EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

একটি আধা সফল জাকার্তা মেথড অপারেশন

জুলাই সন্ত্রাসের আসল গৌরব কার?

আওয়ামী লীগ করলেই দোষ, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলই তাদের সবকিছু থেকে বাদ দিতে হবে, তাদের বিচার করতে হবে, মব তৈরি করে শাস্তি দিতে হবে এই মানসিকতা কোথা থেকে এল? এটা কি এমনিতেই এসেছে? নাকি এটা একটি মেটিক্যুলাস গণহত্যার পরিকল্পনার অংশ? এই মানসিকতার মালিক কারা, কাদের মাথা থেকে এটা ছড়িয়েছে?

জুলাই সন্ত্রাসের গৌরব প্রতিষ্ঠা করতে ছাত্র সম্বয়করা এখন অজানা অনেক তথ্য ফাঁস করছেন। এর মধ্যে একজন একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন মার্কিন দুতাবাসের সাথে তাদের সবসময় যোগাযোগ ছিল। ছাত্ররা হয়ত ভাবছে যে সরকার পতনের যে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড তারা করেছেন সেখানে কেন জামাত শিবিরের মত রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে থাকার কথা সবদিক থেকে প্রচারিত হচ্ছে। যাকে আপনারা জুলাই আন্দোলন ভাবছেন সেটা আসলে একটি সিআইএ মহাপরিকল্পনা যার নাম জাকার্তা মেথড। এই জাকার্তা মেথড বাস্তবায়নের জন্যই জামাত বিএনপির সৃষ্টি করেছে মার্কিন সরকারের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএর সহযোগীতায় মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানের জন্য কোন যুদ্ধ ছিল না। সেটা ছিল হিন্দু ও আওয়ামী পার্জিং বা সংস্কার। এই সংস্কার মানে ঘুষ দুর্নীতি মুক্ত করা নয়। রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে থেকে বাঙালি জাতীয়তাবদ বিদায় করা।

জাকার্তা মেথডের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, অর্থাৎ বাম ঘেষা বা মধ্যপন্থী, জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের রাজনৈতিক শক্তিকে শেকড় তুলে নির্মূল করা যার জন্য একটি গৃহযুদ্ধ বাধনো যাতে দেড় থেকে দুই মিলিয়ন বা ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা বা দেশত্যাগে বাধ্য করা যায়। আপনারা এই মিশনের ছোটা কর্মী, মার্সেনারি বা সাময়িক ভাড়ায় খাটা সৈনিক ছিলেন, এই মিশনের স্থায়ী কর্মী বা রেগুলার ফোর্স হল হল জামাত, বিএনপি এবং শিবির ও ছাত্রদল।  ছোটা কর্মী, মার্সেনারি হয়ে কীভাবে আপনারা গৌরব দাবী করেন? একটি দালান তৈরিতে একটি দৈনিক মজুরের কোন কৃতিত্ব থাকে? কৃতিত্ব থাকে আর্কিটেক্ট বা সিভিল ইন্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের বা যে অর্থ বা জমি সরবরাহ করেছে তাদের।

আপনাদের মতই বাংলাদেশে যারা জামাত, শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল, হেফাজত এবং আরো নানা রকম আওায়ামী বিরোধী এইসব দলের সাধারণ সদস্য বা সমর্থক, অথবা বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়েন, ক্যাডেট কলেজে পড়েন বা সশস্ত্র সংস্থাগুলোতে কাজ করেন, তাদের অনেকে জানেন না জামাত, শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল, হেফাজত এরা আসলে কি। এদের নিয়োগকর্তা কে। এরা আসলে মাকিন ডিপ স্টেটের বাংলাদেশে জাকার্তা মেথড প্রয়োগের সফট ফোর্স বা সাইঅপস বা সাইকোলজিক্যাল অপারেশন ফোর্স। যাদের আসল কাজ বছরের পর বছর ধরে আওয়ামী ও ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট তেরী করা যাতে হঠাৎ শেখ হাসিনার মত জনপ্রিয় একজন নেতাকে হত্যা করে একটি গৃহযুদ্ধ লাগানো যায়। সেই গৃহযুদ্ধের পর সেই গৃহযুদ্ধের বিচারের নামে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ  স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের মানুষকে হত্যা করা। প্রশ্ন আসতে পারে কেন তারা এটা করবে। আসলে এটা তাদের ভারত ও চীন বিরোধী ভূরাজনীতৈক নরম যুদ্ধ কৌশল। আপনি না বুঝেই মার্কিন সাইঅপসের ভিক্টিম ও নিবেদিত কর্মী হয়ে গেছেন মগজ ধোলাই হয়ে যেটা ১৫ থেকে ২০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার পরিকল্পনা।   
         
অন্তত ২০টি দেশে, মার্কিন মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত স্বৈরাচারী পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বেসামরিক জনগণের উপর ইচ্ছাকৃত গণহত্যা চাপিয়ে দিয়েছিল যা "জাকার্তা মেথড" নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশীয়ায় বিপুল জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রপ্রধান প্রেসিডেন্ট সুকর্ন যখন ক্ষমতায়, সেই বছর ১লা অক্টোবর, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় কিছু নিম্ন পদের সামরিক কর্মকর্তাদের প্ররোচিত করে বিশ্বাস করানো হয়েছিল যে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একটি অভ্যুত্থান সংগঠিত করতে যাচ্ছেন। সেই অভিযোগে তারা তাদের কয়েকজনকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাকে অপহরণ করে। এর পর ছয়জন জেনারেলকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে ঐ ছয়জন জেনারেলকে হত্যার জন্য দেশের কমিউনিস্টদের দায়ী করা হয়। এর পর জেনারেল সুহার্তো নিরাপত্তার নামে অবিলম্বে দেশটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন, যদিও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুকর্ন তাকে এমন কোনো নির্দেশ দেননি।

সুহার্তোর এই পদক্ষেপের পর সরকারী প্ররোচনা ও প্রপাগান্ডা তৈরি করে দেশের কমিউনিস্টদের ও জাতীয়তাবাদীদের হত্যা করা শুরু হয়। সেই হ্যত্যাকান্ডের দায় আবার কমিউনিস্টদের ও জাতীয়তাবাদীদের উপর চাপিয়ে লক্ষ লক্ষ কমিউনিস্টদের ও জাতীয়তাবাদীদের আটক বা বিচারের প্রহসন করে তাদের হত্যা করা হয়। মাত্র এক বছরে ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট হিসেবে অভিযুক্ত করে অন্তত ১০ লাখ মানুষের গণহত্যা সংঘটিত হয়, যা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর প্রত্যক্ষ সহায়তায় পরিচালিত হয়েছিল এবং সেটিই "জাকার্তা মেথড" নামে পরিচিত।

জেনারেল সুহার্তো এই ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন লাভ করে - কৌশলগত ও আদর্শগত উভয়ভাবেই। এবং সে একটি বিভৎস গল্প প্রচার শুরু করেন যে "ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি (পিকেআই) এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী এবং তারা ছয়জন জেনারেলকে ভয়াবহ নির্যাতন করেছে,"
মার্কিন সরকার জেনারেল সুহার্তোকে অবিলম্বে যোগাযোগ ও সম্প্রচার সামগ্রী সরবরাহ করেছিল, যা সে সারা দেশে তার বার্তা প্রচারের জন্য ব্যবহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর ওপরও চাপ প্রয়োগ করে, যার মধ্যে বিবিসিও ছিল, এবং তারা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও টাইম ম্যাগাজিনের সমর্থন পায় যাতে এই গল্পটি প্রচার করা হয় যে ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি, বিশেষ করে দলটির নারীবিষয়ক শাখা, যা তখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নারীবাদী সংগঠন ছিল, ছয়জন জেনারেলকে অপহরণ করে একটি আজব তান্ত্রিক-শয়তানি নির্যাতন অনুষ্ঠান করে, যেখানে তারা ওই ইন্দোনেশিয়ান সেনাদের খোজা করে তাদের কুয়োতে ফেলে দেয়।

এরপর সুহার্তো ঘোষণা দেয় যে পিকেআই, অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। পরবর্তী কয়েক মাসে লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বামপন্থী হওয়া বা কেবলমাত্র সমর্থন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং তাদের নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই সহিংসতা ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত বালি পর্যন্ত পৌঁছায়, যেখানে সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। বর্তমানে পর্যটনের বেহেশত বলে খ্যাত যে বালি দ্বীপ, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৬ সালে তার কমপক্ষে ৫% জনসংখ্যা হত্যা করা হয়েছিল।

বিশ্বের রাজনৈতিক বর্ণালির অন্য প্রান্তে, অর্থাৎ বিভিন্ন দেশে মার্কিনপন্থী  স্বৈরশাসকদের জন্য এটি ছিল এক অসাধারণ সাফল্য। এই জাকার্তা মেথড তাদের নিজ নিজ দেশে পুনরাবৃত্তি করা সম্ভব ছিল এবং ইন্দোনেশিয়ায় যেভাবে সফল হয়েছে, তেমনই কার্যকর হয়েছে অনেক দেশে। শুধু তাই নয়, এই সব জঘন্য হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যা চালানোর পর তাদের সুনাম পুনরুদ্ধার করতে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহল সম্পূর্ণ সহায়তা দিত।

১৯৭০-এর দশকে ব্রাজিল ও চিলিতে, ডানপন্থী শাসকরা "জাকার্তা" শব্দটি স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায় ব্যবহার শুরু করে, যার অর্থ ছিল যে তারা তাদের নিজস্ব জাতীয়তাবাদী ও "বামপন্থী সমস্যা" এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেই সমাধান করতে যাচ্ছিল। "ব্রাজিলে, গোপনে ‘অপারেশন জাকার্তা’ নামে একটি অভিযান পরিচালিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল বামপন্থীদের নির্মূল করা। চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে একটি ভীতিকর সন্ত্রাস অভিযান চালানো হয়, যেখানে বামপন্থীদের বাড়ির দেয়ালে গ্রাফিতি লিখে দেওয়া হতো - "জাকার্তা আসছে"। শীতল যুদ্ধকালীন সময়ে যারা সচেতন ছিলেন, তাদের জন্য এর অর্থ ছিল সুস্পষ্ট: 'আমরা তোমাদের হত্যা করবো, যেমন ইন্দোনেশিয়ানরা তাদের কমিউনিস্টদের হত্যা করেছিল।'"

অন্তত ২০টি দেশে মার্কিন মিত্ররা "যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত স্বৈরাচারী পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বেসামরিক জনগণের উপর পরিকল্পিত গণহত্যা চালিয়েছে। অনেকে ভাবতে পারেন এগুলো পুরোনো জিনিষ, কিন্তু সেটা নয়, ২০১৪ সালে ইউক্রেনে এটাই ঘটানো হয়েছে রাশিয়ার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন মানুষদের নির্মূল করার জন্য। ২০২৪ এর বাংলাদেশে আওয়ামী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে চীরতরে শেষ করে দেবার এটাই ছিল মেটিক্যুলাস মাস্টারপ্ল্যান। এই গণহত্যার মেটিক্যুলাস মাস্টারপ্ল্যন তৈরি ও বাস্তবায়ণের গৌরব কে কে নিতে চান হাত তোলেন।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।