একজন সিনিয়র ডিফেন্স কর্মকর্তার সাথে কথা হচ্ছিল তার অফিসে। তার অফিসের ভেতরেই নামাজের যায়গা। সামনে টেবিলে গাজা ফিলিস্তিন নিয়ে দেশি কয়েকটি বই। তার সাথে পিনাকী ভট্টাচার্যের একটি মোটা বই। নানা বিষয় নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর কর্মকান্ডে তিনি আহত। তার ধারণা ছিল ট্রাম্প এসে বাইডেনের বিপরীত কাজ করবে। বাস্তবে ঘটছে তারও বিপরীত।
২০২৩ এর ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইজরাইলে হওয়া হামলাটি নিয়ে তিনি খুব উৎফুল্ল ও আশাবাদী ছিলেন। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন আল্লাহ তার বান্দাদের অনেক পরীক্ষা নেন, কিন্তু তাদের পরিশেষে পুরস্কৃত করেন। সেই পুরস্কৃত করার কাজটাই নাকি হতে চলেছে প্যালেস্টাইনে। এবার নাকি হামাস, ইরান ও সিরিয়া মিলে এমনভাবে ইসরাইলকে কোনঠাঁসা করবে, যে পরাজয় মেনে গাজা ছেড়ে পালানো ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকবে না।
আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম আপনি কি ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে "বিহারী হত্যাকাণ্ড" সম্পর্কে জানেন? তিনি বললেন হ্যাঁ জানেন, আওয়ামী গুন্ডা ও সন্ত্রাসীরা বিহারীদের পছন্দ করতে না তাই তাদের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল। তিনি আমাকে ভারতীয় গবেষক শর্মিলা বোসের বই “ডেড রেকনিং: মেমোরিজ অফ দ্য ১৯৭১ বাংলাদেশ ওয়ার”এর রেফারেন্স দিলেন। আমি তাকে বললাম ধরেন আপনি একটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে ল্যান্ড স্লাইড ভিক্টরি পেয়ে সরকার গঠনের অপেক্ষায় আছেন। সরকার গঠিত হলে আপনি হবেন দেশের হর্তা কর্তা। সেই সময় আপনার রাজনৈতিক দল, যারা তখন বিজয়ী হিরো, তারা তখন সংখ্যালঘুদের হত্যা করতে যাবে কেন? তিনি কোন পরিষ্কার জবাব দিলেন না, বললেন আওয়ামী লীগের স্বভাব এটাই। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম আপনি কি জানেন “ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন” সম্পর্কে, ইনফাইনাইট ওয়ার সম্পর্কে? তিনি আমাকে সংক্ষেপে কেতাবী উত্তর দিলেন। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
১৯৭১ সালের প্রথম দিকে "বিহারী হত্যাকাণ্ড" পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটি “ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন” ছিল। ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন হল নিজের পক্ষের লোকেদের জান-মালের একটি বড় ধরণের আবেদনময়ী ক্ষতি করে, সেটা শত্রুপক্ষের করা বলে প্রমাণ করে সেটিকে বড় কোন আক্রমণের একটি অজুহাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে ঘটা "বিহারী হত্যাকাণ্ড" আসলে পাকিস্তানী বাহিনীর গোপন অপারেশন ছিল যেটার মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগের কর্মীদের হত্যা করে বিহারীদেরতে আওয়ামী মিছিলে সন্ত্রাসী হামলা করতে প্ররোচিত করেছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে।
উদ্দেশ্য ছিল এতে আওয়ামী লীগের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিহারী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তখন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সারা দেশে সামরিক বাহিনী নামানো হবে। সেই লক্ষ্যে বিহারীদের হত্যা ও ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে দেবার ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং অনেক বিহারীকে হত্যাও করা হয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিব জানতেন এগুলো সবই সামরিক চক্রান্ত। তাই মিছিলে বিহারীদের হামলা প্রতিরোধ ছাড়া আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে কোন উৎসাহ দেখায়নি। যার ফলেই ২৫ মার্চ রাতে কোন পরিষ্কার অজুহাত ছাড়াই অপারেশন সার্চলাইট শুরু করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা, আমরা যারা রাজনীতির খোঁজখবর রাখি, তাদের খুবই বিস্মিত করেছিল। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমাদের মনে হয়েছিল ইসরায়েল নিজে এটি মঞ্চস্থ করেছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ঘটতে দিয়েছে বড় কোন আক্রমণের অজুহাত হিসাবে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা, যারা তাদের দক্ষতার জন্য বিখ্যাত, হামাসের ৭ অক্টোবর হামলার প্রস্তুতি মিস করতে পারে না। হয় সেটি ইচ্ছাকৃতভাবে "ঘটতে দেওয়া হয়েছে" বা ইসরায়েলের পরিকল্পনাতেই সেটি "ঘটানো হয়েছে" হামাস দ্বারা।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত বার্তা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামাস ২০২০ সাল থেকে প্রকাশ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এই ধরণের ঘটনার, যার মধ্যে ইসরায়েলি বসতি আক্রমণের মহড়াও ছিল। হামলার ২৫ দিন আগে শেষ মহড়া হয় (বিবিসি)। মিশরীয় গোয়েন্দারা কয়েকদিন আগে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল বলেও খবরে প্রকাশ (রয়টার)। গাজার কাছে মহিলা নজরদারি সৈন্যরা হামাসের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ (যেমন ড্রোন প্রশিক্ষণ) লক্ষ্য করেছিল, কিন্তু তাদের উপেক্ষা করা হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত হয় ও ২৫০ জন জিম্মি হয় যাদের বেশিরভাগ ছিল ইসরাইলি। ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামাসের নেতৃত্বে হওয়া হামলাটি একটি "ফলস ফ্ল্যাগ" অপারেশন ছিল, অর্থাৎ ইসরায়েল নিজে এটি মঞ্চস্থ করেছে বা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এটি ঘটতে দিয়েছে।
১,১৩৯ জন নিরাপরাধ ইসরাইলি বা পশ্চিমা নাগরিকের মৃত্যু ও ২৫০ জন জিম্মির বিনিময়ে তারা বিশ্ব জনমতকে তাদের দিকে টেনে নিয়ে গেছে। "ফলস ফ্ল্যাগ" অপারেশন একটি দুর্নীতি, অপরাধ ও অ্যাক্ট অব ইভিল, যেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। যার মাধ্যমে একটি অন্যায় হত্যাকান্ডকে জনপ্রিয় বা বৈধ করা হয়। ইসরাইলের প্যালেস্টাইনকে নিশ্চিহ্ন করার সেই মাস্টারপ্ল্যানে কেন যুক্ত হয়েছিল হামাস? হাতে অস্ত্র থাকার জোশে? যদি তারা দাবী করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা "ফলস ফ্ল্যাগ" অপারেশন ছিল না, তাহলে তারা এই হামলা কেন করেছিল?
গ্রীক দার্শনিকরা থেকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন একটি রাষ্ট্র গড়তে ঈশ্বরের হাত লাগে। একজন আদর্শ ও নৈতিকতায় যোগ্য নেতাই সেই ঈশ্বরের হাতে পরিণত হন। আর একটি রাষ্ট্র ও জাতিকে ধ্বংস করে শয়তানের প্ররোচনা লাগে। যে প্ররোচনা তাদের নেতাদের মিথ্যা, ছলনা, কুটচাল ও হত্যায় প্রলুব্ধ করে।
বর্তমানের ইসলাম একটি উয়োক মাইন্ড ভাইরাস যেটি মার্কিন ডেমোক্র্যাটদের মতই চতুর মিথ্যাবাদী ও যুদ্ধবাজ সমাজ তৈরি করে। দর্শন, নৈতিকতা, আদর্শ ও সকল মানুষকে অমর আত্মা হিসাবে দেখা যেখানে অনুপস্থিত। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিব একটি রাষ্ট্র গড়েছিলেন আর একটি রাষ্ট্র ভেঙ্গে তার অর্ধেক হারিয়েছিল শয়তানের সুতিকাগার সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিব অস্ত্র হাতে ধরে সন্ত্রাস করলে এখন আমরা উর্দুতে কথা বলতাম আর গাইতাম "পাক সার জামিন সাদ বাদ..."।
১৯৭১ সালের শেখ মুজিব থেকে শিখেছিলেন প্যালেস্টাইনের নেতা ইয়াসির আরাফাত, ফিলিস্তিনে সন্ত্রাস থেকে রাজনীতির পথে নিয়ে এসেছিলেন তার দল পিএলওকে। সেই পিএলওকে হটিয়ে তারা কেন হামাসকে দেশের ভার দিয়েছিল? নিশ্চয়ই শয়তানের ইশারায়। যেমন বর্তমান বাংলাদেশকে ইসলামি সামরিকতন্ত্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে যার পরিণতি গাজার মতই হবে।