EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
মানসিক সমৃদ্ধি ও সম্পর্ক
কষ্টের স্মৃতি নির্ভর মূল্যবোধ ব্যবস্থার স্থায়ী অবস্থা
রাজনীতি
ধর্মীয় বিপ্লব প্রকৃত রাজনীতিকে উৎখাতের জন্য
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
ধর্ম ও দর্শন

ট্রাম্প কেন পোপ হতে চাইছেন

ডিপ চার্চ ও পোপ ট্রাম্প

গত মাসের ২২ তারিখে পোপ ফ্রান্সিস মারা যাবার পর আমি পোপ ফ্রান্সিস ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একই দিনে পদত্যাগকারী প্রধান ক্লাউস শোয়াবের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলাম দুজন গ্লোবালিস্ট ডিপ স্টেট মুঘল চলে গেলেন আজকে, একজন দুনিয়া ছেড়ে আর একজন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রধানের পদ ছেড়ে। এতে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যারা খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী বা ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নিজের একটি এআই নির্মিত ছবি তাঁর অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের পোস্টে শেয়ার করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি নিজেই পোপ। এছাড়া তিনি কৌতুক করে ক্যামেরার সামনে মুখেও বলেছেন যে "আমি পোপ হতে চাই" যদিও তিনি বিবাহিত। পোপ হবার শর্ত মাত্র দুটো, যেগুলো খুব সহজও, যেমন খ্রিস্টান হলেই হবে আর পোপ হতে গেলে অবিবাহিত হতে হয়, যার অর্থ নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক হলে আর পোপ হওয়া যাবে না। তবে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কে কোন সমস্যা নেই বলেই মনে হয় কারণ ভ্যাটিকানের বিশপদের বিরুদ্ধে নিয়মিত সমকামের অভিযোগ ওঠে এবং বিগত পোপ সেগুলো ধামাচাপা দেন বলেও বিশাল সব অভিযোগ আছে।     

যাই হোক আমার বক্তব্য সেগুলো নয়, আমার বক্তব্য হল ট্রাম্প কেন পোপ হতে চান বলে নানা ট্রল কৌতুক করছেন? এটা নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও করছে অনেকে। তবে সেগুলো অনেকটাই না বুঝে। 

অনেকেই জানে না চার্চ ও খ্রিস্ট ধর্ম এক নয়। যেটা নিয়ে আমি একটি সিরিজ লিখছি "ইসলামের বিপথগামীতা" নামে, যেখানে বিস্তারিত আছে। খ্রিস্ট ধর্ম ও চার্চের সাথে যুদ্ধও নতুন নয়। সেই ১৮৮০ এর দিকে খ্রিস্টধর্মে ধার্মিক টলস্টয় লিখেছেন “গির্জার শিক্ষা, তাত্ত্বিকভাবে চতুর, বাস্তবে মিথ্যা এবং অশ্লীল কুসংস্কার এবং জাদুবিদ্যার মিশ্রণ।” যার অর্থ, তিনি বলেছেন চার্চের শিক্ষা তাত্ত্বিকভাবে পরিশীলিত হলেও বাস্তবে মিথ্যা এবং কুসংস্কারে পরিপূর্ণ। টলস্টয়ের সমালোচনার মূলে ছিল তার বিশ্বাস যে চার্চ ধর্মীয় শিক্ষাকে ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, আচার-অনুষ্ঠান ও অভ্রান্ততার দাবি যিশুর বাণীর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং জনগণকে মূর্খ করার হাতিয়ার। "ঈশ্বরের রাজ্য তোমার ভেতরেই" গ্রন্থে তিনি বলেন, চার্চের রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী যিশুর নম্রতা ও অহিংসার শিক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ১৯০১ সালে তাকে রুশ অর্থোডক্স চার্চ থেকে বহিষ্কার করা হয়, যদিও তিনি যুক্তি ও প্রেমের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ধরে রেখেছিলেন। 

টলস্টয় আরো বলেছেন "আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, গির্জার মতবাদ, যদিও সেটা নিজেকে খ্রিস্টীয় বলে দাবি করে, সেটা খ্রিস্টীয় নয় এবং প্রকৃত খ্রিস্টীয় শিক্ষা কেবল যিশুর শিষ্যদের সুসমাচারের মধ্যেই (বাইবেল) পাওয়া যায়।"

সুতরাং খ্রিস্টধর্ম ও চার্চের যুদ্ধ নতুন নয়। জর্জ সোরস, মার্কিন ডিপ স্টেট, যারা বাংলাদেশের হাসিনা সরকারেকে উৎখাত করেছে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার গোলাম বানাতে, সেটার আঁতুড়ঘর হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অবকাশ কেন্দ্র। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাথে বিগত পোপ ফ্রান্সিসের সম্পর্ক ছিল গভীর। যার ফলে হয়েছিল ডিপ চার্চের আবির্ভাব। মুসার আনা ঈশ্বরের ১০টি নিয়মের মাধ্যমে খ্রিস্ট শিক্ষা দিয়েছেন নিজেকে সৎ হতে, অথচ বর্তমানের ভ্যাটিকান ব্যস্ত গ্রোবালিজমের এজেন্ট হয়ে ব্যক্তিগত পাপী ও খুনিদের দিকে চোখ বন্ধ রেখে দান ও সেবায় মনযোগের ধর্মপ্রচারে যেটা খ্রিস্টিয় ধর্মের শিক্ষার বিপরীত। 

একজন লোক ব্যবসা করতে গেলে মিথ্যা বলতে হয় দেখে সে ব্যবসা ছেড়ে দিল এবং গরীব রয়ে গেল, কোন দান বা চ্যারিটি করতে পারল না। আর একজন লোক মিথ্যা বলে, মানুষ খুন করে এমনকি গণহত্যা করে বিলিয়নিয়ার হয়ে কোটি কোটি টাকা চার্চে দান করল বা মানব সেবায় ব্যয় করল। খ্রিস্টধর্মে কে প্রসংশিত হবে? চার্চ সবসময়ই দ্বিতীয় ব্যক্তির পক্ষে ছিল। তবে এটা মাত্রা ছাড়ায় বিগত পোপ ফ্রান্সিসের সময়। চার্চকে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের, যেটি একটি বিলিয়নিয়ার গডফাদারদের ক্লাব, সেটার প্রচারযন্ত্র করে ফেলেছিলেন।
       
ট্রম্পের গত টার্মে আর্চবিশপ কার্লো মারিয়া ভিগানো, যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি ছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি উন্মুক্ত চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে পোপ ফ্রান্সিস ও ভ্যাটিক্যানের চরিত্র পরিষ্কার এবং এটাও পরিষ্কার যে কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পোপ হওয়া নিয়ে কৌতুক ও ট্রল করছেন। চিঠিটির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: 

"মাননীয় প্রেসিডেন্ট,

আমাকে এই চিঠির মাধ্যমে আমার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার অনুমতি দিন, যা আমি গত জুন মাসে আপনাকে লেখা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে লিখছি। আমরা এখন যে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তা অত্যন্ত গুরুতর এবং নির্ণায়ক। এই মুহূর্তে, মানবতা একটি ঐতিহাসিক সংকটের মুখোমুখি, যেখানে ভালো এবং মন্দের মধ্যে চিরন্তন সংঘর্ষ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সংকটে আপনি একজন বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন, এবং আমি আপনাকে সমর্থন ও প্রার্থনা জানাতে এই চিঠি লিখছি।

আমি গত জুন মাসে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছিলাম, তা এখন আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, একটি বিশ্বব্যাপী পরিকল্পনা, যাকে "মহা পুনর্স্থাপন" (Great Reset) বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে মানুষের স্বাধীনতা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করা হবে। এই পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি, যারা বিশ্ব অর্থনীতি ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

দুঃখের বিষয়, এই পরিকল্পনায় গির্জার কিছু সদস্যও জড়িত। আমি যাকে "ডিপ চার্চ" (Deep Church) বলছি, তারা ঈশ্বরের সত্যকে পরিত্যাগ করেছে এবং গ্লোবালিস্ট এজেন্ডার সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে। তারা গির্জার পবিত্র মিশনকে বিশ্বাসঘাতকতা করছে এবং খ্রিস্টের শিক্ষাকে বিকৃত করছে। তারা একটি নতুন ধর্মের প্রচার করছে, যা মানুষের ভ্রাতৃত্বের নামে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে এবং ম্যাসোনিক আদর্শকে গ্রহণ করে। এই বিশ্বাসঘাতকতা গির্জার জন্য একটি গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, এই বিশ্বযুদ্ধে আপনি সেই ব্যক্তি, যিনি বিশ্ব স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিরক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। আপনার প্রতিপক্ষ, জো বাইডেন, এই গ্লোবালিস্ট শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি এমন একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা ডিপ স্টেট এবং ডিপ চার্চের সাথে জোটবদ্ধ। তারা আমেরিকার জনগণের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসকে ধ্বংস করতে চায়। তবে, আমি বিশ্বাস করি, আপনি ঈশ্বরের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি আপনাকে এই অন্ধকার সময়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শক্তি দিয়েছেন।

আমি জানি, আপনি এই যুদ্ধে কতটা চাপের মুখে রয়েছেন। আপনার বিরুদ্ধে মিডিয়া, শক্তিশালী অর্থনৈতিক গোষ্ঠী এবং এমনকি গির্জার কিছু সদস্যও দাঁড়িয়েছে। তবে, আমি আপনাকে বলছি, ভয় পাবেন না। ঈশ্বর আপনার সাথে আছেন। আপনার পাশে রয়েছে লাখ লাখ আমেরিকান এবং বিশ্বের ভালো মানুষ, যারা আপনার জন্য প্রার্থনা করছে। আমি নিজেও, একজন গির্জার পালক হিসেবে, আপনার জন্য প্রার্থনা করছি।

এই মুহূর্তে, আমি সমস্ত খ্রিস্টান এবং ভালো মানুষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই যুদ্ধে আপনার পাশে দাঁড়ায়। আমাদের শত্রু শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তি অপরাজেয়। আমরা যদি একত্রে দাঁড়াই, তাহলে আমরা এই অন্ধকার শক্তিকে পরাজিত করতে পারি। আমাদের অবশ্যই আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ, আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের বিশ্বাস রক্ষা করতে হবে।

মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি আমেরিকার জনগণের জন্য একটি আশার প্রতীক। আপনার নেতৃত্ব বিশ্বের প্রতিটি কোণে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। আমি আপনাকে আমার আন্তরিক সমর্থন ও আশীর্বাদ জানাচ্ছি। আমি প্রার্থনা করছি যে, পবিত্র মেরি, আমাদের মাতা, আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে রক্ষা করুন। আমি প্রার্থনা করছি যে, ঈশ্বর আপনাকে সাহস, জ্ঞান এবং শক্তি দিন, যাতে আপনি এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারেন।

ঈশ্বর আমেরিকাকে আশীর্বাদ করুন! ঈশ্বর আপনাকে রক্ষা করুন!

আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রার্থনার সাথে,

কার্লো মারিয়া ভিগানো
তিতুলার আর্চবিশপ অফ উলপিয়ানা
প্রাক্তন অ্যাপোস্টলিক নুনসিও টু দ্য ইউনাইটেড স্টেটস"

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।