EN
আরও পড়ুন
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -২
প্রকৃতি ও সুরক্ষা
বিজ্ঞানের উপনিবেশবাদ ও তার দেশী তাবেদারেরা -১
ধর্ম ও দর্শন
শহুরে শিক্ষিত দালালদের শক্তিশালী করার কৌশল
ধর্ম ও দর্শন
JadeWits Technologies Limited
ধর্ম ও দর্শন

তৃতীয় পর্ব

এন্টিথিসিস

রেস্তোরা ছেড়ে আমরা কাপাসিয়ার দিকে রওয়ানা দেই শালবনের মাঝ দিয়ে। রাস্তায় তখনও লোকজন, গাড়ি ঘোড়া কম। শ’য়ের উপরে গতিতে ছুটে চলে বাইক। গতি বাড়লে কাঁধ থেকে হাতটা নামিয়ে একটা হাতে আলতো করে আমার কোমরটা জড়িয়ে ধরে ও। আমার শরীরে একটা শিহরণ বয়ে যায় এটা মনে করে যে আমাদের সম্পর্ক বিশ্বাসের একটা ধাপ অতিক্রম করে যেন। কিন্তু বাতাস কেটে ছুটে চলার অনুভূতি বাকি সব অনুভূতিকে ছাপিয়ে শরীর মনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

দ্রুতই কাপাসিয়া চলে আসি আমরা। সেখানে শীতলক্ষ্যার উপর ফকির মজুন শাহ সেতু পার হয়ে টোক এলাকায় পৌছাই। কাছেই এগারসিন্ধুর দুর্গ। এলাকাটা অসাধারণ। এগারোটি নদীর মোহনা ছিল বলে এর নাম এগারসিন্ধুর। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তাই সেখানে তৈরী হয়েছিল দুর্গ। বারো ভুঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্ধুর দুর্গ দখল করে শক্তিশালী সামরিক ঘাটিতে পরিণত করেন। এলাকাটি ছিল সুফি পীর ফকিরদেরও আস্তানা তাই আধ্যাত্মিক বা ভক্তদের মনোজগত হিসাবে ধরলে বারো আউলিয়াদেরও বিচরণক্ষেত্র।

এখান থেকেই পুরাতন ব্রহ্মপত্র থেকে শাখা হিসাবে বের হয়ে আঁকাবাঁকা পথে ভাটির দিকে বয়ে চলেছে শীতলক্ষ্যা। হিমালয় থেকে নেমে আসা বিশাল তিস্তার পানি এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র দিয়েই আগে বেশির ভাগ প্রবাহিত হত। ১৭৬২ সালের আরাকান ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তিত হবার ফলে এখন যমুনা নদী দিয়েই সেই পানি প্রবাহিত হয়। অনেকটাই মরে গেছে তাই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী।

দিনটা ছিল সুন্দর আবহাওয়ার। রোদ আছে তবে তেমন তীব্র নয়। এখানেই পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের মাঝে আছে একসাথে লাগা চর আলগী ও চর মির্জাপুর। চর মির্জাপুরে বালুর উপর ফুটে আছে অনেক কাশফুল। যে কোন আধুনিক বাঙালী মেয়ের মত ওরও কাশফুল পছন্দ। কিন্তু চরে যেতে গেলে নৌকা লাগবে। বাইকটা একটা দোকানের সামনে পার্ক করে আমরা গেলাম নৌকা খূঁজতে। ভাড়া করতে চাইলাম কয়েক ঘন্টার জন্য। আমরা এই চর দুটো এক চক্কর দিয়ে ঘুরে আসতে চাই। সব নৌকাই অতিরিক্ত ভাড়া চায়। পরে কমবয়সি এক মাঝি রাজি হল। প্রথম থেকেই সে মিটিমিটি হাসছে কেন যেন।

ছই ওয়ালা একটা মাঝারী আকারের নৌকা। আমরা নৌকায় গিয়ে উঠলাম। চরে নেমে মোবাইল ক্যামেরা দিয়েই কিছু কাশবন ফটোশুট করতে হল। তারপর আমরা নৌকায় ফিরে এলাম। ওঠার সময় কমবয়সী মিটিমিটি হাসা মাঝিটি আমাকে একটু আলাদা করে নৌকার ছইটা দেখিয়ে ফিস ফিস করে বলল “ভাইয়া আফাকে লইয়া ভিতরে যাইতে পারেন সমস্যা নাই”।

আমি বললাম “যাব সময় হলে”, তার মিটিমিটি হাসিটা আর একটু বিস্তৃত হল। এবার বুঝলাম তার মিটিমিটি হাসির রহস্য, এবং বুঝলাম কেন নৌকা ভাড়া এত বেশী।

স্বচ্ছ পানি, অপেক্ষাকৃত হালকা বসতির এই এলাকার নৌভ্রমণ খুবই মনোমুগ্ধকর। কৃত্তিম স্থাপনা খুব কম থাকা ও বাতাস একেবারে দুষণমুক্ত হওয়া এর আর একটা কারণ। রোদ বেশি তীব্র না হবার ফলে আমাদের আর ছইয়ের ভেতরে যাবার প্রয়োজন পড়ল না। এতে বেশ অবাক ও একটু মনক্ষুন্নও হল আমাদের কমবয়সী মিটিমিটি হাসা মাঝিটি। সে হয়ত ভাবছে এই জুটির কাছে সে তার বখশিস নিশ্চই কম পাবে।

চর এলাকাটা ঘুরে আমাদের ততক্ষনে ক্ষুধা লেগে গেছে। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম: “এদিকেই কোন হোটেলে খাবা, নাকি সকালেরটার মত? সেটা কিন্তু এখনও বেশ দুর”।
মেয়েটা বলল “খেয়ে দেখি এখানকার খাবার কেমন”

মোটামুটি পরিচ্ছন্ন একটা হোটেল পেয়ে গেলাম যেটাতে ব্যবহারযোগ্য একটা ওয়াশরুম আছে। সেটাতে গিয়ে আমরা বসলাম ও মাছ, ভাত ডাল ও বেগুন ভাজির অর্ডার দিলাম। খাবার আসতে আসতে আমি ওকে বললাম “কেমন লাগল নৌকা ভ্রমণ”?
মেয়েটা বলল: “দারুন, কিন্তু মন খারাপও হয়েছে”
আমি বললাম: “কেন?”
মেয়েটা বলল: “যত মানুষ কাজ করছে, ক্ষেতে, মাঠে, নৌকায়, বাড়িও উঠানে, তারা অনেক দরিদ্র, শিশুগুলো অবহেলায় অপুষ্টিতে ভুগছে, এটা খেয়াল করেছেন?”

আমি বললাম: “হ্যাঁ, যদিও পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে তবুও প্রয়োজনটা আরো অনেক বেশি”
মেয়েটা বলল: “প্রয়োজনতো হবেই, এত বাচ্চাকাচ্চা এক একটি পরিবারের”
আমি বললাম: “এখন আর অত বেশি বাচ্চা কেউ নেয় না”
মেয়েটা বলল: “আগে তো নিত”
আমি বললাম: “নিত, কারণ ছিল”
মেয়েটা বলল: “কি কারণ, মোল্লাদের জন্মনিয়ন্ত্রণবিরোধী প্রচারণা?”
আমি বললাম: “না। এই যে আমরা ঘুরলাম, মাঠে, নদীতে, মানুষকে কি কাজ করতে দেখেছ? প্রধানত কৃষিকাজ আর মাছ ধরা”
মেয়েটা বলল: “হ্যাঁ এদুটোই ”

আমি বললাম: “আগে ছিল যৌথ পরিবার ও অযান্ত্রিক সমাজ, হাল ধরে ক্ষেতে কৃষিকাজ আর নৌকা নিয়ে মাছ ধরা, এক জোড়া পুরুষ মানুষ ছাড়া এসব কাজ হত না। যে সব পরিবারে একজোড়া সক্ষম পুরুষ নেই তারা অভাব অনটনে ভিখারী হয়ে যেত”
মেয়েটা বলল: “হ্যাঁ বাবা চাচারা বৃদ্ধ হলে ”
আমি বললাম: “তার মানে দুটো ছেলে প্রয়োজন হলে তাদের চারটি সন্তান নিতে হত”
মেয়েটা বলল: “হ্যাঁ বাকি দুটো মেয়ে হত”
আমি বললাম: “তখন শিশুমৃত্যু হত ৫০%, এর মানে হল দুটো ছেলে বেঁচে থাকতে গেলে তাদের আটটি বাচ্চা জন্ম দিতে হত”
মেয়েটা বলল: “আশ্চর্য্যতো, এটা তো আগে জানতাম না!”
আমি বললাম: “বেঁচে থাকার অর্থনীতি এগুলো ঠিক করে দেয়, ধর্ম নয়”

আমরা যখন গল্প করছি রেস্তোরার ভেতরে তখন টুপি পাঞ্জাবি পরে আট দশজন হুজুর ঢুকল। একজন ছাড়া বাকি সবাই কম বয়সী। কোন মাদ্রাসার তরণ ছাত্ররা ও তাদের শিক্ষক হবে। হয়ত গত রাতে শবেবরাতের কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা এসেছিল। আমাদের টেবিলের পাশ দিয়ে যাবার সময় বয়ষ্কজন ছাড়া সব কয়টি ছেলে মেয়েটার দিকে তাকাল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশিক্ষণ। তারপর তারা গিয়ে দুটো টেবিল নিয়ে বসল। তাদের মুখের ভাবে বিস্ময় আর কৌতুহলই যেন তারা ঢেকে রাখতে পারছে না। একটা চাপা উত্তেজনা যেন চোখে মুখে।

এতগুলো ছেলের দৃষ্টিতে একটু বিব্রত হয়ে
মেয়েটা বলল: “বাহ, পুরো ফুটবল টিম”
আমি বললাম: “বেশ স্মার্ট কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজে”
মেয়েটা বলল: “এখনকার হুজুরেরা অনেক স্মার্ট হয়”
আমি বললাম: “ও হ্যাঁ, তোমার না একটা হুজুর বয়ফ্রেন্ড ছিল?”
ও হঠাৎ ওর হাতে থাকা পানির বোতলটার মুখটা আমার দিকে তাক করে ছোড়ার ভঙ্গি করে বলল: “দেব কিন্তু”
আমি বললাম: “ছিল না? তুমিই তো বলেছ”
মেয়েটা বলল: “বয়ফ্রেন্ড কখনও বলি নাই, আমার জন্য পাগল হয়েছিল, বিয়ে করতে চেয়েছিল”
আমি বললাম: “অনেক স্মার্ট আর কিউট ছিল নিশ্চই”
মেয়েটা বলল: “আবার?”
আমি বললাম: “স্মার্ট আর কিউট না হলে তো তোমার কাছে পাত্তাই পেত না”
মেয়েটা বলল: “সবার পাত্তা লাগে না, এমনিতেই অনেকে পাগল হয়”
আমি বললাম: “ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার ছিল না, টেলকোতে কাজ করত?”

মেয়েটা বলল: “হ্যাঁ, তারপর কাজকর্ম ছেড়ে চিল্লায় চলে গেল, তারপর পুরা হুজুর ”
আমি বললাম: “বিরাট ভুল করেছ, এইসব হুজুরেরা স্ত্রীকে খুব ভালবাসে”
মেয়েটা বলল: “ছাই”
আমি বললাম: “তোমরাতো বেশ কিছু দিন ডেটিং করেছ, বলত সমস্যাটা কি ছিল?”
মেয়েটা বলল: “আবার?”
আমি বললাম: “আচ্ছা ডেটিং নয়, গল্পতো করেছ?”
মেয়েটা বলল: “গল্প হত না, শুধু বসে বসে কফি খেতাম আর একঘেঁয়ে অপ্রয়োজনীয় আলাপ হত”
আমি বললাম: “আমরাও তো আলাপ করি”
মেয়েটা বলল: “এরকম না, আপনি যেমন, আমি দুনিয়ার সবকিছু সম্পর্কে নিরাসক্ত থাকলেও কিভাবে যেন আমার ভেতরে গিয়ে আমাকে টেনে এনে আপনার মনের সাথে, দুনিয়ার সব কিছুর সাথে জড়িয়ে ফেলেন, তেমন ছিল না”

আমি বললাম: “তো তুমি সেই দায়িত্বটা নিলেই পারতা”
মেয়েটা বলল: “আমরা মেয়েরা পারি না, আমাদের খোলসের ভেতরে নিরাসক্ত থাকতে হয় নিরাপদ থাকার জন্যই”
আমি বললাম: “চেষ্টা করলেই পারবা”
মেয়েটা বলল: “কিন্তু এর চেয়েও বড় সমস্যা ছিল”
আমি বললাম: “কি সেটা”
মেয়েটা বলল: “আমি জানি আমি সুন্দরী এবং ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি ছেলেরা আমার প্রতি আকর্ষিত হয়। কেউ আমার প্রতি খুব আকর্ষিত এটা আমার কাছে খুব উৎসাহের কিছু নয়। মানে এটাতো সবাই হয়, কম আর বেশী”
আমি বললাম: “আরে কি বল? তাহলেতো কবিদের সব আত্মহত্যা করতে হবে”
মেয়েটা বলল: “দেখেন সব কবিদের কিন্তু তেমনই হয়, যাদের জন্য তারা কবিতা লেখে, তারা তাদের কখনও পাত্তা দেয় না”
আমি বললাম: “ঠিকইতো”
মেয়েটা বলল: “আমরা প্রথমে দেখি কে আমাদের রূপে পাগল হচ্ছে। তারপর দেখি সে কিভাবে সেটাকে মোকাবেলা করছে”
আমি বললাম: “হ্যাঁ পাগল হয়ে রয়ে গেলে তার কোন মূল্য নেই”
মেয়েটা বলল: “হ্যাঁ পাগল হয়ে বিয়ে করতে চায়, তার পর কি হবে? তখনও পাগল থাকলে তো সমস্যা, তাই তারা মন থেকে মুছে ফেলে, অন্য কারো প্রতি আবার পাগল হয়”
আমি বললাম: “তেমন বিয়ে না করাই ভাল”

মেয়েটা বলল: “অনেকে আবার পাগল হয়, তারপর পরিবার বা ধর্মকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করে। মা বাবা অথবা কোরআন হাদিস তখন তার জীবনের নিয়ন্ত্রক হয়ে যায়।”
আমি বললাম: “তার মানে তুমি বলতে চাইছ তুমি ঝড় বইয়ে দিতে চাও এবং দেখতে চাও কে টিকে থাকে নিজের গুনে, কোন কিছুতে ঠেকা দিয়ে নয়”
মেয়েটা বলল: “হ্যাঁ মানুষটার সুন্দরের প্রতি পাগল হবার মত মন থাকতে হবে আবার নিজের ক্ষমতায় নিজের অবস্থান ও মর্যাদা ধরে রাখার মত মানসিক শক্তি থাকতে হবে”
আমি বললাম: “তোমার ভবিষ্যত তো দেখি অন্ধকার”
মেয়েটা বলল: “ঠিক ধরেছেন”
আমি বললাম: “তাহলে আমার উপর পাগল হয়েছে কেন”
মেয়েটা বলল: “আমাকে দেখে, মানে আপনি যতটা গভীরভাবে দেখে পাগল হয়েছেন, তেমন গভীরভাবে আর কেউ দেখেনি”
আমি বললাম: “এই না বললা পাগলতো সবাই হয়?”
মেয়েটা বলল: “কিন্তু পাগল হয়েও আপনি পাগল না, আপনার ভেতর থেকেই কিছু একটা আপনাকে একটা মেয়ের জন্য পাগল হয়েও পাগলামী করতে দেয় না। সেটা পরিবারও নয়, ধর্মও নয়, সেটা কি সেই খোঁজেই আবার আমি পাগল”

এমন সময় খাবার চলে এল। হাত ধুতে উঠে দেখলাম হুজুরদের টেবল থেকে অনেকগুলো কিশোর চোখ আমাদের দিকে বিশেষ করে মেয়েটার দিকে পালা করে তাকাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি তাদের জন্য মেয়েটা যেন একটা হুরপরী, অপ্সরী। আজকের পরেও তাদের অনেকে মেয়েটাকে নিয়ে ভাববে। রাতে তকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে। এত সুন্দরী মেয়ে তারা হয়ত অনেকেই এত কাছে থেকে দেখেনি। তাদের মনের ভেতরের এই আলোড়নকে প্রতিহত করার জন্য তারা মুখে মেয়েদের সম্পর্কে মন্দ ও নিয়ন্ত্রণমূলক কথা বলবে।

মেয়েটা যেটা বলেছে যে ও একটা ঝড়, সেটা সত্য। একজন পরিণত ও অভিজ্ঞ পুরুষ হয়েও আমি জানি একজন নারী কতটা ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে পুুরুষ মনের উপর। একটি শক্তিশালী ও অধিষ্ঠিত মানুষের জীবনও তছনছ করে দিতে পারে একজন নারী শুধুই তার সৌন্দর্য ও মোহনীয় নারীত্বের ক্ষমতা দিয়ে।

কিন্তু এই ক্ষমতার বিরুদ্ধে পুরুষের রক্ষাকবচ কি? মাত্র দশ হাজার বছর আগে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে কিছু ছিল না। সবাই প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত এবং নারী পুরুষ একে অপরকে পাগল করলেও তাদের হারানোর কিছু ছিল না। নিজের জমি ও সম্পদ ভিত্তিক সমাজ তৈরী হবার পর আর তো পাগল হলে চলে না। পাগল হলে পৈত্রিক সম্পদ হারাতে হবে তারপর না খেয়ে মরতে হবে। তাই নারীর পুরুষকে পাগল করার বিরুদ্ধে নানা রক্ষাকবচ তৈরীর চেষ্টা হল।

অথচ প্রকৃতি আমাদের মস্তিষ্কের ভেতরেই এই রক্ষাকবচ দিয়েছে। আমাদের আবেগ যদি আমাদের চিন্তা ও যুক্তির সাথে সংযোগ রেখে এগিয়ে চলে তাহলে আমাদের চিন্তা ও যুক্তিই হতে পারে সেই রক্ষাকবচ। কিন্তু আমাদের শিক্ষা বা আমাদের জীবনযাত্রা যদি আবেগ ও চিন্তাকে বিচ্ছিন্নভাবে সংযোগবিহীন বেড়ে ওঠার একটি পরিস্থিতি তৈরি করে তাহলে আবেগ হয়ে যাবে নিয়ন্ত্রণহীন। সামান্য ঝড়েই নুয়ে পড়বে সেটা। নারীকে ঢাকতে হবে পোষাকে হিজাবে তবুও শেষ রক্ষা হবে না।

জরাথুস্ত্রবাদের আহুরা মাজদা বা বেদ উপনিষদের ব্রহ্মের সেই সচ্চিতানন্দের ধর্ম তৈরি হয়েছিল আবেগকে আমাদের চিন্তা ও যুক্তির সাথে সংযোগ রেখে এগিয়ে চলার জন্য যা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রিত পশুবৃত্তি থেকে মুক্ত হবার দিকে নিয়ে গেছে। এর ফলে অর্জিত হয়েছে জ্ঞান বিজ্ঞান, তৈরি হয়েছে নগর সভ্যতা।

ধনী বিলাসী এলিট ও শাসক সমাজ আবার তাকে নিয়ে গেছে আবেগনির্ভর পশুবৃত্তির দিকে। আব্রাহামিক দর্শন তখন সামনে এনেছে জীবনবিরোধী, ধন দৌলত বিরোধী পরকালমুখি এক প্রতিদর্শন। কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজ নিজেরা শোষিত, নিপিড়িত ও দাসসম হলেও ধনী সমাজকে অপছন্দ করে না একদমই। বরং উল্টো সবাই ধনী হতে চায়। ধনী জীবনই এখন লক্ষ্য।

তাহলে সমাজে এত প্রভাব বিস্তারকারী আমাদের যে ধর্ম, সেটা কিসের প্রতিদর্শন? আসলে সেটা নারীক্ষমতা বা নারী যে ঝড় তৈরি করতে পারে শুধু তারই প্রতিদর্শন। কারন বর্তমান সমাজে যে প্রক্রিয়ায় শিশুরা বড় হচ্ছে, তদের মনে আবেগ, যুক্তি এবং বুদ্ধির পরস্পর সস্পর্কহীন যে বিকাশ, সেটা নারীর তৈরী আবেগের ঝড়ে অত্যন্ত নাজুক। ধর্ম এখন নারীক্ষমতার প্রতিদর্শন। সেটা থেকে পুরুষদের, পুরুষ শিশুদের রক্ষার জন্য। আবেগের ঝড়ের কাছে অসহায় ও ভীত আজকের নারী পুরুষ উভয়ই। ধর্ম এখন ঈশ্বরকে কাছে পাবার, তার সাথে সংযোগের মাধ্যম নয়, ধর্ম এখন নারীক্ষমতা থেকে পরিত্রাণের ব্যার্থ শিরস্ত্রাণ।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।