আগের পর্ব:
“তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্যে এমনও একটি সম্প্রদায় আছে যারা রাত্রিকালে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সিজদা করে। তারা আল্লাহ ও পরকাল দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, ভালো কাজের নির্দেশ দেয় ও মন্দ কাজে নিষেধ করে, এবং তারা সৎকর্মে অগ্রসর হয়।” - সূরা আলে ইমরান (৩:১১৩-১১৪)
বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা ইহুদী ধর্ম এবং খ্রিস্টধর্ম ইসলাম থেকে একেবারে ভিন্ন এবং তারা সবাই কাফের। কিন্তু কোরানেই আছে যে এই তিনটি ধর্মই একই আল্লাহর নানা নবী প্রেরিত বার্তার উপর স্থাপিত। বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষের এটাও ধারণা যে খ্রিস্টানরা সবাই একই রকম। খ্রিস্ট ধর্মে আছে নানা মত ও ধারা যাদের মধ্যে শুধু যারা আল্লাহকে শরিক করে অথবা ত্রিত্ববাদের ধারণা অনুসরণ করে, তাদের সাথে মুসলিম ধারণার বিরোধ। সেই দিক থেকে ইহুদিদের সাধে ইসলামের ধর্মতত্ত্বগত বিরোধ নেই বললেই চলে বরং একই যুক্তিতে খ্রিস্ট ধর্মের সাথে ইহুদিদের বিরোধ। তবে ইহুদি ধর্ম তাদের পরের আর কোন নবীকে মূল্যায়ন করে না তেমনই খ্রিস্ট ধর্ম তাদের পরে কোন নবীকে মূল্যায়ন করে না। তবে ইসলাম ধর্ম বা কোরান ইহুদি ও খ্রিস্ট উভয় ধর্মের নবীদের নবী হিসাবে মূল্যায়ন করে।
এর সাথে বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা নেই সারা দুনিয়াব্যাপী বিস্তৃত খ্রিস্টধর্মের কত বৈচিত্রের শাখা প্রশাখা রয়েছে ও চার্চ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে কত রকম কাঠামো ও যাজকতন্ত্র রয়েছে। সদ্যমৃত পোপ শুধুমাত্র রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা ছিলেন যেটা রোম সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার ধারণ করে এবং যেটা বর্তমান দুনিয়ার ধর্মীয় এলিটদের একটি শক্তিশালী সংগঠন।
গত পর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে যিশু খ্রিস্টের জন্ম ও মিথ্যা অভিযোগে ক্রুশে বিদ্ধ করে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা পর্যন্ত তিনি ইহুদি ধর্মের একটি মানবিক ও আধ্যাত্মিক রূপান্তরের বাণী প্রচার করেছিলেন। তাঁর জীবিত অবস্থায় খ্রিস্টধর্ম ছিল ইহুদি ধর্মের একটি সংস্কার আন্দোলন, যা ফরিসী অন্য ধর্মপ্রচারকদের কঠোর ও জটিল ধর্মীয় প্রদর্শনবাদীতার বিরুদ্ধে প্রেম ও ক্ষমার বার্তা দিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর তার জীবন নিয়ে লেখা বাইবেলের নতুন নিয়মে ফরিসীদের “হিপোক্রিট” বলা হয়েছে, কারণ তারা ধর্মকে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার করেছিল।
খ্রিস্টধর্মের শুরু হয় ইহুদি ধর্মের একটি সম্প্রদায় হিসেবে, যিশু খ্রিস্টের শিক্ষার মাধ্যমে, যিনি প্রায় ৪-৬ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। যিশু ছিলেন একজন ইহুদি, এবং তার প্রাথমিক শিষ্যরা ইহুদি ধর্মের আইন (তোরাহ) মেনে চলতেন। তবে, যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর পর খ্রিস্টধর্ম ধীরে ধীরে ইহুদি ধর্ম থেকে আলাদা হয়ে যায়। দেখা যাক কীভাবে সেই বিচ্ছেদগুলো ঘটে এবং পরবর্তীতে খ্রিস্টধর্ম নানাভাবে বিবর্তিত হয়:
যিশু বেঁচে থাকতেই যিশুর শিষ্যরা তাকে মশীহ (ইহুদি ভাষায় “মশিয়াখ”, অর্থ “অভিষিক্ত”) হিসেবে বিশ্বাস করতেন, যিনি ইহুদি ধর্মে ভবিষ্যদ্বাণী করা মুক্তিদাতা। কিন্তু বেশিরভাগ ইহুদি যিশুকে মশীহ হিসেবে গ্রহণ করেননি, কারণ তারা মশীহকে একজন রাজনৈতিক মুক্তিদাতা হিসেবে কল্পনা করতেন, যিনি ইসরায়েলকে রোমান শাসন থেকে মুক্ত করবেন। ঐ সময় নানা রাজতন্ত্রের সাথে জড়িয়ে গিয়ে ফরিসী অন্য ধর্মপ্রচারকদের কঠোর ও জটিল ধর্মীয় প্রদর্শনবাদীতা ও ধর্মের আইনি ও রাজনৈতিক প্রয়োগ গুরুত্ব পায় অনেকটা আমাদের ভুয়া হাদিস ভিত্তিক ধর্মপ্রচারের মত।
এছাড়াও যিশুর শিষ্য পল খ্রিস্টধর্মকে অ-ইহুদিদের (জেন্টাইল) মধ্যে ছড়িয়ে দেন যেটা ইহুদি ধর্মে করা যেত না। তিনি শিক্ষা দেন যে খ্রিস্টানদের ইহুদি আইন, যেমন খৎনা বা খাদ্যবিধি, মানতে হবে না। এটি ইহুদি ধর্মের সঙ্গে একটি বড় বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। ঐ সময় রোমানরা জেরুজালেম মন্দির ধ্বংস করলে ইহুদি ধর্ম মন্দিরকেন্দ্রিক আচার থেকে রাব্বিনিক (শাস্ত্রভিত্তিক) ধর্মে রূপান্তরিত হয়। এই সময় থেকে খ্রিস্টানরা আলাদা সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃত হতে শুরু করে।
পরবর্তীতে খ্রিস্টানরা যিশুর পুনরুত্থান এবং ত্রিত্ববাদে (পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মা) বিশ্বাস প্রচার করতে শুরু করে, যা ইহুদি ধর্মের একেশ্বরবাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। এই বিচ্ছেদ ধীরে ধীরে ঘটে, তবে ১ম শতাব্দীর শেষের দিকে, প্রায় ৮০-১০০ খ্রিস্টাব্দ, যিশুর মৃত্যুর ৫০ বছর পর থেকে খ্রিস্টধর্ম একটি স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইহুদি সিনাগগ থেকে খ্রিস্টানদের বহিষ্কার এবং নিউ টেস্টামেন্টের লেখাগুলো এই বিচ্ছেদকে ত্বরান্বিত করে।
সহজ নিয়ম কানুন, কঠোরতা না থাকা, শান্তি ও ভালবাসার ঈশ্বর, এইসব ধারণার কারণে খ্রিস্টধর্ম রোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, এবং ধর্মতাত্ত্বিক পার্থক্যের কারণে চার্চগুলো বিভিন্ন রূপ নেয়।
২য়-৪র্থ শতাব্দীতে প্রাথমিক বিভাজন শুরু হয়। খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলো জেরুজালেম, এন্টিওক, আলেকজান্দ্রিয়া, কনস্টান্টিনোপল, এবং রোমে কেন্দ্রীভূত হয়। প্রতিটি অঞ্চলের চার্চ স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ভাষার প্রভাবে আলাদা বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে। জেরুজালেম প্রাথমিক খ্রিস্টানদের কেন্দ্র, ইহুদি-খ্রিস্টান ঐতিহ্যের উপর জোর দেয়। এন্টিওক অ-ইহুদি খ্রিস্টানদের কেন্দ্র হয়, যেখানে “খ্রিস্টান” শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। আলেকজান্দ্রিয়া ধর্মতাত্ত্বিক গবেষণা ও দর্শনের কেন্দ্র হয়, যেখানে অরিজেনের মতো পণ্ডিতরা ক্রিস্টান দর্শন বিকশিত করেন। রোম পশ্চিমের কেন্দ্র হয়, যেখানে যিশুর শিষ্য পিতর ও পলের শহীদ হওয়া রোমকে বিশেষ আধ্যাত্মিক গুরুত্ব দেয়।
৪র্থ শতাব্দীদে ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কনস্টান্টাইন মিলানের ঘোষণার মাধ্যমে খ্রিস্টধর্মকে বৈধ করেন। ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে নিসিয়ার প্রথম কাউন্সিল ত্রিত্ববাদের বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করে। এই সময়ে চার্চ রাষ্ট্রের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়, এবং বিশপরা ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। তবে, অঞ্চলভিত্তিক পার্থক্য থেকে যায়, যেমন পশ্চিমে (রোম) ল্যাটিন ভাষা এবং আইনি কাঠামোর উপর জোর দেওয়া হয় ও পূর্বে (কনস্টান্টিনোপল, আলেকজান্দ্রিয়া) গ্রিক ভাষা এবং দার্শনিক বিতর্ক প্রাধান্য পায়।
১০৫৪ সালে পূর্ব-পশ্চিম ধর্মতাত্ত্বিক বিভাজন প্রকট হয়, যেমন, পবিত্র আত্মার উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক, গ্রিক বনাম ল্যাটিন সাংস্কৃতিক বিতর্ক। রোম বনাম কনস্টান্টিনোপল রাজনৈতিক পার্থক্যের কারণে ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান চার্চ দুভাগে বিভক্ত হয়। একটি হল রোমান ক্যাথলিক চার্চ যেটি পশ্চিমে, রোমের পোপের নেতৃত্বে ও অপরটি ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ, যেটি পূর্বে, কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্কের নেতৃত্বে। এই বিভাজন, যাকে “গ্রেট স্কিজম” বলা হয়, খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
৫ম শতাব্দীতে ৪৫১ খ্রিস্টাব্দ ক্যালসিডন কাউন্সিলের পর কিছু চার্চ যেমন, কপটিক, আর্মেনিয়ান যিশুর প্রকৃতি নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে আলাদা হয়ে যায়। এগুলো “ওরিয়েন্টাল অর্থোডক্স” চার্চ নামে পরিচিত।
এছাড়াও খ্রিস্টান বাইবেল দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত: পুরাতন নিয়ম (Old Testament) এবং নতুন নিয়ম (New Testament)। এদের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:
পুরাতন নিয়ম যার সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ১০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লেখা। বিষয়বস্তু হল ইহুদি ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ (হিব্রু বাইবেল বা তানাখ) নিয়ে গঠিত। এতে ঈশ্বরের ধারণা, সৃষ্টিতত্ত্ব, ঈশ্বরের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক, ধর্মীয় আইন (তোরাহ), নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী, এবং ইতিহাস (যেমন, মোশির পাঁচটি বই, সাম) রয়েছে। যার ভাষা প্রধানত হিব্রু, কিছু অংশ আরামাইক। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, পুরাতন নিয়ম মশীহের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করে, যিনি স্বয়ং যিশু।
নতুন নিয়ম ৫০-১০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লেখা যার বিষয়বস্তু যিশুর জীবন, শিক্ষা, মৃত্যু, এবং পুনরুত্থান। যেগুলো যিশুর শিষ্য গসপেল ম্যাথু, মার্ক, লুক, জন এদের যিশু সম্পর্কে বর্ণনা; প্রেরিতদের কাজ (Acts); পল ও অন্যান্য নেতাদের চিঠি (Epistles); এবং ভবিষ্যদ্বাণী (Revelation)। নতুন নিয়মের ভাষা গ্রিক ও নতুন নিয়মকে পুরাতন নিয়মের পরিপূর্ণতা হিসেবে দেখা হয়, যেখানে যিশু নতুন চুক্তি (covenant) প্রতিষ্ঠা করেন।
পুরাতন নিয়ম ইহুদি ধর্মের ইতিহাস ও আইনের উপর জোর দেয়, যখন নতুন নিয়ম যিশুর শিক্ষা ও খ্রিস্টান বিশ্বাসের উপর কেন্দ্রীভূত। পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি বর্ণিত, যখন নতুন নিয়মে যিশুর মাধ্যমে সকল মানুষের জন্য নতুন চুক্তি ঘোষিত। ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মে অতিরিক্ত বই (Deuterocanonical) অন্তর্ভুক্ত করে, যা প্রোটেস্ট্যান্টরা বাদ দেয়।
১৬শ শতাব্দীতে প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার (Reformation) খ্রিস্টধর্মের আরেকটি বড় বিভাজন ঘটায়। মার্টিন লুথার, জন ক্যালভিন, এবং অন্যান্য সংস্কারকরা রোমান ক্যাথলিক চার্চের কিছু অনুশীলন ও মতবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। মার্টিন লুথার ১৫১৭ সালে তার ৯৫টি থিসিস প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ক্যাথলিক চার্চের ইন্ডালজেন্স (পাপমুক্তির জন্য অর্থ প্রদান) বিক্রি এবং পোপের কর্তৃত্বের সমালোচনা করেন। এটি প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের সূচনা করে।
ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। যেমন কর্তৃত্ব নিয়ে, ক্যাথলিক সম্প্রদায় পোপকে খ্রিস্টের প্রতিনিধি এবং চার্চের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিশ্বাস করে। বাইবেলের পাশাপাশি চার্চের ঐতিহ্য (Tradition) এবং ম্যাজিস্টেরিয়াম (চার্চের শিক্ষা কর্তৃপক্ষ) সমান গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় শুধুমাত্র বাইবেলকে (Sola Scriptura) সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। পোপের কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উপর জোর দেয়।
ধর্মানুষ্ঠান পালনেও ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। ক্যাথলিকরা সাতটি ধর্মানুষ্ঠান (Sacraments) বিশ্বাস করে: ব্যাপটিজম, কমিউনিয়ন, কনফার্মেশন, বিবাহ, অর্ডিনেশন, কনফেশন, এবং শেষ তেল। এগুলো ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রাপ্তির মাধ্যম। প্রোটেস্ট্যান্টরা সাধারণত দুটি ধর্মানুষ্ঠান (ব্যাপটিজম এবং কমিউনিয়ন) গ্রহণ করে, এবং এগুলোকে প্রতীকী হিসেবে দেখে।
মুক্তির পথ নিয়েও ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। ক্যাথলিকরা বিশ্বাস, ভালো কাজ, এবং ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তি লাভের উপর জোর দেয়। প্রোটেস্ট্যান্টরা শুধুমাত্র বিশ্বাসের মাধ্যমে মুক্তি (Sola Fide) বিশ্বাস করে, কাজের উপর নয়।
ক্যাথলিকরা পুরাতন নিয়মে অতিরিক্ত বই (যেমন, টোবিট, ম্যাকাবিস) অন্তর্ভুক্ত করে। প্রোটেস্ট্যান্টরা এই বইগুলো বাদ দেয়, শুধু হিব্রু বাইবেলের বইগুলো গ্রহণ করে।
ক্যাথলিক উপাসনায় আনুষ্ঠানিকতা, লিটার্জি, এবং মেরির প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করা হয়। প্রোটেস্ট্যান্টদের উপাসনা সাধারণত সরল, এবং তারা মেরির প্রতি ভক্তি প্রত্যাখ্যান করে।
১৫৪৫-১৬৩০ সালে কাউন্টার-রিফরমেশনের মাধ্যমে ক্যাথলিক চার্চ ট্রেন্ট কাউন্সিল (১৫৪৫-১৫৬৩) ডেকে প্রোটেস্ট্যান্টদের সমালোচনার জবাব দেয় এবং নিজেদের সংস্কার করে। এটি ক্যাথলিক মতবাদকে আরও শক্তিশালী করে।
খ্রিস্ট ধর্মের কালানুক্রমিক প্রধান বিবর্তনের সারাংশ:
৩০ খ্রিস্টাব্দ: যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান, খ্রিস্টধর্মের সূচনা।
৫০-১০০ খ্রিস্টাব্দ: ইহুদি ধর্ম থেকে বিচ্ছেদ, নতুন নিয়মের লেখা।
৩১৩ খ্রিস্টাব্দ: রোম সম্রাট কনস্টান্টাইন খ্রিস্টধর্মকে বৈধ ও রাষ্ট্রধর্ম করেন।
৪৫১ খ্রিস্টাব্দ: ক্যালসিডন কাউন্সিল, ওরিয়েন্টাল অর্থোডক্স চার্চের বিচ্ছেদ।
১০৫৪ খ্রিস্টাব্দ: গ্রেট স্কিজম, রোমান ক্যাথলিক ও ইস্টার্ন অর্থোডক্স বিভাজন।
১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ: মার্টিন লুথারের ৯৫টি থিসিস, প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের সূচনা।
১৫৪৫-১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ: ট্রেন্ট কাউন্সিল, ক্যাথলিক সংস্কার।
খ্রিস্টধর্ম ইহুদি ধর্মের একটি সম্প্রদায় হিসেবে শুরু হলেও ধর্মতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে ১ম শতাব্দীতে আলাদা হয়ে যায়। অঞ্চলভিত্তিক পার্থক্য এবং ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ফলে চার্চগুলো বিভক্ত হয়, যার ফলশ্রুতিতে ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, এবং প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় গঠিত হয়। পুরাতন ও নতুন নিয়ম খ্রিস্টান বিশ্বাসের দুটি ভিত্তি, এবং ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে পার্থক্য মূলত কর্তৃত্ব, ধর্মানুষ্ঠান, এবং মুক্তির ধারণার উপর নির্ভর করে।
[চলমান]