EN
আরও পড়ুন
রাজনীতি
পলিটিক্যাল সিস্টেমস থিংকিং এর শিক্ষা
রাজনীতি
JadeWits Technologies Limited
রাজনীতি

মুরগি খুঁজি তিতি তিতি, আ আ তিতি তিতি…..

অর্থনীতির পরিস্থিতি

একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জার শহরের যে কাজী তিনি বিচার করতে করতে অতিষ্ট হয়ে ঘোষনা দিলেন যে শহরে মিথ্যাবাদীর সংখ্যা অনেকে বেড়ে গেছে। তিনি নির্দেশ দিলেন শহরের প্রধান দুয়ারের সাথেই একটি ফাঁসীর মঞ্চ বানাতে। শহরে যত লোক ঢুকবে প্রথমেই তাদের জেরা করা হবে, মিথ্যা বললেই সাথে সাথে ফাঁসী। হোজ্জা কি কারণে যেন সে রাত শহরের বাইরে গিয়েছিলেন। সকালে সরল মনে শহরে ঢুকতে গিয়েই কঠোর জেরা প্রহরীর "অ্যাই ব্যাটা হোজ্জা, এই সাত সকালে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? হোজ্জার শান্ত নির্লিপ্ত উত্তর "ফাঁসীতে ঝুলতে"।

সিপাহী শাস্ত্রীরাতো রেগে আগুন, ব্যাটা, সাত সকালে কাজীর প্রহরীদের কাছে মিথ্যা বলা হচ্ছে? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা বলেই সোজা তাকে নিয়ে গেল ফাঁসীর মঞ্চে, গলায় পরাল ফাঁসীর রশি। কোন রকমে ঢোক গিলতে গিলতে হোজ্জা বলল "এটাই তো বলেছিলাম, আমার কথা সত্য হলো তো?" কাজীর প্রহরীরাতো পড়ল মহা বিপদে। ফাঁসী দিয়ে দিলে হোজ্জা হয়ে যায় সত্যবাদী, আর ফাঁসী না দিলে হোজ্জা হয় মিথ্যাবাদী। তারা বুঝল এই আইনে সমস্যা আছে। তারা হোজ্জাকে ধরে নিয়ে গেল কাজীর সামনে। কাজী ফিরিয়ে নিল তার আদেশ। মুক্ত হল হোজ্জা কারণ এই পথে মিথ্যুক আর সত্যবাদী নির্ণয় করা অসম্ভব। মিথ্যুক আর সত্যবাদী নির্ণয় করতে না পারার এই পরিস্থিতিটা একটা আপার্তবৈপরীত্য বা প্যারাডক্সিক্যাল অবস্থা।

হাতে সময় এবং রশদ থাকলে নতুন কিছু শুরু করেছি সব সময়। উদ্ভাবনী মন ও সমস্যা সমাধানী মানসিকতা যাদের তারা বসে থাকে না। সমাধানযোগ্য সামাজিক অর্থনৈতিক সমস্যা তারা পেয়েই যায়, উদ্যোগী কিছু মানুষও তারা সাথে পায় এবং তারা নতুন কিছু শুরু করে। তবে নতুন কিছু শুরু করাটা সহজ, কিন্তু সেই নতুন কিছুর সফলতা আনাটা কঠিন। সেটা কতটুকু কঠিন সেটা নির্ভর করে পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর। উদ্যোগ তাই শুধুই নতুন কিছু শুরু করা নয়, সফলতা ও স্থায়িত্বের উচ্চ সম্ভাবনা আছে এমন কিছু শুরু করাই সফল উদ্যোগ। সেই সফলতার জন্য প্রয়োজন পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে বোধ, যেটা আসে চিন্তা, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা থেকে।

কথা হচ্ছিল এক জুনিয়র বন্ধুর সাথে। সে তার নতুন প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চায়। কোভিডের সময় প্রায় দেড় বছর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ধীর ছিল। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া অনেক কাজ বন্ধ ছিল। এসবের ফলে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সঙ্কুচিত হয়েছে। যার ফলে কোভিড পরবর্তীতে উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবার সময় আমাদের হাতে টাকা কম থাকার কথা। বাজারে যথেষ্ট পণ্য কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কেনার সামর্থ্য নেই এটাই হবার কথা।

গত দেড় দুই বছর ব্যবসা কম, দালান কোঠা হয়েছে কম, উৎপাদন কম, শ্রম বিনিয়োগ হয়েছে কম। যার ফলে এখন এক কেজির একটি ইলিশ মাছের দাম ৫০০ টাকা হবার কথা কিন্তু সেটা ১৫০০ টাকা কেন? পত্রিকাগুলো রিপোর্ট করছে, উপ সম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে যে মানুষ নাকি সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। তাহলে সঞ্চয় ভেঙে কি ১৫০০ টাকা কেজি ইলিশ মাছ খাচ্ছে প্রতিদিন? সেটা না হলে এত ইলিশ মাছ কিনছে কে? শুধু ইলিশ মাছ নয় গরুর মাংস ৮০০ টাকায় স্থির কেন? এত প্লট ফ্ল্যাট গাড়ি কিনছে কারা। তেলের দাম এত বৃদ্ধির পরও রাস্তায় এত যানজট কেন?

বাজার কিন্তু কখনই মিথ্যা বলে না। জিনিষপত্রের ঊর্ধ্বমুখি দর এবং সেটা বাড়তির দিকে স্থিত, এটা প্রমাণ করে বাজার যেখানে মন্দা হবার কথা সেখানে আসলে ঘটছে তার উল্টো, অর্থাৎ বাজার চরিত্র মন্দা নয়, প্রকাশ করছে অর্থনীতির স্ফীতি। এর অর্থ মানুষের হাতে আসলে আগের চাইতেও অনেক বেশী টাকা। যেটা হবার কথা নয়।

কোভিড পরবর্তী বর্তমান সময়টা অর্থনৈতিকভাবে অদ্ভুত। কোন জ্ঞান, ছক, অভিজ্ঞতার সাথে এটা মেলে না। এটা অর্থনীতির একটা আপার্তবৈপরীত্য বা প্যারাডক্সিক্যাল অবস্থা। যেখানে মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতি একই সাথে বিরাজ করছে। এই অবস্থার জন্য রাজনৈতিক সরকারগুলোর জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর হল মুদ্রাস্ফীতি বা জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া। এতে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরী হয় ও ক্ষমতা হারাবার ভয় থাকে।

এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে সারা দুনিয়ার সরকারগুলো তাদের ব্যাঙ্কগুলোর নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি হল মানুষের খরচের রাশ টেনে ধরা যাতে মানুষের হাতের টাকা কমে যায়। স্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিতে এটি একটি পরিক্ষিত প্রক্রিয়া যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি কমে যায়। কিন্তু এর একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল রিসেশন বা মন্দা যার ফলে সামগ্রিক উৎপাদনক্ষতা কমে যায়, জিডিপির বৃদ্ধি হার কমতে থাকে। সাধারণ অবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি থাকলে মন্দা থাকে না তাই মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সুদহার বাড়িয়ে দিলে রমরমা উৎপাদন ব্যবস্থার অতিরিক্ত উলম্ফনটি কমে কিন্তু সেটা মন্দা তৈরী করে না। বর্তমানে যেহেতু সুপ্ত মন্দা চলছেই তাই এই পদ্ধতিতে হিতে বিপরীত হতে বাধ্য।

মনে হতে পারে এসব জাহাজের খবর আমাদের মত আদার ব্যাপারীর নিয়ে কাজ কি? কিন্তু এটা আমাদের বাজারেও ঘটছে। একদিকে বেশীরভাগ মানুষের ব্যবসা মন্দা এবং অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে এবং তাদের সত্যিই সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। অপরদিকে এই পরিস্থিতে যখন বাজারে জিনিষপত্রের দাম কমার কথা, সেটি বাড়ছেই। এর অর্থ ক্রেতার অভাব নেই। বিভিন্ন মিটিং এর জন্য অনেক সময় শহরের বড় ও দামী রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফেগুলোতে যেতে হয়, সেখানে টেবিল পাওয়া ভার। অনেক ব্যবসা রমরমা।

এখন প্রশ্ন হল এই প্যারাডক্সিক্যাল সময়ে আমরা কি করব? সফল উদ্যোগে বিনিয়োগ করার জন্য পরিবেশ ও পরিস্থিতি বোঝার কোন বিকল্প নেই। আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে এমন পরিস্থিতি কেন হল। সেটা বুঝতে পারলে আমরা এটির সমাধানে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারব। এটি বুঝে সঠিক কৌশল প্রয়োগেই শুধু আমাদের নতুন উদ্যোগ সফল হতে পারে। শহরের বড় ও দামী রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফেগুলোতে গিয়ে দেখেন যাদের এখানে খাবার কথা তারা আসলে খাচ্ছে না, যাদের এখানে খাবার কথা নয় এখানে তাদের ভীড়। অর্থাৎ কোভিডের এই দেড় দুই বছর অনেক মানুষের হাতে টাকা এসেছে যারা অনেকেই উৎপাদনের সাথে জড়িত নয়। টাকা কমেছে যারা উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের।

বিষয়টা বোঝার জন্য একটি উদাহরণের সহযোগীতা নেওয়া যাক। আমাদের পৃথিবীর বা যে কোন দেশের অর্থনীতি একটি শরীরের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের মত। শরীরের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে রক্ত যে ভূমিকা পালন করে, অর্থনীতিতে টাকার সেই একই ভুমিকা। আমাদের হার্ট যে ভুমিকা পালন করে, একটি দেশের উৎপদনশীল খাত সেই ভুমিকা পালন করে। হার্ট রক্ত পাম্প করে সেটা ধমনি, শিরা, উপশিরাতে গিয়ে বিভিন্ন অঙ্গের কোষগুলোকে খাদ্য, পুষ্টি, রোগনিরোধী কণা সরবরাহ করে। এই হার্টে যখন কোন রোগ দেখা দেয় তখন সে তার কার্যকারীতা হারায় বা কমে যায়। তখন হার্টে ওপেন হার্ট শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। হার্টে শল্য চিকিৎসার জন্য হার্টের ধমনিগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে হার্ট-লাঙ মেশিন সেখানে লাগানো হয়। এই হার্ট-লাঙ মেশিন যদি দীর্ঘক্ষণ লাগানো থাকে তাহলে হার্টের পেশীর ক্ষতি হতে পারে। এখন মনে করা যাক আমাদের এই উদাহরণের শরীরটি একটি শিশুর। তার শরীরে অপারেশনের জন্য হার্ট-লাঙ মেশিন এত বেশী সময় লাগানো ছিল এবং হার্ট-লাঙ মেশিন তাকে এত বেশী পুষ্টি সরবরাহ করেছে যে তার শরীর এর মধ্যেই পরিণত মানুষের শরীরে পরিণত হয়েছে কিন্তু তার হার্টটি রয়ে গেছে শিশুর।

কোভিডের এই দেড় দুই বছর সরকারগুলো সঞ্চয় ভেঙে, টাকা ছাপিয়ে, ধার করে, নানা প্রকল্প করে সরকারগুলোর নিজস্ব ব্যায় একইভাবে করে গেছে। খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা ও অনেক সার্ভিস খাত ফুলে ফেঁপে উঠেছে যেটা হচ্ছে অর্থনীতির অসম বৃদ্ধি। এই অসম বৃদ্ধি অনেকটা শিশু হৃৎপিন্ডওয়ালা পরিণত দেহের মত। এখন এই রোগের চিকিৎসা কি? তার সামগ্রিক পুষ্টি কমালে হার্ট যা আছে তার চেয়েও দুর্বল হয়ে যাবে। আবার পুষ্টি বাড়ালে শরীরের বাকি সব অঙ্গ হার্টের চেয়ে বেশি করে বাড়বে। এই সমস্যার কোন সার্বিক সমাধান নেই, করতে হবে বিশেষায়িত সমাধান অর্থাৎ এমন পরিস্থিতি করতে হবে যাতে হার্টের দ্রুত বৃদ্ধি হয় কিন্তু শরীর ধীরে বাড়ে। বর্তমানের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তাই। বিশেষায়িত কর ও অর্থ ব্যবস্থা প্রয়োগ না করা হলে এর থেকে পরিত্রাণ হবার কথা নয়

JadeWits Technologies Limited
সর্বশেষপঠিতনির্বাচিত

আমরা আমাদের সেবা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করি। আমাদের কুকি নীতির শর্তাবলী জানার জন্য অনুগ্রহ করে এখানে ক্লিক করুন। কুকি ব্যবহারের জন্য আপনি সম্মত হলে, 'সম্মতি দিন' বাটনে ক্লিক করুন।