EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ ও একই মডেলে বাংলাদেশ

ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি – একটি ওর্স্ট কেস সিনারিও -১

ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষনৌতে গতকাল বৃহস্পতিবার সেদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডারস কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিয়ে 'অপ্রত্যাশিত’ ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ। রাজনাথ সিং বলেন, ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। শান্তি রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এসময় তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সামরিক কমান্ডারদের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণের পরামর্শ দেন। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।

বাংলাদেশে মব ক্যু বা ক্ষনিকের উত্তেজনায় লিঞ্চিং অব দ্যা স্টেট হয়েছে যেটি ক্রোধে উন্মত্ত জনতার ক্ষণিকের আবেগে রাষ্ট্রকে খুন করার ঘটনা, যেটি অর্কেস্ট্রেটেড বা পরিচালিত হয়েছে বিদেশী রাষ্ট্র ও তাদের গুপ্ত সংগঠন দ্বারা, সেটিই ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই উদ্বেগের কারণ।

সাম্প্রতিক বিশ্বে এইরকম মার্কিন রেজিম চেঞ্জের ঘটনাগুলোর দুই রকম উদাহরণ আছে। একটি হল নিছক আরব স্প্রীং যেখানে দেশগুলোতে প্রথমে মার্কিন পন্থী সরকার আনাই মূল লক্ষ্য ছিল। তার পর সেখানে ক্যু, পাল্টা ক্যু হয়ে নানা অরাজকতা ও সন্ত্রাসবাদের উদ্ভব হয়েছে, ধ্বংস হয়ে গেছে ওই সব দেশের রাষ্ট্রকাঠামো, শিল্প, কলকারখানা। ধ্বংস হয়েছে অর্থনীতি। মানুষের জীবন চলে গেছে সীমাহিন দুর্ভোগের অতলান্তে।

অপর উদাহরনটি হল সেই সব দেশের যেগুলোর সমাজকে পদ্ধতিগতভাবে অপরাধীকরণ করা হয়েছে। যেমন রাষ্ট্রের কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় জেল থেকে অপরাধী মুক্ত করা, দাগী ও সন্ত্রাসীদের জামিন দেওয়া, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের স্বাধীনতা দেওয়া ইত্যাদি। এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো দেশে মিলিশিয়া বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি করা। উদ্দেশ্য দেশের ভেতরে যে কাজ রাষ্ট্রের কোন কোন প্রতিষ্ঠান করতে পারে না, উক্ত মিলিশিয়াদের দিয়ে সেই কাজগুলো করানো।

সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি অথবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করা বা প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে যুদ্ধে জড়ানো এই ধরনের কর্মকান্ডের লক্ষ্য। সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ প্রস্তুতিতে এমন উদাহরণ দেখা গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক উদাহরণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের গুপ্ত সংগঠনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউক্রেনের সমাজকে অপরাধীকরণ করা ও সে দেশে ফার রাইট ও নাৎসী মিলিশিয়া তৈরি করা। এটি বুঝতে আমরা ইউক্রেন সঙ্কটের ঘটনাপ্রবাহকে একটু দেখি।

ইউক্রেন সংকট: একটি বিশদ কালানুক্রমিক বিশ্লেষণ:

১. ভূমিকা এবং প্রাথমিক প্রেক্ষাপট

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, ইউক্রেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু এর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, যা পূর্বদিকে রাশিয়া এবং পশ্চিমদিকে ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত, ইউক্রেনকে একটি সংবেদনশীল স্থানে পরিণত করে। ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে একটি অংশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা পশ্চিমের দিকে দিকে ঝুঁকেছিল, যেখানে আরেকটি অংশ রাশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের কারণে পূর্বমুখী ছিল অনেকটা আমাদের সাথে ভারতের পশ্চিম বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বন্ধনের মত।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের চুক্তি (১৯৯০-এর দশক)

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া এবং ইউক্রেন বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেন তার পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ ত্যাগ করে এবং বিনিময়ে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা সম্মান করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

২. ২০০৪: অরেঞ্জ বিপ্লব

যদিও ইউক্রেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল, তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি তখনও গভীরভাবে বিভক্ত ছিল। পশ্চিম ইউক্রেন মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চেয়েছিল, যেখানে পূর্ব ইউক্রেনের জনগণ রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল যারা রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে।

২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মূলত দুই প্রার্থী মুখোমুখি হন: পশ্চিমাপন্থী ভিক্টর ইউশচেঙ্কো এবং রাশিয়াপন্থী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। এই নির্বাচনটি ছিল ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউশচেঙ্কো পশ্চিমা মডেলের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন, অন্যদিকে ইয়ানুকোভিচ রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে ছিলেন।

নভেম্বর ২০০৪ সালে নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডের ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং তাতে ইয়ানুকোভিচের বিজয় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, ইউশচেঙ্কো এবং তার সমর্থকরা নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। এ অভিযোগগুলো বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট দেওয়া, ভোটারদের হুমকি দেওয়া এবং ফলাফল পরিবর্তনের মতো অনিয়মের উপর ভিত্তি করে ছিল।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই, কিয়েভের স্বাধীনতা স্কয়ারে হাজার হাজার ইউশচেঙ্কো সমর্থক বিক্ষোভ শুরু করে। তারা কমলা রঙের পোশাক এবং পতাকা ধারণ করে এই বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে নির্বাচন করে, যা ইউশচেঙ্কোর প্রচারের রঙ ছিল। বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে কিন্তু দৃঢ়তার সাথে নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠানের দাবি জানায়।

বিক্ষোভ দ্রুতই কিয়েভ থেকে দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক মহলও ইউক্রেনে চলমান পরিস্থিতির প্রতি নজর দেয়। বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউশচেঙ্কোর দাবির প্রতি সমর্থন জানায় এবং ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষকে জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানাতে চাপ দেয়।

বিপুল জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, ইউক্রেনের সুপ্রিম কোর্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে এবং ডিসেম্বর ২০০৪ সালে পুনঃনির্বাচনের নির্দেশ দেয়। পুনঃনির্বাচনে ভিক্টর ইউশচেঙ্কো বিজয়ী হন এবং তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

অরেঞ্জ বিপ্লব ইউক্রেনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। ইউশচেঙ্কোর জয় ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে, এই বিপ্লব রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাশিয়া এই বিপ্লবকে একটি পশ্চিমা সমর্থিত অভ্যুত্থান হিসেবে দেখে এবং তাদের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়।

৩। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম চুক্তির লঙ্ঘন

২০০৮ সালে ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থী সরকারের সম্পর্কের উন্নতি এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন হয়। রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে, এটি বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম এবং রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে থাকা সমঝোতার লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়। রাশিয়া মনে করে যে, ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।

২০১৪ সালে ইউরোমাইদান আন্দোলন এবং এর পরবর্তী সরকার পরিবর্তনের ফলে, রাশিয়া দাবি করে যে পশ্চিমা শক্তি বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর ফলে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে এবং দোনবাস অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতে শুরু করে। রাশিয়া মনে করে যে, পশ্চিমা শক্তির প্ররোচনায় ইউক্রেন বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামের শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া দাবি করে যে, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে ফার-রাইট এবং অ্যানার্কিস্ট গোষ্ঠীগুলোর উত্থান, পশ্চিমা শক্তির সমর্থনে সংঘটিত হয়েছে এবং এগুলোর মাধ্যমে রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাশিয়ার মতে, ক্রিমিয়া দখল এবং দোনবাসে সামরিক সহায়তা ছিল তার আত্মরক্ষার একটি অংশ, যাতে রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে ন্যাটোর হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা যায়। এই প্রেক্ষাপটে, রাশিয়ার দৃষ্টিতে ১৯৯০-এর দশকের চুক্তিগুলো এবং তাদের লঙ্ঘন গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা দেয়, যা বর্তমান সংকটকে আরও তীব্র করেছে।

অন্য পর্বগুলো:

 

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।