EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
রাজনীতি
শয়তান পরিচালিত প্যাথোক্র্যাসির সরকার ও
ধর্ম ও দর্শন
ট্রাম্প কেন পোপ হতে চাইছেন
ধর্ম ও দর্শন
ঈসা নবীর মৃত্যু - রিফর্ম থেকে রিলিজিয়ন
ধর্ম ও দর্শন
JadeWits Technologies Limited

প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার

জুলাই অপকর্মের মনোরোগ -১

ধরুন একটি নির্বাচিত জাতীয়তাবাদী সরকার বিভিন্ন দেশের সাথে কুটনৈতিক ভারসাম্য রেখে নিজ স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দেশ চালাচ্ছে, অথচ আপনার মনে হচ্ছে প্রতিবেশী বৃহৎ দেশের নির্দেশে দেশ চলছে। ধরা যাক একটি গৃহে একটি বন্ধ ঘরের ভেতরে এক সাংবাদিক যুগল নিহত হয়েছে, তাদের নিজেদের একে অপরকে হত্যার সকল নিদর্শন থাকা সত্বেও আপনার মনে হচ্ছে কোন ধনী ব্যবসায়ী, বা সরকারী কর্মকর্তা বা টিভি চ্যানেলের মালিক খুন দুটো করিয়েছে। 

ধরা যাক বৃষ্টির সময় কোন এক সাংবাদিক ও এক চলচিত্র পরিচালক দলবল সহ একটি মাইক্রোবাসে যাচ্ছে যেখানে সবাই তুমুল আড্ডায় মেতে আছে। হঠাৎ এক রাস্তার বাঁকে আর একটি ত্রিচক্র যানকে ওভারটেক করতে গিয়ে মাইক্রোবাস চালক রাস্তার বাঁকে রং সাইডে চলে গেল, তখনই একটি বাসের সাথে সেই মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হল, নিহত হল অনেকে। যেহেতু বাস শ্রমিকদের মন্ত্রী শাহজাহান খান আওয়ামী লীগ করেন তাই আপনার মনে হল দোষ বাস চালকের।

যে কোন ঘটনা ঘটলে কি ঘটেছে, অর্থাৎ পরিস্থিতির বিচার বা সিচ্যুয়েশন এনালিসিস ও পূর্বাপর বিচার বা কনটেক্সট বোঝার চিন্তা মাথায় আসার আগেই যাদের কাউকে বা কোন দলকে নির্দেশিত করে অতিরিক্ত সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং অন্যদের প্রতি শত্রুতা থেকে অভিযুক্ত বা ভিন্ডিকেশন, অথবা ঘটনাটাকে অস্ত্রে পরিণত করে কাউকে আঘাত করার চিন্তা যাদের মাথায় আসে তারা মানসিক সমস্যায় ভুগছে।     

২০২৪ এর রেজিম চেঞ্জের প্ররোচক যারা, যারা গত সিকি শতাব্দী জুড়ে অতিরিক্ত সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং শত্রুতা করে একের পর এক ঘটনাটাকে অস্ত্রে পরিণত করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে অপরাধী করে যাচ্ছে, যাদের নেতৃত্বের একটি অংশ যারা প্রিন্ট মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রাইভেট টিভি ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণে আছে। সেগুলোর নেতৃত্বে থাকা বেশিরভাগ মানুষই প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (পিপিডি) এর কোন না কোন পর্যায়ে আক্রান্ত। 

প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (পিপিডি) একটি মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থা, যা ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের একটি ধরন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। এটি সাধারণত অতিরিক্ত সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং অন্যদের প্রতি শত্রুতার মানসিকতা দ্বারা চিহ্নিত। এই আলোচনায় আমরা পিপিডি-এর বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য, কারণ, এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো এবং এরপর দেখবো কীভাবে অ-ক্লিনিকাল (অর্থাৎ পূর্ণ রোগ নয়, কিন্তু বৈশিষ্ট্য উপস্থিত) পিপিডি ব্যক্তিত্বের মানুষ মিডিয়া বা সামাজিক মিডিয়ায় প্রতিশোধ, ঘৃণা বা নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে পেশাগত বা প্রচারণা সুবিধা পেতে পারে।

প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (পিপিডি)-এর বিস্তারিত

পিপিডি হলো DSM-5 (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 5th Edition)-এর Cluster A ব্যক্তিত্বের ব্যাধির (পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার) একটি ধরন, যেখানে ব্যক্তি অযৌক্তিকভাবে অন্যদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করে এবং তাদের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে। এটি ক্লিনিকাল রোগ হিসেবে তখনই ধরা পড়ে যখন এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের জীবন যাপনে উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

পিপিডি-এর বৈশিষ্ট্য:

১. অতিরিক্ত সন্দেহ: কোন নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে আমরা সবাই কাউকে না কাউকে কিছুটা সন্দেহ করে থাকি। পিপিডি আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের অযৌক্তিকভাবে এবং শত্রুতামূলক সন্দেহ করে থাকে, যেমন মনে করে যে অন্যরা তাদের ক্ষতি করতে চায় বা প্রতারণা করছে। 
২. অবিশ্বাস: বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের প্রতি বিশ্বাসের অভাব, এমনকি পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকলেও। 
৩. শত্রুতা: অন্যদের প্রতি রাগ বা প্রতিশোধমূলক মনোভাব, বিশেষ করে যদি তারা "অপমানিত" বোধ করে। 
৪. অতি সংবেদনশীলতা: সমালোচনা বা কথার ভুল ব্যাখ্যা করে তা ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে গ্রহণ করা। 
৫. বিচ্ছিন্নতা: সন্দেহের কারণে নিকট সামাজিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলা।

পিপিডি-এর কারণ:

•    জিনগত: পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
•    শৈশবের অভিজ্ঞতা: অবহেলা, অপব্যবহার বা বিশ্বাসঘাতকতার অভিজ্ঞতা পিপিডি-এর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।
•    সামাজিক পরিবেশ: প্রতিযোগিতামূলক বা শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা।

পিপিডি-এর প্রভাব:

পিপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় এবং কর্মক্ষেত্রে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। তবে, খুব প্রকট নয় এমন সাব-ক্লিনিকাল পিপিডি বৈশিষ্ট্য (যেমন সন্দেহ বা প্রতিশোধমূলক মনোভাব যা রোগের মাত্রায় পৌঁছায় না) কিছু পেশায় বা কর্মকান্ডে সুবিধা এনে দিতে পারে।

সাব-ক্লিনিকাল পিপিডি ব্যক্তিত্বের মিডিয়া ও সামাজিক মিডিয়ায় সুবিধা

সাব-ক্লিনিকাল পিপিডি ব্যক্তিত্বের মানুষের মধ্যে পিপিডি-এর কিছু বৈশিষ্ট্য (যেমন সন্দেহ, প্রতিশোধমূলক মনোভাব, বা নেতিবাচকতার প্রতি ঝোঁক) থাকে, কিন্তু এটি তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করে না। সামাজিক মিডিয়া বা মিডিয়ায়, যেখানে প্রতিশোধ, ঘৃণা বা নেতিবাচক প্রচারণা জনপ্রিয়তা বা প্রভাব বাড়ায়, এই সব ব্যক্তিত্বের মানুষ সেখানে দ্রুত সফল ও জনপ্রিয় হয়ে যেতে পারে। নিচে এর কারণ ও উপায়গুলো বিশ্লেষণ করা হলো:

১. প্রতিশোধমূলক বিষয়বস্তু তৈরি:

• পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ প্রায়ই "প্রতিশোধ" বা আপাত "ন্যায়বিচার" এর ধারণায় আকৃষ্ট হয়। সামাজিক মিডিয়ায় তারা এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে যেখানে তারা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে "অন্যায়" উন্মোচন করে। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে কেউ যদি একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এবং তা নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করে, তবে এটি ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই ধরনের বিষয়বস্তু দ্রুত মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাদের প্রভাব বাড়ায়।
• সুবিধা: তাদের স্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের দোষ খুঁজে বের করা এবং তা প্রকাশ করা, যা "ক্যান্সেল কালচার" বা "এক্সপোজার" কন্টেন্টের জন্য উপযুক্ত।

২. ঘৃণা ও নেতিবাচক প্রচারণায় দক্ষতা:

• পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ অন্যদের প্রতি শত্রুতা বা ঘৃণা প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সামাজিক মিডিয়ায়, যেখানে বিভেদমূলক বা পক্ষপাতদুষ্ট বিষয়বস্তু (যেমন রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আক্রমণ) বেশি এনগেজমেন্ট পায়, তারা সফল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে দিলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

• সুবিধা: তাদের নেতিবাচকতার প্রতি ঝোঁক এবং অন্যদের দোষারোপ করার দক্ষতা তাদের ট্রল, প্রোপাগান্ডিস্ট বা প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

৩. অতি সন্দেহবাতিকতা:

• পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ অতিরিক্ত সন্দেহবাতিকগ্রস্থ হওয়ায় তারা কোন ব্যক্তির বা সংগঠনের নেতিবাচক "লুকানো সত্য" খুঁজে বের করতে পারে। এটি সাংবাদিকতা, ব্লগিং বা সামাজিক মিডিয়ায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানোর ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়। যেমন, কেউ যদি সরকার বা কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে একটি নেতিবাচক "উন্মোচন" বিষয়ক পোস্ট করে, তবে তা বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং ফলোয়ার বাড়ায়।
• সুবিধা: তাদের সন্দেহপ্রবণতা তাদের এমন কন্টেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে যা কৌতূহলী দর্শকদের আকর্ষণ করে।

৪. আবেগপ্রবণ এনগেজমেন্ট:

• পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ প্রায়ই তীব্র আবেগ (রাগ, ভয়, প্রতিশোধ) প্রকাশ করে, যা সামাজিক মিডিয়ার অ্যালগরিদমের জন্য আদর্শ। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুক বা এক্সে একটি আক্রমণাত্মক পোস্ট বা ভিডিও বেশি রিচ, ফলো বা রিটুইট ও মন্তব্য পায়, কারণ এটি মানুষের আবেগকে উস্কে দেয়।
• সুবিধা: তাদের আবেগপ্রবণতা তাদের কন্টেন্টকে ভাইরাল করতে সাহায্য করে, যা তাদের প্রোফাইল বা প্রভাব বাড়ায়।
কীভাবে তারা সফল হয়?
• মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে: টক শো, পডকাস্ট বা YouTube-এ তারা "আমরা বনাম তারা" ধরনের আলোচনায় দক্ষ হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন হোস্ট যিনি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ান, তার শ্রোতা দ্রুত বাড়তে পারে।
• সামাজিক মিডিয়ায়: X, Facebook বা TikTok-এ তারা ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বা বিতর্কিত বিষয়ে পোস্ট করে দ্রুত মনোযোগ আকর্ষণ করে। যেমন, কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা পক্ষপাতদুষ্ট গোষ্ঠীর সমর্থন পেতে পারে।
• নেতিবাচক প্রচারণায়: রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনে তারা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে।
প্যারানয়েড পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (পিপিডি) একটি জটিল মানসিক অবস্থা, যা অতিরিক্ত সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং শত্রুতার দ্বারা চিহ্নিত। এই আলোচনায় আমরা পিপিডি-এর বিস্তারিত বৈশিষ্ট্য, এর সঙ্গে সম্পর্কিত নার্সিসিস্টিক প্রবণতা, এবং অ-ক্লিনিকাল পিপিডি ব্যক্তিত্বের মানুষ কীভাবে মিডিয়া বা সামাজিক মিডিয়ায় প্রতিশোধ, ঘৃণা বা নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে সুবিধা পায় তা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করবো। এছাড়া, তাদের সীমাবদ্ধতা এবং "মিনিয়ন কালচার" (অনুগত অনুসারীদের গোষ্ঠী) গড়ে তোলার প্রবণতাও যুক্ত করা হবে।

১. পিপিডি এবং নার্সিসিজম: নার্সিসিস্টিক কৌশল

পিপিডি আক্রান্ত বা অ-ক্লিনিকাল পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ প্রায়ই নার্সিসিস্টিক প্রবণতা দেখায়, যেমন নিজেকে উচ্চমানের মনে করা, প্রশংসার প্রত্যাশা, এবং সমালোচনার প্রতি অতি সংবেদনশীলতা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো সামাজিক মিডিয়ায় তাদের সুবিধা দিতে পারে। তারা যে নার্সিসিস্টিক কৌশল ব্যবহার করতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে:

• গ্র্যান্ডিওজ প্রকাশ: তারা নিজেদেরকে মিথ্যা করে হলেও "সত্যের রক্ষক" বা "অন্যায়ের বিরুদ্ধে যোদ্ধা" হিসেবে উপস্থাপন করে। 
• গ্যাসলাইটিং: তারা বিরোধীদের বিভ্রান্ত করতে বা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে গ্যাসলাইটিং কৌশল ব্যবহার করতে পারে। যেমন, "তুমি এটা বোঝ না কারণ তুমি সত্য দেখতে চাও না," বলে তারা বিরোধীদের দুর্বল করে।
• ম্যানিপুলেশন: তারা আবেগপ্রবণ গল্প বা অতিরঞ্জিত দাবি ব্যবহার করে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, "আমাকে আক্রমণ করা হচ্ছে কারণ আমি সত্য বলি," বলে তারা সমর্থন সংগ্রহ করে।
• নিজেকে শিকার হিসেবে উপস্থাপন: তারা নিজেদেরকে "অন্যায়ের শিকার" হিসেবে দেখিয়ে সহানুভূতি আদায় করে, যা তাদের প্রভাব বাড়ায়।

২. পিপিডি-এর সীমাবদ্ধতা: যা তারা করতে পারে না

অ-ক্লিনিকাল পিপিডি ব্যক্তিত্বের মানুষ যদিও কিছু ক্ষেত্রে সফল হতে পারে, তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা তাদের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য বা বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে:

• বাস্তবসম্মত আলোচনা এড়ানো: তারা যুক্তিবাদী বা তথ্যভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। তাদের সন্দেহপ্রবণতা তাদেরকে তথ্যের পরিবর্তে ধারণা বা ষড়যন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে প্ররোচিত করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা প্রমাণ চাইলে তা উপেক্ষা করে।
• সমালোচনার বিরুদ্ধে আক্রমণ: সমালোচনা তাদের জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের সমতুল্য। তারা যুক্তি দিয়ে জবাব দেওয়ার পরিবর্তে সমালোচকদের আক্রমণ করে। যেমন, "তুমি আমার বিরুদ্ধে কথা বলছ কারণ তুমি দুর্নীতিগ্রস্ত," বলে তারা বিতর্ক এড়ায়।
• অ্যাড হোমিনেম (ব্যক্তিগত আক্রমণ): তারা যুক্তির পরিবর্তে বিরোধীদের চরিত্র বা উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। উদাহরণস্বরূপ, "তুমি এটা বলছ কারণ তুমি আমার শত্রু," বলে তারা বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেয়।
• সহযোগিতার অভাব: তাদের অবিশ্বাস তাদের দলগত কাজ বা সহযোগিতামূলক প্রকল্পে অংশ নিতে বাধা দেয়, যা তাদের প্রভাবকে সীমিত করতে পারে।

৩. মিনিয়ন কালচার: অনুগত অনুসারীদের গোষ্ঠী

পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ প্রায়ই একটি "মিনিয়ন কালচার" গড়ে তোলে, যেখানে তারা নিজেদের চারপাশে বয়স, অভিজ্ঞতা বা প্রভাবে অনেক নিচের অনুগত অনুসারী বা "শিষ্য" সংগ্রহ করে। এটি তাদের নার্সিসিস্টিক প্রবণতা এবং নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়।

• কীভাবে তারা এটি করে: 

o তারা নিজেদেরকে "নেতা" বা "গুরু" হিসেবে উপস্থাপন করে এবং তরুণ বা কম অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের আকর্ষণ করে যারা তাদের কথায় মুগ্ধ হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকে তারা একটি "সত্যের যোদ্ধা" ইমেজ তৈরি করে এবং ফলোয়ারদের মধ্যে ভক্তি জাগায়।
o তারা এই অনুসারীদের ব্যবহার করে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেয় বা বিরোধীদের আক্রমণ করে। যেমন, "আমার অনুসারীরা আমার পক্ষে লড়বে," বলে তারা শক্তি প্রদর্শন করে।

• কেন এটি কাজ করে: 

o এই "মিনিয়নরা" প্রায়ই কম সমালোচনামূলক হয় এবং পিপিডি ব্যক্তির কথাকে চ্যালেঞ্জ করে না। এটি তাদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
o সামাজিক মিডিয়ায় এই গোষ্ঠী তাদের পোস্ট বুস্ট করে, রিটুইট করে বা বিরোধীদের ট্রল করে, যা তাদের দৃশ্যমানতা বাড়ায়।

• উদাহরণ: একজন পিপিডি ব্যক্তিত্ব ফেসবুক বা ইউটিউব ব্যবহার করে একটি "আন্দোলন" শুরু করতে পারে এবং তরুণ ফলোয়ারদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারে, যারা তাদের নির্দেশে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে।
অ-ক্লিনিকাল পিপিডি ব্যক্তিত্বের মিডিয়া ও সামাজিক মিডিয়ায় সুবিধা

পিপিডি বৈশিষ্ট্যের মানুষ সামাজিক মিডিয়া বা মিডিয়ায় নেতিবাচকতা, প্রতিশোধ বা ঘৃণার মাধ্যমে সফল হতে পারে। তাদের কৌশল ও সুবিধাগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেখানো হলো:

১. প্রতিশোধমূলক বিষয়বস্তু:

• তারা "অন্যায়" উন্মোচন করে বা প্রতিশোধের গল্প তৈরি করে শ্রোতাদের আকর্ষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, "এই লোকটি আমাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাকে উন্মোচন করেছি," বলে তারা মনোযোগ পায়।
• নার্সিসিস্টিক কৌশল: নিজেকে নায়ক হিসেবে দেখিয়ে তারা ফলোয়ারদের প্রশংসা আদায় করে।

২. ঘৃণা ও নেতিবাচক প্রচারণা:

• তারা বিভেদমূলক বা আক্রমণাত্মক কন্টেন্ট তৈরিতে দক্ষ। যেমন, কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে তারা এনগেজমেন্ট বাড়ায়।
• মিনিয়ন কালচার: তাদের অনুসারীরা এই বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং বিরোধীদের আক্রমণ করে।

৩. অতি সতর্কতা ও বিশ্লেষণ:
• তাদের সন্দেহপ্রবণতা তাদের "লুকানো সত্য" খুঁজে বের করতে সাহায্য করে, যা ষড়যন্ত্র কন্টেন্টের জন্য উপযুক্ত।
• নার্সিসিস্টিক কৌশল: তারা নিজেদেরকে "অনন্য" বা "জ্ঞানী" হিসেবে উপস্থাপন করে।

৪. আবেগপ্রবণ এনগেজমেন্ট:

• তাদের তীব্র আবেগ (রাগ, ভয়) কন্টেন্টকে ভাইরাল করে। উদাহরণস্বরূপ, "এই ষড়যন্ত্র আমাদের ধ্বংস করবে!" বলে তারা শ্রোতাদের উত্তেজিত করে।
• মিনিয়ন কালচার: তাদের অনুসারীরা এই আবেগকে বুস্ট করে।

সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি
• বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা: তাদের অ-বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘমেয়াদে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।
• শত্রু সৃষ্টি: তাদের আক্রমণাত্মকতা বিরোধীদের বাড়িয়ে দেয়, যা আইনি বা সামাজিক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে পারে।
• মিনিয়নদের উপর নির্ভরতা: তাদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে এই গোষ্ঠীর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তাদের দুর্বল করে।

সাব-ক্লিনিকাল পিপিডি ব্যক্তিত্বের মানুষ তাদের সন্দেহ, শত্রুতা, নার্সিসিস্টিক কৌশল এবং মিনিয়ন কালচারের মাধ্যমে সামাজিক মিডিয়া বা মিডিয়ায় প্রতিশোধ, ঘৃণা বা নেতিবাচক প্রচারণায় সফল হতে পারে। তাদের আবেগপ্রবণতা এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাদের প্রভাবশালী করে তুললেও, বাস্তবসম্মত আলোচনার অভাব, সমালোচনার প্রতি আক্রমণ এবং অ্যাড হোমিনেম কৌশল তাদের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যকে সীমিত করতে পারে।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।