খ্যাতনামা রাশিয়ান লেখক লিও টলস্টয় ১৮৮৪ সালে তাঁর “হোয়াট আই বিলিভ” গ্রন্থে দশম পরিচ্ছদে লিখেছেন, “চার্চের মতবাদ খ্রিস্টের শিক্ষার সঙ্গে এতটাই বিপরীত যে একজনকে বেছে নিতে হয় যে সে চার্চের অনুসরণ করবে, না কি খ্রিস্টের? আমি পরেরটি বেছে নিয়েছি, এবং এই পছন্দ আমাকে চার্চের কর্তৃত্ব, তার ধর্মানুষ্ঠান, আচার-অনুষ্ঠান এবং ঐশ্বরিক সত্যের দাবি প্রত্যাখ্যান করতে পরিচালিত করেছে।”
আমি বহু দিন ধরেই বর্তমানের ইসলামের সমালোচনা করে লিখছি যে এটি একটি উয়োক মাইন্ড ভারাস যেটি সরাসরি কোরআন ও ইসলামের মত ও মূল্যবোধের বিপরীত দিকে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে। ইসলাম ধর্মে শয়তানের যে চরিত্র আঁকা হয়েছে এবং যেটা থেকে বিযুক্ত থাকা একজন মুমিন বা আলোকিত মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য, প্রচলিত ইসলাম সেই শয়তানের পথেই মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানের ইসলামের যে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, সেটা হয়ে উঠেছে এই ইসলামী আদর্শের বিপরীত মানসিকতার ইসলাম সমর্থক মানুষ তৈরির কারখানা।
নবী মুসার ইহুদীবাদ থেকে খ্রিস্টধর্ম ও সেটা থেকে ইসলাম, এই তিনটি আব্রাহামিক র্ধম একই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস থেকে উৎপন্ন যার সূচনা হয়েছে ইহুদী ধর্মীয় মিথের বিকাশ থেকে। নবী মুসার ঈশ্বর প্রদত্ত দশটি আদেশ বা টেন কমেন্ডমেন্টস এই তিনটি ধর্মেরই ভিত্তি। ঈশ্বর প্রদত্ত এই দশটি আদেশের লক্ষ্য নিজে অপরাধ করে প্রচুর দান খয়রাত করার মানবসেবা বা গডফাদার মূল্যবেধ তৈরি নয়। এই দশটি আদেশের লক্ষ্য নিজেকে শুদ্ধ করা।
ইহুদী ধর্মীয় মিথের নবী মুসার কাহিনী একটি বিপ্লবের। মিশরীয় রাজা, শাসক ও ধর্মগুরুদের বিরুদ্ধে একটি গণমানুষের বিপ্লবের ইতিহাসই নবী মুসার নতুন সমাজ তৈরির ইতিহাস। তরুণ যিশু সেই ইহুদী ধর্মের অনুসারীই ছিলেন। ইহুদী শাসক ও ধর্মগুরুদের কঠোরতা ও অত্যাচার এবং রোমের শাসকদের একই অনাচার তাকে একটি বিপ্লবের পথ দেখায়। কাবায় দেব দেবী থাকলেও নবুয়ত প্রাপ্তীর আগে তরুণ মুহম্মদ দেব দেবীর আরাধনা করতেন না। তিনি সিরিয়াক চার্চের ধর্মীয় ব্যাখ্যায় আগ্রহী ছিলেন। নবী মুহম্মদের প্রথম স্ত্রীর ভাই ছিলেন সিরিয়াক চার্চের খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। সেই থেকে তাঁর চোখে খ্রিস্টধর্মের বিচ্যুতিকে বোঝা ও নতুন পথের সন্ধানে মনোনিবেশ করেন তিনি।
একসময় বাংলাদেশে এরশাদের সামরিক শাসনের আমলে আট রশির পীর বা পির অব এইট রোপস খুব বিখ্যাত ছিলেন। দেশের সমারিক বোসামরিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, নানা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিক চুক্তি বা বিদেশী এজেন্টদের সাথে সংযোগ সবকিছুর নিরাপদ স্থান ছিল পির অব এইট রোপসের দরবার। সদ্য প্রয়াত হলেন একজন খ্রিস্ট ধর্মগুরু যিনি ছিলেন রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু বা হেড মৌলভী যাদের পোপ বলা হয়। তার মৃত্যুর পর সামাজিক মাধ্যমে সাথে রয়েছে সমালোচনা এবং তার প্রয়াত হবার পর সামাজিক মাধ্যম জুড়ে দেখা যাচ্ছে তার সাথে শয়তানকে জুড়ে নানা রকম মিম ও ট্রল। অনেকেই মনে করেন ভ্যাটিক্যানের চার্চ ব্যবস্থা ও পোপ পদটি একটি বিশ্ব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্র।
রোমের ভ্যাটিকানে অবস্থিত রোমান ক্যাথলিক চার্চ সারা দুনিয়ায় সকল রোমান ক্যাথলিক চার্চের নিয়ন্ত্রক। সারা দুনিয়ার রোমান ক্যাথলিক চার্চগুলোর অগাধ সম্পদ ও সম্পত্তি রয়েছে। ভ্যাটিকান ব্যাংক, আনুষ্ঠানিকভাবে যার নাম "ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্কস অফ রিলিজিয়ন" (IOR), হলো ভ্যাটিকান সিটির একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৪২ সালে পোপ পিয়াস XII দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় ও দাতব্য কার্যক্রমের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এটি বিশ্বব্যাপী চার্চের সম্পত্তি পরিচালনা করে এবং ধর্মীয় সংগঠন, মঠ, বিশপদের এবং অন্যান্য ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক সেবা প্রদান করে। ভ্যাটিকান ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো বলে অনুমান করা হয়, এবং এটি বিশ্বব্যাপী লেনদেনে জড়িত থাকে, তবে এটি একটি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো কাজ করে না বরং একটি ব্যক্তিগত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে।
পোপদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা শুধু ভ্যাটিকান ব্যাংকের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের বিশাল সম্পদ ও প্রভাবের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ক্যাথলিক চার্চের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য গির্জা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এবং বিশ্বজুড়ে বিপুল পরিমাণ রিয়েল এস্টেট। পোপ হিসেবে ভ্যাটিকানের প্রধান শাসকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তি এই সম্পদের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক। তিনি ভ্যাটিকানের বাজেট অনুমোদন করেন, যা ভ্যাটিকান ব্যাংক এবং "পিটার’স পেন্স" (বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিকদের দান) থেকে অর্থায়ন করা হয়। এই অর্থ দিয়ে পোপ বিশ্বব্যাপী দাতব্য কার্যক্রম, মিশনারি কাজ, এবং ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক ব্যয় পরিচালনা করেন।
পোপের অর্থনৈতিক ক্ষমতা তাকে বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম করে। উদাহরণস্বরূপ, কোল্ড ওয়ারের সময় পোপ জন পল II পোল্যান্ডের সলিডারিটি আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিলেন, যেখানে ভ্যাটিকানের আর্থিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এই ক্ষমতা প্রায়শই গোপনীয়তা ও জবাবদিহিতার অভাবের কারণে বিতর্কের জন্ম দেয়। ভ্যাটিকান ব্যাংক ইতিহাস জুড়ে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থ পাচার, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ।
ভ্যাটিকান ব্যাংক ১৯৮২ সালে ইতালীয় ব্যাঙ্কো আমব্রোসিয়ানোর দেউলিয়া হওয়ার ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। এই ব্যাংকের প্রধান রবার্তো কালভি, যিনি "গড’স ব্যাংকার" নামে পরিচিত ছিলেন, ভ্যাটিকান ব্যাংকের সাথে গোপন আর্থিক লেনদেনে জড়িত ছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল যে ভ্যাটিকান ব্যাংক অর্থ পাচারে সহায়তা করেছে এবং মাফিয়ার সাথে সম্পর্ক রেখেছে। কালভি লন্ডনে রহস্যজনকভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, যাকে অনেকে হত্যা বলে মনে করেন। ভ্যাটিকান ব্যাংক পরে "নৈতিক দায়বদ্ধতা" হিসেবে ২৪০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়, যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দোষ স্বীকার করেনি।
২০১০ সালে ইতালীয় কর্তৃপক্ষ ভ্যাটিকান ব্যাংকের ২৩ মিলিয়ন ইউরো জব্দ করে, অর্থ পাচারবিরোধী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে। ব্যাংকের স্বচ্ছতার অভাব এবং গোপনীয়তার নীতি এই ধরনের অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস ক্ষমতায় আসার পর তিনি ব্যাংকের সংস্কারের উদ্যোগ নেন, স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক নিয়ম মেনে চলার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
ভ্যাটিকান ব্যাংক ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এটি পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা করে কমিউনিস্টবিরোধী আন্দোলনে অর্থ সরবরাহ করেছে। এই ধরনের কার্যক্রম প্রায়শই গোপনে পরিচালিত হয়।
সদ্য প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সাথে সমমনা হয়ে মার্কিন ডিপ স্টেট এবং গ্রোবালাইজেশনের পক্ষে কাজ করেছেন। পোপ ফ্রান্সিস, ক্যাথলিক চার্চের প্রধান হিসেবে, বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, জলবায়ু সংকট, এবং অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সোচ্চার অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তার নৈতিক কর্তৃত্ব এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাবের মাধ্যমে তিনি অনুদান-ভিত্তিক অর্থ বিতরণ এবং লবিংয়ের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সরাসরি আর্থিক লেনদেনে জড়িত না হলেও, তার বক্তৃতা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে বড় বড় কর্পোরেশন এবং ব্যক্তিগত দাতাদের প্রভাবিত করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি অ্যাপলের সিইও টিম কুক, ব্ল্যাকরকের ল্যারি ফিঙ্ক, এবং গুগলের সুন্দর পিচাইয়ের মতো বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন এবং তাদেরকে দারিদ্র্য হ্রাস, পরিবেশ রক্ষা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য তাদের সম্পদ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া, তিনি পেনশন ফান্ড ম্যানেজারদের সাথে কাজ করেছেন যাতে তারা টেকসই এবং নৈতিক বিনিয়োগে মনোযোগ দেন, এবং ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যবসায়িক শিক্ষার পাঠ্যক্রমে নৈতিকতার উপর জোর দেওয়ার জন্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
তার এই প্রচেষ্টাগুলো ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) ডাভোস বৈঠকে আরও স্পষ্ট হয়েছে, যেখানে তিনি বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতাদের জন্য রাউন্ডটেবিল আয়োজন করেছেন এবং তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং দারিদ্র্য হ্রাসে তাদের সম্পদ বিনিয়োগের জন্য চাপ দিয়েছেন। ২০২০ সালে, তিনি "ইকোনমি অফ ফ্রান্সেসকো" নামক একটি উদ্যোগ চালু করেন, যেখানে তিনি বিশ্বের তরুণ অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা এবং পরিবর্তনকারীদের একত্রিত করে একটি আরও ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার আহ্বান জানান। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল অর্থনীতিকে আরও মানবিক এবং সংহতিপূর্ণ করা, যা বৈশ্বিক সম্পদ বিতরণে নৈতিকতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। তবে, এই উদ্যোগটি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে সীমিত সাফল্য পেয়েছে এবং কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিসের সিদ্ধান্ত এবং বক্তব্য গ্লোবালিজমের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি ২০১৮ সালে "গ্লোবাল প্যাক্ট ফর এডুকেশন" নামে একটি উদ্যোগ চালু করেন, যেখানে তিনি বিশ্বের প্রধান ধর্মীয় নেতা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতাদের একত্রিত করে শিক্ষার মাধ্যমে সংহতি, ন্যায়বিচার, এবং শান্তি প্রচারের জন্য একটি "নতুন মানবতাবাদ" প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। এই প্যাক্টের লক্ষ্য ছিল শিক্ষাকে একটি বৈশ্বিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা, যা গ্লোবালিজমের মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই উদ্যোগটি ইউনেস্কোর সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে, এবং ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটি বিশ্বব্যাপী শিক্ষা প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিসের অবস্থানও উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে তার এনসাইক্লিকাল "লাউদাতো সি" প্রকাশের পর তিনি পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি বৈশ্বিক নৈতিক আহ্বান জানান, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এই দলিলে তিনি পরিবেশ ধ্বংসের জন্য উন্নত দেশগুলোর দায়বদ্ধতা এবং দরিদ্র দেশগুলোর উপর এর প্রভাবের উপর জোর দেন। তিনি তেল কোম্পানি যেমন শেল এবং এক্সনমোবিলের সিইওদের সাথে বৈঠক করেন এবং তাদেরকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং স্বচ্ছতার জন্য চাপ দেন। যদিও তেল কোম্পানিগুলো তার আহ্বানে সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে, তার এই উদ্যোগ জলবায়ু আন্দোলনে ধর্মীয় মাত্রা যোগ করেছে।
পোপ ফ্রান্সিসের গ্লোবালিজমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) "গ্রেট রিসেট" উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। তিনি ২০২১ সালে WEF-এর একটি বার্তায় বলেন, "আমাদের অর্থনীতি এবং সমাজকে পুনর্গঠন করতে হবে যাতে এটি সকলের জন্য ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই হয়।" WEF তাকে একজন "এজেন্ডা কন্ট্রিবিউটর" হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা তার গ্লোবালিজমের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। তবে, এটি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কিছু সমালোচক মনে করেন যে "গ্রেট রিসেট" এবং পোপের সমর্থন একটি নতুন স্বৈরাচারী ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে জাতীয় সার্বভৌমত্ব হ্রাস পাবে এবং ক্ষমতা আন্তর্জাতিক এলিটদের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে।
অভিবাসনের ক্ষেত্রেও পোপ ফ্রান্সিস গ্লোবালিজমের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছেন। তিনি জাতিসংঘের গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশনকে সমর্থন করেছেন, যা অভিবাসনকে একটি বৈশ্বিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালে এই চুক্তি গৃহীত হওয়ার সময় তিনি বলেন, "অভিবাসীদের স্বাগত জানানো, সুরক্ষা দেওয়া, এবং তাদের সংহত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।" এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র এবং হাঙ্গেরির মতো জাতীয়তাবাদী সরকারগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়ে, যারা এই চুক্তিকে তাদের সীমানা নিয়ন্ত্রণের অধিকারের উপর হুমকি হিসেবে দেখেছে। পোপের এই সমর্থন গ্লোবালিজমের রাজনীতিকে শক্তিশালী করেছে, তবে এটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে সংঘাত সৃষ্টি করেছে, যা বৈশ্বিক ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া, পোপ ফ্রান্সিস জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শক্তিশালী ভূমিকার পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি জাতিসংঘকে "মানবতার আশার আলো" হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এটিকে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রচার করেছেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্লোবালিজমের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তবে এটি কিছু দেশের মধ্যে সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপে উগ্র ডানপন্থী দলগুলো তার এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছে, যারা মনে করে যে এটি তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং জাতীয় স্বাধীনতার জন্য হুমকি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আব্রাহামিক ধর্মের লক্ষ্য কি এটা যে সারা দুনিয়ার সামনে ঈশ্বরের নামে মিথ্যা বলে একটি মিথ্যা যুদ্ধ এবং তার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সমর্থন তৈরি করল যে, তার সেই মিথ্যার জন্য তাকে ধর্মচ্যুত বা তিরষ্কার না করে সে যদি যুদ্ধের জন্য বাস্তুুচ্যত যারা তাদের জন্য কিছু অনুদান দেয় তার প্রশংসা করা? এটা কিন্তু সেই খুন করে, ধর্ষণ করে নামাজ কাজা না করলে তার কোন অপরাধ নেই, সেই দর্শনই হয়ে গেল। তিন হাজার বছর আগের রাজা বাদশাহরা এমনই ছিল। যা খুশি তাই করে রাজকোষ থেকে কিছু অনুদান দিয়ে দিত। এর প্রতিবাদেই তিনটি ধর্ম তৈরি হয়েছে। যেগুলোর উদ্দেশ্য হল সে যেই হোক না কেন, ব্যক্তিগত আদর্শ থাকতে হবে ও সেই ঈশ্বরের দশটি নির্দেশে মান্য করতে হবে। বর্তমানের তিনটি ধর্মই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সেটা থেকে বের হয়ে এসে শয়তানের জীবনচর্চা বা মাফিয়া সংস্কৃতি চর্চা শুরু করেছে।