EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

রাজনৈতিক শক্তির সাদা কালো ও রঙের যুদ্ধ

কৃষ্ণ শক্তির কবলে বাংলাদেশ

কথা হচ্ছে বাংলাদেশের বুকে চেপে বসা ধর্মীয় সন্ত্রাস ও খিলাফতি অশুভ শক্তির প্রভাব নিয়ে। বাংলাদেশের গত কয়েক বছরের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। সেখানে দেখবেন নানা রঙে সেজে স্থানীয় সংস্কৃতির জনগণ রং ও বিচিত্র শিল্পকর্ম তৈরি করে উৎসবে মেতেছে। আর তাদের বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চাইছে একটি দল, তাদের পোশাক সাদা। তাদের প্রতিহত করার অভিনয় করে যাচ্ছে আর একটি দল তাদের পোশাক কালো। সাদা দলটি যা করতে চায় কালো দলটিও মনে মনে তাই করতে চায় যেন পরিস্থিতির চাপে তারা ভিন্ন। পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে গেলেই তারা এক দল হয়ে যাবে। সেই পরিস্থিতি এখন পরিবর্তীত হয়েছে। মিলে গেছে সাদা আর কালো দল। এখন কৃষ্ণ শক্তি বা ডার্ক ফোর্সেসের কবলে বাংলাদেশ। এটি কি শুধু বাংলাদেশের ঘটনা?

স্টার ওয়ার্স। আমার প্রিয় একটি ছবির সিরিজ। তুলনামুলক মিথতত্বের বিশ্ববিখ্যাত পন্ডিত জোসেফ ক্যাম্পবেলের ছাত্র স্টার ওয়ার্সের পরিচালক জর্জ লুকাস জীবনের ‘ভাল’ আর ‘মন্দ’ এই দ্বন্দ্বের চিরায়ত বিভ্রান্তির সমাধানে আধুনিক মানুষের জন্য পুরানো দুনিয়ার মিথগুলো ঘেঁটে এক আধুনিক মহাজাগতিক মিথ তৈরীর চেষ্টা করেছেন তাঁর এই ছবিগুলোতে। 

এই ছবিগুলোতে অপশক্তির যে কেন্দ্র ‘ডার্ক ফোর্সেস’ তার প্রতিনিধিদের পোশাক কালো। সেই ‘ডার্ক ফোর্সে’র অপশক্তির সুযোগে যারা ক্ষমতার দখল নিয়ে সাধারন মানুষের স্বাধীনতা হরন করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চায়, তাদের পোশাক সাদা। এই উভয় দলই যাদের খতম করতে চায় তারা হল সেই সংস্কৃতি এবং সংস্কার যেখানে শিল্প, কারুকাজ এবং সুস্থ আবেগ বাস করে যেগুলো সবই লাল নীল সবুজে হলুদ নানা রঙে রঙিন। প্রাচীন মাটির সংস্কৃতির সমাজ ও জীবনাচরণ মানেই নানা রঙ আর কারুকাজের সমাহার।

ছবিগুলোর কাহিনী শুরু হয় এটা বলেঃ “অনেক অনেক কাল আগে কোন এক দূর, বহুদুরের গ্যালাক্সিতে.... যেখানে মানবজাতীয় প্রাণী, যান্ত্রিক রোবোটেরা বা অন্য এলিয়েনেরা দৈনন্দিন জীবনযাপন করত মোটামুটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে। কিন্তু নানা সাফল্য ব্যর্থতার এক পর্যায়ে তারা দুর্বল হয়ে গেলে গ্যালাক্টিক এম্পায়ার সেখানে নিরাপত্তা ও প্রশাসনের নামে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে। তার প্রতিবাদ করে তাদের সাথে লড়াই করতে মুক্তিকামীরা তৈরী করে একটি সংগঠন যার নাম ‘রেবেল এলায়েন্স’। রেবেলরা গঠন করে তাদের রাজ্য “দি নিউ রিপাবলিক” এবং সেখানে সমাজ জীবনে তারা স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়। এদের ছাড়া অবশিষ্ট এম্পায়ার নিজেদের বলে ‘ফার্স্ট অর্ডার’, যারা খতম করতে চেষ্টা করে নিউ রিপাবলিককে। “রেজিস্ট্যান্স” বিপ্লবের আদি নায়কেরা এম্পায়ারের একনায়কদের দমন করতে নেতৃত্ব দেয়। এই সংঘাত চলতে থাকে”।

কিন্তু শাশ্বত গণতান্ত্রিক সমতার সমাজে কেন এই সাদা কালো মেরুকরণ? এই মেরুকরণের কারন “দি ফোর্স” নামের এক অদ্ভুত মায়াবী ক্ষমতার আবির্ভাব। এই ফোর্স কিছু মানুষকে সাধারন মানুষের চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান করে তোলে। তারা হয়ে যায় অতি বুদ্ধিমান, দ্রুত ও প্রখর ইন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী যারা বস্তুর উপর নিজের ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ ঘটাতে পারে। কিন্তু সমস্যা হয় এই ফোর্স শুভ শক্তিকে যতটা শক্তিশালী করে, অশুভ শক্তিকেও ততটাই করে। সাদা ও কালো এই দুই বিপরীত মেরুরই একসাথে দেখা দেয়, যেমন দেখা দেয় চুম্বকের দুটি মেরুর শক্তি –সমান কিন্তু বিপরীত। এক দল যারা শুভ, যারা ভালোর পক্ষে তারা জেডআই ফোর্স, যারা মানবীয় আবেগ বিবর্জিত। আর কৃষ্ণ, অপ অংশ যারা, তারা হলো সিথ। এদের অন্তরের তাড়না হিংসা, যন্ত্রণা, অস্থিরতা যেটা শান্ত হয় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই শুধু। তাদের মনের অদম্য ইচ্ছা পুরো গ্যালাক্সির নিয়ন্ত্রন নিতে চাওয়া। এই সাদা ও কালো দুই দলের দ্বন্দ্বে গ্যালাক্সিব্যাপি দেখা দেয় হিংসা, যুদ্ধ, রক্তপাত ও ধ্বংশ সর্বত্র।

গ্রীক, হিন্দু বা আর সকল আদি বা প্রকৃতিধর্মের দেব দেবীগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রতিটি ধর্মে বা বিশ্বাসে সমপরিমান ভাল এবং মন্দ দেবতা আছে। সেখানে দর্শন হচ্ছে প্রতিটি মানুষের ভিতরে ভাল ও মন্দ উভয় প্রেষণা বিদ্যমান। সামাজিক চাহিদা আর তার চিন্তা থেকে আসে ‘ভাল’ হবার প্রেষণা। আর তার ইন্দ্রিয়, ভোগের ইচ্ছা, তার স্বভাব তাকে চালিত করতে চায় অন্ধ আত্মতুষ্টির পথে, যেটা মন্দ। নিজের ভেতরের এই দুই প্রেষণার দ্বন্দ্বে সমতা রক্ষাই এমন সমাজ তৈরী করতে পারে যেখানে ‘শুভ’ প্রস্ফুটিত হয় ও শাখা প্রশাখা লাভ করে দীর্ঘস্থায়ী হয়। 

উভয় প্রকার দেবতা থাকার উদ্দেশ্য হলো নিজেরই ভাল মন্দ দুটো মেরুর রূপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও আধ্যাত্মিকভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ রপ্ত করা। অথচ রোমান দেবতারা এই শুভ অশুভর একত্রবাসের চিরায়ত ‘বাইপোলার’ কনসেপ্টটাকে সামরিক দাপটে নষ্ট করে আলাদা করে সূর্য্যকে একক শুভ ক্ষমতার দেবতা বানিয়ে সম্রাটরা নিজেদের শুধুই শুভ ভাবতে শুরু করে। চাপা থাকে নিজের অন্তরের কোটরে আবদ্ধ ইন্দ্রীয়সমুহ এবং সেগুলো অশিক্ষায় অসামাজিকতায় পুষ্ট হতে থাকে ছলে, বলে, কৌশলে। সুযোগ পেলেই যারা গোপনে মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। বিখ্যাতরা ক্ষমতাশালী হলে অন্যায় করতে গোপনীয়তার আর দরকার হয় না। শুধু বিপাকে পড়লেই তারা সেই ধরা পড়া ব্যক্তিকে শয়তান বানিয়ে তাকে শয়তানের মন্দিরে পাঠিয়ে দেয় যেন সে তাদের মত নয়, ভিন্ন কেউ। 

রোমানদের এই সাদা কালো চিন্তার প্রভাব আজও ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলো বহন করে চলেছে। যেখানে প্রতিটি মানুষের ভেতরের অন্তর্গত ভাল-মন্দের দ্বন্দ্ব তাদের করত আরও সহনশীল, নিরপেক্ষ ও জীবনমুখী, সুখী। যারা রঙীন কারুকাজ করা পোশাক পরতে পছন্দ করে, করে হাসি তামাশা গান বাজনা। গড়ে নানা শখের জীব জন্তুর আদলে তৈরী উপঢৌকন। করে উল্লাস আনন্দ ভালবাসায় আর আঁকে আল্পনা সেই কল্পিত সবুজ গ্রহ নাবুউ’র প্রিন্সেস আমাদিলার মত, যাকে হত্যা করেছে ডার্ক ফোর্সের কালো হিজাব পরা কালো ক্ষমতার প্রতিনিধীরা। বিশুদ্ধতা নয়, ভাল মন্দের বিচ্ছিন্নতা নয়, দুটোর সহাবস্থানই প্রকৃতির লক্ষ্য। এর বিরুদ্ধে যায় কার সাধ্য।

গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে বর্তমান দুনিয়ায় সব যুদ্ধ যেন এই স্টার ওয়ার্সের মিথের মত সংস্কৃতিবিহীন সাদা-কালো মানুষের সাংস্কৃতিক ও কারুকার্যখচিত রঙিন মনের মানুষদের হত্যা করে তাদের বাস্তুচ্যুত, দেশছাড়া করে তাদের জাতীগতভাবে বিলুপ্ত করা ও তাদের সম্পদ ভোগ দখল করা। এই যুদ্ধে এক দল মরিয়া হয়ে সাংস্কৃতিক ও কারুকার্যখচিত রঙিন মনের মানুষদের রক্ষা করার জন্য জীবন দিচ্ছে, আর তাদেরই আর এক দল সাদা-কালো মানুষদের আদর্শ ভেবে তাদের কথায় এবং সম্পদের লোভে নিজেদের ভাইদের ও নিজস্ব সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে দালালের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আপনি কার পক্ষে?

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।