চারিদিকে উন্নয়নের ফুলঝুরি আর আর বাজারে টাকার ছড়াছড়ি, অথচ প্রায় সবাই ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত, হতাশ ও দেশ ছেড়ে চলে যেতে চায়। কেন আমরা এই আপাতবৈপরিত্বের ভেতরে এসে পড়লাম? একটি পেঁচার বিয়ের গল্প দিয়ে এই পরিস্থিতিই ব্যাখ্যা করেছেন আল চতুর্দশ শতকের আরব ইতিহাসবেত্তা ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন তার 'আল-মুকাদ্দিমা' গ্রন্থে। সেটা থেকে তুলে দিলাম কিছু অংশ। চলবে কয়েক পর্ব।
"উৎপীড়ন সভ্যতার ধ্বংস ডেকে আনে"
"পাঠক, জেনে রাখুন, সম্পদের ব্যাপারে মানুষের উপর উৎপীড়ন করলে, তা সম্পদ উপার্জন ও সংগ্রহে তাদের আকাঙ্ক্ষাকে খর্ব করে ফেলে । কারণ তারা এটাই ভাবে যে, তাদের উপার্জন ও সঞ্চয়ের চরম পরিণতি হল লুণ্ঠিত হওয়া । সৃতরাং সম্পদ উপার্জন ও সংগ্রহে তাদের আকাঙ্ক্ষা কমে গেলে তারা আর তার জন্য প্রচেষ্টা চালায় না এবং এরূপ নিস্পৃহ অবস্থা প্রজাদের উপর উৎপীড়নের পরিমাণ অনুসারেই দেখা দিয়ে থাকে। কাজেই উৎপীড়ন যদি জীবিকা অর্জনের সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক আকারে দেখা দেয়, তা হলে উপার্জন ও সঞ্চয়ের অনিচ্ছাও সকল কিছুর মধ্যে ব্যাপকতর হয়ে প্রবেশ করে৷ আবার এ উৎপীড়ন যদি সামান্য হয়, তা হলে জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে তার প্রভাবও সেই অনুপাতে পড়ে থাকে।
বস্তুত জনবসতি ও তার প্রাচুর্য, বাজারের তেজীভাব ইত্যাদি মানুষের আগমন নির্গমন তথা তাদের উপার্জন ও উপকারিতার ব্যাপক তৎপরতার মাধ্যমেই দেখা দিয়ে থাকে। সুতরাং মানুষ যদি জীবিকা অর্জনে নিশ্চেষ্ট হয় এবং ধনোপার্জনে হাত গুটিয়ে ফেলে, তা হলে বাজারে মন্দা দেখ! দেয়, অবস্থা-ব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে আসে এবং মানুষ জীবিকার উদ্দেশ্যে তাদের আশ্রয়স্থল ও বিন্যাস ব্যবস্থা ত্যাগ করে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে । এভাবে জনবসতি হাস পায়, দেশ উজাড় হয় এবং নগর-বন্দর শল্য হয়ে যায়। এ শূন্যতা সম্রাট ও তার সাম্রাজ্যকেও শূন্য করে তোলে । কারণ জনগণই সাম্রাজ্যের প্রকৃত উপাদান; সুতরাং তাদের অভাবে সম্যতা তথা সামাজ্যের অবশম্ভাবী ক্ষতি দেখা দেয়।
পাঠক এ ব্যাপারে পারস্য সম্রাটদের কাহিনী হিসাবে তাদের ধমীয় গুরু মোবেজানের নিকট থেকে মাসউদী যা বর্ণনা করেছেন, তত্প্রতি লক্ষ করুন । ঘটনাটি বাহরাম ইবনে বাহরামের সময়কার এবং উক্ত সম্রাট তার শাসন আমলে উৎপীড়ন, উদাসীনতা ও তজ্জনিত সাম্রাজ্যের অসুবিধার কথা অস্বীকার করেছিলেন । মোবেজান একটি পেচকের কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে এর সত্যতার উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। একদিন সম্রাট একটি পেচকের কণ্ঠ শুনে মোবেজানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি তা বুঝতে পারেন কিনা । উত্তরে ধর্মগুরু বললেন, হ্যাঁ পারেন এবং তার বক্তব্য তুলে ধরে বললেন, একটি পেচক একটি পেচকিনীকে বিবাহের প্রস্তাব দিতেছে। এর উত্তরে পেচকিনী তাকে যৌতুক হিসাবে এমন বিশটি গ্রাম দিতে বলছে, যেগুলো বাহরামের রাজত্বকালে উজাড় হয়ে গেছে। পেচক তা মেনে নিয়েছে এবং আরো বলেছে যে, সম্রাট যদি এভাবে তার সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন, তা হলে এক হাজার উজাড় গ্রাম দিতেও তার খুব বেগ পেতে হবে না। সম্রাট এ বক্তব্য শুনে সতর্ক হলেন এবং মোবেজানকে নির্জনে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার এ বক্তব্যের তাৎপর্য জানতে চাইলেন। উত্তরে মোবেজান বললেন,
'হে সম্রাট! ধর্মীয় বিধান ছাড়া রাজত্রের মর্যাদা পূর্ণতা লাভ করে না। তা করতে হলে আল্লাহ্র আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করতে হয় এবং তার বিধি-নিষেধকে কার্যকরী করে তুলতে হয়। আবার এ ধর্মীয় বিধানও রাজশক্তি ব্যতীত সম্ভব নয়। রাজশক্তির জন্য জনশক্তির প্রয়োজন এবং জনশক্তি সম্পদ ছাড়া হয় না। সম্পদ পেতে হলে জনবসতির দরকার এবং ন্যায়পরায়ণতাই জনবসতির প্রাচ্য আনয়ন করে । ন্যায় একটি নিক্তি, যা সৃষ্টির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। প্রতিপালক একে প্রতিষ্ঠা করে তার জন্য একজন তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেছেন এবং ইনিই হলেন সম্রাট । আপনি হে সম্রাট! কৃষিখামারগুলোকে তাদের যথার্থ মালিকের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। তারা তাকে আবাদ করত এবং তারা রাজস্ব প্রদান করত। বস্তুত তাদের নিকট থেকেই আপনার সম্পদ এসে থাকে । অথচ তাদের নিকট থেকে তা নিয়ে আপনি আপনার সভাসদ, সেবক ও পাত্রমিত্রকে জায়গীর হিসাবে প্রদান করেছেন। তারা এ সকল কৃষিভূমি আবাদ করে না, তার পরিণাম সম্পর্কে ভাবে না, তার প্রয়োজনীয়তা বুঝে না এবং সম্রাটের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতার জন্য তারা রাজস্বও দেয় না। সুতরাং অন্য যারা রাজস্ব আদায় করছে এবং কৃষিভূমি আবাদের ধারা অব্যাহত রেখেছে তাদের উপর করের বোঝা চাপিয়েছে। এ জন্য তারা এ সকল কৃষিভূমি ত্যাগ করে, জনবসতি উজার করে দুর্গম স্থানের কৃষি জমিতে আশ্রয় নিচ্ছে এবং সেখানে বসবাস করছে। এর ফলে আবাদ কমেছে কৃষিজমি পতিত হয্রেছে, সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে এবং সৈন্যদল ও প্রজাসাধারণ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। সুতরাং পারস্য সাম্রাজ্যের প্রতিবেশী সমতরাটগণ তার অবস্থা বুঝতে পেরে তার প্রতি লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। কারণ তারা জানে, যে সকল উপাদান ব্যতীত সাম্রাজ্য স্থায়ী হয় না, এ স্থলে তার অভাব বিদ্যমান।'
সম্রাট এ বক্তব্য শোনার পর তার. সম্রাজ্যের ব্যাপারে দৃষ্টি দিলেন এবং কৃষিভূমি সভাসদ অমাত্যদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আবার মালিকদের নিকট ফেরত দিলেন। তাদেরকে পূর্বের ন্যায় চলবার সুযোগ প্রদান করলেন । সুতরাং তারা উদ্যমের সাথে জমি আবাদ করল এবং দুর্বলরা আবার সবল হয়ে উঠল।.আবার জনবসতি দেখা দিল, এলাকাগুলো সবুজ হয়ে উঠল, সম্পদ বৃদ্ধি পেল এবং রাজস্বের পরিমাণও বেড়ে গেল। সৈন্যদল শক্তিশালী হওয়ার ফলে শত্রুদের প্রলোভন দমিত হল এবং সীমান্ত সুরক্ষিত হয়ে উঠল। সম্রাট সকল কাজ নিজে তত্ত্বাবধান করতে লাগলেন। তাঁর শাসনকাল সৌন্দ্যমপ্তিত হল এবং তার সাম্রাজ্য স্থায়ী হল। এ কাহিনী থেকে এ কথাই জানা যায় যে, উৎপীড়ন জনবসতির উচ্ছেদ সাধন করে এবং এ প্রকার উচ্ছেদের ফলে সাম্রাজ্যের ক্ষতি ও সর্বনাশ ঘনিয়ে আসে।
এস্থলে এরূপ যুক্তি উপস্থিত করা ঠিক হবে না যে, অনেক সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বিরাট বিরাট জনবসতিপূর্ণ নগরগুলোতে উৎপীড়ন থাকা সত্তেও কখনো কোনো প্রকার ক্ষতিকর কিছু দেখা যায় না। পাঠক, জেনে রাখুন, এটা নগরের জনসংখ্যা ও উৎপীড়নের অনুপাতে সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাং যেখানে নগরের পরিধি বিরাট, তার জনসংব্যা প্রচুর ও তার অবস্থার মধ্যে সীমাহীন ব্যাপকতা বিরাজ করে, সেখানে উৎ্পীড়ন ও অবিচারের দ্বারা অতি অল্পই ক্ষতি সাধিত হয়। কেননা উৎপীড়নের প্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে দেখা দিয়ে থাকে৷ সুতরাং নগরীর অবস্থা বৈচিত্র্য ও তার কর্মপ্রবাহের ব্যাপকতার ফলে এ প্রতিক্রিয়া একটা বিশেষ সময়ের ব্যবধানেই বাস্তব রূপ লাভ করে। কখনো এ উৎপীড়ক শাসনভার নগরীর জীবন বিধ্বস্ত হবার পূর্বেই সমূলে উৎপাটিত হয় এবং তদস্থলে অন্য সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটে । কাজেই এ নবীন শাসন তার সংশোধন করে নগর জীবনের অন্তর্গত ক্রুটিকে দূর করে দেয় । এর ফলে তা প্রায় বোঝাই যায় না। অবশ্য এরূপ ঘটনা খুব কমই ঘটে থাকে ।
এ আলোচনার নির্গলিতার্থ এই যে, উৎপীড়ন অবিচারে জনবসতির ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে, যেমন আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি এবং এর পরিণামে সাম্রাজ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পাঠক, কখনো এ কথা মনে করবেন না যে, কোনো প্রকার হেতু ও বিনিময় ব্যতীত কারো সম্পদ ও সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়াই উৎপীড়ন, যেমন সাধারণভাবে এ ধারণা পোষণ করা হয়; বরং উৎপীড়ন এটা থেকেও ব্যাপক। ঘে কেউ অপরের অধিকারে, তার কর্ম প্রবর্তনায় হস্তক্ষেপ করল এবং তার নিকট অন্যায়ভাবে কিছু দাবি করল কিংবা ধর্মীয় বিধানের বাইরে তার উপর কোনো দাবি প্রতিষ্ঠিত করল, সে উৎপীড়ক। সুতরাং কোনো প্রকার ন্যায় ভিত্তি ছাড়া কর আদায়কারীরা উৎপীড়ক; এজন্য জবরদস্তিকারীরা উৎ্পীড়ক এবং এ উদ্দেশ্যে মানুষের সম্পদ ছিনতাইকারীরা উৎ্পীড়ক। যারা অপরের ন্যায্য দাবি পূরণ করে না, তারাও উৎপীড়ন করে এবং সাধারণভাবে যে কোনো অধিকার হরণকারীকেই উৎপীড়ক বলে মনে করতে হবে । এর সমস্ত প্রতিক্রিয়াই
সাম্রাজ্যের জনবসতির ক্ষতি সাধন করে এবং জনগণের মধ্যে সভ্যতার মৌল উপাদান আশা-আকাঙ্কাকে সমূলে ধ্বংস করে।
পাঠক, জেনে রাখুন, ধর্মপ্রবর্তক কতৃক উৎপীড়ন নিষিদ্ধ করার এটাই যথার্থ উদ্দেশ্য । কারণ উৎপীড়ন জনবসতির ক্ষতি সাধন করে তার কামনা-বাসনাকে ধ্বংস করে এবং পরিণাম, এর দ্বারা মানব জাতির বিলুপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এজন্য ধর্মীয় বিধান এর বিরোধিতা করে সমগ্র জীবনের উপর পাঁচটি দিক থেকে সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করেছে, তা হল ধর্ম, জীবাত্মা, বুদ্ধিমত্তা, বংশধারা ও সম্পদ সংরক্ষণ । সুতরাং, পাঠক, আপনি যেমন দেখেছেন, উৎপীড়ন জনসমাজের ক্ষতি সাধন করে তার অস্তিত্বকেই বিলুপ্ত করে দিতে চায়, অতএব তা নিষিদ্ধ হওয়াই যুক্তিযুক্ত এবং এ নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গুরুতৃপূর্ণ। কোরান ও হাদিসে এ সম্পর্কে প্রচুর প্রমাণ বিদ্যমান এবং এর অধিকাংশই সংযম ও সংকোচের নীতি শিক্ষা দিয়ে থাকে ।
যদি প্রত্যেকেই উৎপীড়ন করতে সমর্থ হত, তা হলে অন্যান্য সমাজবিরোধী অপকর্মের ন্যায় এর জন্যও কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হত। যেমন অন্যান্য মানব অস্তিত্বিরোধী অন্যায়, ব্যভিচার, নরহত্যা, মদ্যপান ইত্যাদির জন্য শাস্তি নির্ধারিত আছে এবং তা যেকোনো ব্যক্তির পক্ষে করা সন্ভব। কিন্তু উৎপীড়নযোগ্য লোক ব্যতীত অন্য কেউ করতে পারে না। এ জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা শক্তিমান ও শাসন ব্যবস্থার অধিকারীর দ্বারাই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । সুতরাং ধর্মপুস্তকে তার নিন্দা ও পারলৌকিক শাস্তির কথা বার বার উল্লেখিত হয়েছে । যাতে তার বিরোধী ও সংযম শক্তি শক্তিমানের নিজের মধ্যেই জন্ম নেয়। “তোমার প্রতু তো বান্দাদেরকে কখনো উৎপীড়ন করেন না" ।
পাঠক, আপনার পক্ষে এ কথা বলা সঠিক নয় যে, ধর্মীয় বিধানে রাহাজানির শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে এবং তা শক্তিমানের উৎপীড়ন ভিন্ন অন্য কিছু নয়। কারণ অন্য সময় না হোক, অন্তত রাহাজানি করার সময় তাকে অবশ্যই শক্তিমান বলতে হবে । এর উত্তর দুইভাবে দেয়া যেতে পারে; একটি হল এটা বলা যায় যে, শাস্তির ব্যাপারটি অধিকাংশের মতে জীবাত্মা বা সম্পদের ক্ষতির উপরই নির্ধারিত হয়ে থাকে এবং এটা অনুরূপ ক্ষতি করার ক্ষমতা ও তদনুযায়ী অন্যায় অনুষ্ঠানের পরেই শুধু সম্ভব হয়। এজন্যই শুধু রাহাজানির জন্য কোনো প্রকার শাস্তি নির্ধারিত নেই। অপরটি হল এরূপ বলা যায় যে, রাহাজানিকারীর এমন কোনো ক্ষমতা নেই, যেমন আমরা উৎপীড়কের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। তা এমন একটি ক্ষমতা, যা প্রতিরোধ করার শক্তি কারো নেই। এ কারণে তা ধ্বংস ডেকে আনে। কিন্তু রাহাজানিকারীর ক্ষমতা হল মাত্র ভয় প্রদর্শন, যাকে সে সম্পদ সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে এবং তাকে প্রতিরোধ করার শক্তি ধর্ম ও শাসন ব্যবস্থার দিক থেকে সকলের হাতেই বিদ্যমান। সুতরাং তাকে সেই ধ্বংসাত্বক শক্তি বলে মনে করা যায় না। আল্লাহ্ তার ইচ্ছা অনুযায়ী সকল বস্তুর উপর শক্তিমান ।
সর্বাপেক্ষা মারাত্মক ও ধ্বংসাত্বক সমাজবিরোধী উৎপীড়ন হল অন্যায়ভাবে শ্রমিক নির্যাতন এবং প্রজাদের উপর কর্তব্যের ভার চাপিয়ে দেয়া। কেননা শ্রম, বলতে গেলে, শ্রমিকের পুঁজি স্বরূপ, যেমন আমরা আহার্ষের অধ্যায়ে এ সম্পর্কে বর্ণনা করব। বস্তুত আহার্য ও উপার্জন, তা মানব সভ্যতার শ্রমেরই ফসল। সুতরাং তাদের প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম সামথিকভাবে তাদের পুঁজি ও উপার্জনের ভিত্তি। এটা ব্যতীত তারা জীবিকা অর্জনে সক্ষম হয় না। যে সকল প্রজা সভ্যতা নির্মাণে তাদের শ্রম প্রদান করে, তাদের জীবিকা ও উপার্জন তারই উপর নির্ভরশীল সুতরাং তাদেরকে যদি অন্যভাবে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয় এবং তাদের জীবিকার ভিত্তিকে অন্যত্র নিয়োগ করা হয়, তা হলে তাদের উপার্জন হাস পায় ও তারা শ্রমের বিনিময় থেকে বঞ্চিত হয়। যেহেতু এটাই তাদের পুঁজি, কাজেই এরূপ ব্যবহারের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাদের জীবিকার একটা বিরাট অংশ নষ্ট হয়ে যায়; বরং বলা যায়, তাদের জীবিকাই বিপন্ন হয়ে পড়ে । এরূপ ব্যবহার বারবার দেখা দিলে সভ্যতা বিনির্মাণে তাদের কামনা-বাসনা লোপ পায় এবং তারা সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা ত্যাগ করে বসে পড়ে । এতে সভ্যতার সংকোচ ও ক্ষতি সাধিত হয়। পবিত্র ও মহান আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞাতা এবং তিনিই একমাত্র সহায়।"