বেগুন নিয়ে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক খবরগুলো পড়লে দেখা যাবে বেশিরভাগেই থাকে এখন বাংলাদেশের নাম। এর কারন বাংলাদেশে চাষ শুরু হওয়া জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড (GE) বিটি বেগুন (BT-Brinjal)। এটি উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রথম জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ফসলের মাঠ পর্যায়ের উৎপাদন ও বিপনন। যেখানে আমাদের বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় প্রক্রিয়ায় কোন ক্যাটাগোরাইজেশন নাই, অর্থাৎ কেনার সময় কোন বেগুনটি প্রাকৃতিক এবং কোনটি জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড এটি ক্রেতার জানা কোন উপায় নেই।
এখানে খেয়াল করত হবে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড (GE) কিন্তু সাধারণ জেনেটিক্যালি মডিফাইড (GMO) ফসল নয়। সাধারণ জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফসলে ফসলের বীজকে কৃত্তিম উপায়ে মিউটেট করা হয়ে থাকে। যেমন কোন ফসলের বীজ নিয়ে সেটায় পারমাণবিক বিকিরণ দিলে সেটায় নানা ধরনের জেনেটিক মিউটেশন হয় যার বেশিরভাগই বীজটির জন্য ক্ষতিকর বা অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় জিন পরিবর্তনের মধ্যে এমন একটি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে যেটা উক্ত ফসলটিতে একটি ইতিবাচক গুণ এনে দিতে পারে। এভাবেই আমাদের নানা উচ্চ ফলনশিল বা বিশেষ জাতের ধান, সবজি, ফল ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে।
কিন্তু জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ফসল হল ল্যাবরেটারিতে জিন স্লাইসিং এর মাধ্যমে কোন বিশেষ জাতের ফসলের ডিএনএতে অন্য কোন উদ্ভিদ এমনকি প্রাণীর জিন সংস্থাপন বা প্রতিস্থাপন। বিটি বেগুনের BT এসেছে Bacillus thuringiensis নামের একটি মাটির ব্যাকটেরিয়ার নাম থেকে। এই ব্যাকটেরিয়ায় cry1-Ac নামক একটি জিন থাকে। এই cry1-Ac জিন একটি কীটনাশক প্রোটিন তৈরি করে যা কিছু নির্দিষ্ট পতঙ্গের লার্ভা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী যা বেগুন গাছের কান্ড, পাতা এবং ফল খেয়ে ফেলতে পারে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে মাটির ব্যাকটেরিয়ার এই cry1-Ac জিনটি বাংলাদেশের কয়েকটি বেগুনের জিনে সংস্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। দাবী করা হচ্ছ এই বেগুনে পোকার আক্রমণ হবে না বা অনেক কম হবে। কারণ cry1-Ac জিন সেই কীটনাশক প্রোটিন তৈরি করবে যা কীটনাশক হিসাবে কাজ করবে।
সমস্যা হচ্ছে এটি একেবারে নতুন ধরণের একটি জিন প্রযুক্তি যেখানে সবজি জীবিত প্রাণীর জিন নিয়ন্ত্রণ সহ বেড়ে ওঠে। বিষয়টি খুবই বিতর্কিত তাই ভারতের কোম্পানী মহারাষ্ট্র হাইব্রিড কোম্পানি, যেটা মাহাইকো নামে বেশি পরিচিত, সেটা ২০০৫ সাল থেকে আমেরিকার কর্পোরেট জিন প্রযুক্তি কোম্পানী মনসানটো থেকে লাইসেন্স নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হয়ে এই বেগুনে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ভারতে শুরু করে। কিন্তু জিন প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক, ভারতের কৃষক, গবেষক ও এনজিও অ্যাকটিভিস্টদের বিরোধীতার কারণে তারা সেখানে এটি মাঠে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তিতে ভারতের হাইকোর্ট মাহাইকো-মনসানটোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অভিযোগ নিয়ে মামলার অগ্রততির আদেশ দেয়। ২০১৩ সালে ফিলিপাইনে সেখানকার আদালত বিটি বেগুন চাষে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
ভারতে ব্যর্থ হলে ২০১৩ সালে মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় মনসান্তোর প্রযুক্তি লাইসেন্স নিয়ে মাহাইকোর স্বত্ব মেনে বাংলাদেশের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এই বিটি বেগুনের মাঠ প্রয়োগ শুরু করে। ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবার বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় জিনগত ভাবে রূপান্তরিত বিটি বেগুন চাষের অনুমোদন দেয়। ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিটি বেগুনের চারটি জাত গাজীপুর, পাবনা, রংপুর ও জামালপুর অঞ্চলের ২০ জন কৃষকের হাতে তুলে দেন। উল্লেখ্য যে বিটি জিন ও বিটি জিন প্রযুক্তি এর মেধাসত্ব ও মালিকানা মার্কিন বহুজাতিক কোস্পানি মনস্যান্টো-মাহাইকোর। বাংলাদেশের জনগণ এখানে গিনিপিগ মাত্র। আমাদের মানুষদের উপর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরীক্ষা সফল হলে লাভবান কর্পোরেট সিড জায়ান্টরা যারা এর এর মেধাসত্ব ও মালিকানার অধিকারী তারা সারা দুনিয়ায় এটা নি ব্যবসা শুরু করবে।
দৃশ্যতঃ বেগুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষক মহলে দুটি দল। একটি আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের ও সংযুক্ত দেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফিড দ্যা ফিউচার ও ইউএসএআইডি প্রণোদিত দল। আর একটি জেনটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জিএম ক্রপ বিরোধী এবং শষ্য ও ফসল নিয়ে সেটার পেটেন্ট ও মালিকানা আন্তর্জাতিক সিড কর্পোরেটে যাবার বিরোধী দল। এই দুটি দলই শক্ত এবং লড়াইটি কঠিন। এর পেছনে আছে প্রচুর টাকার খেলা এবং লক্ষ লক্ষ কৃষকদের স্বার্থ এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাংলাদেশে কোন বায়োসেফটি আইন নেই, কৃষক স্বার্থ দেখার কোন সংগঠন নেই, জনস্বাস্থ্য গবেষণা বিহীন এবং প্রতিরোধমূলক জনস্বাস্থ্য চরম অবেহেলিত, আইন আদালত শক্তিশালী ও স্বাধীন নয় এবং এটা এখন একটা ছদ্ম পুলিশ রাষ্ট্র যেখানে রাজনীতিবীদ ও সরকারী কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত স্বার্থেও যা চায় তাই করতে পারে। এমন দেশে জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ফসলের গবেষণা করা অনুচিত এবং অনৈতিক যেটা সবার অজান্তে বড় ধরণের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। একদিকে সেটা যেমন জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে অপর দিকে সেটা কৃষকদের প্রাকৃতিক বীজ হারিয়ে কর্পোরেট বীজ নির্ভর করে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ ব্যপক বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পেশাজীবিদের মধ্যে। বিটি বেগুনের ব্যবাসায়িক নেতৃত্ব এবং স্বত্ব মহারাষ্ট্র হাইব্রিড কোম্পানির। জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ফসলের এই মাঠ প্রয়োগ ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে। ভারতীয় কোম্পানী যেখানে ভারতেই প্রযুক্তিটি প্রয়োগে অক্ষম সেখানে বাংলাদেশে কেন এটি প্রয়োগ করা হবে এই যুক্তি ভারত বিদ্বেষকে আরো উসকে দিলে সেটা অযৌক্তিক নয়। বিটি বেগুনেও পোকা লাগে এবং সেই পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহৃত হয় এবং সেই কীটনাশকে ক্যনসার হতে পারে এটা বিটি বেগুনকে ভিত্তি করে একটি ভারতীয় কোম্পানী বিরোধী এজেন্ডা হতে পারে। এটি আরো বেগবান হতে পারে এই কারনে যে ক্ষমতাসীন দল বিটি বেগুনকে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করছে সেটার ঝুঁকিকে তোয়াক্কা না করেই।
এ পর্যন্ত আলেচনা করা হয়েছে গবেষনায় ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠিস্বার্থ, গবেষণার অর্থনীতি, কর্পোরেট উদ্দেশ্য এবং গবেষণার পেছনের দলীয় রাজনৈতি ও ভূরাজনীতি নিয়ে। এগুলো সবই গবেষণার রাজনৈতিক অংশ। এর সাথে গবেষণার বৈজ্ঞানিক বা টেকনিক্যাল অংশের কোন সম্পর্ক নেই। গবেষকেরা কেউ সচেতনে অথবা কেউ অবচেতনে অথবা কেউ না বুঝেই এই রাজনীতির খোলায়াড় বা অংশ হয়ে যান। নোবেল পুরষ্কার পাওয়া বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরাও বিজ্ঞানে নায়ক হয়েও বিজ্ঞানের রাজনীতিতে খল নায়ক হয়ে যেতে পারেন যার অনেক উদাহরণ আছে।
১৯০৫ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ফিলিপ লেনার্ড ক্যাথোড রশ্মির উপর তার কাজের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। চৌদ্দ বছর পর আরেক জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী জোহানেস স্টার্ককে পারমাণবিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রতত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। দুই নোবেল বিজয়ী সেই সময় অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তারা ক্রমেই নাৎসি বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন। যারা ছিলেন উগ্র ইহুদি বিদ্বেষী চরমপন্থী যারা আলবার্ট আইনস্টাইন এবং অন্যান্য ইহুদি বিজ্ঞানীদের ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তাদের ব্র্যান্ড "আর্য পদার্থবিদ্যা" জার্মানি এবং সারা বিশ্বের উপর চাপিয়ে দেবার টেষ্টা করেছিলেন।
জার্মান রসায়ন বিজ্ঞানী ফ্রিটজ হাবে ১৯১৮ সালে নোবেল পুরষ্কার পান হাবে-বশ প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের জন্য যা কারখানায় নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন থেকে অ্যামোনিয়া উৎপাদনের পথ খুলে দেয় যার ফলে রাসায়নিক সার উৎপাদন সম্ভব হয় যা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধা দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচিয়েছে। অথচ এই ফ্রিটজ হাবে ১৯১৪ সালে ৯৩ জন বিজ্ঞানী নিয়ে বিশ্বযুদ্ধের পক্ষে একটি বিবৃতি তৈরি করেন। তিনি ১৫০ বিজ্ঞানী ও ১৩০০ প্রযুক্তিবিদ নিয়ে একটি দল গঠন করেন রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য। তখন এক আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে ছুঁড়ে মারা অস্ত্রের (প্রজেক্টাইল) মাধ্যমে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ নিষিদ্ধ ছিল। ফ্রিটজ হাবে বিরোধী সৈন্যদের ট্রেঞ্চে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং সেই অস্ত্র প্রয়োগে হত্যা পর্যবেক্ষণ করতে তিনি নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে যান। বেলজিয়ামের ইপ্রেসের দ্বিতীয় যুদ্ধে জার্মান সামরিক বাহিনীর সাথে তিনি সেই অস্ত্রপ্রয়োগ তদারকি করেন। তাঁকে জার্মান মিলিটারির ক্যাপ্টেন পদ দেওয়া হয়। তিনি সূচনা করেন রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ যার ফলে মৃত্যু হয় হাজার হাজার মানুষের। সেই কারণে তাকে রাসায়নিক অস্ত্রের পিতা বলা হয়।
অনেক বিজ্ঞানী তার রাজনৈতিক অবস্থান সারা জীবনই বুঝতে পারেন না আবার অনেকে পারেন। অনেকে পারেন শেষ জীবনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তার সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে যখন আমেরিকার তৈরি পারমানবিক বোমা প্রস্তুত, সেই ১৯৪৫ সালে জাপানে পারমানবিক বোমা ফেলা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবার কথা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের। কিন্তু নতুন আসা ট্রুম্যান নিজে সে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বা সেটা জেনারেলদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে তিনি একটি ইন্টারিম কমিটি তৈরী করে তাদের ভার দেন বোমা নিয়ে কি করা হবে সেটা ঠিক করতে। কারন প্রেসিডেন্ট দেখেছিলেন এই বোমার যুদ্ধে তেমন একটা প্রভাব নাই কারন জাপান এর মধ্যেই কাবু, তারা যে কোন সময় আত্মসমর্পন করবে।
ইন্টারিম কমিটি সেই ভার দিয়ে দেয় মূলতঃ সায়েন্টিফিক প্যানেলের উপর যারা উচ্চ ক্ষমতার একটি গোপন বিজ্ঞানীদের দল। সেই দলের বিজ্ঞানীরা তখন ভেবেছিল যেটা বানাতে দুই বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে (যা বর্তমান মুল্যমানে ৩০ বিলিয়ন) সেই বোমা না ফাটালে মানুষ বিদ্রুপ করবে। তাই তারা সিদ্ধান্ত দিল বোমা ফেলার এবং এমনভাবে ফেলার যাতে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা যায়। দু একজন বিজ্ঞানী যদিও বলেছিল জাপানকে আগে থেকেই বলে কোন এক জনমানবশুন্য দ্বীপে বোমাটা ফাটানো হোক যাতে জাপানকে ও সারা দুনিয়াকে একটা শিক্ষা দেওয়া যায় আবার অসামরিক লোক মারতে না হয়।
সায়েন্টিফিক প্যানেল এতে বাধ সাধল। তারা বলল এত ঢাক ঢোল পিটিয়ে মঞ্চ তৈরী করে বোমা ফেলার পর তারপর যদি বোমা না ফাটে? তাহলে তো আরও বেশি হাসির পাত্রে পরিণত হব আমরা। তারা বৈজ্ঞানিক হিসাব নিকাশ করে বলল বোমা ঘনবসতিপূর্ণ শহরেই ফেলতে হবে এবং এমন উচ্চতায় ফাটাতে হবে যাতে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা যায়। সেটা ফেলতে হবে তখন যখন যথেষ্ট মানুষ রাস্তায় বা বাইরে, শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে তখন এবং গোপনে, কাউকে না জানিয়ে। এই সায়েন্টিফিক প্যানেলে ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার, রিচার্ড ফাইনম্যান, এনরিকো ফার্মি, আর্থার কম্পটন, আর্নেস্ট লরেন্সের মত মেধাবী বিজ্ঞানীরা।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের সেরা শিক্ষক ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান তার নিজের জীবনের এই সামাজিক মানবিক অনুভুতিহীনতার কথা একাধিকবার বলেছেন। তিনি তার একটি বইতে লিখেছেন এমন: জাপানের হিরোশিমায় যখন পরমানু বোমা ফেলা হয় তখন ম্যানহাটন প্রজেক্টে বেশ রাত। সফলভাবে বোমা বিষ্ফোরিত হলে সেখানকার মানুষের পরিণতি কি হবে সেটা প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরা ঠিকই জানতেন। হিরোশিমার অগণিত ঝলসে যাওয়া নারী, শিশুদের ভোগান্তির কল্পছবি সেই বিজ্ঞানিদের মনে কোন হাহাকার তৈরী করেনি। সারা রাত তারা পার্টি করেছেন সফলতার আনন্দে। অনুপ্রাণিত হয়ে নিয়োজিত হয়েছেন আরও বেশি বিধ্বংশী বোমা উদ্ভাবনে।
ফাইনম্যান আরো লিখেছেন অনেকটা এরকম: হিরোশিমার বোমা ফেলার ঘটনার বহু বছর পর একদিন তিনি ও তার বোন কফি পান করছেন নিউইয়র্কের এক ক্যাফেতে এক সুন্দর বিকেলে। হঠাৎ তার মনে হলো এই মুহুর্তে এখানে এক পারমানবিক বোমা পড়লে কি হবে। ভেবে শিউরে উঠলেন তিনি।
সুতরাং গবেষনার রাজনীতি, বিজ্ঞানীর প্রতিক্রিয়াশীলতা ও তার গবেষণার উদ্দেশ্য এবং তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত মেধা দুটো বিচ্ছিন্ন বিষয়। অসাধারণ মেধাবী বিজ্ঞানীর গবেষণার উদ্দেশ্য ভাল নাও হতে পারে। সে অনুপ্রাণিত হতে পারে হুজুগে রাজনীতি, জাতিগত ঘৃণা, অর্থ ক্ষমতার লোভ বা ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠিস্বার্থ, গবেষণার অর্থনীতি, কর্পোরেট উদ্দেশ্য এবং গবেষণার পেছনের দলীয় রাজনৈতি ও ভূরাজনীতির প্রভাবে।