EN
আরও পড়ুন
ধর্ম ও দর্শন
গ্লোবালিস্টদের উদ্যোগ ও সহায়তায়
গবেষণা
বহুকাল দারিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা সমাজের হঠাৎ ধনী হয়ে যাওয়া
রাজনীতি
মিয়ানমার নিয়ে বিপজ্জনক খেলা
রাজনীতি
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর হুমকি
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার

শেখ মুজিব ও নয়াচীন

বিদেশ ভ্রমণের মনস্তত্ব

একবার থাইল্যান্ড গেলাম অফিসের কিছু কাজ ও যেতে চাই নাম করা খাও ইয়াই ন্যাশনাল পার্কে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুবর্নভুমি এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার ট্যাক্সিতে উঠেই টের পেলাম বাঙালীর মনের অবদমিত প্রেষণা। ট্যাক্সি চালক কোন দেশ থেকে এসেছি জেনে একটু আলাপ জুড়ে দিয়েই বলল মেয়ে লাগবে কিনা, কোন হোটেলে থাকব এইসব। বললাম বন্ধুর বাসায় থাকব আর মেয়ে লাগবে না। তারপর সে বলল বাংলাদেশ থেকে যারা আসে বেশির ভাগই মেয়েদের খোঁজে আর খোঁজে সস্তা হোটেল। আর একটা জিনিস খোঁজে সেটা হল মদ যদিও সেটা সে বলেনি।  

পার্ক বা জঙ্গলে গেলে কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় তার প্রধান একটা হল ইনসেক্ট রিপেলেন্ট। আমেরিকা থেকে আনানো এনক্যাপসুলেটেড ডিট (ডাইইথাইল মেটা টল্যুএমাইড) যেটা দেহে মাখলে মশা ও পোকামাকড় দুরে থাকে সেটা প্রায় শেষের পথে। জঙ্গলে হাঁটলে আমরা ঘেমে যাই দ্রুত। এই ঘাম সাধারণ রিপেলেন্ট ধুয়ে ফেলে। ফলে এটি কিছুক্ষন পর আর কাজ করে না। এনক্যাপসুলেটেড রিপেলেনন্টে ডিট রাসায়নিক মাইক্রো ক্যাপসুলের মধ্যে ঢুকানো থাকে। যেটা ধীরে ধীরে মুক্ত হয় তাই সেটা গায়ে মাখলে ঘাম হলেও সেটা অনেকক্ষন থাকে। ব্যাংককে একটি অ্যাটমেল এম্বেডেড প্রসেসর বোর্ড ও তার ডাবল সাইডেড পিসিবি তৈরীর কাজ ছিল, অফিস টাইমে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হত। বাকি সময়ে এমবিকে মলে ক্যামেরা সংক্রান্ত কিছু কেনাকাটা সেরে একটি বড় ড্রাগ স্টোরে ঢুকলাম একটা ইনসেক্ট রিপেলেন্ট এর খোঁজে।

ব্যাংককে মেয়েরা বেশিরভাগ দোকানে কাস্টমার হ্যানডলিং করে। কাউন্টারের মেয়েটা ইংরেজি বোঝে না। কিছুতেই তাকে ইনসেক্ট রিপেলেন্ট বা মসকিউটো রিপেলেন্ট বোঝাতে পারি না। পরে আর একটি মেয়ে আসল। সেও বোঝে না। আর একজন আসল সেও বোঝে না। পরে ক্ষ্যান্ত দিলাম, ফিরে আসছি মেয়েগুলো আলাপ করছে নিজেদের মধ্যে। তারপর একজন দ্রুত এগিয়ে আসল তারপর লজ্জা সহকারে হেসে হেসে বলল বলল তুমি কি “কন্ডম চাও”। বুঝলাম আমার বাঙালি চেহারা দেখে মেয়েগুলো এই অতীত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ  পরিসংখ্যানগত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
 
এখানে বলে রাখি যৌনতার বিষয়ে আমি ট্র্যাডিশনাল নই। তবে আমি মনে করি সেটা হতে হবে বন্ধুত্ব, ভালবাসা, উভয়ের প্রকৃত ইচ্ছা এবং একে অপরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও মানসিক সংযোগ স্থাপিত হবার পর। অর্থ বা কোন কিছুর বিনিময়ে যৌনতা (সেটা বিয়ের বিনিময়ে হলেও) সেটা একজনের দেহকে বস্তু হিসাবে আর একজনের ব্যবহার। সেটাতে দেহের যৌন চাহিদা মিটলেও মনের যৌন চাহিদা মেটে না। অপর দিকে আমাদের দেহ, যার ভেতরে আমাদের মন বাস করে, সেই দেহ একটি মন্দিরের মত। মন্দির যেমন অপবিত্র হলে সেখানে আর ঈশ্বরের দেখা মেলে না। দেহকে বস্তু হিসাবে ব্যবহার দেহকে অপবিত্র করে যার ফলে তার সাথে নিজের মনের বিবাদ তৈরী হয়। মন সেই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। বিদেশে গেলে আমাদের দেশের বেশীরভাগ লোকের অবদমিত প্রেষণাগুলো ফুটে ওঠে কারণ সামাজিক চাপে তারা তাদের প্রেষনাগুলো দমিয়ে রাখে, প্রেষণাগুলোকে জয় করে নয়। ছেলেদের যেমন মেয়ে মানুষ আর মদ প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের দেখা যায় সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা ও নিজের দেহ প্রদর্শনের ইচ্ছা। মদ, মেয়ে মানুষ এবং সংক্ষিপ্ত পোশাক পরাই যদি অন্তরের প্রজ্জ্বলিত কামনা হয় তাহলে নিজেদের সমাজটাকে আমরা তেমন করি না কেন? আমরা সেটা করি না কারণ আমরা প্রচন্ড ভীত যে আমরা ভেতরটা প্রকাশ করে ফেললে সবাই দেখে ফেলবে আমাদের ভেতরটা কত মন্দ। কিন্তু মনের যে কেন্দ্রীয় ইচ্ছা বা প্রেষণা তাকে দমিয়ে রাখা মানেই শিক্ষা, উদ্ভাবন ও প্রকৃত মানসিক অগ্রগতিকে দমিয়ে রাখা। 

“প্রেষণা হলো একটি মানসিক চালিকা শক্তি যার কারণে মানুষ একটি উদ্দীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন তত্ত্ব অনুযায়ী প্রেরণার শিকড় প্রোথিত রয়েছে আমাদের প্রাথমিক প্রয়োজনের মধ্যেই - যার মধ্যে অন্যতম শারীরিক কষ্ট হ্রাস করা এবং সন্তুষ্টি বাড়ানো।” 
ফিরে যাই আবার বিদেশে গেলে আপনি কি করেন এই প্রশ্নে। আমার মনের যে প্রেষনা তাকে আমি অবদমিত রাখতে চাইনি কোন দিন। যে কোন সাধারণ পুরুষের মত অর্থ, নারী ও মদ এই তিনটির প্রয়োজন ও আকর্ষন সব সময়ই ছিল। অর্থ যেমন প্রয়োজন এবং সেটি অর্জনে যেমন আমরা নিজের মানসিক শুদ্ধতার পথ ও পন্থা অবলম্বন করি, বাকি দুটোর ক্ষেত্রেও তাই। প্রেষণা অবদমিত না থাকলে বিদেশে গেলে সেই সব প্রেষনাতাড়িত হবার প্রশ্ন আসে না।
 
অবদমিত প্রেষণা সামাজিক জেলখানায় বন্দি মনের মুক্ত ইচ্ছার মত। বিদেশে গেলে মানুষ এই সাময়িক ইউফোরিয়াতে মেতে ওঠে কারন সে মনে করে যে সে মুক্ত। যাদের মনে ভোগের ইচ্ছা অতৃপ্ত, তারা মুক্ত হলে সেই ভোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি যতবার বিদেশে গেছি আমার মনের যে বন্দিত্ব সেটার পেছনেই সময় কেটেছে। সেটা একদিকে ছিল বইয়ের দোকান, যন্ত্রপাতি প্রযুক্তি আর কল কারখানা দেখে জ্ঞান অর্জন। আর একদিকে ছিল মানুষের সাথে কথা বলা। তাদের জীবনকে দেখার বোঝার চেষ্টা করা। ইওরোপের বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, চীন, আফ্রিকা – সর্বত্র আমার বাকি সময় কেটেছে মানুষের জীবনকে শহুরে সভ্যতার পর্দাটা সরিয়ে তার ভেতরটা দেখতে। ইটালিতে নানা বান্ধবীদের সাথে চলে গেছি তাদের গ্রামের বাড়িতে। সময় কাটিয়েছি তাদের বাবা মা এর সাথে। সিঙ্গাপুরে দেখতে চেয়েছি মালয়েশিয়, ভারতীয় আর চীনাদের অন্তরের ভেতরে কি থাকে। অবাক হয়েছি এই দেশে তারা একই কাজ করে অথচ কত ভিন্ন কারণে। 

চীনে আমার ইঞ্জিনয়ার বন্ধুদের সাথে চলে গেছি তাদের গ্রামের বাড়ি। মিলিত হয়েছি তাদের বাবা, মা, দাদা দাদিদের সাথে। দেখেতে চেয়েছি তাদের প্রকৃত জীবনটা কেমন। আমার মনে উপরের পর্দা সরিয়ে মানুষের প্রকৃত জীবনকে দেখার মত আকর্ষণীয় এবং আনন্দদায়ক আর কিছু নেই। কারণ আধুনিক জীবন আমাদের সবার মুখের উপরে একটা মুখোশ পরিয়ে দেয়। এই মুখোশটিই আমার কাছে অস্বস্তিকর। বিদেশে গেলে তাই আমি এই মুখোশ ভেদ করে সমাজ ও মানুষকে দেখতে সবচেয়ে সময় রসদ খরচ করেছি। এর পেছনের কারণ মনে হয় নানা সমাজের মানুষকে দেখে নিজের বা নিজেদের জন্য সঠিক পথটি খুঁজে পেতে আমি সবসময় সচেষ্ট।   

অবাক হলাম শেখ মুজিবের “আমার দেখা নয়াচীন” পড়তে গিয়ে। চীনে গিয়ে তিনি হঠাৎ করে শ্রমিকের বাসায় ঢুকে পড়েছেন এটা দেখতে যে মুখে যাই বলুক আসলে তারা কেমন আছে সেটা দেখা। সেই বাসায় গিয়ে দেখেন যে পুরুষটি বাসায় নেই তাই তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সাথে কথা বলেন। অবাক হয়ে দেখেন যে একজন শ্রমিকের ঘরও কত সমৃদ্ধ। নতুন বউ, কিছু একটা দেওয়া দরকার, তাই নিজের আংটিটি খুলে তাকে উপহার দেন। রিক্সাওয়ালাকে প্রশ্ন করেন দেশের কথা, তার অবস্থার কথা। সে অসৎ কিনা পরীক্ষা করতে তাকে ইচ্ছা করে বেশী টাকা দেন। সততার সাথে সে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয় কিনা দেখার জন্য। সরকারী সফরে গিয়ে শিডিউল ছাড়া বাকি সময়টা পুরোটি তিনি দেন চীনের ভেতরটা দেখার জন্য। আসল কারণ তাঁর নিজের দেশে সেই জ্ঞান প্রয়োগ।  

বলা বাহুল্য নতুন কমিউনিস্ট সরকার আসার পর তখনও চীন সম্পর্কে বাকি দুনিয়ায় বিরূপ প্রচারণা ছিল মারাত্মক। তিনি দেখতে চেয়েছেন সেই প্রচারণা সত্য কিনা। দেখতে চেয়েছেন চীন সত্যিই উন্নতি করছে কিনা, মানুষ ভাল আছে কি না, তারা নিপীড়িত কিনা। 
চীনে আমার ভ্রমণের বেশিরভাগ ছিল চীনের ঝি জিয়াং প্রদেশের হাংজো শহর ও আশে পাশের এলাকায়। সেই হাংজো শহর সম্পর্কে শেখ মুজিব লিখেছেন:      
         
“এই শহরটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সমস্ত চীনের মধ্যে বিখ্যাত একটা স্থাস্থ্য নিবাসও বটে। সত্যই দেখে মুগ্ধ হলাম। একটা বিরাট লেকের চার পার্শ্বে শহরটা। পাশে ছোট ছোট পাহাড়, তার গা ঘেঁষেই বড় বড় বাড়ি গড়ে উঠেছে। লেকের গা ঘেঁষেই আমাদের হোটেলটা।  হোটেল থেকে জানলা দিয়ে সমস্ত লেকটাকে দেখা যেতো। ছোট ছোট নৌকা বিদেশিদের নিয়ে লেকের ভিতর ঘ্বুরে বেড়াচ্ছে। সকলের চেয়ে মধুর হলো যখন চাঁদ উঠলো। আমরা রাত্রেই পৌঁছেছিলাম বলে জ্যোৎস্নায় দেখে নিলাম লেকটাকে।  এখানেও দোভাষী একটা পাওয়া গেল। রাতে এসেই আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, এই এই জায়গার মধ্যে কোনটা কোনটা আপনারা দেখতে যাবেন? আমরা দেখে ওদের মতামত নিয়ে প্রোগ্রাম করে দিলাম।

লেকের পরে একটা পাহাড় ছিল সেখানে উঠলে সমস্ত শহর ও লেকটা দেখা যায়; পীর সাহেব বললেন, আমরা উঠবো। আমি ও পীর সাহেব সেখানে উঠলাম। আস্তে আস্তে সকলেই উঠলো। একটু কষ্ট করে উঠতে হয় । কিন্তু দেখবার মতো জায়গা।  দেখে আনন্দে বুক ভরে গেল।  মনে হলো এখানে যদি কিছু কাল থাকতে পারতাম, তবে খুবই আনন্দ হতো। নেমেই একটা বসার জায়গা-পাহাড় ও লেকের মাঝখানে। আমরা সেখানে কিছু সময় বসলাম, ওখানে ছোট একটা চায়ের দোকান ছিল। চা খেলাম। দাম যখন দিবার চাইলাম, কিছুতেই গ্রহণ করবে না। সেখানে কয়েকটা দোকানে মাছ বিক্রি করে। খাবার মাছ নয়, শৌখিন মাছ। ছোট ছোট কাচের পাত্রে রঙিন মাছগুলি রাখা হয়েছে। এক এক পাত্রে তিন চার রঙের মাছও রয়েছে। ইচ্ছা হলো কিনি, কিন্তু কিনে কী করবো! কোথায় চীন আর কোথায় পূর্ব বাংলা! নিতে যা খরচ হবে তা আমার দেওয়ার ক্ষমতা নাই। আর ভাড়া দিয়া নেবার মতো টাকাও নাই। রাখার মতো বাড়ি নাই। আর দেখভাল করার মতো লোকও আমার নাই। কারণ সকল জিনিসেরই জন্য টাকার প্রয়োজন। ওইটার অভাবই আমার বেশি।

অনেকক্ষণ গাছের ছায়ায় চেয়ারে বসে লেকের সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম ও পরে রওয়ানা করতে বাধ্য হলাম। কারণ, খেয়েই আমরা নৌকায় বেড়তে বের হবো, সন্ধ্যা পর্যস্ত বেড়াবো। আমাদের মধ্যে কয়েকজন নৌকা ভাড়া করে ওখান থেকেই সোজা হোটেলের দিকে রওয়ানা করলো। আমরা মোটরে আরও দু'একটা জায়গা দেখে হোটেলে যাবো। বারোটায় আমরা হোটেলে পৌঁছলাম। তাড়াতাড়ি খেয়ে নৌকায় উঠলাম। ছোট্ট ছোট্ট নৌকা, দু'জনে বইঠা বায় দাঁড় টানার মতো করে । মেয়েরাই নৌকা চালায় ওদেশে॥ এই লেকের ঠিক মধ্যখানে একটা দ্বীপ আছে। সেখানে দোকান আছে, একটা বৌদ্ধ মন্দির আছে। আর বসবার ভালো ভালো জায়গা আছে। একটা চায়ের দোকানও আছে। বহু বড় বড় গাছ রয়েছে। এই দ্বীপের মাঝখানে আবার একটা পুকুরের মতো আছে। তার ওপর দিয়া পুল দেওয়া আছে। মাঝে মাঝে মাছ দেখতে পাওয়া যায়। এত বড় লেকের ভিতর ছোট্ট একটা দ্বীপ; সেখানে চায়ের দোকান, বসবার ব্যবস্থা, বুঝতেই পারেন কী সুন্দর জায়গাটা। কত ভালো লাগে!

আমাদের জন্য চারখানা নৌকা ঠিক হলো। নৌকার ভিতরে চারজন করে বসতে পারে। মোটর গাড়ির মতো গদি দেওয়া বসবার জায়গা। আমাদের সাথে চা, ফল-ফলাদি কিছু নেওয়া হয়েছিল। নৌকা ছাড়া হলো। আমাদের মধ্যে অনেকে নৌকা বাইবার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। অনেকে চেষ্টা করলো দাঁড় টানতে, হাল ধরতে, কেউই ঠিকমতো নৌকা বাইতে পারে না। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, “তোমরা বালুর দেশের লোক, নৌকা বাইবা কী করে? ঘোড়া দাবড়াতে পারো।" আমার নৌকায় সামনের যে দাঁড় ছিল, প্রথমে আমি দাঁড়টা টানতে শুরু করলাম। কার নৌকা আগে যায় দেখা যাবে! কেউই পারে না, কারণ আমি পাকা মাঝি, বড় বড় নৌকার হাল আমি ধরতে পারি। দাঁড় টানতে, লগি মারতে সবই পারি। পরে আবার হাল ধরলাম। পাকা হালিয়া। যারা আমাদের নৌকার মাঝি, তারা তো দেখে অবাক! এ আবার কোন দেশের লোক! এক মাঝি জিজ্ঞাসা করলো, আপনাদের বাড়ি কোন দেশে? 
দোভাষী সাথে ছিল, বললাম, পূর্ব পাকিস্তান; মুখের দিকে চেয়ে রইলো। মনে হলো কোনোদিন নামও বোধ হয় শোনে নাই, তাকে বুঝাইয়া বললাম, তারপর সে বুঝলো। তাকে বললাম, আমাদের পানির দেশ, বৎসরে ৬ মাস আমরা পানির মধ্যে বাস করি। আমাদের যে পাষাণ হৃদয় যার সাথে সম্বন্ধ নিভৃত কারাগার আর তার পাথরের মতো শক্ত দেওয়ালগুলির। মাঝে মাঝে বাইরে থাকলে পুলিশের লাঠিচার্জ, 'জাতীয় সরকারের চোখ রাঙানো-সেই আমাদের জীবনেও আনন্দের সঞ্চার হয় এখানে আসলে। অনেকক্ষণ বসে গল্প করলাম। অনেক ইতিহাস এই জায়গার শুনলাম। শুনেছি কাশ্মিরের শ্রীনগরে ন'কি এমনি লেক আছে। তবে কিছুটা আঁচ করতে পারেন, যদি আজমীর শহরের আনার সাগরে যেয়ে থাকেন। কিন্তু হাংজো'র এই লেকের সাথে এদের কোনো তুলনা হয় না। আমরা নৌকায় উঠলাম, চললো সামনের দিকে, সেখানে মোটর আসবে; আমরা ওখান থেকেই কিছু জিনিস কিনতে বাজারে যাবো।”

আপনি যা করেন সেটাই কি আপনার মনের প্রেষনা? নাকি আপনি যা করেন সেটা শুধুই টাকা, পয়সা, মান, সম্মান, সুযোগ, সুবিধা আর ক্ষমতা, প্রতিপত্তি অর্জন করা যেগুলো আপনি ব্যবহার করবেন আপনার মৌলিক প্রেষণা পরিতৃপ্ত করতে? যেমন খাওয়া, মদ্যপান, সম্পত্তি ও দৈহিক যৌন চাহিদা বা নিজেকে প্রদর্শনের ইচ্ছা? এই বিষয়টির উপরেই নির্ভর করে আপনি কি আপনার কাজে সত্যিই সফল হবেন? নাকি আপাত ভাবে সফল হলেও পরিশেষে সবই রসাতলে চলে যাবে। আপনি বিদেশে গেলে কি করেন সেটা দিয়েই এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।