EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
রাজনীতি
মনে শুধু ঘৃণা আর আত্ম ঘৃণার প্রতিফলনে:
মানসিক সমৃদ্ধি ও সম্পর্ক
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
JadeWits Technologies Limited
মানসিক সমৃদ্ধি ও সম্পর্ক

"হাত মে লুটা মু মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” -১

বয়সন্ধীকালের মন

"হাত মে লুটা মু মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”

পাকিস্তান আমলে একটা কথা খুব জনপ্রিয় ছিল সেটা হল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” (লড়াই করে পাকিস্তান ছিনিয়ে নেব)। এটা আসলে ১৯৪৬ এর ভারত পাকিস্তান দেশভাগের সময়কার একটি শ্লোগান "হাত মে লুটা মু মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” থেকে এসেছে। তবে আমাদের দেশে এটি বিদ্রুপ অর্থে ব্যবহৃত হত। যখনই কেউ যুক্তি, তর্ক বা ন্যায্যতা ফেলে গলাবাজি করে বা জোর করে কিছু পেতে চাইত তখন বলা হত। এক ক্রিকেটারের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় বাংলাদেশ। বিপজ্জনক হচ্ছে এতে দুই ভাগ হয়ে গেছে দেশ। সমস্যা হচ্ছে এই দুই ভাগেরই মানসিকতা হল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” যাদের একদলের মুখ মে দাড়ি আর একদলের মনে আধুনিকা নারী।

আপনি যদি রাস্তায় চলতে চলতে কোন হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের সামনে চলে যান তখন এমন একটি সতর্কতা নির্দেশ চোখে পড়তে পারে: “৫০ কেজির কম ওজনের ব্যক্তিদের উপকেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ”। হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার জ্ঞান না থাকলে এই সতর্কতা নির্দেশকে আপনার বেশ অদ্ভুত মনে হতে পারে। ডালজিয়েল এবং তার সহযোগীদের গবেষনায় দেখা যায় যে ৫০ কেজি ওজনের একজন মানুষের ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন কারেন্ট একজন ৭০ কেজি মানুষের চাইতে প্রায় তিনভাগের একভাগ কম। যার অর্থ শরীরে যে পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে হার্টের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে সেটা ৫০ কেজি ওজনের মানুষের চেয়ে ৭০ কেজি ওজনের মানুষের ১.৩৫ গুন বেশি। বৈদ্যুতিক স্টেপ এবং টাচ ভোল্টেজের বিপদ তাই ৫০ কেজি বা তার কম ওজনের মানুষের ক্ষেত্রে বাড়তে থাকে। এক হাজার ভোল্টের বেশি ভোল্ট যেখানে আছে সেটাই হাই ভোল্টেজ ধরা হয় যেখানে আমাদের দেশেই হচ্ছে ভুলতা-মদুনাঘাট সাত লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার ভোল্টের গ্রিড লাইন।

দেহ পরিণত না হলে হাই ভোল্টেজ যেমন বিপজ্জনক, মন পরিণত না হলে যৌনতা তেমনই বিপজ্জনক। গত এক’শ বছরের কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধীকালের তথ্য নিয়ে তরা গবেষণায় দেখা গেছে যে কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধীকাল এগিয়ে আসছে। আগে গড়ে মেয়েদের মাসিক শুরুর সময় ছিল ১৬ বছর, এখন সেটা এগিয়ে ৯-১০ বছরে চলে এসেছে। অপর দিকে আগে ১৯ বছর বয়ঃসন্ধীকালের শেষ ধরা হত কিন্তু এখন সেটাকে পিছিয়ে ২৫ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপরে বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকে। কেন এমন হচ্ছে সেই আলোচনা অন্য কোন দিন হবে। এইসব পরিবর্তন এবং ইন্টারনেটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের নিজেকে মুক্তভাবে প্রকাশের যে সুযোগ, এই দুটি বিষয় মিলে কিশোর কিশোরীরা এখন বিভ্রান্ত এবং বয়ঃসন্ধীকালের কিছু বিশেষ চরিত্র তাদের চরমপন্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই চরমপন্থা উভয় দিকেই আছে। একটি চরমপন্থা হল পশ্চিমা ধর্ম (আরবও পশ্চিমে) ও সমাজের সনাতন ফর্মুলা অনুযায়ি একটি লিঙ্গকে (অবশ্যই নারী) ঘরে বা বাক্সে বা বোরকায় আবদ্ধ করে ফেলা। অপর চরমপন্থা হল এই সনাতনপন্থীদের ‘পাকিস্তান’ ট্যাগ লাগিয়ে তাদের বর্জন করা। মানুষকে আবদ্ধ করা এবং বর্জন করা উভয়ই মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮ এবং বাংলাদেশের সংবিধান উভয়েরই বরখেলাপ।

এবার খুঁজে দেখা যাক এই চরমপন্থার পেছনের কারন কি এবং কিভাবে এর থেক এই বিভাজন থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। এর জন্য আমাদের বুঝতে হবে বয়সন্ধীকালের মন এবং মন ও মস্তিষ্ক এবং এই দুটোর উপর পরিবেশের যে প্রভাব সেই সম্পর্কে একটু বিশদভাবে।

বয়সন্ধীকালের মন

বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রে তারা যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বেশি সময় কাটায় সেই স্থানের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বয়সে আবেগ, পারিবারিক নির্ভরতা, নিরাপদ ও সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক জগৎ থেকে বের হয়ে এসে তারা ক্রমেই বাইরের জগতের সাথে একাকী মিথস্ক্রিয়া করতে শেখে এবং তার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তার আবেগ, চিন্তাপ্রক্রিয়ার দক্ষতা ও বিচারবোধ প্রতিমুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তার পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা যত স্বাভাবিক ও যুক্তিসংগত হবে, ততই সে নিজেকে দুনিয়ার সাথে আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতার সাথে সংযুক্ত করবে এবং পরিশেষে দায়িত্ব নিতে শিখবে নিজের ও সমাজের উন্নতি ও পরিবর্তনের।

শিশু তার গড়ে ওঠার বিভিন্ন ধাপে যখন মস্তিষ্কের যে অংশ সে প্রথম ব্যবহার করতে শেখে সেটার অতি প্রয়োগে মজা পায়। যখন সে প্রথম হাত-পা নাড়তে শেখে তখন সেগুলো করেই সে আনন্দ পায় এবং সর্বদা সেটা করে থাকে। এর পর আর একটু বড় হলে সে যখন তার আবেগের নিয়ন্ত্রণ নিতে শেখে তখন সে সেটির যথেষ্ট ব্যবহার করে। একটি নতুন জামা বা প্রিয় খাবারের জন্য কখন কার কাছে কিভাবে বায়না ধরতে হবে সে দ্রæতই সেটা শিখে নেয়। সাত বছরের পর থেকে ক্রমেই তার নিওকর্টেক্স সক্রিয় হতে থাকে এবং বয়ঃসন্ধিকালে যেটি পূর্ণতা পায়। বয়ঃসন্ধিকালে তাই তার নতুন পাওয়া ‘যন্ত্রটি’ যেটি ভাষার ব্যবহার, বিমূর্ত চিন্তা, পরিকল্পনা ইত্যাদিতে দক্ষ, সে সেটির অতি ব্যবহার শুরু করে। এর ফলে বয়ঃসন্ধিকালে শিশুর কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায় মনোবিজ্ঞানী এলকাইন্ড যাদের বয়ঃসন্ধিকালে ৬টি অপরিণত চিন্তা বলে নির্দেশ করেছেন।

এলকাইন্ডের বয়সন্ধীকালীন ছয়টি চিন্তা

১. আদর্শবাদ ও অতি সমালোচনার মানসিকতা

বয়ঃসন্ধিরা মনে মনে একটি আদর্শ পৃথিবী কল্পনা করে। কিন্তু বাস্তবে সেটার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় পৃথিবীটাকে তারা গোলমেলে ও বিপজ্জনক দেখে থাকে। এটাকে তারা বড়দের (যারা এই পৃথিবীটার চালক বলে তারা ধরে নেয়) ব্যর্থতা বলে মনে করে এবং এর জন্য বড়দের ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠিতদের তারা দায়ী করে থাকে এবং সমালোচনায় মুখর থাকে।

২. তর্কপ্রবণতা

বয়ঃসন্ধিরা সরল যুক্তিনির্ভর চিন্তা করে। যেহেতু প্রথমবারের মতো তারা তাদের যুক্তিশীল মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে শেখে, তারা বোঝে না কোথায় যুক্তি ছেড়ে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আরো বেশি ফলদায়ক এবং বাস্তবসম্মত।

অতি জটিল বিষয়ে যে সরল যুক্তি যথেষ্ট নয়, এই অভিজ্ঞতা তাদের থাকে না তাই তারা অতি তর্কপ্রবণ হয়ে থাকে।

৩. সিদ্ধান্তহীনতা

সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নানা বিকল্প পথই তাদের কাছে সরল যুক্তিতে গ্রাহ্য। অভিজ্ঞতার অভাবে তারা যুক্তির জালে আটকে পড়ে; কিন্তু চিন্তাগত বোধ তাদের সাহায্য করতে পারে না। তাই তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।

৪. আপাত কপটতা

বয়:সন্ধীরা মনে মনে একটি আদর্শ পৃথিবী কল্পনা করে কিন্তু তাদের নিজেদের জীবন তখনও এতটাই আবেগ ও প্রবৃত্তি নির্ভর যে সেই আদর্শ নিজের জন্য প্রয়োগ করতে তারা একেবারেই অক্ষম। একদিকে তারা অতি আদর্শবাদী কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে তারা স্বার্থপর এবং আত্মকেন্দ্রিক। এটিই তাদের আপাত

কপটতা।

৫. আত্ম-চেতনা

বয়ঃসন্ধিরা মনে করে দুনিয়ার সবাই তাকে দেখছে বা তার কথা ভাবছে। নিজের সম্পর্কে তার এমন ধারণা যে সে যা ভাবে বা করে সেগুলো মানুষ লক্ষ্য করে, মূল্যায়ন করে এবং সেটা অন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু। আসলে

যেটি একদমই সত্য নয়। অতি আত্মচেতনা তাদের মধ্যে সে এক জনদৃষ্টির লক্ষ্য এমন ভ্রান্তি তৈরী করে।

৬. অসাধারনত্ব ও অভেদ্য

বয়ঃসন্ধিরা মনে করে সে সব রকম বিপদের ঊর্ধ্বে। সে নিজেকে অবচেতনে সুপারম্যান বা ওয়ান্ডারওম্যানের মতো সকল বিপদ ও পরিনতির উপরে মনে করে। যে কাজ করলে শত ভাগ বিপদের আশঙ্কা, তবু সে মনে করে সে পার পেয়ে যাবে।

বয়ঃসন্ধিকালীন এসব ধারণা থেকে তৈরি হয় কল্পিত দর্শকের ধারণা এবং ব্যক্তিগত উপকথা। কল্পিত দর্শকের ধারণা হলো সে মনে করে তার জীবন কোনো মূল্যবান মঞ্চের এক প্রদর্শনী এবং প্রচুর দর্শক সেটি দেখছে যদিও

বাস্তবে তেমন কেউ-ই তাতে উৎসাহী নয়, এই দর্শকরা তার কল্পিত। ব্যক্তিগত উপকথা হচ্ছে মঞ্চে প্রদর্শিত তার জীবন যেন একটি উপকথা, যার নায়ক বা নায়িকা সে নিজে। এমন পৃথিবীতেই বয়ঃসন্ধির বাস।

এলকাইন্ডের উপরিউক্ত বয়ঃসন্ধিকালীন চিন্তাগুলো তার পূর্ববর্তী মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা সমর্থন করে এবং আনেকগুলো পরবর্তী গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে। এতে দেখা যায় যে বঃসন্ধিকালীন চিন্তাগুলো যদি শিশুর

শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত বা আচরণগত কোনো কারণে অসমাধিত থেকে যায়, বা বঃসন্ধি পার হয়ে গেলেও কোনো কোনো চিন্তাধারা থেকে সে বের হয়ে না আসতে পারে, তাহলে বিভিন্ন পুশ ও পুল ফ্যাক্টরের কারণে সে কৈশোরের অপরাধমূলক বা আত্মহানিকর কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেতে পারে।

চলবে…..

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।