ফেসবুকে বিগত আওয়ামী সরকারের দুজন উপদেষ্টার ছবি দিয়েছিলাম যার একজন সালমান এফ রহমান এবং আর একজন ড: গওহর রিজভী। প্রফেসর ড. গওহর রিজভী একজন বাংলাদেশী ইতিহাসবিদ, পণ্ডিত এবং শিক্ষক। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুজনের ছবির সাথে আমি লিখেছিলাম:
“বিগত আওয়ামী সরকারে এই দুজনকে আমার সব সময় মনে হত এরা বিরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দেখতে আকর্ষনীয় এবং স্মার্ট ব্রিলিয়ান্ট হলেও আমার মনে হত এরা ব্যাড অ্যাপল। এরা রাজনীতির জন্য বা দলটির জন্য ক্ষতিকর”।
পোস্টটিতে ১৪০০+ রিঅ্যাকশনের মধ্যে ১৪০০ লাইক। ২৮টি লাভ, ১৬ বিস্ময়, ১৫টি স্যাড রিঅ্যাকশন এসেছে ও শেয়ার হয়েছে ২০টি। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মন্তব্য এসেছে ২১৮টি। আশ্চর্য হচ্ছে ২১৮টি মন্তব্যের বেশিরভাগই প্রফেসর ড. গওহর রিজভীর পক্ষে এই যুক্তিতে যে তিনি সজ্জন, সোবার, হাইলি নলেজিবল, বিশাল ব্যক্তিত্বের মানুষ। কেউ বলেছেন গওহর রিজভী বাংলাদেশের শশী থারুর। কেউ বলেছেন গওহর রিজভী কে সরানোর পর ই মূলতঃ আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, বন্ধুহীন হয়ে গেছে।
উক্ত পোস্টটি দেবার উদ্দেশ্য উক্ত ব্যক্তিবর্গ অসৎ বা অযোগ্য ছিলেন সেটা প্রমাণের চেষ্টা নয়। পোস্টটি দেবার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে প্রকৃত সংগ্রাম, বাংলাদেশে বাঙালি সংস্কৃতির যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তি, তাকে টিকিয়ে রাখা ও শক্তিশালী করা, সেটি কতটুকু তারা অন্তরের গভীরে ধারণ করতেন। সেটা যারা করেন না, তারা যত মেধাবী ও বুদ্ধিমান হবেন, এবং শীর্ষ নেতৃত্বের যত কাছাকাছি থাকবেন, ততই ক্ষতিগ্রস্ত হবে দলটি।
জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে অটুট ও শক্তিশালী রাখতে গেলে শীর্ষ নেতৃত্ব ও নেতৃত্বকে ঘিরে রাখা প্রাথমিক বলয়কে শতভাগ গভীর রাজনৈতিক বোধকে ধারণ করতে হবে। এর বাইরের স্তরে থাকতে পারে নানা ভাবধারার মানুষ যাদের নানা যোগ্যতা রয়েছে যেগুলো দল বা দেশের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু কোনভাবেই শীর্ষ নেতৃত্বকে ঘিরে রাখা প্রাথমিক বলয়ে নয়, উপদেষ্টাতো নয়ই।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশী কারও সাথে কথা বলতে গেলেই তারা প্রথমেই একটি বিদ্রুপ দিয়ে শুরু করেন। বলেন তোমাদের রাজনীতিতো “দুই বেগমের ঝগড়া”। আমাদের ডিপ স্টেট পত্রিকাগুলো সেটাকে আবার দেশীয়করণ করে “দুই নেত্রীর চুলোচুলি” আখ্যা দিয়েছিল। ১৯৯১ সালে ড: গওহর রিজভী "বাংলাদেশ: সিভিল সোসাইটির দিকে" নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যা প্রতিপত্তিশালী চ্যাথাম হাউস বা রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এর দ্য ওয়ার্ল্ড টুডে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। দুই দলের বিরোধ নিয়ে ড: গওহর রিজভী লিখেছিলেন “এরশাদ যে শাসন কাঠামো গড়েছিলেন, তা ছিল ভঙ্গুর এবং ১৯৮৫ সালেই প্রথম জনপ্রিয় আন্দোলনের মুখে তা ভেঙে পড়তে পারত। অথচ বাস্তবে, তিনিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকাল রাষ্ট্রপতি পদে আসীন ছিলেন। এর অন্যতম কারণ ছিল বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব। ......... তবে আরও গভীর বাধা ছিল আওয়ামী লীগ (আ. লীগ) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মধ্যকার শত্রুতা ও অবিশ্বাস। অবশ্যই, তাদের মধ্যে মতাদর্শগত ও নীতিগত পার্থক্য ছিল, যা রাজনৈতিক জোট গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়াত। কিন্তু বড় বাধা ছিল দুই নারী নেত্রী—শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া—এর ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা”।
সত্যিই কি দুই নারী নেত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই বাংলাদেশের রাজনীতির সমস্যা? ড: গওহর রিজভী আন্তর্জাতিক মহলে সুপরিচিত অনেকটাই ড: ইউনুসের মত। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশী যারাই যা কিছু করবে, খবর হোক, বা প্রবন্ধ বা গবেষণা, ড: গওহর রিজভীর লেখা তারা পড়বে। এর অর্থ হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যে অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়ন করা হল, সেটা যে একটি জাকার্তা মেথড ছিল, সেটা যে বাঙালী জাতীয়তাবাদ বিলোপের মিশন ছিল সেটা মনে হয় ড: রিজভী ধরতে পারেননি। ধরতে পারলে দুই নারী নেত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কখা বলতেন না। ১৯৭৫, ২০০৪, ২০০৯, ২০২৪ বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে বিলোপের রাজনীতি ও দেশকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেবার রাজনীতি।
৭৫ সালে মুজিব হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক জিয়া তার দলের নাম বিএনপির নাম “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী” দল দিলেন কেন? সেটাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তারা নামই দিয়ে দিয়েছে আর আমরা চিনতে পারছি না। ড: রিজভী নিজেই লিখেছেন “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি যাদের মধ্যে জীবন্ত, তাদের কাছে এএল (আওয়ামী লীগ) জাতীয়তাবাদের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
ড: রিজভী আরো লিখেছেন “শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি, সন্দেহ করতেন যে তাঁর পিতার হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়ার স্বামী, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। তবে এই ঘৃণা শুধুই পারিবারিক নয়। হাসিনা বিশ্বাস করতেন—যদিও সেটি বাস্তবসম্মত ছিল না—যে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনে বিরোধিতা করছে এবং বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করছে”। এর অর্থ পাকিস্তান যে ৭১ এর পরাজয় মেনে নেয়নি, তারা যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর একটি বড় অংশকে প্রভাবিত করে চলেছে এখনও, ২০২৪ এর ঘটনা যার প্রমাণ, সেটাকে ড: রিজভী "বাস্তবসম্মত" মনে করতেন না এবং সেটাকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত “ঘৃণা” হিসাবে দেখেছেন।
ড: রিজভী আরো লিখেছেন “তিনি (শেখ হাসিনা) সেই 'শয়তানকে' পছন্দ করতেন, যাকে তিনি চিনতেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এরশাদকে কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন এরশাদ তাঁর স্বামীর হত্যার সঙ্গে যুক্ত এবং তাই তাঁর সঙ্গে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুযায়ী, তাদের শত্রুতা এমন ছিল যে উভয়েই একে অপরকে ক্ষমতায় দেখতে না চেয়ে বরং এরশাদের শাসনেই সন্তুষ্ট ছিলেন”। এক্ষেত্রেও ড: রিজভী আওয়ামী বিএনপি অসমঝোতাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শগত বিরোধ ও তার সামরিক ডিপ স্টেটকে না দেখে উভয় নেত্রীর ব্যক্তিগত শত্রুতা হিসাবে দেখেছেন।
আদর্শগত বিরোধটা যে প্রকট, সেটা তিনিই বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সেটাকে “শিশুসুলভ আচরণে” হিসাবে বর্ণনা করেছেন সাধারণ জনগণের দোহাই দিয়ে। এই সাধারণ জনগণ কারা? তিনি লিখেছেন “যখন ছাত্র ও শ্রমিকরা আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিভক্ত হয়ে পড়ে একটি অদ্ভুত বিতর্কে—আন্দোলনের স্লোগান হবে 'জয় বাংলা' নাকি 'বাংলাদেশ' (জিন্দাবাদ)? এই বিতর্ক দুই দলের আদর্শগত পার্থক্যের প্রতিফলন হলেও, সাধারণ জনগণের দৃষ্টিতে তা নেতাদের শিশুসুলভ আচরণে পরিণত হয়”।
শুধু তাই নয়, ড: রিজভী ৯০ এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো কিছুটা “চাপে পড়ে” করেছে বলে মনে করেন, তিনি লিখেছেন “শেষ পর্যন্ত, তরুণ বিক্ষোভকারীরা নেতৃত্বের অভাবে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার এবং এরশাদের পতন না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার। সেই সময়, নেতৃত্বহীন অবস্থায় ছাত্রদের দ্বারা অবজ্ঞার আশঙ্কায় উভয় দলের নেতৃত্ব কিছুটা চাপে পড়ে এবং একটি যৌথ মঞ্চ গঠনে রাজি হয়”। এটা একান্তই বিরাজনৈতিক মন্তব্য।
ড: গওহর রিজভী ৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের জন্য সরাসরি শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছিলেন। তিনি লিখেছেন “নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা, একজন গণতান্ত্রিক দলের নেতা হিসেবে, পরাজয়ের দায় স্বীকার করেন। এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত অবস্থান ছিল না; বাস্তবে, অনেকভাবে, তিনিই ছিলেন এ পরাজয়ের মূল কারণ। তিনি দলের সবচেয়ে বড় শক্তি, আবার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাও”।
তিনি লিখেছেন “হাসিনা প্রবীণ নেতাদের “চাচা সিনড্রোম” এবং তাদের আত্মতুষ্টিবাদী বুদ্ধিবৃত্তিক অভিমান অপছন্দ করতেন। ফলে, তিনি তরুণদের নিয়ে আসেন, যারা উদ্যমী হলেও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সূক্ষ্ম কৌশলে ছিলেন অনভিজ্ঞ। প্রবীণ নেতারা নতুনদের এই উত্থানে ক্ষুব্ধ হন। দেশের অনেক বিদ্বজ্জন, যারা একসময় এএল-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কেউ কেউ সময়ের সঙ্গে দূরে সরে যান কিংবা সরকারি প্রলোভনে যুক্ত হন; যারা থেকেছেন, তারা কার্যত উপেক্ষিত। এর ফলে, দল শহুরে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির সমর্থন হারায় এবং তার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও দলীয় গ্রাসরুট সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী, হাসিনা সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হন।
নির্বাচনী কৌশলে পরামর্শ গ্রহণে ব্যর্থতা বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়। হাসিনার জেদ যে এরশাদ ও জিয়াউর রহমান উভয়ই সমভাবে দুর্নীতি ও গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য দায়ী, তা একাডেমিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য হলেও, অনেক ভোটারের কাছে তা অবাস্তব ও পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়। তরুণ ভোটারদের এক বড় অংশের কাছে শেখ মুজিব ছিলেন অতীতের এক কিংবদন্তি, অথচ জিয়া ছিলেন তাঁদের কাছে এক জীবন্ত রাষ্ট্রনায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের বীর। বারবার মুজিব-যুগের দুর্বলতা তুলে ধরা হলেও, জিয়ার দিকটি সামরিক সমর্থকদের অপমানের আশঙ্কায় উপেক্ষিত থাকে”।
তিনি লিখেছেন “বাংলাদেশিরা মৌলিকভাবে ভারত-বিরোধী বা হিন্দু-বিরোধী নয়; বরং এটি এক সহনশীল ও বহুত্ববাদী জাতি, এবং এরশাদের শাসনামলে ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা সত্ত্বেও, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড রয়েছে। তবুও, হিন্দু জমিদার ও অর্থনৈতিক শোষণের ঐতিহাসিক স্মৃতি গভীরভাবে প্রোথিত। ১৯৪৬ সালে মুসলমানদের পাকিস্তান পক্ষে ভোট দেওয়া ছিল একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের জন্য নয়, বরং হিন্দু জমিদারদের শোষণ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়”।
ড: রিজভী ১৯৪৬ সালে আগের হিন্দু জমিদার ও অর্থনৈতিক শোষণের ঐতিহাসিক স্মৃতি তুলে ধরেছেন কিন্তু ৭১ এর অত্যাচার বা ৪৬ থেকে ৭১ এর অর্থনৈতিক শোষণের ঐতিহাসিক স্মৃতি বলতে ভুলে গেছেন।
তিনি লিখেছেন “এই ভয় পুনরুজ্জীবিত হয় শেখ হাসিনার একটি মন্তব্যে, যেখানে তিনি বলেন—এরশাদের আমলে জমি হারানো হিন্দুরা তাদের জমি ফিরে পাবে। এই বক্তব্যটি একটি আতঙ্ক সৃষ্টি করে—যেন হিন্দু জমিদারেরা ফিরছে এবং মুসলমান কৃষকরা উচ্ছেদ হবে। শেষ মুহূর্তে এই মন্তব্যটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যখন সংশোধনের সুযোগ আর ছিল না”। তিনি কি জানতেন না যে গোয়েবলসিয় কায়দায় তার আগের ১৫ বছর ধরে এগুলো প্রচার করেছে কারা এবং কেন?
তিনি আরো লিখেছেন সঠিক ভাবেই “চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, এএল-এর পরাজয়ের প্রধান কারণ ছিল এএল বনাম বাকিদের মধ্যে এক সরল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা শেষ সপ্তাহে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। “নৌকা ঠেকাও” নামে একটি ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়—নৌকা ছিল এএল-এর প্রতীক। এতে অনেক প্রার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিদ্ধান্ত নেন—তাঁদের ভোট একটি প্রার্থীকে একত্রীকরণ করে যেন এএল বিরোধী ভোট বিভক্ত না হয়। এই কৌশল অত্যন্ত কার্যকর ছিল, যেমন দেখা যায় বহু কেন্দ্রে, যেখানে এএল প্রার্থী দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও অন্যদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে পরিচিত "আসন সমন্বয়" কৌশলটি ছোট দলগুলোর জন্য পরিচিত হলেও, এখানে এর সাফল্য ও সমন্বয় ছিল এত সুপরিকল্পিত যে, এটি স্বতঃস্ফূর্ত নয় বরং একটি সুচিন্তিত কৌশল বলে প্রতীয়মান হয়”। ড: রিজভী ধরতে পরেননি যে এই “নৌকা ঠেকাও” মানে বাঙালি জাতিয়তাবাদ ঠেকাও, ৭১ এর চেতনা ঠেকাও, বাংলাদেশের সংবিধান ঠেকাও, আবার পাকিস্তান বানাও।
বিএনপির নির্বাচনে জিতে আসা প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন “বিএনপির জয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক কারণ ছিল খালেদা জিয়ার ব্যক্তিত্ব ও অবস্থান”।
খালেদা জিয়া সম্পর্কে তিনি পরিশেষে লিখেছেন “তিনি একটি অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান সরকারের প্রধান—এখন সিদ্ধান্ত তাঁর হাতে”।
ড: গওহর রিজভী মেধাবী, সৎ, দক্ষ, করিৎকর্মা এবং সফল এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতাটা ঠিক কোথায়, আওয়ামী লীগ কি করতে চাইছে, ঠিক কোন জিনিষটাকে দলটি বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে, এই বিষয়টা বিমূর্ত। একে আপনি যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধা দিয়ে ধরতে পারবেন না। একটি বিমূর্ত চিত্র মেধা দিয়ে ধরা যায় না। এটি অবচেতনের একটি আভা। যেটি অসম্ভব শক্তিশালী। যেটিকে আমেরিকা ভয় পায়, যেটি পাকিস্তানীরা ভয় পায়। যেটিকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীও ভয় পায়। বিশ্বব্যাপী যেটিকে বিনষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে জর্জ সোরোস ও গ্লোবাল ডিপ স্টেট। সেটিকে বোঝে না যারা তারা সেটির পরামর্শক নিয়োগ হয়ে গেলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
ড: রিজভী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং এমএ উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী লাভ করেন। ১৯৭২ সালে রোডস স্কলার হিসেবে তিনি ট্রিনিটি কলেজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। গওহর রিজভী সেন্ট এ্যান্থনি'স কলেজ,অক্সফোর্ড এ জুনিয়র লেকচারার হিসেবে এবং ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সিনিয়র সহযোগী সদস্য হিসেবে ছিলেন। এরপর ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত ব্যালিওল কলেজ, অক্সফোর্ড এ ইতিহাস পড়ান। তিনি নাফেল্ড কলেজ, অক্সফোর্ড এ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ম্যাকআর্থার স্কলার এবং ফেলো ছিলেন ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৯২ সালে রয়্যাল ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এর সহযোগিতায় একটি উচ্চ পর্যায়ের অ্যাংলো-ইরানিয়ান গোলটেবিল বৈঠকের ব্যবস্থা করেন, যাতে দুই দেশের সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাদের আলাপ সহজতর হয়। ১৯৯২ সালে একই বছর তিনি উইলিয়ামস কলেজ, ম্যাসাচুসেটসে আর্নল্ড বার্নহার্ড অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ইতিহাস পড়ান। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক রিজভী নিউ ইয়র্ক এর এশিয়া সোসাইটির সমসাময়িক বিষয়ক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ফোর্ড ফাউন্ডেশন এ উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের দিল্লি প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে জননীতি বিষয়ে একজন প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি অ্যাশ সেন্টার ফর ডেমক্রেটিক গভার্নেন্স অ্যান্ড ইনোভেশন-এর পরিচালক ছিলেন। এরপর ২০০৮ ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রভোস্ট হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
উইকিপিডিয়াতে থাকা ড: রিজভীর প্রোফাইল বলছে তিনি তার পেশাগত জীবনের বেশিরভাগ সময় সেই শক্তি ও সেই রাজনীতির অধ্যাপনা করেছেন যে রাজনীতি পশ্চিমা ধারার। যারা আজ বাংলাদেশের রাজনীতিকে সংস্কার করার জন্য দেশটিকে ধ্বংস করে, বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে একটি অবৈধ পশ্চিমা দাসরাষ্ট্রের রাজনীতি কায়েম করতে চাইছে।
আর একটা কথা, ড: গওহর রিজভী কিন্তু তার ছাত্র জীবনের প্রথম অংশ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে অতিবাহিত করেছিলেন।