ভবনী ব্যবহারে, নিজেদের ইমেজ বাড়িয়ে বোকা জনগনের জন্য রিয়ালিটি ডিসটর্শন ফিল্ড তৈরী করে তাদেরই নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা আজকের দুনিয়ার কর্পোরেট জগতে একটি হঠকারী প্রক্রিয়া। এর প্রয়োগটি নতুন হলেও তত্বটি নতুন নয়। এটিই ধর্মগ্রন্থের সেই শয়তানের কারসাজি, আর মনেবিজ্ঞানের ভাষায় সাইকো-সোশিওপ্যাথিক অ্যাবিউজ যা আবহমান কাল থেকে ক্ষমতাশালী মন্দ লোকেরা করে আসছে।
কিন্তু এতে কি শেষ রক্ষা হয়? অ্যাবিউজ থেকে যে প্রাপ্তি সেটা সবসময়ই ক্ষনস্থায়ী। সাইকো-সোশিওপ্যাথেদের মুখোশ দ্রুতই খুলে যায়। ক্রমেই সৎ, উদ্ভাবনী, ও কর্মঠ বাস্তব চিন্তার লোকেরা আর তাদের সাথে থাকে না। থাকে যারা তারা হয় তাদেরই মত অথবা নিরেট বোকা বা ভীত মেরুদন্ডহীন অনুসরনকারীরা।
শুরু করেছিলাম ইর্ষনীয় সাফল্যের বিমান কোম্পানী বোয়িং নিয়ে। সমাজতন্ত্রীরা দিনরাত পুঁজিবাদকে গণ গালি দিলেও পুঁজিবাদের ভেতরেও আছে পঞ্চাশ রকমের ধুসরতা (ফিফটি শেডস অব গ্রে)। বোয়িং ছিল একটি তুলনামুলক ফেয়ার কোম্পানী যদিও সামরিক বিমান তৈরী করত বলে অনেকে তাদের চেয়ে ফরাসী এয়ারবাসকে বেশী পছন্দ করত (যদিও ইদানিং তারাও সামরিক শাখা খুলেছে)। যে কোন প্রযুক্তি কোম্পানীর সবচেয়ে মুল্যবান হচ্ছে তার আরএন্ডডি এবং উদ্ভাবনী দল। তারপরই হচ্ছে প্রোডাকশন প্রসেস এবং কিউসি পদ্ভতি। এই দুই দলের উপর নির্ভর করেই ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে যে তারা কি পারবে, কতটুকু পারবে ও কিভাবে সেটা করবে এবং ক্রেতার কাছে সেটা কমিট করে।
কিন্তু ইদানিং কর্পোরেট জগকে সোশিয়প্যাথিক-সাইকোপ্যাখিক রাক্ষসেরা এসেছে তারা কোন ধারই ধারে না আরএন্ডডি, প্রোডাকশন এবং কিউসি এর ভেতরের সততার। তারা নিজেরা ঠিক করে কি কি থাকলে মানুষ সেটা কিনবে। তারপরের কাজ বিজ্ঞাপন আর চাতুরতা মিলিয়ে ক্রেতার জন্য রিয়ালিটি ডিসটর্শন ফিল্ড তৈরী করে প্রায় অসম্ভব সব কমিটমেন্ট করে অগ্রিম বিক্রি বাড়িয়ে হাওয়ার উপর প্রচুর টাকা করে ফেলা। তারপর সেই টাকার একাংশ খরচ করে কোনভাবে কাস্টমারকে বুঝ দেওয়া। সেটি শেষ হবার আগেই নতুন হুজুগ তৈরী করে নতুন করে অর্থ সংগ্রহ করা ও শেয়ারের দাম বাড়ানো। এইভাবে তারা প্রযুক্তি ব্যবসাকে পরিনত করেছে এক জুয়া খেলা যেটি শখের ইলেকট্রনিক গেজেটের জন্য গ্রহণীয় হতে পারে কিন্তু তাই বলে কি জীবন ঝুঁকির প্যাসেঞ্জার বিমানও?
বোয়িং ম্যাকডোনাল ডগলাসের সাথে মার্জার হবার পর তারা ঘোষনা করে এক জাদুর বিমান, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। সারা দুনিয়াতেই ধুঁকছে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি, হয়ত ওসামা বিন লাদেনের বিমানকে বোমা হিসাবে ব্যবহারের ফল এটা। এভিয়েশন কোম্পানীগুলো খুঁজছে কম জ্বালানীখরচের বহু দুরে যাত্রা করতে পারে এমন বিমান। এটিকেই কাজে লাগায় বোয়িং। তারা স্বপ্ন দেখায় ড্রিমলাইনারের যেটি হালকা (যেহেতু প্লাস্টিকের তৈরী বডি), যেটি তারা শ্রমিক ইউনিয়ন সামলাতে ও খরচ বাঁচাতে নিজেদের কারখানায় আর তৈরী না করে প্রথমবারের মত নানা দেশে সাবকন্ট্রাক্ট দিয়ে দেয়। আর সংযোজন করে আমেরিকার সবচেয়ে দারিদ্রের রাজ্য সাউথ ক্যারোলাইনার এক নতুন কারখানায় যেখানে রাস্তার থেকে মাতাল নেশাখোরদের নিয়োগ করে ড্রিমলাইনারের কাজে। নিজেদের সব রকম নিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রন ফেলে দিয়ে শর্টকাটে প্রোডাকশন শেষ করে এমনকি তাদের এতদিনের কারিগরী মান নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি পরিবর্তন করে। এতে মান এতই খারাপ হয় যে বিমান সরবরাহ করতে টানা তিন বছর দেরী হয়। সরবরাহের শুরুতেই ব্যাটারিতে আগুন ধরে দুটো বিমানে। জাপানে গ্রাউন্ডেড হয় সব ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। সেটির প্রকৃত সমাধান বের না করে (যেহেতু সমাধান করতে গেলে সময় যাবে এবং সেটি অনুমোদনে যাবে আরও সময়) পুরু ধাতব বাক্স তৈরি করে ব্যাটারীটি সিল করে দেওয়া হয়। আশ্চর্য্যজনকভাবে আমেরিকার এফএএ সেটি অ্যাপ্রুরভ করে। পরবর্তীতে দেখা যায় যে কর্মকর্তা এটি সহ আরও নানা রকম মান বিচ্যুতি অ্যপ্রুভ করেছিলেন তিনি দ্রুতই অবসর নেন এবং অবসরের পর আমেরিকার বিমান প্রস্তুতকারকদের সংঘে উচ্চপদে যোগদান করেন। নানা সমস্যায় বহু ক্রেতা বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের অর্ডার ক্যানসেল করে। এমনকি পরিশেষে তারা প্রথমে যে ডিজাইন ও উন্নত স্পেসিফিকেশন দিয়েছিল তার অনেকটাই বাতিল করতে হয় যার ফলে শুরুতে যে দাম ধরা হয়েছিল সেটা অনেক কমে যায়। শেষ পর্যন্ত বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার তৈরীতে বোয়িং এর লস হয় বিমানপ্রতি ৪৫ মিলিয়ন ডলার।
মজার ব্যাপার হলো জুলাই ৮, ২০০৭ এ প্রচুর ধুমধাম করে বোয়িংএর এভারেট ফ্যাক্টরিতে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার যে রোল আউট সেরিমনি হয় যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন “ড্রিমলাইনার হচ্ছে প্লেন অব দা ফিউচার”, কিন্তু সেখানে যে প্লেনটি রাখা ছিল, যাতে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রীর লোকজন উঠে বসে প্রশংসা করে, অর্ডার দেয় ও সাংবাদিকরা ছবি তোলে। পরে প্রমাণিত হয় সেটি আসলে কোন প্লেন ছিল না, ছিল একটি বিমানের সাজানো খোলস মাত্র।
এখানেই শেষ নয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা তৈরী করে নতুন ধান্ধা। ২০১১তে তারা ঘোষনা করে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স। যথন তারা শোনে এয়ারবাস নতুন একটি বিমান তৈরী করেছে যেটি হালকা, কম জ্বালানী খরচ করে ও অত্যাধুনিক যা আমেরিকান এয়ারলাইন্স ২০০ টির অর্ডার দিয়ে ফেলেছে, তখন বোয়িং এর হেড অফিসের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তারা তড়িঘড়ি পুরোনো ৭৩৭ বিমানের ডিজাইনকে রেনোভেট করে নানা মিথ্যা ঢেকে নতুন এই বিমানের ঘোষনা দেয়। নতুন এই বিমান এরপর দুটো আলাদা ক্রাশ করে (লায়ন এয়ার ইন্দোনেশিয়া ১৮৯ মৃত ও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ১৪৯ মৃত) ৩৩৮ জন প্যাসেঞ্জারের মৃত্যুর পর প্রায় চার’শ বিমান এখন গ্রাউন্ডেড এবং বোয়িং দুটো ক্রিমিনাল কেসের সন্মুখীন।
অক্টোবর ২৯, ২০১৮ তে লায়ন এয়ার ফ্লাইট ৬১০ বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনায় পড়ে ও ১৮৯ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়। এটি ছিল একটি দ্রুতগতীর নোজ ড্রাইভ। বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স এর ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলটেরা বলেন বিমানে যে এমন একটি সিস্টেম আছে (এমক্যাস অ্যান্টি স্টল সিস্টেম) যেটি বিমানের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়ে নিতে পারে সেটি আমরা জানতাম না, আমাদের কখনো জানানো হয় নি, এটি কোন ট্রেনিং এর অংশ ছিল না এবং কোন ম্যানুয়ালেও নাই। এই দুর্ঘটনার পরে বোয়িং পাইলটের দোষ দেয় এবং বোয়িং নিশ্চিত করে এটি বিমানের কোন সমস্যা নয় এবং তারা ফ্লিট চালু রাখতে সায় দেয় এবং এফএএও বিশেষ কিছু করে না। পাঁচ মাস পরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইটি ৩০২ ১৪৯ জন যাত্রী নিয়ে একই নোজ ড্রাইভ দিয়ে ৬ মিনিটের মধ্যে মরুভূমিতে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনার পরে আরও বহু তথ্য বের হতে শুরু করে ও যেখানে দেখা যায় দ্রুত ডেলিভারি, মান নিয়ন্ত্রনে ভায়োলেশন ও শর্টকার্টকে অনুমোদন দেওয়া এবং নিম্ন মানের উৎপাদন প্রক্রিয়াই শুধু কারন নয়। বিমানটির গুরুত্বপুর্ণ ডিজাইন ত্রুটির জন্য এমক্যাস অ্যান্টি স্টল সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে অনেকটা বাধ্য হয়ে যদিও প্রথম দুর্ঘটনাটির পর বোয়িং কতৃপক্ষ এটিকে পাইলট এরর বলে চালিয়ে দিয়েছিল। বাজার ধরতে পুরোনো ডিজাইনের বডিতে নতুন বড় আকারের ইন্জিন লাগানেতে যে সমস্যা হয় সেটা মেটাতেই এমক্যাস লাগানো হয় কিন্তু সেটা করা হয় গোপনে, এফএএএর সার্টিফিকেশন এড়াতে ও পাইলটদের ট্রেনিং এড়াতে। নিজ কোম্পানীর বিশেষজ্ঞ, দক্ষ কর্মী প্রকৌশলীদের, এমনকি পাইলটদেরও বাদ দিয়ে টাকা ও বিক্রয় বিভাগের রাক্ষুসে লোভকে বেছে নিয়েছিল কোম্পানিটি, যার ফল এই বিপর্যয়।
বেশ কিছুদিন আগেই আল জাজিরা বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার নিয়ে একটি ডক্যুমেন্টরি প্রকাশ করে। আর মাত্র কদিন আগে (এপ্রিল ২০, ২০১৯) নিউইয়র্ক টাইমস একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরী করে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের সাউথ ক্যারোলাইনা ফ্যাক্টরির নিম্ন মান, তথ্য গোপন করতে কতৃপক্ষের চাপ ও অনিময় নিয়ে। এপ্রিল ৩০, ২০১৯ এ আরও একটি রিপোর্ট বের হয় ৭৩৭ ম্যাক্স নিয়ে যেখানে বোয়িং এর একজন শেয়ার হোল্ডার বলেন “বিমানে কোন কিছু যে নির্ভরযোগ্য নয় সেটি জানার জন্য প্রতিবার ৩০০ লোকের মৃত্যুর প্রয়োজন যেন না হয়”।
কোন খোঁজ খবর না নিয়ে এই ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানই আমরা কত সাধ করে কিনে এনেছি আর প্রধানমন্ত্রী নিজে সেগুলোর নাম দিয়েছেন। এটা আশ্চর্য্য নয় যে ক্রয় প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে ১/১১ এর সামরিক সরকারের বিশুদ্ধ লোকজন দেশের দুর্নীতি কমাতে। তারা ভেবেছিল যেহেতু আমেরিকান কোম্পানীকে ঘুষ দেওয়া যায় না তাই তারা মহান।
পরিশেষে কোম্পানী ছোট অথবা বড় এটি বড় বিষয় নয়। সেটি কত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বা কত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে সেটিও বিষয় নয়, সেটির লক্ষ্য মানুষ কি না, সেটি সুস্থ আবেগের মানুষ কতৃক পরিচালিত কিনা এবং সেটি ব্যবসা করছে না কি জনগনের জান মাল আবেগ নিয়ে জুয়া খেলছে সেটি বিবেচনা করা সকলের দায়ীত্ব।
এমক্যাস অ্যান্টি স্টল সিস্টেম ও ধোকাবাজীর বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্সঃ
সমাজ ও মানুষের জীবনযাপন যতই পরিবর্তিত ও কৃত্রিম হয়ে উঠছে, মনোবিজ্ঞান – বিষয়টা ততই জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। এতই জটিল হয়ে উঠছে যে অনেক মনোচিকিৎসক আর সঠিক ডায়াগনোসিসের গোলক ধাঁধায় পড়তে চাচ্ছেন না, লক্ষন দেখে অভিযোগগুলো কমানের চেষ্টা করছেন। দর্শন যখন সারা দুনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো শুরু হয়, ঝানু ঝানু সব তাত্বিকেক কচকচানিতে দর্শন বিষয়টাও এমনই জটিল হয়ে উঠতে থাকে। পরিস্থিতি এমনই হয়ে ওঠে যে মেধাবী ছাত্ররা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই বুঝছে না। শোপেনহাওয়ার সহ একদল তরুণ দার্শনিক তখন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তারা এইসব তাত্বিক কচকচানী অস্বীকার করে বসে। তারা বলে বিষয়গুলো এত জটিল নয়, অলস মস্তিষ্ক সরল বিষয়গুলোকে নিয়ে জটিল গিঁঠ পাকিয়ে ফেলছে যেটি খোলার ইচ্ছা তাদের মোটেও নাই।
বাস্তবতা নিয়ে কাজ করা পদার্থবিজ্ঞানীরা সেদিকে কখনও যায় নি। তারা গেছে উল্টো দিকে। দুনিয়ার সকল ক্রিয়াশীল বলকে তারা চারটি বলে সংক্ষিপ্ত করে এনেছে। খুঁজে ফিরছে একীভূত সমীকরন যেটি দিয়ে দুনিয়ার সকল অংক কষে ফেলা যায়। মনোবিশ্লেষক গুস্তভ ইয়ুং মনে করতেন অবচেতনের সরল কিছু বিষয় আসলে জটিলতম ব্যক্তিরও চরিত্র তৈরী করে। তিনি বলতেন কিছু একটা আছে আমাদেরই মনের মধ্যে যা সার্বিক বিচার করতে পারে। আমারও মনে হয় মনের গহীণ অন্তস্থলের কিছু ড্রাইভ, প্রেষণা আসলে আমাদের চালিত করে। সেটি যদি ব্যক্তির প্রতিযোগীতা, হিংসা, আত্মম্ভরীতা এইসব নেতিবাচক আবেগকেন্দ্রিক হয়, তাহলে তার ভাল কাজ, মন্দ কাজ দুটোই আসলে ঘুরে ফিরে মন্দের দিকেই ধাবিত হয়। আর যদি সেটা স্রেফ কিছু করার আনন্দ, মানব কল্যানের সামগ্রিকতায় অংশগ্রহণ এইসব ইতিবাচক বিচারবোধ থেকে হয়, তখন তার ভাল কাজ, মন্দ কাজ দুটোই পরিশেষে কল্যানের পাথেয় হয়।
নিউরোসাইন্টিস্টরা এখন বলছেন মানব মস্তিষ্ক একটি ফাংশনাল কম্পিউটিং মেশিন, এই ধারণা একান্ত ভুল। মানব মস্তিষ্ক আসলে একটি জীবন্ত অর্গানিজম। যে পরিস্থিতিতে সে থাকে, তার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় সে নিজেই নিজের অংশগুলোকে গঠন করতে পারে বা বিলোপ করে ফেলতে পারে অর্থাৎ প্যাথলজিক্যালি পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই নেতিবাচক আবেগ আর হীনতা বোধ যাকে প্রতিযোগীতার জিতিয়ে দেয়, তার জয় অচীরেই আক্মঘাতী দুর্দশা ডেকে আনে। নির্লজ্জ ইগো ও জয়ের ইচ্ছা থেকে যে উনয়ন, সেটা ভেঙে পড়তে পারে সহজেই।
২০১০ সালে বোয়িং যখন তাদের ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের কারিগরী সমস্যা ও ডেলিভারি ডিলে নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে তখনই তারা খবর পায় যে ফরাসী বিমান কোম্পানী এয়ারবাস নতুন একটি দুর যাত্রার বিমানের ঘোষনা দিয়েছে যেটি ২০ শতাংশ কম জ্বালানী খরচ করবে এবং প্যাসেঞ্জার প্রতি প্রায় ২৫ শতাংশ কম খরচে সার্ভিস দেবে। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির যে আর্থিক দুর্দিন চলছে তাতে এই প্রস্তাব খুবই লোভনীয় এবং তারা জানতে পারে আমেরিকান এয়ারলাইন্স এর মধ্যেই ২০০টি এয়ারবাস ৩২০ নিও এর অর্ডার কনফার্ম করেছে। সিএফএম ইন্টারন্যাশনালের (আমেরিকা ফ্রেঞ্চ জয়েন্ট ভেঞ্চার) লিপ (LEAP) ইঞ্জিন ব্যবহার করে এয়ারবাস ৩২০ নিও তৈরী করা হয় যেখানে এই নতুন ধরনের ইঞ্জিন জ্বালানী সাশ্রয়ি। এই খবরে ঝড় বয়ে যায় এর মধ্যেই লোকসানে যাওয়া বোয়িং হেড অফিসে। তাদের যে স্বপ্ন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইন নিয়ে, সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে। তড়িঘড়ি তারা ডিজাইনারদের নিয়ে বসে যে এটা ঠেকাতে হবে। কিন্তু নতুন বিমান ডিজাইন করা ও সেটার সার্টিফিকেট পাওয়া দীর্ঘ সময়ের ব্যপার।
অদ্ভুত কিছু সিদ্ধান্ত নেন বোয়িং প্রধান কর্মকর্তা যেটা প্যাসেঞ্জার বিমান ইন্ডাস্ট্রিতে বিরল। তারা আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সাথে কথা বলে। কিন্তু নতুন জ্বালানী সাশ্রয়ী লিপ ইঞ্জিন ছাড়া আমেরিকান এয়ারলাইন্স কোন বিমান কিনতে রাজি হয় না। যেহেতু হাতে সময় নাই তাই তারা তাদের প্রচলিত বোয়িং ৭৩৭ কে মডিফাই করার তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত দেয় ও বলে আমরা লিপ ইঞ্জিনই দেব, তাহলে কি আমাদের অর্ধেক অর্ডার দিবা? আমেরিকান এয়ারলাইন্স তখন রাজি হয়। কিন্তু সমস্যা হলো লিপ ইঞ্জিন প্রচলিত বোয়িং ৭৩৭ ইঞ্জিনের চেয়ে আকারে বেশ বড় যেটি ৫৩ বছরের পুরোনো ডিজাইন ৭৩৭ এ লাগাতে গেলে ইঞ্জিন ভূমীতে ঠেকে যায়। এটি ফিট করতে গিয়ে তারা ইঞ্জিনগুলো উপরে উঠিয়ে ও সামনের দিকে সরিয়ে লাগায়। ফিউজিলাজের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন পরিবর্তন না করে এই মডিফিকেশনে বিমানের ভরকেন্দ্র বিচ্যুত হয় ও উড়তে গেলে বিমানের নাক উঁচু হয়ে যায়। এটি সমাধান করতে তারা বিমানের স্ট্রাকচারাল ও অ্যারেডায়নামিক পরিবর্তনের ঝামেলায় না গিয়ে একটি ইলেকট্রনিক সিস্টেম ইনস্টল করে এমক্যাস (Maneuvering Characteristics Augmentation System নামে।
তারা যে স্ট্রাকচারাল সমস্যা সমাধানে একটি সম্পুর্ন অভিনব ও ঝুঁকিপর্ণ একক সেন্সর নির্ভর একটি ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা সংযোজন করেছে সেটি সম্পুর্ণ চেপে যায় সবার কাছ থেকে। শুধু তাই নয়। নতুন এই বিমান চালনায় তারা ৭৩৭ পাইলটদের নতুন কোন সিমুলেটর ট্রেনিং লাগবে না এটিও জানায়। পাইলটদের সিমুলেটর ট্রেনিং একটি খরচসাপেক্ষ বিষয়। নতুন বিমান কিনলে এটিকেও খরচের খাতায় ধরতে হয়। সিমুলেটর ট্রেনি এর কথা চেপে যেতেই তারা পুরো এমক্যাসের কথা এয়ারলাইন্স বা কোন পাইলট ট্রেনিং ম্যানুয়ালে বলেনি যদিও পাইলট ট্রেনিং মানে ছিল পাইলটদের দেওয়া ৫৬ মিনিটের একটি আইপ্যাড কোর্স যেটি তারা কফি খেতে খেতে দেখে নেবে।
বোয়িং জানত যে নতুন ইঞ্জিন যেখানে লাগানো হয়েছে তাতে ধীর গতির উড্ডয়নে বিমানে স্টল হতে পারে যেটি হলো উড়তে উড়তে বিপজ্জনক ভাবে নাক উপরে উঠে লিফট বা ভেসে থাকার ক্ষমতা হারানো। বহু পাইলট ও বিমান বিশেষজ্ঞ কম গতিতে ভূমীর কাছাকাছি এই ধরনের আনস্টেবল ডিজাইন ও এমক্যাসের মত ঝুঁকিপুর্ন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় সেটিকে মোকাবেলা করা মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে করছেন। সবার উপরে বিষয়টি গোপন রাখা ও কোন গোলযোগ হলে কিভাবে সেটি পাইলট মোকাবেলা করবে সেই তথ্য না দেওয়াকে সরাসরি ঠকবাজি বলে মনে করছেন।
অক্টোবর ২৯, ২০১৮ তে লায়ন এয়ার ফ্লাইট ৬১০ বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স যখন দুর্ঘটনায় পড়ে তার পর প্রথমে বোয়িং বলে এটি পাইলটের দোষ। পরে যখন এমক্যাসের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায় তখন বোয়িং বলে এটি এমক্যাসের সফটওয়্যার ত্রুটি যেটি তারা আপডেট করেছে। কিন্তু আসলে এটি কোন সফটওয়্যার ত্রুটি নয়, এটি একটি স্ট্রাকচারাল ফ্ল এর গোঁজামিল সমাধানের ফল। ১ম দুর্ঘটনার পর বোয়িং বলে তারা নির্দেশনা পাঠিয়েছে যাতে একইরকম সমস্যা হলে পাইলট সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু ২য় দুর্ঘটনা, পাঁচ মাস পরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইটি ৩০২ প্রমান করে আসলে এমক্যাসে নোজ ড্রাইভ থেকে বের হবার কোন ব্যবস্থা রাখা নাই।
শুধু এইটুকুই নয়। সংশ্লিষ্ট সকলের ধারনা শুধু ইঞ্জিন সংক্রান্ত ডিজাইনে গোঁজামিল নয়, আরও অনেক কিছু বের হবার আছে। এর সাথে দায়ী নিশ্চই আমেরিকার এফএএ যারা বিমানের মান ও নিরাপত্তার সনদপত্র দিয়ে থাকে। বড় বড় টাকার খেলায় আমেরিকাতে বোয়িং আর সরকার যেন মিলেমিশে গেছে।
শুরুর কথায় ফিরে আসি। প্রতিযোগীতা, দাপট আর টাকা যদি একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, মানুষ, যারা ঐ বিমান তৈরী করছে ও তাতে যাত্রী হচ্ছে তারা যদি হয় অবহেলিত ও মুল্যহীন তাহলে পতন এইভাবেই হয়। এটাই কি বোয়িং এর শেষ?