EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

দেশী ডিপ স্টেট

"আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে?" -২

১ম পর্বের পর:

ঘটনার পর গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব লিখেছিল, ২৬ মে দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিটে র‍্যাব-৭-এর একটি চৌকস আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার মেরিন ড্রাইভ এলাকায় অভিযান পরিচালনার সময় গুলি বিনিময়ের সময় যিনি নিহত হন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা গডফাদার টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হক কমিশনার (৪৬), পিতা মোজাহার মিয়া ওরফে আবদুস সাত্তার, নাজিরপাড়া, টেকনাফ পৌরসভা, টেকনাফ, কক্সবাজার। 

মৃত্যুর আগে ও পরের সকল তথ্য বলছে তিনবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া মো. একরামুল হক দরিদ্র ব্যক্তি ছিলেন। মৃত্যুর আগেও তিনি টাকা ঋণ করে মোটরসাইকেলের জ্বালানি কিনে সরকারী বেতন খাওয়া খুনিদের ডাকে মৃত্যুর পথে যাত্রা করেছিলেন। তার গৃহ ছিল একটি দারিদ্র ও নিম্নবিত্তের আবাস যেটা এখনও তেমনই বিদ্যমান। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা গডফাদারের এই আর্থিক পরিস্থিতি হয় কিভাবে? কিভাবে তিনি হলেন “শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা গডফাদার”?    

৪ জুন ২০১৮ ডয়েচে ভ্যালে অনলাইন “একরামুলকে যেভাবে ‘ইয়াবা গডফাদার’ বানানো হয়” এই নামে একটি প্রতিবেদনে লিখছে: 
২০১০ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় একরামুলের নাম ওঠানো হয়। সেই তালিকা ধরে যাচাই-বাছাই না করেই একরামুল হককে ‘ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত করেছিল কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। তাদের প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

গত ২৭ মে রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর ওই রাতেই গুলিতে নিহত হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক। র‌্যাব দাবি করে, ‘‘একরাম মাদক ব্যবসায়ী এবং সে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।’’ কিন্তু একরামের স্ত্রী প্রথম থেকেই বলে আসছেন, ‘‘তাঁকে (একরাম) পরিকল্পিতভাবে, ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।’’ সম্প্রতি তিনি তাঁর দাবির সপক্ষে টেলিফোন কথোপকথনের যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছেন, তা আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

একরাম নিহত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন কক্সবাজার এবং টেকনাফের পৌর মেয়র, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা  ও সাধারণ মানুষ। তাঁদের মতে, একরাম কোনোভাবেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। আর টেকনাফ পৌর এলাকায় একরাম গত ১০ বছরেও নিজের সাধারণ মানের বাড়ির কাজ শেষ করতে পারেননি। তিনি পরিবার নিয়ে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতেন।


কক্সবাজার পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা খোলা চিঠিতে বলেছেন, ‘‘প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে আজন্ম আওয়ামী লীগ পরিবারের অহংকার টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পরপর তিন বার নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামকে হত্যা করা হয়েছে।’’

চিঠিতে তিনি আরো বলেন,‘‘শুনেছি, ২০০৮ সালে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে একরামের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও হয়েছিল। যদিও মামলাটিতে একরাম নির্দোষ প্রমাণিত হয়। অথচ সেই মামলার সূত্রে ২০১০ সালে নাম ওঠে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম তালিকাতে। কিন্তু ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বদলির পর সেটা সংশোধন হওয়ায় নিরপরাধ এ জনপ্রিয় কমিশনারের নাম হালনাগাদ সব তালিকা থেকে বাদ পড়ে।’’

কক্সবাজার পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী তাঁর খোলা চিঠিতে চারটি বিষয় স্পষ্ট করেন:

১. একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে ২০০৮ সালে একরামের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা হয়, যাতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন।
২. অথচ ওই মামলার সূত্র ধরে ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় একরামের নাম ওঠে।
৩. গোয়েন্দা কর্মকর্তার বদলির পর হালনাগাদ সব তালিকা থেকে একরামের নাম বাদ পড়ে।
৪. একরাম নিরপরাধ।

২০১২ সালের আগস্টে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি’র অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’ মাদক নিয়ে একটি পর্বে কাউন্সিলর একরামুল হককে ‘টেকনাফের ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে উল্লেখ করে। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক মঞ্জুরুল করিম এবং প্রতিবেদক ছিলেন অপূর্ব আলাউদ্দিন। প্রতিবেদনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকার সূত্রের কথা বলে আরো ছয় জনের সঙ্গে একরামকে ‘টেকনাফের ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে দেখানো হয়। একরামের ছবি দিয়ে পরিচিতিতে বলা হয়, 
‘‘টেকনাফ যুবলীগের সভাপতি। ইয়াবা ব্যবসা করে একরামের যে সম্পদ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: গাড়ি ২টি আর টেকনাফে ২টি এবং চট্টগ্রামে ১টি বাড়ি। এছাড়া ঢাকায় আছে ফ্ল্যাট।’’ প্রতিবেদনে টেকনাফের কয়েকজনের বিলাসবহুল বাড়ি দেখিয়ে তাদের বক্তব্য প্রচার করা হলেও একরামের বাড়ি-ঘর দেখানো হয়নি। তাঁর বক্তব্যও প্রচার করা হয়নি।

সেখানেই শেষ নয়। দুই বছর পর ২০১৪ সালের আগস্টে যমুনা টেলিভিশন তাদের অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘৩৬০ ডিগ্রি’তে মাদক ইয়াবা নিয়ে প্রতিবেদনে আবারো একরামুল হককে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে দেখায়। এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন সুপন রায়। আর প্রতিবেদক একই, সেই অপূর্ব আলাউদ্দিন। অপূর্ব আলাউদ্দিন ততদিনে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ছেড়ে যমুনা টেলিভিশনে যোগ দিয়েছেন।

‘৩৬০ ডিগ্রি’তে উপস্থাপক ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার কথা বলেন। তার কিছু নমুনাও দেখানো হয়। আর সেই সূত্রে একরামুল হককে আরো তিনজনের সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানো হয়। ছবি দিয়ে পরিচিতি দেয়া হয়, কেকে পাড়ার একরামুল হক হিসেবে। সঙ্গে এ-ও দাবি করা হয়, এরা সাধারণ অবস্থা থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। এই প্রতিবেদনে টেকনাফের মৌলভী পাড়ার আরেকজন একরামুল হকের কথাও বলা হয়। দেখানো হয়, তার বিলাসবহুল বাড়ি। কিন্তু  ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ‘তালাশ’ অনুষ্ঠানের মতো এ অনুষ্ঠানেও কাউন্সিলর একরামের কোনো বাড়ি-ঘর দেখানো বা তাঁর বক্তব্য প্রচার করা হয়নি। একরামুলের যে ছবি ‘৩৬০ ডিগ্রি’তে দেখানো হয় সেটাও হুবহু এক। একই ছবি এর আগে ২০১২ সালে ‘তালাশ’ অনুষ্ঠানেও দেখানো হয়েছিল।

যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুললে, তার পক্ষে কিছু প্রমাণ থাকতে হয়। কোনো তথ্য উপস্থাপন বা পরিবেশনের আগে তা যাচাই করাও যে কোনো সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকের কাছে প্রাথমিক প্রত্যাশা। কিন্তু দু'-দু'বার দু'-দু'টি প্রতিবেদনে কেন এর ব্যত্যয় হলো তা জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রতিবেদক অপূর্ব আলাউদ্দিনের কাছে। টেলিফোনে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি ২০১২ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিতে ওই  প্রতিবেদনের প্রতিবেদক ছিলাম। পরে আমি যমুনা টেলিভিশনে যোগ দেই। সেখানে ২০১৪ সালের প্রতিবেদনটিও আমার করা। তবে আমি নেতৃত্ব দিলেও আমরা টিমে ছিলাম মোট ৩ জন। তবে দুই জন এখন সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।’’

অপূর্ব আলাউদ্দিনের দাবি, ‘‘আমরা ২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন করি।’’

প্রতিবদেনে একরামের যে সম্পদের কথা বলা হয়েছে সরেজমিন অনুসন্ধানে তার সত্যতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান অপূর্ব আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘তখন মোট তিন জনে ভাগ করে কাজ করেছি। কেউ একরামের বাড়িতে গিয়েছিল কিনা তা এখন আমার মনে নেই। তাঁর বক্তব্য নেয়া হয়েছে কিনা তা-ও মনে করতে পারছি না।’’

প্রতিবেদনে একরামের ব্যাপারে সরেজমিন অনুসন্ধানের কোনো কথা নেই, এমনকি দু'টি প্রতিবেদনের একটিতেও তাঁর বক্তব্য নেয়া হয়নি জানানোর পরও অপূর্ব আলাউদ্দিনের একই মন্তব্য, ‘‘এতদিন পর আমার মনে নেই।’’

 

 

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।