নিজেদের সেরা মনে করা, অথচ অপরকে খু'ন, ধ্বংস ও সমূলে উৎপাটনের মানসিকতা, যেটা ছিল একসময় জার্মান নাৎসীদের, এখন ইসরাইল ও আমেরিকার। সেরা মেধা ও সফলতম মানুষদের এই অদ্ভুত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ও একচোখা নীতি কেন? এক বছর আগে এই লেখাটা যখন লিখেছিলাম তখন জানতামনা যে বর্তমানের মার্কিন রাজনীতিকে মাফিয়াকরণ করেছে যারা সেই কোক ব্রাদার্স এসেছে ইহুদি পরিবার ও সংস্কৃতির মানসিকতা ধারণ করে। যেটা এখন বাংলাদেশেও ছড়িয়েছে।
আপনি যদি কোন মাফিয়া বা ড্রাগলর্ড গডফাদারের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তাহলে আপনি এক অদ্ভুত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ও একচোখা নীতি নিয়ে বেড়ে উঠবেন।
পরিবারের কর্মচারীরা, পারিবারিক ব্যবসার কর্মকর্তারা আপনাকে এত স্নেহ ভালবাসা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা আর সম্মান দেবে যে আপনার মনে হবে জীবনটা যেন বেহেশত। সবাই এক সাপোর্টিভ।
কিন্তু আপনি এক সময় থেকে খেয়াল করা শুরু করবেন যে পরিবারের বাইরের লোকেদের আচরণ কেন যেন বন্ধুসুলভ নয়। তারা ট্যারা চোখে তাকায়। তারা আপনার পেছনে কথা বলে।
যে সাপোর্টটা আর ভালবাসাটা পরিবারের কর্মচারীরা, পারিবারিক ব্যবসার কর্মকর্তারা আপনাকে দেয়, বাইরের লোক আপনাকে সেটা দেয় না। কিন্তু আপনি তো কোন খারাপ কাজ করেন নি। আপনার মন শুধুই ভালবাসায় পরিপূর্ণ।
আপনার মনটা উদার, অন্তরে সবার জন্য ভালবাসা। তবুও ওরা কেন আপনাকে ভিন্ন চোখে দেখে? আপনার মনে হতে থাকবে নিশ্চয়ই ওই লোকেরা খারাপ।
তারা আপনার প্রতি ঈর্ষা করে, আপনার সুখী, সফল, আনন্দময় জীবন তারা সহ্য করতে পারছে না বলে তারা আপনার শত্রু। আপনি তাদের ধ্বংস চাইবেন।
ওরা যে সব মন্দ কথা বলে বেড়ায়, অর্থাৎ আপনার পরিবারের ব্যবসা মন্দ ও আপনার পরিবারের প্রধান ও পারিবারিক ব্যবসার কর্মকর্তাদের যে খুনী, তাদের অত্যাচারী আচরণের কথা, ক্ষতিকর ব্যবসা করে অন্য পরিবারের সন্তানদের জীবন ধ্বংস করার কথা এগুলো আপনি শুনেও শুনবেন না।
এগুলো নিয়ে দু একবার মনে খটকা লাগলেও আপনি দেখবেন যে এগুলো নিয়ে পরিবারে কোন কথা উঠুক এটাতে কেউ উৎসাহী না। এসব কথা বলতে গেলেই সবাই কেমন যেন শীতল চোখে তাকায়।
যার অর্থ এগুলো ট্যাব্যু, এগুলো নিয়ে কথা বলা ব্লাশফেমি। এগুলৌ আপনার অনেক ছোট বয়সেই শেখা হয়ে গেছে। তাই এই বিষয়গুলো আপনি অবচেতনেই অবজ্ঞা করে চলেন। এসব কথা আপনার কানেই ঢোকে না। শুধু এসব কথা যারা বলে আপনি মনে করেন তারা আপনার শত্রু, আপনার পরিবারের শত্রু, আপনি যে সুরক্ষিত বেহেশতখানায় আছেন তার শত্রু।
আপনার শুধু মনে হয় ঐ লোকগুলো আপনার এই জীবন ধ্বংস করে দিতে চায়। বিনিময়ে আপনার মনও চায় ঐ লোকগুলোকে ধ্বংস করে দিতে।
এই যে মানসিকতা, এটাকেই বলতে চাই মাফিয়া ফ্যামিলি সিনড্রোম। এই সিনড্রোমে যারা ভোগে তারা অবচেতন মনে তারা এই ধারণা পোষণ করে যে তারা যে মুক্ত ও নিরাপদ জীবন উপভোগ করছে সেটা মেকি, সেটা সাময়িক, সেটা চুরি করা, ডাকাতি করা, মানুষের ক্ষতি করে অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত।
তারা জানে যে এটা ভেঙে পড়বে। এর ফলে তারা ভিন্নমতের যারা তাদের শত্রু ভাবে। তাই সবকিছু নিজেদের মনমত না হলে তারা অস্বস্তিতে ভুগতে থাকে ও সেটা ধ্বংস করতে চায়।
আমেরিকার স্বাধীনতার পর এই দেশী বিদেশী মাফিয়ারা ছেয়ে গেছিল আমেরিকার সমাজে। ক্রমে ক্রমে তারাই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল সবকিছুর।
সেখানকার মানুষের দেয়াল পিঠ ঠেকে গেলে তারা এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সেটাই আমেরিকার গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়।
গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর আমেরিকার নিয়ম নীতি, আইন কানুন, প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতি এমন করা হয় যেন এই মাফিয়ারা আর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে। ঘোষিত হয় রাষ্ট্র হবে জনগণ গঠিত, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়ে। মার্শাল প্ল্যানের মত আমেরিকার বিপুল সাহায্যে তারা আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু বিনিময়ে প্রায় সারা ইউরোপ আমেরিকার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
আমেরিকানদের উপর ইউরোপিয় দেশগুলোর সামরিক নির্ভরতাও বাড়তে থাকে। বহু দেশে স্থাপিত হয় আমেরিকার সামরিক ঘাটি। এর প্রভাব ইউরোপের রাজনীতিতেও পড়ে।
জ্ঞান বিজ্ঞান ও নৈতিকতায় গত দুই হাজার বছরের পথপ্রদর্শক ইউরোপ হয়ে পড়ে মাফিয়াদের পরিবারের মত। তারা ভুগতে থাকে মাফিয়া ফ্যামিলি সিনড্রোমে। আমেরিকা সারা দুনিয়ায় কি করছে সেটাতে তারা হয়ে যায় অন্ধ। তারা এটুকুতেই সুখী যে আমেরিকা তাদের ব্যবসা দিচ্ছে নিরাপত্তাও দিচ্ছে।
কিন্তু ৭০ এর দশক থেকে আবার আমেরিকায় কর্পোরেট মাফিয়াতন্ত্র এত শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে গৃহযুদ্ধে বিজয়ের পর আমেরিকার নিয়ম নীতিতে যে মাফিয়াবিরোধী রিফর্ম হয়েছিল সেগুলো নষ্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা হয় আমেরিকার রাষ্ট্রব্যবস্থায় আবার জনগনকে মাফিয়া দ্বারা প্রতিস্থাপিত করতে।
এটা করতে প্রথমে রাজনীতিতে টাকা ঢেলে, প্রচার বাড়িয়ে জনপ্রিয় কনম্যানদের (ভুয়া ব্যক্তিত্ব) আইনপ্রণেতা বা সিনেটর করা হয়। এর পর আমেরিকার আইন কানুনে পরিবর্তন করা হয় জনগণের অধিকার কমিয়ে কোম্পানীগুলোকে শক্তিশালী করতে। পুরো রাজনৈতিক পরিমন্ডল হয়ে যা জোকারদের কান্ডকারখানার প্লাটফর্ম। পুরো রাষ্ট্র আসলে চলে ব্যবসায়ী ও মাফিয়া স্বার্থ দ্বারা।
এই প্রক্রিয়াটা আমেরিকায় শুরু করেছে একটি পরিবার, আসলে দুই ভাই যারা কোক ব্রাদার্স নামে পরিচিত। যেহেতু আমেরিকা এর মধ্যেই সারা দুনিয়ার অর্থনীতি, ব্যবসা ও নিরাপত্তার সাথে জড়িত, কোক ব্রাদার্সের অপচিন্তা, অপকর্ম ছড়িয়ে গেছে সারা দুনিয়াতে যারা মুক্ত অর্থনীতির দেশ বলে পরিচিত।
যদিও কোক ব্রাদার্স তাদের অপকর্ম রিপাবলিকানদের হয়ে করেছে, কিন্তু তার ফল ডেমোক্রাটরাও ভোগ করেছে। সিস্টেম ধ্বংস যে দলই করুক তার প্রভাব সারা আমেরিকার উপর পড়েছে এমনকি সারা দুনিয়ার উপর। এর ফলে আমেরিকার অন্যায় যুদ্ধে নিহত হয়েছে সারা দুনিয়ার মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ। ধ্বংশ হয়েছে কত দেশ কত সমাজ। গৃহহীন দেশছাড়া হয়েছে কোটি কোটি মানুষ।
আজ সময় নেই, পরে কোন একদিন এই কোক ব্রাদারদের সম্পর্কে লিখব। এসব না জেনে যারা আমেরিকার স্বাধীনতাবাদ বা লিবারেটারিয়ানিজম ও মুক্ত জীবন নিয়ে নিয়ে গর্ব করেন ও সেটা সমর্থন করেন তারা আসলে ভুগছেন ঐ মাফিয়া ফ্যামিলি সিনড্রোমে।